' কবিতা করিডোর ' উত্তরবঙ্গের প্রথম মাসিক ওয়েবজিন । এই ব্লগ নতুন সৃষ্টি নিয়ে ভাবে । কবিতা নয় সাহিত্যের নানা দিক ও চিত্রকলা থেকে চলচ্চিত্র সবেতেই এই ব্লগ নতুন ভাবনার পথিক ।
Friday, January 8, 2021
যাও পাখি
কুমকুম বৈদ্য
পাখি তোর ঠোঁটে খড়কুটোর আশ্বাস
ডানাতে আকাশের নিঃশ্বাস
কান পেতে গাছেদের কানাকানি
তুই আমি দুজনই নিজেদের গান জানি
মাথার দিব্বি, ফিরে তুই আসিসনা আর
তোকে তো দিলাম কিছু স্মৃতি
আমি তো মগ্ন নিজের গানে
রাখা আছে গাছেদের কাছে আমাদের অশ্রুকণা
হাজার বছরেও কিছুতেই মরবে না
উড়ে যেতে পারিস যত দূরে -
ডানা যদি নাই পারে
মনে চাষ কর নে কিছু ডানা
বসতে পারিস যে কোনো গাছে-
আমাদের যে দিন ছিল
ইতিহাস লিখে গেছে তারাদের গায়ে
হারাতে পারবে না সে আর কিছুতে
ভাবনা
- তপন তরফদার
নিজের যোগ্যতার বেড়া না ডিঙিয়ে
মনের অজ্ঞতার মেগাপিক্সল মোবাইলে ফুটে ওঠে
এক সত্যম শিবম সুন্দরমের চাবির চিহ্ন
বিশুদ্ধ সুন্দরকে ভেদ করে মগজ জানতে চায়
নিত্যদিন অক্ষরমালার কত পিরামিড হয়
হিসাব রাখেনা তার ভবঘুরে বা অর্থনীতিবিদরা।
গুগুল ডট কম জানে না কত পাঠক কবিতা পড়ে
কখন কত পাঠিকা বালিশে বুক রেখে
সিরিয়াল ছেড়ে সৃষ্টি রহস্যে বুঁদ হয়ে থাকে।
তবে কি চাহিদার থেকে যোগান বেশি-
ওএলএক্স বেচেনা, কেউ হিসাব রাখেনা
আবার কবিরা গভীর গোপনেও জানতে পারেনা
মেঘ থেকে বৃষ্টি হল না শুধুই বজ্রপাত দিল
আবার
কোনকোন পিরামিডের অন্তরালে থাকে ক্লিওপেট্রারা
যারা মৃত মমিতেও প্রাণ সঞ্চার করে।।
শেষ না শুরু
অনিমেষ
গদ্য লিখতে বসলে সর্বপ্রথম যেটা আমাকে আকর্ষণ করে সেটা হলো আমি কিছু কিছু সময় যেভাবে বিষয়হীন ভাবে ছেড়ে দিই নিজেকে ।কী লিখছি কেন লিখছি কোন দিকে যাচ্ছে লেখা সেরকমই সেই নেশাটা আমাকে টেনে নিয়ে যায়। গদ্যের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করতে না পারলেও হয়তো পাতা ছুঁয়ে বেরিয়ে আসি ঈষৎ।
শহরের মাথার উপর চাঁদ জ্বলে আছে দীর্ঘদিন ,নিস্তার নেই তার। ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে।শীত বাড়ছে ।শীতল মেঘে ঢাকা পড়ছে চাঁদ। এরপর সমস্তটা রাতের মতো নির্ঝঞ্ঝাট। অথচ দেয়াল ঘড়ির মতো তীক্ষ্ণ বীতশ্রদ্ধ কী আছে আর!
কুয়াশার ভেতর হাঁটতে হাঁটতে জলপাই ফলের গাছ। পড়ে আছে ঝুলে আছে ফল। তুলে নেবো কি নেবো না ,ভেতর ভেতর অন্তর্দাহ শুরু হয়েছে। যাদের মুখ না দেখার মতো করে রাস্তায় পাশ কাটিয়ে চলে যাই।সেরকমই আর না থেকে এগিয়ে যাই। ট্রেইন চলে যাচ্ছে পাশ দিয়ে।হাঁটার মুহূর্তগুলো সকালের বাজার, ভায়োলিন ছেড়ে আসা মেয়ে ,গভীর রাতের কফি সব আদতে একটা একটা দৃশ্য ঢুকে পড়তে থাকে স্মৃতির ওয়্যারে।
থমকে যাই। যেভাবে এতকাল বেকার থেকে থেকে ভুলে গেছি কখন কোথায় কী বলতে হয়। আদতে নাব্যতার সামনে বরাবর চুপ থেকেছি চুড়ান্ত চুপ। মুখে কুলুপ। বহিদৃশ্যের সাথে অন্তর্দৃশ্যের একটা পার্থক্য থাকে ছায়াবলয় ঘিরে চলতে থাকে ঠান্ডাযুদ্ধ। A amazing cold war .
মাঝেমধ্যে শূন্যতার সংজ্ঞা খুঁজতে গিয়ে অতলান্তে তলিয়ে যাই। তল্লাশি চলে চলতে থাকে। মৃত্যু ঠিক কোথায় লেখা!কোন দরজার সামনে দাঁড়ালে এক্স ফ্যাক্টর কাজ করে যাবে। Terrific luck খেলে যাবে।
এই একটা গদ্য লেখার সমস্যা । মেমোরির ধার ঘেঁষে কিছু আলো তুলে নেবো ভাবি তা আর হয়না। টাইম ট্রাভেলিং করতে করতে পৌছোই ছেড়ে আসা জগতে। Thw worthless memories.
তবুও হাঁটি যেভাবে আকর্ষিত হয়ে থাকি অনর্থক কোনো গদ্যের দিকে। বিভীষিকাময় প্রহেলিকার দিকে। টানটান চিত্রনাট্য কোনো যেন আমাকে গিলে খাবে। আটকে যাই মায়ার মতো। কলম না গিরগিটি বুঝতে পারি না।
রঙের সাথে গুলে যেতে থাকি। সর্বস্ব রঙ যেন মরীচিকা। শেষে আমি নিরুদ্দেশ হয়ে যাই। কোথায় শুরু কোথায় শেষ।খেই হারিয়ে কোথায় গদ্যে কোথায় আর এই হাঁটা !
From here you never know ,What will be happening at the end...
দৃশ্যের বাইরে
-তন্ময় ধর
১।
যেন পৃথিবী ও পৃথক মাংস তুলে রাখা আছে আভাসে
অভ্যাসে আলোর পা
আঙুলে অধিক ঈশ্বরজল
দৃশ্যঝিনুকের ভিতর ছদ্মবেশ হারিয়ে ফেলছে সমুদ্র
ঢেউ নামক প্রবল অস্তিত্বের দিকে চলে গিয়েছে স্মৃতিহীনতা
শঙ্খচিলের নখে একে-একে শব্দ নেমে আসে
ফেনা
২।
নীল একটি রঙ এখানকার সংসার
অজ্ঞাত প্রাণের আলোশিশ্ন অন্ধকারে বোবা প্রশ্ন
সংজ্ঞাহীন এক ঢেউ
তন্ময়তা অনেকক্ষণ ভেসে গেছে জলে
তুমি কি শুনেছো কিছু
বিশৃঙ্খল অনন্ত পতনে?
আঘাত খুঁজতে গিয়ে
দিকশূন্যপুর
অনিন্দ্য রায়
প্রভু দাও দ্বার খুলে-'
বিশ্বজিৎ লায়েক
১)
সঙ্গম ক্লান্ত শরীরে আজ অঘ্রাণ মাসের বিকেল
মাঠ ভর্তি ধানের গন্ধ নিয়ে আমি এখন কোথায় যাব
কিসে ডুববে আমার উচ্ছ্বাস
চাঁদ গলে গলে এই যে রেখে গেলে অজস্র মোম
রেখে গেলে লক্ষ্মী কোজাগর
এখানে দ্রাবক নেই, হলুদ সাদা জীবনের উপর
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাম, দ্রাব আর বিষণ্ণতা
রমণী শীত জানে না এইসব
সে শুধু কুড়িয়ে আনে আমাদের শীতের ওম
২)
তুমি আর মন খারাপ লিখো না, লিখো অনন্ত খিদে
তুমি আর জলে ভাসো না, ভাসাও শরীরে আহা মন
আমার লুকিয়ে রাখা হাহাকার
আমার অন্ধ জন্মের প্রতীক
এই মগ্ন অন্ধকার
রাখো তার ডানায় শুদ্ধ পালক, গত জন্মের উচ্ছ্বাস
৩)
ধানের মতোই বেড়ে ওঠো তুমি
কালো ধোঁয়া আর বঞ্চনার এই চ্যালাকাঠ
ছোটো হে অন্ধ মাতাল, মুগ্ধ প্রেমিক
শব্দ ছুঁয়ে হও দিগভ্রান্ত
বুকের ভিতরে কে যেন জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে ধিকিধিকি
কাঠের আগুন
যুদ্ধের বিপরীতে অন্য যুদ্ধ খেলা
৪)
পারফিউমের গন্ধে কাঁদতে কাঁদতে নেমে গেল শ্যামল ছায়া
শরীরে তার ধোঁয়া, কার্বন ও গন্ধক
কৃষক রমণীর দেহজ প্রসব
অকল্পিত অসুখ
৫)
এই বয়ঃপ্রাপ্ত নিড়ানি চারাধান
ক্ষেতের আলে ফুটে ওঠা অসময়ের চাঁদ
ধানের আহ্লাদে তুমি নাচো শস্য শ্যামলিমা
ক্ষুৎ কাতর এই দেশে
ধানের আহ্লাদে মিশে যাও তুমি চুম্বনের মতো
টিপে দেখো তার মসৃণ ফলের মতো স্তন
৬)
কৃষকের করতল
এই দেশ পিপাসা তর্পণ
পাতায় পাতায় রাখো অবশিষ্ট যৌণ বিদ্যুৎ
অভিষিক্ত নদ-নদী
অভিসারে রেখেছ যে মন
চাষীর খোয়াবে নাচে যে লকলকে সবুজ
কচি ধান
দুটি ঠোঁট ছুঁয়ে আছে জলে
জলের অক্ষরে
ভালবাসা তুমি গড়িয়ে নামো আলো আর আঁধারে
কথার ঠোঁটে, ডুব সাঁতারের এই রাত
মিশে যাও আমার নির্বাক ছুঁয়ে থাকা কচি ধানের দুধে
৭)
পুড়ছিলাম, বহুবার আমি পুড়ে পুড়ে
কাকে যেন বলেছি
ভালবাসা দাও সঙ্গে সামান্য অবহেলা
শিউলি তলায় পড়ে থাকা জবাফুল
কুড়িয়ে নিয়ে তাকে বল
এই দ্যাখো প্রেম এখানে কচি ধানের দুধ
এই ভালবাসা গ্রহণে অক্ষম তুমি
দূরে থাকো
তোমার বিষণ্ণতার দিকে চলে গেছে আমার আঙুল
৮)
তুমি হেসে ওঠো
অনেক উঁচুতে তিনি লিখছেন
ফেসবুক
আমার শৈশবে জমানো স্বরবর্ণ রাত
আপাতত বৃষ্টি দিন, উদাসীন ওম
কতকাল বসে আছি শালপাতা নিয়ে
প্রাচীণ অরণ্যে
'ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে'
রুগ্ন ভালবাসা তোমার কোনো ব্যঞ্জন নেই
আলাদিনের পুষ্টি নেই
নিষেধের বাড়িঘর
যতবার চেয়েছি তোমাকে
ঘুম ও স্বপ্নে মতিভ্রম
জেগে আছেন বোবা ঈশ্বর
৯)
শুয়ে থাকা চাঁদ নিয়ে
রাত নেমে আসছে জিহ্বা ও জ্বরে
মৃত হারমোনিয়াম
শীতের স্টেশনে বাজাও তোমার অসুখ-বিসুখ
অসময়ে অতটা খিদে গান হতে চেয়েছিল
আর আমি বৃত্তের বদলে জিরো বসালাম
শুয়ে থাকা সর্বনামে
১০)
মাইগ্রেন নয়, শ্বাসকষ্ট নয়, উল্কি
বেচতে এসেছি তোমার শহরে
তুমি বোতাম খুলে পাঁজরে সেলাই মাখালে
জিভের নোনা আল স্বাদ
১১)
সাদা পৃষ্ঠার আগে বাষ্পমোচন
সাদা পৃষ্ঠার আগে বিনোদন লজ
সাদা পৃষ্ঠার আগে রাত নেমে আসছে
শরীরে আবার
১২)
কী নিয়ে বসে থাকব আমি
দরজায় হেলান দিয়ে বসে আছে ত্রয়োদশী চাঁদ
কী নিয়ে বসে থাকব আমি
শূন্যঘর একাকী একা...
১৩)
আমি কি ভাঙা আয়নার টুকরো টুকরো ভেঙে যাওয়া কাঁচ
জোড়া লাগাবে বলে সকালে এসেছিল
বন্ধুর মতো প্রিয়জন
দুপুরেও কেউ কেউ এসেছিল নিশ্চয়
আমি ঘুমোচ্ছিলাম
বিকেলে যারা আসব বলেও এলো না এখনও
ঠোঁটে আলকাতরার জ্যোৎস্না মেখে বোবা হয়ে গেছে
চিরকাল
১৪)
আমি কি আরো ভেঙে ভেঙে টুকরো হয়ে
নিজেই নিজেকে লাগাচ্ছি জোড়া
হাত-পা, পেট-পিঠ, মুখ
শরীরের শিরা
১৫)
এতরাতে কে এলো ঘরে
সারা শরীরে তার অক্ষর মিছিল
'মানুষ পারে না।
এক জায়গায় এসে স্পষ্ট ভেঙে পড়ে।'
মনপদাবলি ১
কৌশিক চক্রবর্তী
মন বললে তো সেই একটাই
তরুছায়া অনেকগুলো হতে পারত
আবার কিছু না-ও
শূণ্য তার সমস্তটা নিয়েই জলে ভেজা।
আয়নায় মুখ না দেখলেও
এই তোমার আরতিগান
টুকটুক
তুলে নিলাম পাড়ভাঙায়।
তুলো মুড়লেও
হঠাৎ হঠাৎ শহর পালায়
ঝিকমিক মনখারাপে
ফিরে আসার বাঁক এদিকে একটাই।
হাসি তার সাইকেল নিয়েও লাইন কাট করে কোথায় মিসিং
গড়িয়ে আসতে গিয়েও
সিঁড়ির কমলায় দুটো মানুষ
বিরতির সেইসব ফাঁকে ফাঁকে তখন
নতুন নতুন সর্বনামে
চান করে নেয়...
শিরোনামহীন ৫
মিহির দে
১এখনও এলোমেলো হলে তোমাকেই খুঁজি
জানি,কিভাবে রাত্রি শেষে হাসি মুখে
ঢুকে পড়ো ভোরের আলোতে
২
তোমার শরীর ছুঁয়ে যে দিন
তার ভেতর একটা হলুদ পাখি থাকে
৩
বুকের কাছে মাথা রেখে দিলে
মনখারাপের গল্প শোনায় চিলেকোঠার
বিকেল
৪
আয়না ও সম্পর্কের একটা গভীর মিল
যার ফাটল কখনও জোড়া নেয় না
৫
কতটা ব্যার্থ হলে বুঝি
তুমিও চুপ করে বসে থাক কুয়াশার ভেতর
দুয়ার
সুভান
মনের ঘরে দুটো দরজা থাকে,
একটি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার..
অন্যটি ঘরে ফেরার...
ইদানীং দুয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে
গোলাপের মতো সন্ধে ঝরে পড়ে শুকনো মাটিতে।
হাতের মধ্যে লুকোনো থাকে কাঠের নোঙর...
তিনখালের একটি আমি লুকিয়ে রাখি চোখে
অন্য দুটিতে রাখি বিরহের সাদাহাঁস ও ময়াল।
জল তো আর বন্দর নয়, জীবনের দিকে তার স্রোত।
জীবনের কাছে গিয়েই তার ডুবে থাকা বিস্ময়...
সমুদ্রবীজ থেকে সফর আর নুন
আলাদা করা যায় না বলে আমি ভাসমান মহল্লার
খোঁজ কাউকে জানাইনি।
সূর্য জলে এসে বসে এখানে। জলের সঙ্গেই
তার সহবাস। আমি গাছ লিখতে লিখতে এতকাল
খেয়ালই করিনি। সবুজ নয় শুধুই ধূসর লিখে গেছি।
আলাপ
নীলিমা দেব
হয় না! ---- বাক্ থেকে অবাক
নীল ফেটে শিশির
কী সমস্ত থৈ থৈ
ভাবছি বাগেশ্রীতে ব্রাউজ করি রাত
কিংবা যতক্ষণ আমি ততক্ষণ কাহারবা …
সামনে বোকা বোকা জল
স্পর্শ নেবো কিনা না ভাবতেই বৃষ্টির ছায়া ও তার জলদি
আমার দিকে
আমাদের স্পর্শের দিকে
নামতে নামতে…
খাঁখাঁ নীল
কোথাও কোথাও জেগে থাকলো মেয়েটার সংক্ষেপ
দু’বিঘে মেঘ
চোখের সামনে ঘোড়ার ফ্লো
সমস্ত শব্দেই খুইয়ে ফেলি আলাপ
যেটুকু স্তব্ধ সেটুকুই না হয় মেয়েটা …
তুমি ঠিক তখন
রাজনৈতিক
মহুয়া বৈদ্য
শৌভিক কুণ্ডার কবিতা
অভ্যেস
অপরা কবিতা
অর্ক চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
বাড়িয়ে তোলে আত্ম-সন্দেহায়ন।।
নখের দর্পণে যার ছবি ভেসে ওঠে,
পূজারী
তপোব্রত মুখোপাধ্যায়
মৃত্যুর কবিতাখানি
পৌলমী গুহ
১
শেষ অথবা শুরুর দিকে এগিয়ে যায় উন্মুক্ত জঙ্ঘা।
একটি গভীর চোখ টগবগ করে ফুটে ওঠে ডালে।
ধুনোবাতাসে খাবি খায় কচুরিপানাসম পিঠ,
গভীর গভীর কিছু দুঃখকে দানাপানি দিয়ে কাছে ধরে রাখি।
একটি নারীজনম ধীর পায়ে টিলা বেয়ে নাভি অবধি ব্যর্থ হয়।
২
জলের গায়ে সারি সারি শৈশব ভাসে।
ফ্ল্যাশটানার মিউজিক শেষ হলে,
পতনের পাশাপাশি চোখ মেলে শুয়ে থাকে
অবিকল হংসিনী মুরতি।
আদরের প্রলাপ
কথা রাখারাখি পুরোনো হয়ে গেলে,
বেজন্মা কথাগুলো হাওয়ায় ওড়ে।
কখনো ঘর ভেঙে গেলে বুকের বদ্বীপ
স্রেফ খুন হয়ে যাবে বলে জেগে থাকে।
Tuesday, January 5, 2021
অরুণ পাঠকের গুচ্ছ কবিতা
দুর্ঘটনা
এখনও উত্তপ্ত দুহাতে ফুটন্ত গোলাপ তুলে ধরে
বয়সের প্রত্যন্ত ভার তুমি গোপন করে যাও
আকাশ তোমার দেহে গুলে গেছে রং
প্রহরী পেরিয়ে গিয়ে সামান্য বাগান মাত্র গেছি
সেখানেই গরীয়সী বহুলাংশে আমার হয়েছ
মায়ের আসল রূপ মাটিতে বা মেঘে একই বৃষ্টির
কারসাজি
যোনি প্রবাহিত হয়ে আলোর দরজায়
উপগত আমি যোনিতে প্রবেশ করে আবার জন্মাই
স্বয়ম্ভু শক্তির গায়ে এমন রূপের মাটি
তোমাকে মণ্ডপে আনে কিংবা বিছানায়
আমি বাইরের লোক; আমার নকল ঘরে
তোমাকে পেয়েছি, যে ঘর বিমূর্ত ছিল সূর্যাংশের
আগে
যখন ধারনা ছিল, অনুভূতিযোগ্য কোনও
মেধাবী নারীর জন্য সূর্যতারকারও একটা
দুর্ঘটনা দরকার...
দেহ
যা-দেখছি তা-সত্য নয়, মর্ম খুব শ্লথ
বেঁচে থাকার মহত্ত্বে আমরা তো বিশ্বাস করি
এই ধবল সাধুতা সমান্তরালভাবে বইছে দেহটি
মাথাটি গণক আর মধ্যমার চিরায়ত ভুল
জীবন তো মৃত্যুর উঠোন, ভাই-বোন আত্মার বিভেদ
সব এক হয়ে চলে আসে প্রথম সারিতে
আমার রক্তের রং আমাকে বিশ্বস্ত করে
অথবা সে চিন্তার পাহাড়, যা অন্নের অভিমুখ
প্রকাশিত করে, কখন যে শুরু হবে
দেহ তার কিছুই বোঝে না, ভাগ্যের ক্রীড়ণক নয়
এই দেখো জিহ্বা স্বাধীন, বাক্ও স্বতস্ফূর্ত
শুধু আলোকে অসীম করে দাও, সহ্য করো
প্রতিবিম্ব তার, কলের লাঙল থেকে মেধার কলমদানি
প্রযুক্তি আমার কাছে আদিমতা চায় প্রথমত
অর্জন
আমি কোনও বস্তুনাম এ জিভে নেব না
দেহের ভেতরে যে অনন্তের খেলা, তরঙ্গসুলভ
তাকে প্রাকারের নিচে রেখে শাসন করব
কখনও কখনও তুমিও উদ্বায়ু একটা বিশ্বের মতো
ফুটে উঠবে আমারই নিয়ন্ত্রণে
তুমি, জগতের সংযোগ সাধিকা
একমাত্র আত্মপরায়ণ আমাকে বিশ্বলগ্ন করেছ
তাই, তুমি সঙ্গে থাকবে আর অধীর নিয়োগপত্র হাতে
পরমার্থের গতিকে স্তব্ধ করবে ধূলায় ধূলায়
উচ্চ ধীশক্তি ও আত্মসচেতন
এক মানুষ, তাকে এক নির্জন নদীর মধ্যে রেখে
আমার এই হাওয়া মোরগের কারখানা
হাওয়া বিষাদগ্রস্ত হলে
আমার কিছু যায় আসে না
আমার নির্ণয় নিয়ে মর্তুকামী মানুষেরা নাচে গায়
উদাত্ত এ গ্রহবর্ম আঁটা শেখান স্বার্থের লোকজন
ব্যাধিগ্রস্ত দৃষ্টিতে তোমাকে চায়
তুমি সাধন নিয়ন্ত্রা
রক্ষিতা শব্দের
স্বনাম অর্জন করে এসো
পাত্র
এ পাত্রে গোছানো আছে হিরণ্ময় আলোটি উজ্জ্বল
বিশ্বাসে ও বীজ আলোর রক্ত পুড়িয়ে দিচ্ছে কোষ
এইখানে মরণ অভ্যাস আলোকিত মঞ্চের ওপর
দুপুর গড়িয়ে আসে, তবু সে প্রভাত হতে চায় সবিশেষ
অনন্ত শব্দের ক্ষোভ অভ্যাস ঝাঁকিয়ে দিতে চায়
ধরে রাখি ফুলের প্রদীপ, প্রজ্জ্বলিত হাতে হাতে
একা ফুল উৎসে টেনে নেয় সকারণ জীবন বিদ্বেষ
শেকড় আলোকে টানে মাটির গভীরে, সেখানে উদ্ধার
কালো রাস্তা, ভালো রাস্তা, ছিল, আছে আছে
প্রকাশ্য সংগত সেই দিনের হিসাবে মেঘান্ধ আকাশ
একটি প্রেমের কবিতা
আমার কোনো গন্তব্য নেই
শেষ দেখা
সুবিনয় দাস
রাত তখন প্রায় ১২ টা। ট্রেনটা কোন স্টেশনে এসে দাঁড়াল সুবীর ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না। ক্লান্ত শরীর নিয়েই সে আপার বার্থ থেকে শুনতে পারছিল কাটনি বা সাতনা হবে। হঠাৎ সে ট্রেনের কোনাকোনি জানলা দিয়ে দেখতে পায়, অসংখ্য যাত্রীর ছোটাছুটি। কি হল? সে বুঝতে পারল না। নীচের বার্থ গুলিতে যারা ছিল, তারাও তীব্র বেগে বাইরে বেড়িয়ে গেল। ট্রেনে ওঠা হয়েছে তো সেই সকালে, পেটে একটি দানাও পরে নি।
মায়ানগরি মুম্বাইতে সুবীর গিয়েছিল কাজের সন্ধানে। বর্তমান বঙ্গভুমির এমনি হাল, যা কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। বাংলার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বাড়ি থেকে কমপক্ষে একজন করে সদস্য জীবিকার সন্ধানে বঙ্গ বহির্ভূত এলাকায় পারি দেয়। সুবীরও তাদের মধ্যে একজন। মুম্বাইতে নির্মাণ শিল্পে শ্রমিকদের বেশ চাহিদা। কিন্তু সবকিছুর মধ্যে ছন্দপতন ঘটাল অজানা এক মারণ ভাইরাস। আক্রান্তের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন স্থানকে লাল-সবুজ-কমলা করা হল। মুম্বাই অতিদ্রুত লাল অঞ্চলের শিরোপা গ্রহন করল। সুবীরের মনে আছে লকডাউন না কি যেন একটা হরতালের মতো চালু হওয়াতে সমস্ত দোকানপাট, কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেল। প্রথমদিকে সে ভেবেছিল ‘এদেশে কতই না হরতাল হয়েছে, কতই না বন্ধ হয়েছে। এই বন্ধও কয়েকদিনের’। কিন্তু এই বন্ধও তো আর খুলে না। মালিক এক সপ্তাহ খাওয়াল, পরের তিন সপ্তাহে নিজের জমান টাকা ফুরাল। আলিপুদুয়ারের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সুবীরের অসুস্থ বৃদ্ধ বাবার ফোন আসে – ‘বাবা দিনকাল বেশি বালা না, আমি আর কয়দিন বাঁচুম জানি না? তর মুখটা দেহনের খুব ইচ্চা করতাচে রে’। সুবীর মাস ছয়েক আগে যখন মুম্বাইয়ের উদ্দ্যেশ্যে পারি দেয়, সে দেখেছিল বাবার শরীর ভাল নেই। বয়স হয়েছে। আজ যখন কাতারে কাতারে ঘরছাড়া জীবিকাসন্ধানী মানুষেরা ঘরে ফিরার ইচ্ছায় রাস্তায় নেমেছে, সেও তখন ক্ষুদা ক্লান্তি আর শুন্য পকেটকে সঙ্গী করে ট্রেনে উঠে পরেছে। ঘরে ফিরবে বলে। বাবার অপত্য আবদার পুরন করবে বলে।
একটুও কাল বিলম্ব না করেই সুবীর ক্লান্ত, ক্ষুদাপীড়িত দেহটাকে এক ঝটকায় কিছু শক্তি সঞ্চয় করে নিচে নেমে পরে। এক লহমায় পৌঁছে যায় ট্রেনের দরজায়। বাইরে তখন অগণিত যাত্রীর খাদ্য নিয়ে কাড়াকাড়ি, মারামারি। সুবীরও আগ-পিছু, ভাল-মন্দ না ভেবেই কারাকারি-মারামারিতে অনশগ্রহন করে। হাতে লাগল দশটি চিপসের প্যাকেটের একটি চেইন আর দুখানা কেকের প্যাকেট। খাদ্য সংগ্রহের সংগ্রামে থুঁতনিতে কখন যে কার হাত সজোরে এসে লাগল, সুবীর বুঝতে পারেনি। ট্রেনে ফিরে, বার্থে বসে মনে হল ঠোঁটটা কেটে গেছে। আরও দুদিনের যাত্রা। তারপর নিজ গ্রাম। আগামী দুদিন কেটেছিল এই দশখানা চিপসের প্যাকেট আর দুটি কেক দিয়েই। আলিপুরদুয়ারে ট্রেন সকাল পাঁচটা নাগাদ দাঁড়াবে।
তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। ট্রেন তাদের নামিয়ে দিয়ে গৌহাটির উদ্দ্যেশ্যে চলে যাবে। দূরে দেখা যাচ্ছে পুলিশের কড়া নজরদারি। ট্রেনের সমস্ত কোচ থেকে এই জীবিকাসন্ধানী লৌহমানবরা ‘পরিযায়ী শ্রমিক’ শিরোপায় ভূষিত হয়ে লাইন দিয়ে নামছে। সুবীরের জানা ছিল বাইরের রাজ্য থেকে আগত এই ঘর ফেরৎ শ্রমিকদের চৌদ্দদিনের কোয়ারিন্টনে যেতে হয়। তারপর সব ঠিক থাকলে, বাড়িতে। আর সন্দেহ হলে অনিশ্চিতপুরের যাত্রা।
‘কিন্তু, বাবা তো অসুস্থ। আমাকে দেখতে চায়!’
সাতপাঁচ ভেবে সুবীর চালাকি করে। তাৎক্ষণিক বুদ্ধিতে সে কোচের ভিতর দিয়ে শেষের কোচটিতে পৌঁছে যায়। আলো আঁধারি অবস্থায় কোন ভাবে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে অন্ধকারে মিশে যায়। কোনক্রমে সে নিজ গ্রামে পৌছায়। তার ভাবনাই ছিল অসুস্থ বাবার মুখখানা দেখে সে নিজেই পুলিশের হাতে ধরা দিবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য! বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশের অতন্দ্র প্রহরায় সে ধরা পরে। নিমেশে তার সমস্ত আশা নিরাশার রুপ নেয়। সে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল-
‘একটি বার স্যার, একটি বার শুধু। বাবার মুখখানা দেখেই ফিরে আসব’।
নিয়মের কাছে পুলিশেরও হাত-পা বাঁধা-
‘আপনি রেড জোন থেকে ফিরে এসেছেন, আমরা এত বড় রিস্ক নিতে পারিনা, বোঝার চেষ্টা করুন’।
সুবীরকে কোয়ারিন্টনে পাঠান হয়। বাবার সাথে দেখা হয় নি। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা জানতে পেরেছিল সুবীর ফিরেছে। বাবা দেখল সুবীর তার চোখের সামনে এসে বলছে- ‘বাবা আমি ফিরছি, এই দেহো, আমি, আমি তোমার সুবীর’। সকাল আটটা নাগাদ বয়স্ক বাবা সুবীর সুবীর বলে হঠাৎ নিস্তব্দ হয়ে গেল। না ফিরার দেশে তিনি পারি দিয়েছেন। মরদেহ উঠানের মাঝে রাখা হল। সুবীর তখনও কয়েক গজ দূরে দাঁড়িয়ে, পাশে দুজন পুলিশকর্মী। নিস্তব্দ, নিথর সুবীরের চোখ থেকে অঝোরে জল বয়ে যায়। মুখে শুধু একটিই কথা-
‘বাবা শেষ দেখাটা!
শেষ দেখাটা!
শেষ দেখাটা আর হল না!
ক্ষমা কর আমায়’।
নামহীন লেখাগুলি
আলো নেভার আগে
প্রনব রুদ্রর কবিতা (গুচ্ছ কবিতা)
অরণ্যে ধূসর ফুল
###
ঝড়
এ যুগের কালী
সুকান্ত গোস্বামী
পৃথিবী হয়তো ভুলে গেছে তোমার আশীর্বাদ।
হয়তো মানুষও ভুলে গেছে ,তোমার অহংকার।
মানুষ মনে রাখে না সৃষ্টি- ধ্বংস,
সে শুধু বোঝে আপন স্বত্ব।
তবে তুমি কেন দিতে চাও সীমাহীন প্রেম?
কেন ফিরে যেতে চাও ধরা তলে!
ভুলেছো কী অতীত তুমি?
পাষন্ড শিকারীদের দল-
কিভাবে খুবলে খেয়েছে তোমার জাতি -মান- ধন।
আক্রমণ করেছে তোমার শরীরে লক্ষ লক্ষ পিপাসু
সৈনেরদল।
এবার তুমি থামো।
বলো আর নয় প্রেম-ভালোবাসা-স্নেহ
দৃপ্ত কন্ঠে খড়্গ হাতে বলো -ওরে চিল, শকুন
আয় তোরা ,
বস্ত্রহীন কালীর জন্ম দেখ্ যুুগে যুগে ।
এসো আমার সমস্ত শরীরের মোহময় রুপের
কোমলতাকে খেয়ে ফেলা ধার্মিক ।
তোমাদের পুরুষাঙ্গ কেটেই বানাবো
আমার বিজয়মালা।
বদল
প্রসাদ সিং
কাঙাল হয়ে যাই
ছায়াবৃত্তে জেগেছে কুসুম
-
টংঘরে রাজা প্রথম মনীন্দ্র গুপ্ত রমিত দে ...” জন্ম থেকে এই জগৎকে পাঁচ ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করেছি, আর তাঁর বিচিত্র অর্থ মনের মধ্যে উঁক...
-
চোখ নীলাব্জ চক্রবর্তী ক্যামেরা অর্থে কোনও কাগজের চোখ ঠাণ্ডা দেখি সম্পর্ক একটা গাছ ফেনার ভেতর কে একটা দশকের বারবার নাম বইছে কাঁচের...
-
গানদীঘির কবিতা সুবীর সরকার ১. রাজবাড়ীর আলো সাগরদীঘির জলে পৌষের ঘন হয়ে ওঠা শীত শহরে ছড়িয়ে পড়ে সুরেন বসুনিয়ার ভাওয়াইয়া ঘোড়া ছোটাচ্ছ...