পাবলো নেরুদার কবিতা
পাবলো নেরুদা (১৯০৪ - ১৯৭৩) প্রকৃত নাম রিকার্ডো এলীসার নেফতালি রিয়েস বাসোয়ালতো।তিনি তাঁর বাবার জন্য পাবলো নেরুদা ছদ্মনাম গ্রহন করেছিলেন।
১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজেতা একজন চিলিয় কবি, কুটনীতিবিদ ও রাজনী ছিলেন।বিদ। নেরুদা মাত্র তেরো বছর বয়েসে কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন যখন তিনি বিভিন্ন ধরণের কবিতা লিখতে শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল পরাবাস্তববাদী কবিতা, ঐতিহাসিক মহাকাব্য, প্রকাশ্য রাজনৈতিক ইশতেহার, গদ্য আত্মজীবনী এবং ভালোবাসার কবিতা।নেরুদার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় যখন তাঁর বয়স মাত্র সতের বছর এবং খুব দ্রুত তাঁর কবিতার উন্নতি ঘটতে থাকে। ১৯২৪ সালে প্রকাশিত Twenty Love Poems ang a Song of Despair শীর্ষক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিলাভ করেন। তাঁর এই কাব্যগ্রন্থটি সবথেকে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে এখনো সমান বিক্রিত ও জনপ্রিয়কাব্যগ্রন্থ।
নেরুদা ১৯৭১ সালে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।
অনুদিত এই কবিতাদুটি 'Twenty Love Poems and a Song of Despair' থেকে নেওয়া হয়েছে।
এক নারীর শরীর
এক নারীর শরীর, ফর্সা গোঁড়ালি, ফর্সা দুই উরু,
তোমাকে সমর্পণে রাজী এক বিশ্ব মনে হয়।
আমার খড়খড়ে চাষা-শরীর তোমাকে খুঁড়ে চলে
এবং মাটির গভীর থেকে লাফিয়ে ওঠা সন্তান বানিয়ে নেয়।
আমি ছিলাম সুরঙ্গের মতো একা। পাখি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল,
এবং রাত হিংস্র আক্রমণে ভাসিয়ে নিয়ে যেত আমায়।
নিজেকে বাঁচাতে আমি তোমাকে অস্ত্রের মতো ব্যবহার করেছিলাম,
আমার ধণুকে তীরের মতো, আমার গুলতিতে পাথরের মতো ছিলে তুমি।
কিন্তু প্রতিহিংসার সময় কেটে যায়, এবং আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলি।
তোমার এই শরীর চামড়ার, শ্যাওলার, আকাঙ্খা ও তীব্র দুধের।
ওহ স্তনের ওই পানপাত্রগুলি! ওহ উদাস চোখগুলি!
ওহ জঙ্ঘার গোলাপগুলি! ওহ তোমার কণ্ঠস্বর, ধীর ও করুণ!
আমার নারীর এই শরীর, তোমার স্বর্গীয় লাবণ্যে আমি বেঁচে থাকবো।
আমার তৃষ্ণা, অন্তহীন বাসনা, আমার পরিবর্তনশীল পথ!
এই অন্ধকার নদীচর যেখানে অনন্ত তৃষ্ণা বয়ে চলে
এবং ক্লান্তি তার পিছু পিছু চলে, এবং যন্ত্রণা অসীম।
আহ পাইনের বিশালত্ব
আহ পাইনের বিশালত্ব, স্রোত ভেঙে পড়ার ধ্বনি,
আলোর ধীর খেলা, নির্জন ঘন্টা,
তোমার চোখে গোধুলির আলো এসে পড়ে, খেলনা পুতুল,
মাটির খোলস, যাতে এই পৃথিবী গান গায়!
তোমার ভেতর নদী গান গায় এবং তোমার ইচ্ছে মতো আমার আত্মা
তাতে বয়ে চলে, এবং তাকে তুমি ইচ্ছেমতো যেখানে খুশি পাঠিয়ে দাও।
তোমার আশার ধণুকে আমার পথ
এবং উন্মত্ত হয়ে আমি আমার তীরগুলি ছুড়ে দেবো।
চারদিকে তোমার কুয়াশার কোমর
এবং তোমার নৈশব্দ্য আমার আর্ত সময়কে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়;
আমার চুম্বনগুলি নোঙর ফেলে, আর আমার চটচটে আকাঙ্খা
তোমার স্বচ্ছ পাথরের হাতের সঙ্গে তোমারই ভেতরে আশ্রয় নেয়।
আহ তোমার রহস্যময় কন্ঠ যা প্রেমের কথা বলে এবং
প্রতিধ্বনিত ও মৃতপ্রায় গোধুলিতে ডুবে যায়!
এভাবেই গভীর ও নির্জন সময়ে মাঠে মাঠে দেখেছি
বাতাসের মুখে গমের কানগুলি প্রতিধ্বনিতে আন্দোলিত হয়।
No comments:
Post a Comment