প্রবীর রায়ের অনুগল্প
ছায়াপথ
ছায়াটা গুটিয়েছিল পায়ের কাছে।এবার আস্তে আস্তে লম্বা হতে চাইল।একটু ডানদিকে হেলে তাকিয়ে রইল।সবুজ ঘাসের এই একটুকরো মাটিকে বাগান বানানো যেত।কিন্তু ধার দিয়ে কয়েকটা জবা আর পাতাবাহার গাছ ছাড়া আর কাউকেই জায়গা দেওয়া যায়নি।শীতের দুপুরের রোদ্দুর আর নিজের সাথে ছায়ার খেলাটা পিঠ জুড়ে আরাম ছুঁয়ে থাকার মত। কৃষ্ণ এলো এমন সময়।
দাদা,কেমন আছেন?
ভাল,তুমি?
একটু বুঝতে এলাম,দাদা।আমি এই দেশের লোক,এর নাকি প্রমাণ দিতে হবে?
আজ কাজে বেরোও নি?
যাবো দাদা।কাল ভবেশ বলছিল, প্রমাণ না দিতে পারলে নাকি ক্যাম্পে আটকে রেখে দেবে?
একটা ছায়া দুলে উঠল।আর একটা ছায়া স্থির।
তোমাকে তো ছোটবেলা থেকে দেখছি। তুমিতো এদেশেরই লোক।
হ্যাঁ,সবাই জানে তো। আচ্ছা,পঞ্চায়েত প্রধান যদি লিখে দ্যায়?
দরকার নেই,তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। মন্ত্রীমশাই বলেছেন,হিন্দুদের ভয় নেই।
কিন্তু ভবেশদার মেয়ের বিয়ে দিয়েছিল আসামে।ওকেও তো বিদেশী বলেছে। অনেক হিন্দুও নাকি ক্যাম্পে আছে।
এই বাংলায় ওসব হবে না
হলে পরে কীভাবে বাঁচবো দাদা?
পাশের বাড়ীর ছায়াটা বড় হতে হতে দুটো ছায়াকে ঢেকে দিল। আলো কমে আসছে কৃষ্ণের মুখে। রোদ সরে যাওয়ায় অল্প ঠান্ডা ভাব।
আসি দাদা, কাজে যাওয়ার পথে একটু দেখা করে গেলাম।
যে মাটিতে জন্মালো ,বড় হলো, সেই মাটি হয়তো তার আর থাকবেনা।কার কাছে গেলে নিশ্চিন্ত হতে পারে ,ভাবতে ভাবতে কৃষ্ণ ছায়ার রাস্তায় ডুবে যেতে থাকে।
No comments:
Post a Comment