Saturday, February 24, 2024

শ্রীমান মূর্তিমান

শোভন মণ্ডল



           সবাই তাকে শ্রীমান মূর্তিমান বলে ডাকে। তার যে একটা পিতৃপ্রদত্ত নাম আছে সেটা অনেকে জানেই না। বাবা আদর করে নাম দিয়েছিল অনির্বাণ। কিন্তু নিজের কাছের লোকই সেই নাম ভুলতে বসেছে। আসলে এর পিছনে রয়েছে তার ‘কাজ'। সে স্ট্যাচু সেজে পয়সা ইনকাম করে। আগে বিয়েবাড়ি, জন্মদিন বাড়ি বা কোনো অনুষ্ঠানে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। কিন্তু বছর খানেক একটা স্থায়ী কাজ পেয়েছে। একটা পার্কে রঙ মেখে মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ।বিকেল ৩টে থেকে ৬টা পর্যন্ত তিন ঘন্টা স্থির হয়ে দাঁড়াতে হবে । কোন দিন চার্লি,  কখনো যীশু কখনো ভেনাস হয়ে একটা নির্দিষ্ট বেদীর ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। নিথর,  স্থির। চোখের পলক পড়ে না।  সে হয়ে উঠেছিল ওই পার্কের বিশেষ একটা আকর্ষণ। মাইনেটা খারাপ পেত না। মাস শেষ হলে হাতে হাতে ছয় হাজার। মোটামুটি তার সংসার চলে যেত।

         সমস্যাটা দেখা দিল দু'বছর পর। অনির্বাণ গায়ে রূপালী রঙ মেখে মূর্তি সাজতো। এই রঙের বেশি ব্যাবহারে সারা শরীরে কী সব যেন বেরোতে লাগলো। ডাক্তার দেখালে জানা গেল এরপর যদি আর এই রঙ মাখা হয় তবে পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে যাবে। অনির্বাণের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। এই কাজ বন্ধ করলে সে খাবে কী?  সে জোর করেই মনস্থির  করলো যা হয় হবে,  এই কাজ সে ছাড়তে পারবে না। কিন্তু স্ত্রীর কথায় এই সিদ্ধান্ত বদলাতে হলো। ভগবানের অসীম করুণা যে এই সময় সে একটা কাজও পেয়ে গেল। পুরীতে একটি হোটেলে ওয়েটারের চাকরী। শ্রীমান মূর্তিমান শীঘ্রই শহর ত্যাগ করলো। 

      বছরের মাঝে দু'বার এলেও একদিনের বেশি বাড়িতে থাকতে পারেনি সে। স্ত্রীকে টাকা দিয়ে ফিরে গিয়েছিল পুরীতে। এবারে এক সপ্তাহের ছুটি পেয়েছে। দু'দিন আয়েশ করে কাটানোর পর কী মনে হলো সে বাস ধরে পৌঁছে গেল সেই পার্কে,  যেখানে সে স্ট্যাচু সেজে দাঁড়িয়ে থাকতো।

      পার্কটার নতুন রঙ হয়েছে। গেটের সিকিউরিটিরও পরিবর্তন হয়েছে। নতুন নেপালী একটা লোক। ওকে চেনে না। পাঁচ টাকার টিকিট। অনির্বাণ টিকিট কেটেই ঢুকলো। মিনিট তিনেক হাঁটার পরই সেই জায়গায় এসে দাঁড়ালো। ঝোপঝাড়, আগাছার জঙ্গল। খুব কাছে যেতে পারলো না। কিন্তু যা দেখলো তাতেই গায়ে শিহরন খেলে গেল।  যে বেদীতে সে মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো সেখানে একটা পুরুষ মূর্তি। রূপালী রঙ। অনির্বাণ  অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।  না,  কোনো নড়ন চড়ন নেই। ওর মতো কেউ সেজে দাঁড়িয়ে আছে ?  মন বলছে,  হতেই পারে না।

কাছে আর গেল না। কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করলো না। 

ফেরার সময় সারা রাস্তা সে বিড় বিড় করে মনকে বোঝাতে লাগলো,   “ওটা কংক্রিটের মূর্তি। জীবন্ত মূর্তি হতেই পারে না। হতেই পারে না.... “




No comments:

Post a Comment