Monday, June 15, 2020








মধ্যরাতের সংলাপ
--------------------
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়



( ছাব্বিশ )


দুর্ঘটনার উৎসবিন্দু থেকে উড়ে আসা কিছু যান্ত্রিক ছায়ার সঙ্গে অতীতে দেখা হয়েছিল বলে মনে পড়ে, যাবতীয় লালের শরীর নিয়ে কেউ কেউ সেই উৎসবিন্দুতে ঘর পেতেছিল, সময়মতো সঠিক জায়গায় থেমে যাওয়াটাই যাদের আদর্শ তাদের সঙ্গে কোনো সংঘাত নেই বলেই প্রচারিত সত্য, আমরা হাসি ধরে রাখতে পারি নি, অথচ সেই হাসির গভীর থেকেই উঠে এসেছিল এমন কিছু সমীকরণ যাদের শরীর সমগ্রে নিহিত ছিল লাল বিন্দুর রহস্য, জলের গভীরে ছিল যাদের যাতায়াত তারা প্রচার চালিয়েছিল দিনভর, অদৃশ্য তারের শরীরে ঠাঁই হওয়া যেসব বাক্যবন্ধ সারি সারি শুয়ে আছে হিমঘরে, সভ্যতার শব্দে যা এখনও বিভিন্ন দিবসে মঞ্চে উষ্ণতা দেয় 


( সাতাশ )


দুয়ার থেকে হাত উঠে গেলে অনেকটা জায়গা ফাঁকা হয়ে যায়, কেউ যেন পা দিয়ে রেখেছিল চলাচলের পথ, উঠে গেলে যতটা মাটি এক জায়গায় এসে জড়ো হয় চিরস্থায়ী পথের রেখা আঁকার জন্যে ঠিক ততটাই মাটি এখন দুয়ারে ছড়িয়ে আছে, মেঘ এলে চিনে নেবে ঠিক, মাটির কণায় কণায় ধরা মেধাবী তেজ, বৃষ্টির তালে তালে সব ফোঁটা ঝরে গেলে খোলা হবে অতীত পাঠশালা, বর্ণমালায় মাথা দুলিয়ে গুরুমশাই আঙুলে আঙুলে দিয়ে দেবে গোপন বিদ্যুৎ , তারপর ভেজা ভেজা সন্ধেয় হ্যারিকেনের আলোয় দুয়ার জুড়ে বাদল পোকা, অন্ধকারের ঘনত্ব আর বাদল পোকার বাতাসে বাঁক নেওয়াই বলে দেবে কতদূরে আছে রান্নাঘর


( আঠাশ )


রাতের চোখের মতো এখানে ওখানে জ্বলে আছে কয়েকটা আলো, মনে হয় এখনো যেন ঠিক ঘুম ভাঙে নি, অথবা অনেকক্ষণ পাতা খুলে রেখে ভারি হয়ে গেছে, বছর কয়েক আগে একবার শুধু চৌমাথায় গায়ে গা লাগিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল ভিড়ের রাজ্যে, শুধু মাথা উঠে এসেছিল তার, হাত দিয়ে কিছু লিখেছিল প্রচলিত রাস্তার বিপরীতে, কেউ কেউ জেনেছিল কথা খুব রেগে গেলে ঝড় উঠে যায়, ধুলোমাটি কাদা হলে ঝড় নামে দেখা মেলে হাওয়া, এবার তো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আগুনের সঙ্গে হোক সখ্যতা, দোষ নেই মাটি ভারি হলে তবু থাক ডানা, জল থাক গোপনে গোপনে যেন ঝড় উঠলে আগুনের চোখে মাটি ডানা মেলে দিতে পারে


( ঊনত্রিশ )


একদিন হঠাৎ করেই সব জানলা খুলে দিয়েছিলাম, একঘেয়ে লাল ভোর আর হলুদ দুপুরের রঙে কিছু একটা মাখাতে চাইছিলাম, জানি এগুলো কিছু লিখে রাখার নয়, জানলা খোলার অনেক ব্যাখ্যা হয়েছিল, অথচ ব্যাখ্যা তো একটাই, মানে একলাইনের একটাই উত্তর বাতাস চেয়ে পাঠানো, জানি এগুলোও কিছু লিখে রাখার নয়, আপ্রাণ চেষ্টাতেই শুধু আষাঢ়ের জানলা থেকে দেখেছিলাম শ্রাবণ, বৃষ্টি চেয়েছিলাম কিন্তু এত বৃষ্টি যে কিছুই দেখা যায় নি, রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল হাঁটু সমান জল, পায়ে পায়ে অতি কষ্টে যখন রাস্তায় ওপারে গিয়েছিলাম তখন সব বাস চলে গেছে, একটা কথাই শুধু লিখে রাখব কেউ ছিল না


( ত্রিশ ) 


ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে এসেও প্রথম বাস ফেল করার দুঃখ দ্বিতীয় বাসে উঠে অনেকটাই কেটে যাবে, উঠেই জায়গা পেলে আরও কিছুটা, আর ঘাম ঝরানো দুপুরে জানলা দিয়ে হাওয়া আসতে শুরু করলেই শেষ অংশটুকুও হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উড়ে যাবে, বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো আস্তে আস্তে মরে আসবে, খুলে যাবে একটার পর একটা জামার বোতাম, শেষ বোতামে হাত দিতেই ঠিকানা এসে যাবে, রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে প্রথম দ্বিতীয় কোনো বাসই তখন আর মাথায় থাকবে না, ছায়ার শরীর দীর্ঘ হবে, চোখের সামনে দিয়ে চলে যাবে একের পর এক বাস, সাইকেল রিক্সা মোটরের পাশ কাটিয়ে আপনি তখন বিকেলের আড্ডায় 




                   

No comments:

Post a Comment