কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স
উমাপদ কর
৩১
জানালার ফাঁকফোকরে দুটো সঙ্গমি বেড়ালের গোঙানি
শোনাচ্ছে বাতাসের যথেচ্ছ বিউগল,
বাথরুমের ঘুলঘুলি ঢেকে-রাখা-কাচ গলে বাঘ-গর্জন
সাগরপারের হু-হু,
যুদ্ধোল্লাসী বাতাস গায়ের ঝাল ঝারছে গাছে, চালাঘরের ঠান্ডায়
কী সওয়াই না সইছে গাছ! জিমন্যাস্টিক,
আছড়ে পড়তে হবে জেনেও চালার টিন, টালি, শন, খড়,
পাটকাঠি, অ্যাসবেস্টাস, হোগলা, পলিথিন-জোড়া-টায়ার
উড়ছে ভরশূন্য, পতনক্ষণ-স্থান না-জেনে
বহুদূর থেকে ফাঁকায় ফাঁকায় আসেন তিনি
মেঘ-মুকুটে বাতাস-রাজ, পথে জোটান
ঘাঘরা ঘোরানো অজস্র নর্তকী, লাস্য, হাস্য, কাম-ক্রোধ,
চলনে বিচলন রাখেন, নেশারু মাতাল-পা-ফেলা, বদলে ফেলা পা
বাতাসের রণ-পা, বাদশা-বেগম হুকুমত—
কোথায় সে সর্বংসহা? জলকেলি শেষে জলহস্তীগুলো বদলে যায় লক্ষ-শুঁড়ের হাতিতে—
অতএব, সুতরাং, কাজেকাজেই, ফলত-গুলিকে ধারণ করতে
তুই পার্বতী হয়ে গেলি
বাতাসের জটাজুট তোকে লুফছে ফের ছুঁড়ছে, অঝোরে কাঁদছে মেঘ-মুকুট
ধর্ষিত হবি জেনেও আঁচল ওড়ালি, দেহধাঁধা আলগা করে বুক পেতে দিলি
উড়েও গেলি, ভেসেও গেলি, নর্তকীর তালে তালে ঘুরেও গেলি,
যদি হুংকার কিছু কমে, যদি কলাবাগানে মত্ত-হাতিগুলো একটু থামে
যদি ফাঁপানো ঢেউ-জলের মাথা কিছুটা নেমে আসে—
সব হলো পার্বতী, যা তুই চেয়েছিলি; বিল্লি-ফোঁস, বাঘ-গর্জন, মত্ত-হাতির দাপাদাপি
ঢেউয়ের মাথা সব নেমে এল--
কালের নিয়মে ধর্ষণ শেষে হত্যা এখন নিয়মমাফিক
তোর টুকরো টুকরো শরীর বাতাস-রাজ ফেলেছে খণ্ড-ভূ জুড়ে
হতে পারে একান্নটা—
পীঠ নয়, পুজো নয়, ত্রাণ চাইছে ওরা---
২১/০৫/২০২০
৩৩
বুধমণ্ডলীতে নাচ দেখালে উলুপী
দেখলাম ‘উমপুন’-এর সঙ্গে তুমি খুব যাও--
কী নেত্য গো তোমার!
আর বাদ্যি! ওহো-হো! ঝম্পন অর্কেস্ট্রা—
স্বকৃত, বাজাচ্ছিল তোমার লাস-ভরা নাভি,
গাছগুলো খুরে খুরে দণ্ডবত, ফিরেও তাকাওনি, শুইয়ে দিলে ঘুমে
আমি এক পঙ্গু— ব্যালকনি প্রিয়, শেফালি গাছটার
প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলাম, মঞ্জুর--
আজ গিয়ে দেখি, অসময়ে দু-একটি কুঁড়ি
বড়োসড়ো একটা আসর নির্মাণ করে ভেঙেছিলে তার ঠাঁটবাট
উড়িয়েছিলে ক্যানেস্তারা, নিভিয়েছিলে সহস্র বাতিদান
ঘরছাড়াদের ঘরগুলো সব লাশ
এ ওর ঘাড়ে ও ঘরে
পোস্টমর্টেম
প্রতিক্ষায়
সাগরের
ঢেউয়ে তোমার
স্টেপিংগুলো ‘নাচ ময়ূরী নাচ’
মুদ্রাগুলোর নয়া-সংস্করণ তিন ভুবন-পার
তাল-লয়-ছন্দের একঘেয়েমি ভেঙে তনছট অঢেল হাসি
মাইরি উলুপী ওরফে উমপুন স্বর্গে এ-নাচনে নিশ্চিত অভিশাপ ছিল কপালে
আসর ভাঙলে যখন, ঘোরের রাত ঘুমোয়নি
তোমার পদক্ষেপের ছাপ-ছোপে শ্রোতা-দর্শকদের ভিরমি
হয়তো আবারও নাচবে নয়া-সাজে নতুন কোনো নাম ভাসিয়ে
আমি লজ্জার মাথা-খাওয়া, আবার তোমার ঠোঁটের কাঁপন
থাইয়ের মাখন, ভুরুর সেকেন্ড-ব্র্যাকেট, চোখ-টেপা খেজুড়
স্তনঢাকা চেলিটার ফেলে ফেলে দেওয়ার
প্রতীক্ষায় থাকব, আলবিদা বলতে তো পারিনি তোমাকে…
২৩/৫/২০২০।
৩৪
নাই নাই-গুলো ড্রামবিট হয়ে উঠছে
করুণ বেহালা এখানে অচল
একটা স্যাক্সাফোন দরকার
উম্পুন কেমন ভুলিয়ে দিল
সাবানজলে বারবার হাত-ধোওয়া
মাস্ক ঝুলে থাকল ব্র্যাকেটে
‘উদ্ধার’ শব্দটাকে নেড়েচেড়ে দেখছে লক্ষ মানুষ
‘আশা’ বুদ্বুদ্ হয়ে করুণ প্রার্থনা সঙ্গীত
শুয়ে পড়া গাছেরা বাঁচিয়েছে
এবার কি মারবে!
মিঠেজল লোনাজল মিলেমিশে মীমাংসা
হেলিকপটার দু-চার পাক আকাশ
ওই একটু সবুজ ধোঁয়া
তরমুজ খেত
শান্ত বাতাস মৃদু, চিকন বাঘের পায়ের ছাপ, নীল-সাদা আকাশে
চিতা কিছু জ্বলছে
ছেঁড়াখোড়া সবুজ, বনানী ইজ্জত খোওয়া, ভালো আছে চারা-ছেলেমেয়ে
কবরের মাটি ভেজা
বিউগল বেজে উঠলে অনাহারীরা তন্দ্রা ছেড়ে উঠে বসবে
ইভাক্যুই-ক্যাম্পগুলোতে আলো জ্বলবে সন্ধ্যায়
ক’দিন বাদেই মরা আধমরা ঘরগুলোকে
ওরা ঠিক খুঁজে পাবে
যেমন আগেও পেয়েছে
২৪/০৫/২০২০।
উমাপদ কর
৩১
জানালার ফাঁকফোকরে দুটো সঙ্গমি বেড়ালের গোঙানি
শোনাচ্ছে বাতাসের যথেচ্ছ বিউগল,
বাথরুমের ঘুলঘুলি ঢেকে-রাখা-কাচ গলে বাঘ-গর্জন
সাগরপারের হু-হু,
যুদ্ধোল্লাসী বাতাস গায়ের ঝাল ঝারছে গাছে, চালাঘরের ঠান্ডায়
কী সওয়াই না সইছে গাছ! জিমন্যাস্টিক,
আছড়ে পড়তে হবে জেনেও চালার টিন, টালি, শন, খড়,
পাটকাঠি, অ্যাসবেস্টাস, হোগলা, পলিথিন-জোড়া-টায়ার
উড়ছে ভরশূন্য, পতনক্ষণ-স্থান না-জেনে
বহুদূর থেকে ফাঁকায় ফাঁকায় আসেন তিনি
মেঘ-মুকুটে বাতাস-রাজ, পথে জোটান
ঘাঘরা ঘোরানো অজস্র নর্তকী, লাস্য, হাস্য, কাম-ক্রোধ,
চলনে বিচলন রাখেন, নেশারু মাতাল-পা-ফেলা, বদলে ফেলা পা
বাতাসের রণ-পা, বাদশা-বেগম হুকুমত—
কোথায় সে সর্বংসহা? জলকেলি শেষে জলহস্তীগুলো বদলে যায় লক্ষ-শুঁড়ের হাতিতে—
অতএব, সুতরাং, কাজেকাজেই, ফলত-গুলিকে ধারণ করতে
তুই পার্বতী হয়ে গেলি
বাতাসের জটাজুট তোকে লুফছে ফের ছুঁড়ছে, অঝোরে কাঁদছে মেঘ-মুকুট
ধর্ষিত হবি জেনেও আঁচল ওড়ালি, দেহধাঁধা আলগা করে বুক পেতে দিলি
উড়েও গেলি, ভেসেও গেলি, নর্তকীর তালে তালে ঘুরেও গেলি,
যদি হুংকার কিছু কমে, যদি কলাবাগানে মত্ত-হাতিগুলো একটু থামে
যদি ফাঁপানো ঢেউ-জলের মাথা কিছুটা নেমে আসে—
সব হলো পার্বতী, যা তুই চেয়েছিলি; বিল্লি-ফোঁস, বাঘ-গর্জন, মত্ত-হাতির দাপাদাপি
ঢেউয়ের মাথা সব নেমে এল--
কালের নিয়মে ধর্ষণ শেষে হত্যা এখন নিয়মমাফিক
তোর টুকরো টুকরো শরীর বাতাস-রাজ ফেলেছে খণ্ড-ভূ জুড়ে
হতে পারে একান্নটা—
পীঠ নয়, পুজো নয়, ত্রাণ চাইছে ওরা---
২১/০৫/২০২০
৩৩
বুধমণ্ডলীতে নাচ দেখালে উলুপী
দেখলাম ‘উমপুন’-এর সঙ্গে তুমি খুব যাও--
কী নেত্য গো তোমার!
আর বাদ্যি! ওহো-হো! ঝম্পন অর্কেস্ট্রা—
স্বকৃত, বাজাচ্ছিল তোমার লাস-ভরা নাভি,
গাছগুলো খুরে খুরে দণ্ডবত, ফিরেও তাকাওনি, শুইয়ে দিলে ঘুমে
আমি এক পঙ্গু— ব্যালকনি প্রিয়, শেফালি গাছটার
প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলাম, মঞ্জুর--
আজ গিয়ে দেখি, অসময়ে দু-একটি কুঁড়ি
বড়োসড়ো একটা আসর নির্মাণ করে ভেঙেছিলে তার ঠাঁটবাট
উড়িয়েছিলে ক্যানেস্তারা, নিভিয়েছিলে সহস্র বাতিদান
ঘরছাড়াদের ঘরগুলো সব লাশ
এ ওর ঘাড়ে ও ঘরে
পোস্টমর্টেম
প্রতিক্ষায়
সাগরের
ঢেউয়ে তোমার
স্টেপিংগুলো ‘নাচ ময়ূরী নাচ’
মুদ্রাগুলোর নয়া-সংস্করণ তিন ভুবন-পার
তাল-লয়-ছন্দের একঘেয়েমি ভেঙে তনছট অঢেল হাসি
মাইরি উলুপী ওরফে উমপুন স্বর্গে এ-নাচনে নিশ্চিত অভিশাপ ছিল কপালে
আসর ভাঙলে যখন, ঘোরের রাত ঘুমোয়নি
তোমার পদক্ষেপের ছাপ-ছোপে শ্রোতা-দর্শকদের ভিরমি
হয়তো আবারও নাচবে নয়া-সাজে নতুন কোনো নাম ভাসিয়ে
আমি লজ্জার মাথা-খাওয়া, আবার তোমার ঠোঁটের কাঁপন
থাইয়ের মাখন, ভুরুর সেকেন্ড-ব্র্যাকেট, চোখ-টেপা খেজুড়
স্তনঢাকা চেলিটার ফেলে ফেলে দেওয়ার
প্রতীক্ষায় থাকব, আলবিদা বলতে তো পারিনি তোমাকে…
২৩/৫/২০২০।
৩৪
নাই নাই-গুলো ড্রামবিট হয়ে উঠছে
করুণ বেহালা এখানে অচল
একটা স্যাক্সাফোন দরকার
উম্পুন কেমন ভুলিয়ে দিল
সাবানজলে বারবার হাত-ধোওয়া
মাস্ক ঝুলে থাকল ব্র্যাকেটে
‘উদ্ধার’ শব্দটাকে নেড়েচেড়ে দেখছে লক্ষ মানুষ
‘আশা’ বুদ্বুদ্ হয়ে করুণ প্রার্থনা সঙ্গীত
শুয়ে পড়া গাছেরা বাঁচিয়েছে
এবার কি মারবে!
মিঠেজল লোনাজল মিলেমিশে মীমাংসা
হেলিকপটার দু-চার পাক আকাশ
ওই একটু সবুজ ধোঁয়া
তরমুজ খেত
শান্ত বাতাস মৃদু, চিকন বাঘের পায়ের ছাপ, নীল-সাদা আকাশে
চিতা কিছু জ্বলছে
ছেঁড়াখোড়া সবুজ, বনানী ইজ্জত খোওয়া, ভালো আছে চারা-ছেলেমেয়ে
কবরের মাটি ভেজা
বিউগল বেজে উঠলে অনাহারীরা তন্দ্রা ছেড়ে উঠে বসবে
ইভাক্যুই-ক্যাম্পগুলোতে আলো জ্বলবে সন্ধ্যায়
ক’দিন বাদেই মরা আধমরা ঘরগুলোকে
ওরা ঠিক খুঁজে পাবে
যেমন আগেও পেয়েছে
২৪/০৫/২০২০।
No comments:
Post a Comment