Sunday, February 2, 2020



অরুণাভ ভৌমিকের গুচ্ছ কবিতা 

১।        দাও।
     

কে যেন কবিতা ছুঁড়ে দিচ্ছে সাদা মেঘের
পর্যটন বৃত্তান্তে, মেঘের স্তব্ধতা চাইছে
উৎসব পরিক্রমা, নিথর ছিটকিনি খুলে
বেরিয়ে আসছে নতুন কবিতা একটুকরো
পাখির বাসার অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র হাতে নিয়ে

টুকি তো মলয়ের বউয়ের নাম
ওদের ব্রিফকেসে সামুদ্রিক ভালবাসা
সে কেন আমাকে দেবে মিনিটে মিনিটে
মিসড কল দ্বাদশ বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যায়
যখন রচিত হচ্ছে জীবন অনুপ্রাস ছন্দে

এতসব দেখেশুনে অতিথি বৎসল একজন
পেরিয়ে যাচ্ছে তিনশ পঁয়ষট্টি দিন
পেরিয়ে যাচ্ছে এবড়ো থেবড়ো এপিসোড
নোটেশনে চুমুক তার এপিটাফে সমুদ্দুর
শব্দ করে বাড়িয়ে দেওয়া চুমু!

২।    বিড়াল
 

আমার বারান্দার কিনারে
একটুকরো রোদ এসে জড়সড়...

একটা বিড়াল দেখতে পেয়ে
চুপিচুপি সেদিকে এগোতেই
জানালার পর্দাটা একটু দুষ্টুমি করল
আর একটুকরো ছায়া এসে
আর একটুকরো ছায়া এসে...

বিড়ালটা ছায়ার মধ্যে ডুবে যেতে যেতে
বিড়ালটা ছায়ার মধ্যে ডুবে যেতে যেতে একটুকরো... আড়মোড়া... টুকরো টুকরো...

৩।   সরলবর্গীয়
  

বিনিময়ে উদ্যোগ থাকে
একাদশ বর্ষে এসে আর এসব মনে হয় না
কাজু কিসমিস - এই নাকি ওর জৌলুস
ওর হাত ভর্তি, ওর দু'হাত ভর্তি
ওতে কি ভয় ধরা আছে!

পরের লাইনে যেতে যেতে আনমনা
একটু যেন আনমনা
লোকটা কি দেখছে   আকাশ নাকি রুমাল
আমাদের সব্যসাচী দেখেনি এমন প্রীতিলতা
আমরা সামুদ্রিক অস্মিতার সরলবর্গীয় অমিত্রাক্ষরে!

৪। ‌‌‌‌‌‌‌। দিন যায়
 

আকাশ থেকে গড়িয়ে পড়ছে আকাশ
জলের থেকে নেমে আসছে জল
আমি তখন একটা মেঘের গায়ে মেঘ আঁকলাম

আমি ধার করি সারারাত
চাঁদের মত নয়
প্রতিক্রিয়াশীল রুমালে থাকে নির্ঝরের গান

আমার আড়াল সে তো আমি-ই
অভ্যস্ত রোদ উদাসীন উদাস

বাবার চশমার গায়ে লেগে থাকে অফুরান মাঠ!

৫।  ছন্দহীন কবিতায় আমার বাবা
              

আমার বাবার গল্পে পাহাড় প্রমাণ স্তব্ধতা
আমার বাবার গল্পে মেলে ভিটেবাড়ির স্নিগ্ধতা

আমার বাবা কোনদিন রবীন্দ্রনাথ শোনেন নি
এমন নয় তার আকাশে মেঘ কখনো ভাসেনি

আমার বাবা তো অজানা গ্ৰামের স্বচ্ছতোয়া নদী
তার ভেলায় চাপেনি কখনো কোন নরভূক যুবতী

আমার বাবা ছিলেন আকাশে ওড়ার জলপথ
আমার বাবা ছিলেন স্বচ্ছ নদীর অবগাহনের স্রোত

আমার বাবা বহুকাল আগের নির্জন এক পুরুষ
পরের জানালায় দাঁড়াননি এমনি সে এক মানুষ

আমার বাবার যাত্রাপথে ছিল যে কাঁটার মুকুট
দীর্ঘ পথের একপাশ দিয়ে হেঁটেছিলেন নিশ্চুপ

আমার বাবার হাতে ছিল কত যে রোদ্দুর গোটা
আমার বাবার বাগানে ছিল কত  অশ্রুর ফোঁটা

আমার বাবার ডাইরীতে কবিতা গড়িয়ে যায়
এককোনে তার লেখা হয়েছিল নষ্ট মতবাদ হায়

আমার বাবার বারান্দা জুড়ে শুধুই গোলাপ চাষ
মরচে পড়া ছবিতে ছিল যে তার শরতের আকাশ

তাকে কখনো কাঁদতে দেখিনি কিংবা শুধুই ভাঙতে
বাবা ছিলেন বনস্পতি এক শীতল ছায়া পেতে!

৬।    ক্ষিধের এপিসোড ৩৭

           

ঝরা পাতার উঠোনে ভাসে দু'ফোটা অশ্রু
অক্ষরে ধরি না তাকে

অতল কুয়ো, তার একপায়ে চটি
সাদা পাতা শুষে নিচ্ছে মোমবাতির অন্ধকার

অদূরে গ্লাসের বুদবুদে ডুবে যাচ্ছে
গ্ৰাম ও সভ্যতা

পাতা চাপা ঘাসের মত মেয়েটা ছিটগ্ৰস্ত
অশ্রুকণায় ভাসে ওর বিপন্ন বিস্ময়

ভোরবেলা শুষে নিলে শীত, শীতবিন্দু
ঘাসের চাদরে ফুটে ওঠে নরম লজ্জা!

৭। ল্যান্ডস্কেপ
  

রোদের বিনিময়ে পশ্চিমের বৃষ্টিতে সাদা ছবি
উদাসীন মানচিত্রে অবয়বহীন বায়োডাটা

গেরস্থালি ফিরে আসছে ল্যান্ডস্কেপ ছুঁয়ে!

৮।  রোজনামচা
 

মাসিক কবিতাপত্রে ছাপা হচ্ছে জেলখানার দিনগুলি
আনকোরা অস্তিত্বে ভাসছে কত যে এলিমেন্ট

সব গান উপশম হলে হাতের শরীরে এক সূর্যাস্ত!






No comments:

Post a Comment