উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কবিতা বিভাগ :
মুখবন্ধ :
মেঘের পাকস্থলী ও বাতাসার টংঘর...
দু'রাতে সাইবার ভাষা ছিঁড়ে জন্ম নিচ্ছে বালিকার কামশক্তি।আদিমতা বায়বীয় পদ্ধতিতে ছেঁটে নিচ্ছে জন্মের গন্ধ। শুকিয়ে যাচ্ছে কাকতাড়ুয়া কুয়াশা।আমরা সাংকেতিক খোঁজে বিলি করছি বিষ্ণুর আশীর্বাদ। শব্দের টুকরো ছিটিয়ে সাহসীকথার হাই তুলছি। বৈচিত্র্যময় ভূমিকা বিছিয়ে সংস্কারক মেঘের পাকস্থলী ও বাতাসার টংঘরে হাতরে বেড়াই প্রশংসার কালশিটে দাগ।কাব্য চিতায় খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ফাটিয়ে গদ্যের শিরা উপশিরায় আজো বেঁচে আছে দশকের ধুমকেতুরা
----রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ
আগরতলা, ত্রিপুরা
রাজীব ভট্টাচার্যের কবিতা :
পুণঃরাজা রাণী বিষয়ক
মাথার উপর আশ্চর্য জ্যোতিচক্র
ঘুরতে দেখেছি উদ্বাস্তু শিবির থেকে
প্রথম অলৌকিক আলো দেখেছি বদ্ধ
সীমানা থেকে দূরে
তোমার রাজকীয় চামর দুলে
রেডকার্পেট রাতে বিলাস ভ্রমণে
অজস্র তারা খসে পড়ে
আহাঃ কী ফুলঝুরি আলো !
পরাজিত এক সৈনিক দীর্ঘ পথ হেঁটে এসে
তোমার রূপমদিরার শেষ বিষটুকু পান করে
অণু পরমাণুতে মিশে যায় ।
অর্থজয়ী রাজা নিপুণ কৌশলে প্রতিদিন
ভরে তুলেন তোমার ভাড়ার বৈভব
একটার পর একটা গ্রহ উপগ্রহ উপহারে
বিদেশী স্বপ্ন পালতুলে নৈশ টেবিল নৌকো হয়ে যায়
মিলিয়ন ডলারের সাথে সদাগরী রমণ শেষে রাজা
অশ্লেষে লালাময় নিদ্রা গর্ভে চলে যান
তোমার জঠর ছুঁয়ে ।
অন্যদিকে তুমি প্রতিরাতে স্বপ্নশিকারি হয়ে
ওঠো ঈশ্বরী স্পর্ধার মোহময়তায়
কাগজে কলমে কাব্যের পৃষ্ঠায়
ফাঁকা ক্যানভাসে কেবলই
'ময়না দ্বীপ' আঁকো আশ্চর্য মহিমায় ...
অলীক সে দ্বীপে কোনদিন যাওয়া হবে না
জেনেও পথভ্রষ্ট নাবিক ডুবে মরে যায়
আর তুমি দূর থেকে করুণা অশ্রুতে সিক্ত
কর তাদের ব্রাত্য আত্মা
ততক্ষণে ভোর হয়, পাখি ডেকে ওঠে
মুক্তির আনন্দে ,আকাশে ওড়ে যায়
এপার ওপার ।
সকালের আলোর সাথে তোমার ঈশ্বরীয়
হাসি ছড়িয়ে পড়তে থাকে আনাচে-কানাচে
আমাদের ভাঙা ভাঙা 'ভুবন ডাঙায়' ... !
বিজয় ঘোষের কবিতা :
হলধরের বর্ণমালা কিংবা উনিশ-একুশের কথা
হলধরের বর্ণমালা একা একা হেঁটে যায় রাতের আঁধারে।
ভোরের আশায়।
অথচ যতটা সকাল সে চেয়েছিল পায়নি।
বর্ণমালার চেয়ে সত্য কিছু নেই।
উনিশ কিংবা একুশ দুটি বিন্দু পরস্পরের দিকে এগিয়ে এসে
একটি বৃত্ত রচনা করতে চাইছে
বৃত্তেরও বৃত্ত থাকে
যেমন অক্ষরের অক্ষর
সংখ্যাটা চার পাঁচ কিংবা এগারো বারো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিগন্তে পৌঁছে যাচ্ছে
এ সব সংখ্যা মানেই এক একটা অক্ষর
যার এপার ওপার নেই-----
কেবল উনিশে মে
একুশে ফেব্রুয়ারি
হলধরের বর্ণমালারা হেঁটে হেঁটে যায় আলোর দিকে।
অ-আ-ই-ঈ অনন্ত আকাশে পাখা মেলে।
আবু আশফাক্ব চৌধুরীর কবিতা :
ফুটন্ত অ-আ-ক-খ।
নীলাক্ষরে আঙুলের ডগা
লিখি নাম একুশের-উনিশের
হৃদয়ের নিভৃত কোণে বেধেছে যে বাসা
সেই পাখি ওড়ে গেলে পতিত পালকে
ভেসে ওঠে আমার আজন্ম ঋণ
লাল খুনে বিধৌত পরমপ্রিয়
বাংলা ভাষা....
ফুটন্ত অ-আ-ক-খ দোল খেলে
ভাসে জলে আকাশে হাওয়ায়
আমি তার অতন্দ্র প্রহরী
জন্ম জন্ম যুগ যুগ ধরি
স্মরণের সরণী জুড়ে অবিস্মৃত মাতৃভাষা
শহিদের দুর্দান্ত আত্মবলিদান
আজ খোলা মাঠে হেঁটে চলি
গড়ে তুলি হৃদয়ের বলয় বৃত্তে
অনন্ত সোপান।
দীর্ঘ কবিতা ...এক
চিরশ্রী দেবনাথ
এক প্রবল আলো এসেছিল, অবিশ্বাসী, ধুলোময়
আমাকে বলতে এসেছিল, আমি আছি, বিস্ফোরণে
আলোর মধ্যে দিয়ে গেলাম, লতানো নাগরিক সত্ত্বা
কেঁদেছিল করাতের বুক, তবে কি তারো আছে হৃদয়
থমকে দাঁড়ালো মিছিল, মুখ নীচু করা অবয়ব
পাথর ভেঙেছে যারা, তাদের হাতে ফুটেছে জীর্ণগ্রন্থ
একটি পৃষ্ঠায় ঋতু ঝরে, অপর পৃষ্ঠায় বিকৃতি
প্রতিপালিত দাম্পত্যের মতো অভ্যস্ত রাতচূর্ণ
কখনো নির্নিমেষ তাকানো হয় না, গ্রীবাতেই পতন
সব ফিরে আসা যদি ভুলপথে ঘুরিয়ে দেওয়া যেতো
যেমন করে আকাশভর্তি নিম্নচাপ ভুলে যায়
নির্দিষ্ট সীমান্ত,
উচ্ছিষ্ট বস্তি হাসি ছড়ায় সাগর কিনারে,
অন্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়াচ টাওয়ার
একবার যে চলে যায়, সে পায় বিরহের ঠিকানা
কত দুরন্ত বৃষ্টিতে লেখা হয় ছাতা ভাগ করার গল্প
পুরোনো কথারা বেড়াতে আসে ঝিনুকের দোকানে
নিঃশব্দ বসবাস তাদেরও ছিল শক্ত ডানার নীচে
যেদিন থেকে ছড়ালো তারা অভিমানের বাজারদর
কেমন অনভিজাত ময়লা রঙ, গ্রাস করছে শ্বেত মুখ তার
আত্মগত হবার আগে ছেয়ে যায়
ধূপগাছে ভরা পাহাড়ী জনপদ
আগুনের গল্প শোনেনি তারা শুধু ভাঁপে জ্বেলেছে নবান্ন
পিঠে পাতে ভুলে যায় চাঁদশিশু ,
তার হাতে আছে পূর্বজন্মের নারী ও অস্ত্র
এতটা সরল জলও কখনো হয়নি,
অন্তরে রেখেছে শৈবাল ষড়যন্ত্র
এখানে হাজার হাজার মিথ্যার বারংবার চাষাবাদ
মেঘলা দিনে কালো ফসল জাগিয়ে রাখে
প্রতিহিংসার গুচ্ছ গুচ্ছ শীষ
হৃদয়ের কথা লিখতে পারা দেবদূত রেখে দেয় কলম
ঝকঝকে সবুজ ছুরিতে সে অগ্রন্থিত সময় কাটে
সাদা পাতায় অবিশ্রান্ত বিরোধ আঁকে
মৃত্যুুর কাছে থেমে থাকা তরুণী হাসতে থাকে
কত অপমানে অবশেষে সে সোনা হচ্ছে, জ্বলছে প্রদীপের মতো
অসমাপ্ত দীর্ঘ স্তবকের সেগুনবাগিচার ছায়াঘন আশ্রয়
যে সুরে বিউগল বাজে, তার কাছে চেয়েছে নীরব প্রতিবাদ
বিন্দু বিন্দু ত্রাস জমিয়েছে অদৃশ্য সাগর ঝড়
অভ্রান্ত দিকনির্দেশনায় সেও জানে এসব কিছু নিতান্তই সস্তা
মুক্তো ব্যথা নিয়ে যে ঝিনুক তুলে দেয় আপনপ্রাণ ডুবুরীর কাছে
কন্ঠ জড়িয়ে থাকা মুক্তাসমূহ জানে শুধু বিষাদ আর নীল উল্লাস
প্রতি অপমানে স্নিগ্ধ হই, জ্বেলে দিই হোমের আলো
জ্বলতে জ্বলতে প্রলম্বিত অগ্নিকে দেখি কলমের মতো
ফিরে আসি, ফিরে আসি, অক্ষরের কাছে,
আরো কাছে, বার বার, বার বার, প্রত্যেক বার।
দাম্পত্য
তমালশেখর দে
তার কাছে যেতে ইচ্ছে করে,
ইচ্ছে করে- - তাকে ছুঁয়ে বলি,
'এসো না - হুইলচেয়ারটা রেখে,
কোথাও একটু হেঁটে আসি, যেখানে ঘাসের সাথে ঘাসেরা কথা বলে !'
তোমার শহর
শতদল আচার্য
তোমার মনখারাপে লাল রঙ কোথায় যেন লুকায়
তোমার চোখের বৃষ্টি চেয়ে যায়
গানের কথার আড্ডা মিস করি ।
তোমার তানপুরার সুরে,
এ শহর আর আগের মত জেগে উঠে না...
ম্যাজিক
বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য
ঝিলাম, কাল মেঘপাহাড়ে চড়ে
অপলক তাকিয়ে দেখেছি তোমায়,অনেকক্ষণ।
ওই দূরে তখন ছোট্ট পাখি
বানাচ্ছিল বসন্তের সিম্ফোনি
মুহূর্তে ভুলে গিয়েছিলাম
বরফ দিয়ে সিগারেট ধরানোর ম্যাজিক।
আসলে বসন্তকাল বড্ড বেহায়া ঝিলাম
প্রতিবার তোমায় প্রেমিকের মত সে
ছুঁয়ে যায়...
বারণ করা সত্ত্বেও!
জুড়িনারী-তৈংতুইয়া
হারাধন বৈরাগী
জুড়িনারী-লংতড়াইরেঞ্জের একটি ছড়ার নাম
তৈংতুইয়া-ছড়া জড়িয়ে থাকা পাড়ার নাম
একটি ভালবাসার-অন্তঃক্ষরণেরও নাম
একজন আরেকজনকে ছাড়া-ভাবতে পারে না
একজন আরেকজনকে ছাড়া বাঁচতে পারে না
একদা বুরাসার কোপে-লেবাঙবন্যা আসে
জুমের ফলন-কোরকেই নিকেষ করে
ওলাওটা শ্বাস ছাড়ে-তৈংতুইয়া জুড়ে
ভারী হয়ে ওঠে- জঙ্গলের শ্বাস
তৈংতুইয়া হারিয়ে যায়-অবশেষ
পালিয়ে বেড়ায়-ইতিউতি পাড়ায় পাড়ায়
জুড়িনারী-বিরহব্যাথায় কসমতিতে ডুবে
লংতরাই জুড়ে-জীবনজুয়াড়ি শোনতে পায়
"জুড়িনারী তৈংতুইয়া-সাপো কাকুইয়া
তংতো মাইনাইয়া"-জুম্মনারী গেয়ে যায়
*সাপো কাকুইয়া--তংতো মাইনাইয়া--একটি গান-নাগনাগিনার মতো একজন আরেকজনকে ভুলে থাকতে পারে না।
ধুলো
নীলাদ্রি ভট্টাচার্য
ফুটপাতে থেৎলানো মানুষের ঘাম
আমি চুপিসারে তার ছায়ায় আগুন মাখি|
ভাতের বাষ্প ঘাড় গুঁজে খোলস দিয়েছে আমায়
আমি তখন সমস্থ অভিঘাতে অভাবগ্রস্থ কবি|
ইসিজি
আশফাক্ব হাবিব চৌধুরী।
ক্যানভাসে যত ধারা পর্বতমালা হবে
জীবন ততটাই স্বতঃস্ফূর্ত...
সেদিনের ইসিজির ব্যাখ্যায় ওষধি কলম
আঁকলো হুবহু এমন লেখচিত্র।
তোমার কথা
নীলদীপ চক্রবর্তী
তোমার শরীর থেকে ঝরে পড়া ঘাম
তোমার মুখ থেকে নেমে আসা রক্ত
তোমার দুচোখ বেয়ে বয়ে যাওয়া জল
তোমার কথাগুলো ভীষন শক্ত !
তোমার শক্ত হাতে পড়ে যাওয়া কড়া
তোমার চোখের নিচে জমে ওঠা কালি
তোমার পাঁজরের হাঁড় দারুন স্পষ্ট
তোমার অনেক টাকা? সেগুড়ে বালি !
প্রশ্ন
সৌরভ গোস্বামী
পূর্বপুরুষের রক্তের দাগ লেগে থাকা কাঁটাতারের নাম স্বাধীনতা,
নেতার মিথ্যা ভাষনের পর প্রতিবাদের কন্ঠের ডাকনাম স্বাধীনতা,
শিক্ষার আলোয় একটি মেয়ের হাতের কলমে বাংলাক্ষরের নাম স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা আমার-তোমার পেটেন্টের দলিল নয়,
ঐ নদীর ধারের বালুরাশির উপর চাঁদের আলোর
বিকিরন সেটাও ধরে নিতে পারো স্বাধীন-তা।
আবার মাছ ধরতে যাওয়া নেংটা ছেলেটার উচ্ছাসে বর্তমান প্রতীক রুপে।
বরফাবৃত ভূমি থেকে মরুদ্যানের ক্যাকটাস স্বাধীন সবাই,
তবু তার পরেও
পথের ধারে চার শিশুর এক থালে ভাত খাওয়ার লড়ায়ের নাম
জানো কি?
নির্মম গুলিবিদ্ধ সৈনিকের দেহের নাম জানা আছে কি?
বছরের পর বছর যায়,
টাকশাল টাকার পর টাকা ছাপায়,
তাহলে জানো কি দাড়িদ্রের শেষ ঠিকানা কোথায়?
সংসার
সুমন পাটারী
আমি পারতাম, আচ্ছা বেশ--
এদিকে আসুন, এই আমার আর্তনাদময় সদর দরজা,
পা রাখুন, গা ছমছম করছে!
না, সামনে আসুন, এখানে এটা গোবরস্তুপ,
গন্ধ নয় আতর, আরেকটু আসুন,
এই এখানে আমার রান্না ঘর,
চুলার ধোঁয়া, প্রায়ান্ধ মার ইন্দ্রিয়,
কেঁচোর আখড়া,
এখানে ইটের স্তুপ,
এনে রেখে দিয়েছি দুবছর হলো, ঘর হয়নি,
আরেকটু আসুন, ওনাকে দেখে ভয় পাবেন না,
পিসিমা, জন্মপঙ্গু,
ভয়ঙ্কর শব্দে কাঁসছে বাবা,
ওদিকে যাবেন না, চ্যালা চ্যালা কফ, মাঝে রক্ত,
এদিকেই আসুন, এই আমার ঘর,
এই বন্ধন ব্যাঙ্কের সাপ্তাহিক বই,
রগরগে চোখে বলছে কাল শুক্রবার,
এগুলো দেখবেন না,
বন্দী আমার যৌবন বিলাস,
ঝলসে যাবেন এতো তাপ,
মায়ের গয়না নেই,
বেঁচে বোনের বিয়ে দিয়েছি,
ওনাকে বানিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন
ঐ পিতলের তালায় আটকে রেখেছি,
এখানে জমি বন্ধকের কাগজ,
এখানে, সুদ। আসল ধানক্ষেতে।
জানালা খুলবেন না, দানব ঝিঁঝিসুর,
এই আমি মিছিলে যেতে পারিনি,
এই আমি বন্যা দূর্গতদের জন্য কিছু বলতে পারিনি,
এই আমি আপনার স্তাবক হতে পারিনি,
পার্টি অফিস, এই আমির জন্য কোনো অর্থ রাখছে না
কারণ বাবা ও পিসির ওষুধ, মায়ের গয়না আমাকেই করতে হবে।
রাধা
রাজীব মজুমদার
পায়ের ছাপ রেখে গেছো
বকুল তলায় ...
পরজনমের রাধা তুমি
গতজন্মের সঙ্গম শর্তে
প্রতিজন্মে জাতিস্মর বানাও |
সালমা সরণি
চিত্তরঞ্জন দেবনাথ
এই রাস্তার নাম পাল্টে দিয়েছে সালমা
হ্যাঁ। আমি ঠিক বলছি।
কী অদ্ভুত মেয়ে সালমা আক্তার!
নাম রাখতে গিয়ে হয়তো ভাবেনি ওর আব্বু
এই মেয়েটা আস্ত আগুন খেয়ে আগুন উগলে দিতে পারে
নিজের অজান্তে নিজেকেই উড়িয়ে নিয়েছে ও ঝড়ের বেগে
ফুঁত্
কোন ভাবেই ওকে আর ফিরিয়ে আনতে পারছে না কেউ
মেয়েটা গায়ে আগুন মেখে
ঐ দিকে মিশে যাচ্ছে
একটু একটু করে ও অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে
নিভে যাচ্ছে।নিভু নিভু সালমা।
অস্পষ্ট সালমাকে আমি স্পষ্ট দেখছি--
ও ক্ষয়ে যাচ্ছে
কেন বেমালুম আগুন মেয়েটাকে
চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে
হে ব্রহ্মা...
অভিমানে দুর্বোধ্য ছাই উড়িয়ে দিচ্ছে আমাদের দিকে
শুধু ছাই।
দূরের বর্ষাবন, এতো এতো কুঁড়ি, ফুল, পাতা
এভাবে পুড়ানো অনভিপ্রেত ছিল, অন্যায় ছিল
ও কি জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছিল এত্ত সব?
সালমার ওড়া হলো না আর
আগুন খেয়েছে ওর কৈশোর
ওর জ্বলন্ত ডানা পুড়ে দিচ্ছে
আমাদের ধর্মগ্রন্থ
আমাদের ভালোবাসা
আমাদের বর্ষাবন
আমাদের উর্বর পৃথিবী
ছাই নেড়ে নেড়ে আমাকে লেখা সালমার শেষ চিঠির
যে কথাটা উদ্ধার করেছেন অত্যুতসাহীরা
''চিত্ত, তুমি হিন্দু আমি মুসলমান''
................
১২ বছরের কালঘুম
রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ
মেঘের মুখ খুলে দাও আজ
নেমে আসুক অপমানের ঘাম
১২ বছরের কালঘুম ভাঙিয়ে
লিখে রাখি অসমাপ্ত বদনাম
প্রেমের নামাজে পাপ ছিলনা
ছিলনা রক্তে বর্বর চুম্বন
আদিম বানে কেঁদেছি সারারাত
ধোঁয়ায় উড়িয়ে বৈষ্ণবী মন
ছুঁয়েছি শ্মশান পাড়ায়
ক্ষত বিক্ষত অসতী ঠোঁট
যে আচল ছিলনা আমার
সেই কেড়ে নিল সমস্ত প্রতিশোধ
তুলসি তলায় মাটি ফুঁড়ে
ছিল যত ব্যথা
সযত্নে পুঁতে রেখো
এক জীবনের শেষ কথা
সত্যবচন
পিংকি পুরকায়স্থ চন্দ্রানী
মাঝে মাঝে কবিকে লুকিয়ে রাখতে হয়,
নইলে মৃতদেহ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেড়ে যায়।
ভর দুপুরে নিজের আত্মাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয়,
নইলে অপরাধের কালো সাপের বিষে ,
ঢলে পড়ার দিন খুব তাড়াতাড়ি চলে আসে দোরগোড়ায়।
বাঁচতে হয় গান্ধীজীর সেই তিন বিখ্যাত বাঁদরের মতন।
চোখ কান মুখ বন্ধ করে, নইলে কেউ না কেউ দয়া করে,
শ্বাসটুকু ও বন্ধ করে দিয়ে যায়।
আসলেই কি বিচিত্র এই দেশ সেলুকাস,
রঙ্গমঞ্চের বেশভুষায় জীবন কেটে যায়।
সকাল
অমলকান্তি চন্দ
লতানো লাউয়ের সোহাগী ডগায় জড়িয়ে থেকে থেকে
কত অচেনা পাখীরা ভীড় করে এবেলায়
ঘুঙুর পায়ে নাচতে থাকে ভোরের বাতাসে।
বাতাসেরা লাউয়ের মাচানে মাচানে
এগাঁও ওগাঁও ঘুরে বেড়ায় তোমার সাথে।
পাখায় লুকানো মুঠো মুঠো আলো
ছড়িয়ে দেয় গাছেদের মাথায়।
তোমারই করতলে একলা আকাশ
ঘোমটার আড়ালে সকাল ,
কলসী কাঁখে ছুটে যাও জলের ঘাটে।
গুচ্ছ কবিতা :
ল্যাবরেটরি
অভীক কুমার দে
একটা পৃথিবী ইতিহাসের পাতায় ঘুমিয়ে
মাটি ঘেঁটে ঘুমপাড়াতে আসে কোন গবেষক,
সেই পৃথিবীর মুখোমুখি হলেই
কেমন বোকা বোকা আদিম চোখ
আমাকেই খোঁজে ইতিহাসের ভেতর।
.
আরেক পৃথিবীর জলন্ত মুখ
বাতাসের কাছে রেখে গেছে ওরা,
একটু একটু করে ঝলসে যাওয়া ভেতর
কাঁচাদৃষ্টি
রোগাক্রান্ত সময়
আকাশের নিচে রঙিন স্বপ্ন আঁকে।
.
বিকলাঙ্গ ভ্রূণের ক্রমবিবর্তন দেখে
প্রশ্নচিহ্নে ভাঙাবুক অবশেষে লুকায় নথি।
..........
কষ্ট
চোখে জল এসে চলে গেলে
তেমন কষ্ট হয় না,
কষ্ট হয় তখন--
যখন চোখ থেকে জল উল্টো বয়,
ভেতরবুকে নেমে আসে
এসিড বৃষ্টির মতোই,
প্রতি ফোঁটা জল
নরম কলজেটা ফোঁড়ে,
কেউ দেখে না
কেউ শোনেও না
যদি না জ্বলে যাওয়া খবর
মুখের আয়নায় ছবি হয়।
চোখে জল এসে চলে গেলে
তেমন কষ্ট হয় না,
কষ্ট হয় তখন--
যখন সব জল উল্টো বয়ে যাবার পর
শুকনো চোখ আলো ভুলে
চেয়ে থাকে নিষ্প্রাণ ভেতর।
............
আমি পথে পথের ছায়ায়
গুহার ভেতর আমি।
একদিকের প্রবেশদ্বার সামনের দিকে
অদ্ভুতুড়ে শুয়ে এক কাঙাল পথ
অন্ধকার মেলে ধরেছে পথে।
.
সামনে বহুদূর, হতে পারে অসীম।
দুপাশে কংক্রিটের বুক
গোলাপকাঁটার মতোই প্রহরী,
মাঝে গা ঘেঁষা অন্ধকার
পায়ে পা রেখে হাঁটছে প্রেমিকের মতোই
ছন্দ জানে,
জানে-- সামনে অজানা পথের দূর।
.
অনেক চলার পর যদি গুহামুক্ত আমি,
যখন কংক্রিটের দু'পাশবুক আর গোলাপকাঁটা নয়,
তখনও কালো থাকে
গুহাজীবনের ছায়ায়।
হয়তোবা আলো দেখি
যেখানে গুহাপথ শেষ,
যখন অশরীরী আলো অপ্রয়োজন
.
জীবন আবার গুহামুখে আসে এবং
আমি পথে পথের ছায়ায় ।
...............
তরল সংকেত
নিঃসঙ্গতাকে ভালোবাসি না বলেই
তোমার ভেতর সঙ্গী খুঁজি, ভেতরে যাই,
যতই যাই নিঃসঙ্গ আরও আরও...
অজানা অন্ধকার,
আঘাত আর আঘাতের অপেক্ষা,
মোড়ের পর মোড়, তবু মনে হয়--
আঘাতেও সুখ তোমার রোদ বৃষ্টি ছায়ায়।
কখনো আবার বিদ্রোহ দেখি শরীর আর নিঃসঙ্গতার
আনুপাতিক গণনায় ভেতর ভেতর
তুমি আমি কোনো অসময়ের কাছাকাছি।
তুমিও জানো ভেতরে কোন নীল তিমি ডুবে নেই,
ডুবে থাকে ভাবনার অসম যত আচরণ,
বৈশিষ্ট্য অথবা অবশিষ্ট সব এভাবেই তোমার ভেতর
নিঃসঙ্গ হতে হতেই অবসাদ
ঢলে পড়ে একেকটি মরণ
হয়তো তুমিও দেখো, অন্যভাবে।
জানি, তুমিও লাশঘর হতে চাও না,
সঙ্গী খোঁজো,
আরও গভীরতায়
এমন চলন থেকেও জেগে ওঠে কোন গোপন ঢেউ,
জোয়ারে লুকায় জীবনের তরল সংকেত।
............
অভাবের লু
আমার বসন্ত নিয়ে গেছে অভাবের লু,
মটকা পড়া শরীর এখন মরুপথেই হাঁটে
বুকের ভেতর গোছানো আকাশ,
মেঘ এসে জমা হয়,
সবটা আকাশ ঢেকে দিলে
উষ্ণতা বাড়ে;
যতসব মিথ্যে প্রতিশ্রুতির কালো ছায়া।
ললিতসুরে ডেকে ওঠা ভোরের কোকিল
মুকুলবৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া চাতকের চোখ
রঙিন পলাশের ছবি আঁকে না এখন,
উড়ে উড়ে দূরে যায় মেঘের বিনুনি
বিশ্বাসী মাটি খোঁজে,
পিছে পিছে বালিয়াড়ি;
ভেসে ওঠে হতাশার মরীচিকা।
অনুরাগ ভৌমিকের গুচ্ছ কবিতা
(এক)
অন্তর্গত,তবু হাহাকার আছে
ফুলের দীর্ঘশ্বাস মায়া
অন্ধকারে,
গল্পের আলোয় কিছু কাচপোকা
প্রেম নিবেদন, আত্মবিস্মৃত সুর...
(দুই)
ইশারা বুঝিনি, বুঝেছি মুহূর্তের সুখ,
পৃথগন্ন প্রেম, সঞ্চিত আনন্দ,
তল জল,ঝাঁপাতে ততপর-
তুমুল সম্পর্ক,সরু শীতের পথে...
(তিন)
এসব লক্ষ্মী-নাচ,শহর থেকে গ্রাম,
চোরা নীতির টিকি ধরে থাকে হাত।
হিংসার আলোয় গা ভাসায় কবুতর,
সজাগ পা জানে কীকরে আঁধারে হাঁটতে হয়...
(চার)
এই প্রকাশ কে অস্বীকার করা যায়না,
কিছু শব্দ দাও,ছড়িয়ে দিই আকাশে।
কিছু দিয়ে রচনা করি নৌকো,
চলে যাই জোছনা বিছানো বাঁকে...
(পাঁচ)
অন্য পারে সুখ, কবিতা উড়ে যাও,
আমি শব্দ হন্তারক,
অনটনের সংসার,
হাড়িতে ফোটাই উদ্বাস্তু প্রেম...
(ছয়)
প্রহেলিকা,ঝাপসা জিজ্ঞাসা,
যদিও চুম্বকের মতো সুন্দর।
রঙিন শব্দেরা পাখা মেলে-
উড়তে উড়তে ক্লান্ত হংসী স্বপ্ন-দ্বারে...
(সাত)
রূপ ও রঙের সংসারে আমি দৃষ্টিহীন,
রতিশাস্ত্রে পাকা হবে এই আশায়-
বুক দেখায় দেশীয় পাখি।
এভাবে দুপুর বর্ণনা করে ক্লান্ত এক মাঝি...
(আট)
দক্ষ, স্বপ্ন সঙ্গমে,
নিরপেক্ষ আনন্দ গুনে,দেবী।
এ রস মায়া, উড়ন্ত বক,
শ্যামবর্ণা,রাত্রি-ফুল...
(নয়)
প্রেমের বীভত্স শাসন
বলোনা,
মন্দিরের দেহ ভেঙ্গে গেলে-
পড়ে থাকে অসহায় পাথর গুলো।
তুমি প্রতিচ্ছায়া মাত্র,এই আলোর বিপরীতে...
(দশ)
মাপকাঠি নিয়ে এসোনা,
এই উদ্দমতা নদীর দিকে যাক।
দেখো, স্ফূর্তি শাস্ত্রের নিষিদ্ধ ফল-
সজীব আচরন ফেরী করে...
অপাংশু দেবনাথের গুচ্ছ কবিতা
পরীক্ষা ও ছায়াসংকট
--------------------------
প্রতিদিন মানুষ নতুন একটি পরীক্ষার মুখোমুখি হয়।
মিছিল করেই ছত্রাকারে ছড়িয়ে পড়ে আপন মায়াবন থেকে দূরে,
সংকট ও সম্ভাবনা নিলয়ে বহন করে পৌঁছে দিঘল পরীক্ষামুখী।
সাঁতার জানেনা কেউ,কেউ জেনেও ডুবে মরণ দেখে সন্নিকটে।
গায়ে, মাখে পঙ্কিল-পারদ।
পারদ ও জল এক নয় জেনেও নির্মল জলগামী হতে পারে কোথায় মানুষ !
ওই দূরে, প্রতিপদক্ষেপে সংকটে রাখে ক্লান্ত পা,
সেও কি জানে একদিন বৃষ্টি এসে ধুয়ে মুছে দেবে সব অম্লঅহংকার।
সকল অহম মাটি হলে তুমি তখন দাঁড়াবে কোথা?
বালি বালি ছায়ার সড়ক ভেঙে ভেঙে ভরাট করবে
সকল শূন্য খয়েরিখাদ।
কেউ চিনবে কি বলো বটবৃক্ষ-চক্ষু খুলে, তুমি তখন অসীম আলো,
প্রণয়িনীর সকল ভাষা ভুলে নির্জন সে, ছায়াসঙ্গীত রচনা করে যাবে মস্তক উন্নত করে।
প্রেমহীন কোনো বৃক্ষ বাঁচেনা খুব বেশীদিন
জলহীন হতে পারেনা কোনো ছায়া সঙ্গীত।
ঈশ্বরের দরবার বলে কিছু নেই যা কিছু এ বন ও মানুষের মায়ায় সাজানো রকমারি ছায়াসংকট।
.....
বরং চলো
--------------------------
বরং চলো একটু ঘুরি বন্যাজলে,
ডুবন্ত সে ধানের ক্ষেতে একটু শুনি
বীজের কথা।
নয়তো চলো শহর ছেড়ে অন্য কোথা।
কিংবা চলো মেঘের দেশে বৃষ্টি আনি গুমোট পথে।
শিকল ছিঁড়ে উদোম গায়ে ছুটতে থাকি
থাকুক তবে ছল চাতুরি পায়ের কাছে মগজ খুলে।
মেজাজ খুলে রাখতে পারি
ইচ্ছে হলে ধারণ করে কে আছে আর?
পাথর গুণে রাখছি তবে
বুকে আগুন জ্বালিয়ে রাখি হঠাৎ যদি ইচ্ছে করে
এসো তখন শীত দুপুরে,
সকল কাঁটা তারের বেড়া ছিন্ন করে।
খোলা মাঠেই ছড়িয়ে দেবো
মনের মতো সেঁকতে পারো
তোমার বুকে মরতে থাকা বেলুনগুলো।
আর কতো যে খেলবে খেলা
পক্ষীবেলা আর কি আছে উড়ান দেবে?
বরং যদি মানুষ হতে
ঘুরিয়ে দিয়ে স্রোতের ধারা
তোমার সাথে স্বপ্নগুলো নিতাম তুলে ফল্গুরাতে।
ফড়িং ওড়ে বুকের মাঝে
তুমি তখন আকাশ দেখো
সিঁদুরে মেঘ আসছে ধেয়ে অহম-নায়ে---
.....
মনে করো
------------------------
ইচ্ছে করলেই তো মানুষ পারেনা ঘুমোতে!
বলতে পারেনা কোন্ ঘুম প্রয়োজন তার।
মুদ্রা বদলে যেতে দেখেই, তোমার নয়ন
পদ্মফুল হয়ে ভেসে আসে চোখের তারায়।
সকল ক্লান্তি,মোহ, ঘ্রাণ আমার রোদের মেঘলা
দিন।মাটির দিকে তাকিয়ে জেনেছি এবেলা,
বুকের ভেতর এক পাখি ডানা মেলে ওড়ে---
রঙীন দরবারে পালকে সোনার ফসল
তুলে, রাত্রির সঙ্গীতে লেখে উজ্জ্বল প্রভাত।
আমি সেই প্রভাতের দিকে কান পেতে শুনি
মাথার উপর মাদলের মৃদু রণধ্বনি।
এমন দ্বিচক্র যান ছুটে তোমার ছায়ার
দিকে,বৃক্ষের কাছে বলেছি সব ছায়া নিয়ে
প্রান্তরে ছড়িয়ে দাও, শুধু, অকৃপণ রোদে
জ্বলে যায় ঘাসেদের বুক, আমি ঘাস হয়ে
আদিম স্বপ্নেদের তুলেছি জাগিয়ে নীরবে।
স্বপ্নরা এখন আমাকেই টেনে তুলে রোজ,
কিছু স্মৃতির কোলাজ এসে বাথরুমে বসে
খোলা চুলে,বুকে লিখে যায় রক্তিম প্রণয়।
শঙ্খচিল হই, দেখি, ভেজা ভেজা তট।
এ চরেই দাপুটে দুপুর লিখেছে কখনো
আমাদের বিরহ-বিবাদ,প্রহরীর পর
দরোজা পেরিয়ে গেছি ওই সিংহদুয়ারের
সোনালি সাগরের নিকটে।সেই ঢেউ তুমি,
তরঙ্গের পর উচ্ছ্বাস তুলে কাঁপিয়েছো এই
মৃত্তিকার তৃষিত হৃদয়। অত:পর সুর
জাগে,কখনো সন্ধ্যায়, ভোরে,সৃষ্টির প্রান্তরে,
সড়কে। এ নগরের পথে দেখেছি প্রণয়
অপেক্ষার এলোমেলো ধুলো ফুটপাথ জুড়ে।
রঙীর পালক ওড়ে যদি মাথার উপর
মনে করো বিশ্বাসে জাগি রাত্রির প্রহর।
.....
উজ্জ্বল দিনের কাছে
--------------------------
উজ্জ্বল দিনের কাছে ঘাম বন্ধক রেখে ছুঁয়ে এলাম তোমার হৃদয়।
হেঁটে দেখে এলাম গণকবরের ঘাট।
কবর থেকে কেউ উঠে এসে বলবেনা রৌদ্রের প্রখরতা কতোটা প্রবল।
এভাবেই হাঁটতে হবে আমাকে।
ফিরে এসে কেউ কেউ অকারণ লাটিম ঘুরাবে বুকে,
অথচ তাদের চেয়ে বেশী ঘামতে হয় আমাকেই।
ঘর্ম ও বিষাদে জেনে নিতে চাই কতোটা রোদে,
যে কোনো কর্মীর শরীর থেকে ক'গ্যালন ঝরে তরল।
ইচ্ছে করলে না-কারণেই মাথার উপর পারতাম ছুটাতে হাওয়া
বাইরে হাওয়া পাবে কোথায় বলো ভেতরের স্রোত থেমে গেলে?
প্রতিবার ভিড়ে মিশে যাই, ভিড় ছাড়া এতো
এতো মানুষের হৃদয়ের শব্দ শুনবো কোথায়?
এতো মানুষের সঙ্গ পাবো কোথায় বলো?
একটি জমায়েত ভেঙে গেলে শূন্য চেয়ারে লেগে থাকে অতৃপ্তির ছায়া।
এমন ছায়ার দিকে যেতে পারে ক'জন বলো?
অনেকেই আলোয় খুঁজতে পারে ফাঁড়িপথ।
পায়ে মেলাতে পারে পা ক'জন!
আমাকেই ছায়া খুঁজতে হবে তোমার জন্য যতোই ছড়াও আগুন---
......
ছটফটানি ও বিধর্মী-শরীর
--------------------------
এতো ছটফটানি হচ্ছে কেনো!তার আগেও তো লাশে,
ফেঁপে ফুলে পুঁজ রক্ত বয়ে গেছে কৃপণ নদীর
জল,
দ্রুত সনাক্ত করো আমাকে, বন্ধ হয়ে আসছে নি:শ্বাস
ওহে সময় আমার,মাথার উপর নক্ষত্রেরা ঘুম ভেঙে চেয়ে আছে।
গাছের টুকরোর মতো পড়ে আছি পথে।
দেখো---তোমাদের যৌথ এই মালিকানা, ইচ্ছে-আগুনের
তাপে, পুড়ে জ্বলে গেছে বলে, আমাকে সনাক্ত করো প্রজ্ঞা,
দুর্গন্ধে ছেয়ে যাচ্ছে অরণ্য,তরল-সময়ে অন্য কিছু
ভাবার কথা নয় আমার।
এসব কান্নারা আমাকেই কেন ঘিরে ধরে মন্দিরের
নব-নির্মীত সিঁড়িতে।
অমনি আজান ধ্বনি বাজে,
অথচ হাওয়ায় সকল আহ্বান ম্লান হয়ে আসে
অকস্মাৎ আমি ঢুকে পড়ি মেঘের ভেতর, স্তরে স্তরে,
নরশরীরের ভাঁজ গুণে নেয়া য়ায়, পূর্বে এসেছিলো যারা
তাদের কাম ও শ্বাপদীয় দন্তচিহ্ন স্পষ্ট
অভিমানে মেঘ ঝরে পড়ে লাশেদের মুখে।
ধর্ম বালিয়াড়ি হয়ে দূরে,চিক চিক করে
যেন অনাদি কালের সেই
মরুসৈকত।ভ্রমে তৃষ্ণার রকমারি ঢেউ ওঠে বুকে।
এতো ছটফটানি হচ্ছে কেনো সময়ের দাবানল বুঝি!
পৃথিবীর চারিদিকে ভেসে যায় আমার বিধর্মী এ শরীর!