প্রদীপ চক্রবর্তীর ধারাবাহিক গদ্য
.............................. ......................
আত্মস্বর কিছুতেই চাপা থাকছে না ...
.............................. ...........................
অধুনাবিস্মৃত কবি , ভাস্কর মিত্রের কবিতা ...
.............................. .............................. ....
স্বগতোক্তি
................
বর্ষা আমার গোপন অহংকার | বৃষ্টির অঝোর আমাকে আমার যুগযুগান্তের কল্পকল্পান্তের , স্বগত ছেঁড়া আত্মজৈবনিক পাতা গুলোর কাছে নিয়ে যায় | আমি নিরুদ্ধ বিষাদের গুপ্ত ঘাতককে শুষে নিই সেই আমাকে পথ দেখায় | চন্ডীমঙ্গল থেকে ভাঁড়ু এসে আমাকে চেনায় বিষয়ী মানুষের কখনো একা হয়ে যাওয়া কান্নার রঙ | কাগজের সাম্পান গুলো ভাসিয়ে দেন বিজয় গুপ্ত , তাঁর মনসা মঙ্গলের পাতা গুলো থেকে ...
থেকে থেকে ডাক ওঠে ...' জয় মা বিষহরি '
.......চর্যার শিকারী, মৌলি ,ডুবুরি জেলে , সাপারু , বেদে, ডোম্বিনী....আমাকে দেখায় কত শত জগতের অনধিগম্য এক ধারাবাহিক স্মৃতিবীজ ও রাস্তার পথ ও প্রবেশাধিকার | এ ভাবেই কত শীত, গ্রীষ্ম, ব র্ষা ,বসন্ত , ক্ষুধা ,শীৎকার , প্রেম , চিৎকার , হত্যা ,মৃত্যু , বিলাপ ,
ক্রোধ , বাসনার কামনা সিক্ত সংরাগ , গুপ্ত হত্যা , উত্থান, পতন , জৈব যন্ত্রণা, উৎকণ্ঠা , ভয় , আনন্দ ও উল্লাস পেরিয়ে এক অন্তর্গত বিকাশমান বিষের বিমূর্ত গুলো নিয়ে এগিয়ে যাই জীবনের আরেক উপান্তের লক্ষে ...
কবে যেন লিখেছিলাম আমি , অনেকটা স্বগত মৃদু উচ্চারণে...
" পলাশ বনে তসরের গুটি | পথভারী ,ছায়া ভাঙ ছায়া ভাঙ নীল | বনের বর্ষা যেতে যেতে কাঠ বিড়ালি হয়ে গেছে ..."
বা
" ভেজা নারী এবং পথ | একটি ইন্দ্রিয় কাঁথার
অন্ধকার | মৃদু খুলে গেলো , বন্ধ হচ্ছে আর থেকে থেকে ক্ষত চলে গেছে | তাকে ডেকে আনা স্থপতির কাজ ..." ( সুফি রঙ )
বৃষ্টির গন্ধের আদিমতায় বুঝি , এই কসমিক বিশ্বে , এই বিপুল সময়ের আবর্তনে মানুষ কত ছোট সংগ্রহ | একটা পোস্ত দানা বা সর্ষে দানার চেয়েও ছোট | অনেক উর্দ্ধলোক থেকে তাকালে বোঝা যায় ,পৃথিবীর কোনো কাঁটাতার নেই | মানচিত্র নেই | নেই অসীমের কোনো ভূগোল পাঠ | তাবৎ পৃথিবীর সামান্য একটা জায়গা জুড়ে মানুষ ,তার চেয়েও অনেক ছোট্টো জায়গায় বাঙালি আর তার কবিতা | অথচ ,গড্ডালিকা প্রবাহের মতো , ভেড়ার পালের মতো ছুটে চলেছে শিবিরে শিবিরে বিভাজিত যুদ্ধক্ষেত্রের
অসংখ্য তাঁবুর আলো আঁধার | কিছু আরোপিত বণিক ও তাদের বিভাজন নীতি , প রিকল্পিত সামাজিক বাণিজ্য স্বার্থে এই বিভাজন রেখা প্রস্তুত করেছে | কিছু ব্যবহৃত মুখ ও ক্লিশে মুখোশের কাছে প্রলুব্ধ তরুণ যশোপ্রার্থী, প্রসাদ ভিক্ষু , কৃতার্থের আশায় জলাঞ্জলি দিতে চায় , দিয়ে আসছে অনাদিকালের ইতিহাসের কলংকিত অধ্যায়ের অন্ধকার থেকে , নিজের নিজস্ব আত্ম দহনের একান্ত রক্ষিত দ্বগ্ধ বিষাদের পাতা গুলো |
এই অঝোর শ্রাবণের ধারা , বিষ ও বিষাদ আমায় দেখায় অনেক কিছু | বিমূর্ত পৃথিবীর সমস্ত জীবাণুর ভর ও ব্যাপ্তি যেমন মূর্ত পৃথিবীর প্রাণী জগতের চেয়ে অনেকাংশে বেশি , ঠিক তেমনি আমার মনে হয় বা দৃঢ বিশ্বাস একই নামের কয়েকজনের এই নকল প্রচার সমৃদ্ধ , সৃজনের চেয়ে , এগিয়ে আছে সমস্ত পৃথিবীর এ তাবৎ কাল ধরে অপ্রচারিত , স্বল্প প্রচারিত লেখালিখির বিস্তৃত নিঃশব্দ বর্ণমালা | এতো লিটল ম্যাগ ,এতো গ্রাম শহর প্রান্তিক পৃথিবী ,এতো জেলা নগর পাহাড় জঙ্গল ও নদী মাতৃক বাংলার এতো নিরীক্ষা ,তিতীক্ষা , সাধন ক্ষেত্র তা কখনোই বিক্রি হয়ে যাওয়া কয়েকজন সাহিত্য অধ্যাপক ,আলোচক ও ইতিহাস বেত্তার কথায় পূর্ণ হতে পারে না | বাংলা কবিতার ইতিহাস পরিকল্পিত চক্রান্তে অসম্পূর্ণ | কত শক হুন মোগল পাঠান ইংরেজ বিদেশী শক্তি যা পারে নি শেষ পর্যন্ত ,তাদের দর্পিত অহং হারিয়ে গেছে কবেই ,ইতিহাসের আলো আঁধারি ধূসরতা য়, সেখানে কিছু বণিক আর তার মোসাহেব ... !
নামে লিটল ম্যাগ ,চরিত্রে মুনিম কা চামচে ,তারা বাংলা কবিতা ও সাহিত্যের সুযোগ সন্ধানী চরিত্র ,শুভাকাঙ্খী নন | অতএব ...বাংলার ঋদ্ধ স্বতন্ত্র ও চরিত্রগুণে মর্যাদাময় কবি এবং এতো অসামান্য লিটল ম্যাগের সম্পাদকদের যে অক্লান্ত প্রয়াস তার সঠিক ইতিহাস একদিন লেখা হবেই ,এই বিশ্বাস থেকেই আজ আত্মার অর্গল খুলে যায় যখন পড়ি অধুনা বিস্মৃত কবি ভাস্কর মিত্রের কবিতা | যার কোনো দিন কোনো কবিতার বই প্রকাশিত হয় নি |উনিশশো চুয়াত্তরে ,বাপী সমাদ্দারের সম্পাদনায় ' আজকাল ' পত্রিকায় তার গুচ্ছ কবিতা দিয়ে , মুষ্টিমেয় অথচ সঠিক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি | সাতের দশকের মাঝামাঝি এই একরোখা ,বেহিসাবি অনন্য কবি লিখতে আসেন ,কেবল মানুষের অক্ষরের বিষ আগুন ও ক্ষত মাখামাখি হয়ে বাংলা কবিতার প্রগাঢ় দহনে , কানায় কানায় প্রসাধনহীন অথৈ পুড়ে মরার বাসনায় ....তার কয়েকটি অবিস্মরণীয় পংক্তি আজো আমায় ঘুমোতে দেয় না ....
এক / " একটি ফুলের মৃত্যু যেখানে হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে , করেছিল কোনোদিন , সেদেশে যাবো না ..."
দুই/ বিকেলের আগে রোদের ভেতর থেকে বিকেলের গন্ধ উঠে আসে ...
তিন/ একদিন নক্ষত্রের দরোজায় হাতেরছাপ রেখে আসব | বিকেলবেলা / স্রোতস্বিনীর জলে ভেঙে পড়বে আমার আত্ম প্রোফাইল | / ডাইনিং টেবিলের বেতের চেয়ারে একদিন তুমি তোমার রুমাল ফেলে যাবে ...
চার/ লোহার মাংসল কাঁটা বিঁধে আছে লোহার ভেতরে / আজ তুমি কাছে এসো , মাংসে কামড় দাও , ভয়ঙ্কর দাঁত বের করো ...
পাঁচ/ অস্ট্রিচ পাখির ডিম ভেজে দেব গৌতম বুদ্ধকে ...
ছয়/ কবিতা গুদোমবিহীন হবে কেন / আমি যার কথা বলি সে গুদোম মূষিকবিহীন...
সাত/ ...আর সবুজ আউটফিল্ডে স্টেডিয়াম ফাঁকা / সেই চারিদিকে মহাশূন্যের নীল শূন্যতা ঘেরা করুণ এম্পিথিয়েটারের / ডাইকনগুলিতে/ বেজে উঠছে জনমানবশূন্য করতালি - মাঠে স্যিগাল উড়ে আসছে / স্টাম্পে এসে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রহ নক্ষত্রের ধারালো আলোর কিরীচ / ডেনিস লিলি , আর ছুটে আসছেন অর্ফিউসের মতো ডেনিস লিলি , / হাতে যাদুর লায়ার
বিশেষত নিজের কবিতার আলোচনা আমার বমন উদ্রেক করে ..... তিনপাটি জুতো এবং ম্যাচবক্সের বাঘ ,নামের একটি আত্মজর্জর ছোট নিবন্ধে উনিশশো পঁচাত্তর সালে ,এরম কিছু বলেছিলেন ভাস্কর মিত্র | একা আত্ম ক্ষয় , স্বতঃপ্রণোদিত ভাষার ভাঙন , পরিপূর্ণতাহীন বেঁচে থাকা না থাকা নিয়ে উদাসীনতা , প্যাশান , ভাষায় যাপন ও বাক্যে মুক্তির সন্ধান পিপাসু কবি ,অধুনা বিস্মৃত ....ভাস্কর মিত্র |
বাস্তবতার বিভ্রম
..........................
লেখক যে বর্তমান ও সমকালীন অবস্থানে থেকে চিরকালীন ভাবনার সর্ব ইন্দ্রিয়াতীত ও ক্রিয়া শীল ব্যঞ্জনাবাহী গভীরে , অন্যের দুষ্প্রবেশ্য যন্ত্রণায় নিজেকে বিলীন করে দেন , সেই অবস্থানটি আবিষ্কার হয় নানা ভাবে | মানিক বন্দোপাধ্যায় , পুতুল নাচের ইতিকথায় শশী ডাক্তারের উদ্যম প্রচেষ্টা , স্বপ্ন , কল্পনা ,প্রেম , ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে শেষ পর্যন্ত মানুষের নিয়তি তাড়িত পরাজয়ের কথাই বলেছেন | কাফকার লেখায় ,কিংবা সতীনাথ ভাদুড়ির ,ঢোঁড়াই ,এই পরাজিত মানুষের নিয়তি তাড়িত ইতিবৃত্তের সম্প্রসারণ নয় কি ?
হেনরি মিলারের ' সমাজ - কবি - কবিতা ' প্রবন্ধের ভাষান্তরে শৈলেশ্বর ঘোষ , বলেছেন ...
প্রতিটি সৃষ্টিশীল আত্মার ভয়ের মূল এইখানেই যে সে জানে , তাকে কেউ চায় না , ধ্বংসোন্মুখ পৃথিবীতে সৃষ্টিশীলতার কোনোই দাম নেই | বর্তমান পৃথিবীর কাছে সে অতি অপ্রয়োজনীয় | কবি জানেন যে আধুনিক সভ্যতা এক দুর্ভেদ্য জঙ্গল এবং এই জঙ্গলে আত্মরক্ষা করার কৌশল তার জানা নেই | প্রতিভা চিরাচরিতকে ভেঙে চুরে দেয়, সবকিছুরই পুরোনো ভারসাম্য নষ্ট করে দেয় | তার ফলে ভয় পায় সেই ছোট্ট মানুষেরা যাদের এই ভীরু জীবনে কেবল একমাত্র প্রার্থিত শান্তি ও সুষমার জন্য ,কোনো মূল্য দিতে তারা রাজি নয় | এই ভীরু জীবেরা নিজেদের দরজায় সব সময় দানবদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে | সে মনে করে ঐসব শান্তি দর্জির তৈরী শায়া - ব্লাউজের মতোই কিনতে পাওয়া যায় ....!
সে ভাবেই ছোট পাঠকের , মনোরঞ্জনে বিশ্বাসী , তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত কবিরা , ক্ষমতার ভাষায় ,ক্ষমতার মূল্যবোধ গুলোকে চারিয়ে দেয় গোলা পাঠকের মাথায় |শিথিল কবিতা যাপনে পারিতোষিক লোভী লেখনী সেই সমস্ত বর্জ্য লেখার ভুষি গুলো অন্বেষণহীন চর্চায় গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসিয়ে দেয় পাঠকের দুর্বল মনন| ক্ষমতার ভাষা আক্রান্ত হলে , নতুন ভাবনা ও চেতনার কবি ,শিল্পী ,গদ্যকার , আক্রান্ত হন | তাদের বিরুদ্ধে সরকারি উমেদার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আদা জলখেয়ে লেগে পরে , ভয়ে ,ভাবনায় , রাজ্যপাট হারানোর চিন্তায় |
কিন্তু এর পরেও থাকেন একজন সাত্র | উদাসী অবহেলায় নোবেল পরিত্যাগ করেন | সম্মানের প্রশ্নে , সুরেশ যোশী আকাদেমি পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেন | রাষ্ট্রের হাতে নিহত কবি , চেরবান্দা রাজুর স্ত্রী বি.শ্যামলা শাসকের কুৎসিত কৌশলকে ব্যর্থ করে দিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের দেওয়া পুরস্কার ঘৃণায় ফিরিয়ে দেন ! একজন বারীণ সাহা নিজের অসহায়ত্ব টের পেয়ে তাঁর ক্যামেরা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে , মেদিনীপুরের নামহীন আদিবাসী গ্রামের মানুষজনদের ,অক্ষর , চেনাতে ,জীবনের এক একটি দিন কাটিয়ে দেন | সভ্যতা থেকে নির্বাসিত গগাঁ তথাকথিত সভ্য সমাজের বাইরে গিয়ে তাহিতি দ্বীপে ফরাসী ঔপনিবেশিক লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে কলম তুলে নেন জীর্ণ শীর্ণ শরীরে , পত্রিকা প্রকাশ করেন | গ্রামবাংলাবার্তা,র সঙ্গে শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দুকে সঞ্চারিত করে যেতে পারেন , কাঙাল হরিনাথ | ফ্যালানজিস্টদের হাতে খুন হন লোরকা | ফ্রাঙ্কোর জেলখানায় মৃত ঘোষিত হন হারনানদেত | কলকাতার পার্কে ছিন্নমুন্ড দেহ পাওয়া যায় সরোজ দত্তের | এভাবেই প্রথা ও রাষ্ট্রের পরিকল্পিত চক্রান্তকে ব্যর্থ করেন বারংবার স্বপ্ন দেখা মানুষের ছদ্মবেশে অতি মানব ...
এভাবেই আপোষহীন লেখালিখি চালিয়ে যান ,বিনয় ঘোষ থেকে মানবেন্দুরায় | এভাবেই একদা পৃথিবীতে অসামান্য কবিতা ও অফবিট গদ্য লিখে বিস্মৃত হন কবি ভাস্কর মিত্র ,
, অনেকের মতো |
কেননা ভাস্কর বলতে পারেন তাঁর - জোয়ারের গু , ডানা 2 ,মে উনিশশো একানব্বইয়ের শাণিত গদ্যে , .....,' বি দ্যা জ্ঞান নয় , বিদ্যা : বাড়া ভাতের পাশে প্রতিদিন একটু ছাই রাখতে বলে , বিদ্যা একথনে অপারগ নয় , শরীর ভস্মের পরে যে ছাইকণা ফলে ,শস্যে ,প্রাণনায় ,জলে , জালে ,মীনে , পয়োধরে ব্যাপ্ত হতে থাকে নতুনতর আকৃতি ও মাত্রায় , শুধু বিদ্যা বলে : পরমার্থই জ্ঞান নয় | ঈশ্বর ও বিদ্যা নন , ধ্বংসমান বস্তুসমুচয় , যা ফল শাসিত ,যা পেকে ওঠা কামরাঙায় , যা ঘোর বাদামী সফেদার বনে ,রসে ও রূপে প্রতিভাত হচ্ছে , তা এই প্রাকৃতিকতারই আদ্যন্ত শাসনে , শিল্পকে ,সে যে রূপেই পরিস্ফুট করুক না কেন , তা ব্যক্তি নিরপেক্ষ ,শিল্প নিরপেক্ষ এবং সে শিল্প সম্রাট ,যোনি , স্বৈরাচারী , রমণ সমস্ত কিছুরই শাসনের এক অজ্ঞেয়তার রচনা , যে রহস্য চির গোপনীয় ...'
আসলে সত্তরের কবিতা জাতক ভাস্করের ভাবনায় একটা চাপা গেরিলা সন্ত্রাস বা অবিরত নিজেকে ভাঙনের নেশায় ,
স্বতঃপ্রণোদিত সুইসাইডাল টেন্ডেসি কাজ করে গেছে | রেসারেকশন গদ্যের একজায়গায় তিনি বলছেন , ' কবিতা ভাবি না , কিন্তু কবিতা ভাবনা শব্দটি আমাকে সিগারেট কিনতে গেলেই হন্ট করে এবং প্রতিদিন ঢিলেঢালা আঙুল থেকে বিদেশী মানুষের সংঘর্ষে সিগারেট পড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বৃহত্তর ঘটনা ঘটে না | আলেন্দে কত দিন মারা গেছেন ? তথাপি কবিতা এবং এর কয়েক সহস্র পিপীলিকা সদৃশ সমালোচকের আসা যাওয়া ঘটে | একমাত্র বাথরুমে অস্থির হয়ে উঠি | কতদিন আমি দেখি নি , নৌকোর মতো নরম এক মেয়েকে হায় ! ঈশ্বর , ক্রমাগত কমে আসছে কর্ষণযোগ্য ভূমি ও নারী , তবু এই পৃথিবীতে আজও দাওয়াইওলার মতো সমালোচকের অভাব দেখা গেলো না , আপাতত এর চেয়ে শ্লাঘাকর বিষয় আর কি থাকতে পারে ?"
ইডেন বাগানের গাধা অথবা গেরিলা বসতি নামে হয়তো অদূরে ,একদিন প্রকাশ পাবে এই নামের কবিতার বই ভেবে স্বপ্নে কিছুটা সম্ভাবনাময় স্বস্তিতে কখনো ক্ষণিক বিষাদিত আনন্দে ডুবে থেকেছেন ভাস্কর ....লিখে গেছেন এরকম কিছু ......
'তামার বর্ণের বহুদূর কাল থেকে , জলাভূমি থেকে / রক্তপাত থেকে , কুম্ভীপাক থেকে , দধীচির হাড় থেকে ,/ মরুভূমি থেকে গ্রীষ্ম পাষাণের ওই / তীঘ্নমুসলের মতো , মুদ্গরের মতো / স্বপ্নে যারা আর্তময় ক্ষুধাময় , ভূমিহীনতায় / যাদের চক্ষুর থেকে শস্য মুছে কষকষে রক্তপাত হয় ...'
বা
'
কী জানি কেমন হয় চলে যাওয়া ? আমি ত' সত্যি করে কখনো যাই নি ...'
এভাবেই ভাস্কর ....| এভাবেই আড়াল থেকে এখনো কারোর কারোর ধূসর স্মৃতিতে ভাস্কর মিত্রের কবিতা |
ভাস্কর মিত্রের কবিতা পড়তে গিয়ে , অমিয়ভূষণ মজুমদারের একটি সাক্ষাৎকারের কিছুটা অংশ এখানে বলে শেষ করবো ....
" শিব লিঙ্গ নিশ্চই দেখেছো তা কারো কাছে কামজ বাসনার প্রতীক হতে পারে , অন্য কারো কাছে মহাজীবন ও মহামরণের প্রতীক হতে পারে | তুমি কি সাহিত্যে এমন একটা conception কে তুলে ধরতে চাও ? তবে শিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করো আপত্তি নেই | সাহিত্যে ,ধরো আমার উপন্যাসে আমি তো জীবন থেকে উপাদান সংগ্রহ করে আগুন জ্বালাই , কিন্তু উদ্দেশ্য টা আলো ...., শুধু আগুন ই নয় ...
( কৃতজ্ঞতা / এই লেখাটির ক্ষেত্রে বন্ধু কবি শুভাশিস মন্ডল ও অনপেক্ষ পত্রিকার কাছে আমি ঋণী ...আমাকে তারা তাড়িত করেছে ,ভাস্কর মিত্রের কবিতার ওপর এই লেখাটি লিখতে ...)
প্রদীপ একজন সচেতন কবি ও আলোচক । ও যখন কিছু বলে সেটাকে গুরুত্ব দিয়েই ভাবতে হয় । তবে এই সমস্যাটি বহু পুরনো এবং বহু আলোচিত । যারা ভাল লিখছে বা সচল ভাবে লিখছে তারাই কবিতার ভবিষ্যৎ । সকলে লিখুন আর দেশ ও সমাজকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন ।
ReplyDelete