Tuesday, March 31, 2020

ঝুরোগল্প 

কাজল সেন 

প্রস্তাব 
চিত্রঋণ : দালি 


মেনীমুখো ছেলেদের একেবারেই পছন্দ নয় আরাধ্যার। যেসব ছেলেরা ভালোমানুষের মতো মুখ করে ঘুরে বেড়ায়, আড়চোখে মেয়েদের মুখ ও শরীরের দিকে তাকায়, চোখ নামিয়ে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে, কথা বলতে বলতে ঘামে আর বারবার সিনট্যাক্স ভুল করে, আরাধ্যা তাদের সহ্যই করতে পারে না। এইসব ফালতু ছেলেগুলো তার দু’চোখের বিষ। কাছাকাছি এলেই আরাধ্যার কেমন যেন অ্যালার্জি শুরু হয়। গা-হাত-পা চুলকোতে থাকে, নাক থেকে জল গড়ায়। আরাধ্যার মনে হয়, এখুনি দূরে ছুটে না পালালে তার নিস্তার নেই। অ্যালার্জির ট্যাবলেট খেয়ে একটানা চব্বিশ ঘণ্টা ঘুমিয়ে তবেই আবার তরতাজা  হয়ে উঠবে।

আর এভাবেই স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটির বছরগুলিতে একটাও মনোমতো লাভার, নিদেনপক্ষে একটাও বয়ফ্রেন্ড জোটাতে না পেরে, একটা বিখ্যাত রিফ্যাক্ট্রিজ কোম্পানির ল্যাবরেটরিতে চাকরিতে জয়েন করল আরাধ্যা। জুনিয়র সিরামিস্ট-কেমিস্টের চাকরি। বেশ ভালোই চলছিল চাকরিজীবন। কোনো ঝুটঝামেলা নেই। সহকর্মীরা প্রায় সবাই তার বড়কাকা বা বড়দাদার বয়সী এবং বিবাহিত। তার সিডিউল্ড জব ছিল, প্রতিদিন কোম্পানির স্টকইয়ার্ড থেকে বিভিন্ন উৎপাদিত রিফ্যাক্ট্রিজ ব্রিকসের নমুনা সংগ্রহ করে এনে ল্যাবরেটরিতে তার ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল টেস্ট করে তার রিপোর্ট সিনিয়র সিরামিস্ট-কেমিস্টের কাছে জমা দেওয়া।

কিন্তু আরাধ্যা একথা ভাবতেও পারেনি যে, কোনো মেনীনুখো নরম সরম নিরামিষ ছেলে নয়, বরং রীতিমতো আমিষ, তার থেকে বছর বারো বড়, বিবাহিত পুরুষ, কোম্পানির সিনিয়র কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার ড. সুখবিন্দর খান্না ডাকাতের মতো শুধুমাত্র প্রেম নিবেদন নয়, বরং সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব করবে। নিতান্ত যৌনাবস্থা থেকে আরাধ্যা হয়তো এইরকমই এক পুরুষের পৌরুষ কামনা করে এসেছে তার জীবনে, কিন্তু সুখবিন্দরের এই বেপরোয়া প্রস্তাব শুনে সে হতভম্ব হয়ে গেল। বলে কী লোকটা! এ তো দুঃসাহসিক ডাকাতির প্রয়াস! ঘরে একটা জলজ্যান্ত বউ থাকা সত্ত্বেও সে আরাধ্যাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে! আরাধ্যা রীতিমতো হকচকিয়ে সুখবিন্দরের চোখ থেকে চোখ না সরিয়েও ভেবে পাচ্ছিল না, যোগ্য জবাব সে কী দেবে!

সুখবিন্দরের অবশ্য কোনো তাড়া ছিল না। সময় নিয়ে ভেবে দেখতে বলেছিল আরাধ্যাকে। আরও জানিয়েছিল, তার স্ত্রী সীমা দীর্ঘদিন অসুস্থ। প্রায় বিছানাতেই  থাকে। সুস্থ হয়ে ওঠার কোনো আশ্বাস দেয়নি ডাক্তার। যে কোনো সময়েই শরীর আরও বিপর্যস্ত হয়ে এমনকি মৃত্যুরও মুখোমুখি হতে পারে। মৃত্যুর আগে তাই  সীমার একান্ত সাধ, সুখবিন্দরের জীবন যেন শূন্যতার শিকার না হয়, দ্বিতীয় স্ত্রী এসে যেন শূন্যতা ভরাট করে, এবং সে তা দেখে বিদায় নিতে চায়।

সুখবিন্দর সরাসরি আরাধ্যার কাছে প্রস্তাব রেখেছিল, আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি আছি, তুমি সম্মত হলে আমাকে বিয়ে করতে পার। আমার স্ত্রী  সীমার আগ্রহেই তোমার কাছে এই প্রস্তাব রাখলাম। আমি আমার সীমাকে বিগত আট বছর প্রচন্ড ভালোবেসেছি, দৈহিক সুখ দিয়েছি, কিন্তু সন্তান দিতে পারিনি। আসলে আমার ক্ষমতা থাকলেও সীমার ধারণ করার ক্ষমতা ছিল না। আমি জানি, সীমা চলে গেলে আমি খুবই কষ্ট পাব। তবুও কথা দিতে পারি, তোমাকে সুখী করার জন্য দায়বদ্ধ থাকব।    

No comments:

Post a Comment