' কবিতা করিডোর ' উত্তরবঙ্গের প্রথম মাসিক ওয়েবজিন । এই ব্লগ নতুন সৃষ্টি নিয়ে ভাবে । কবিতা নয় সাহিত্যের নানা দিক ও চিত্রকলা থেকে চলচ্চিত্র সবেতেই এই ব্লগ নতুন ভাবনার পথিক ।
Monday, August 23, 2021
Thursday, August 5, 2021
কবিতা করিডোর জুলাই সংখ্যা 2021
কবিতা করিডোর
সম্পাদকের কলম
জুলাই সংখ্যার জন্য অনেক অপেক্ষার রঙ মেখে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা । ভালোবাসার স্পর্শ যেমন আছে আবার অনেকেরই লেখা না পাওয়ার দুঃখও আছে । এবার আর কথা নয়, পড়ুন আর মতামত দিয়ে সাথে থাকুন।
ধন্যবাদান্তে -
শুভঙ্কর পাল
Wednesday, August 4, 2021
উত্তর- পূর্বাঞ্চলের কবিতা
জুলাই সংখ্যা ২০২১ , কবিতা করিডোর
আত্মকথন
সন্তোষ রায়
এসব কি আর আত্মকথন!
চন্দ্রাহত হ'য়ে আছি
তা-ও দোষণীয় নয়
তুমিও কি আহত তবে!
নাকি কলঙ্ক দেখে ঘুমোলে বসন্ত সমীপে!
এখন আমার চোখে আর কোনো রঙ নেই জোছনা ছাড়া
জোছনা গড়িয়ে যাচ্ছে কুয়োর দিকে
আমি পিপাসার্ত
জল চাই জল
কুয়ো ভর্তি জোছনা কেবল ---
অনিকেত
চন্দ্রিমা দত্ত
বনের গন্ধ নিয়ে যে পথটি চলে গেছে ঐ
একটি বাড়ির দিকে
তুমি সেখানে ঠিকানা বললেও আমি জানি
তোমার বাড়ি এ নয়
তোমার নিভৃত আশ্রয়, ঠিকানা বহু দূরে . . .
যদি অনিকেত নামে
তোমাকে ডাকি-ই, আমার কী ভুল হতে পারে?
অন্য কথা থাক আজ
মুঠোয় প্রহরগুলি বড় উজ্জ্বল এখন
নদীর উপল খণ্ডে
বসো তুমি, তোমার চোখে, বুকে, হাতে, সর্বাঙ্গে
অনিকেত ছবি আঁকি . . .
ঐ যে উজ্জ্বলতা, তার থেকে ছায়া রঙ টেনে
তোমাতে ছুঁয়েছি যেই
তুমি ফিনিক্সের নীল ডানায় স্বর্গ খুঁজলে
ঠিকানায় সন্ধ্যা নামে
স্পর্শ
নীলাদ্রি ভট্টাচার্য
আমাদের শব্দের দিকে সূর্যকিরণ এগিয়ে চলে
গভীরে ভাষা স্পর্শের খোলা আকাশ
অক্ষর আলিঙ্গনে নিকটে আসে।
অনেকটা স্পন্দন পেরিয়ে
পরিপূর্ণ আমাদের বিজয়ী কণ্ঠ
রক্তের দাগ
চোখের উষ্ণ জল
মিলেমিশে একাকার...শিকড় শিহরণে।
ত্যাগের পৃষ্ঠাগুলো তাই সদা জাগ্রত
অদ্ভূত তীব্র সার্থক দৃঢ়
অন্তর্নিহিত কৃষ্ণচূড়ায় প্রাণের বৃষ্টি
সাবলীল শহিদ চিরন্তন আশ্রয় ধ্বনি ।
অসুখ
দেবাশ্রিতা চৌধুরী
ধূপের ধোঁয়া ছাপিয়ে সন্ধ্যা ভাসে
পোড়া পোড়া গন্ধে
কার বাড়ি দুধ পোড়ে
ভাত পোড়ে ডাল পোড়ে
নিদ্রাহীনতা আর বিস্মরণের অসুখে।
কিছুটা সময়ের পরে পোড়া বাস
এগিয়ে আসে কাছে,
আমাদের দগ্ধ যাপনক্ষতের
প্রলেপে আমরা ব্যস্ত ছিলাম।
আচানক নির্বুদ্ধিতায় ক্ষত বেড়ে গেলে
পৃথিবীর যাবতীয় অ-সুখ মেখে
দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে
সংরক্ষিত গোপন অসুখ ...
স্নান
তমা বর্মণ
ভালোবাসার আমি কি জানি?
তুমি জানো তুমি বলো
সারাদিন উর্বর হয়ে থাকে রোদ
কে দেয় আলপনা গাছে গাছে
তুমি জানো তুমি বলো
বারোমাস কি করে খুশি?
অবগাহন রক্তে হৃদয় সাঁতরে
এত জল!
খুঁজে খুঁজে যত ডুবি জলের কাছেই ঠাঁই
পিপাসা তোমার তুমি ভালোবাসা খাও...
তালাচাবি দরজা ভিতর থেকে কি দেখে মানুষ?
আমি কেবল দেখি শূন্যের পথে প্রজাপতি ওড়ে এক
তুমি জানো?
শরীরে সঞ্চারিত নিদ্রামগ্ন মধ্যরাত জাগায় কত?
আগুন...আগুন...
ফোটেও তাতে নির্মোহ ধুলোবালি স্নান...
ঝর্ণা-তলায় দাঁড়িয়ে স্নানের অতল তুমি কি দেখেছ?
কোনোদিন
সবাই কেমন ঘুমিয়ে আছি
অমলকান্তি চন্দ
দোয়ার খোলার শব্দ হলো
বুকের ভেতর মনের কাঁটা,রক্ত ঝরে,দাগ ছোপ ছোপ
তুলসি তলায় উড়ছে ধূপ।
আমার হাতে চিটার দলা,ব্রম্ম তালুর বেবাক ঘোর
মানষে বলে আকাশখানা
গর্জে ওঠে বিকট সুর।
সুর চড়লে,হল্লা বাড়ে, হুলুস্থুলর সংকেতন
দুঃখগুলো মাটির মতো,চকটে চলো অনেকক্ষণ।
এবার জোরে নড়ল কড়া
ঝিলিক আলো পূব গগনে,বইছে হাওয়া গাছের মাথায়
ছনের চালে পাখির বাসা,উড়ছে তারা ডানায় ডানায়
রাঙা চোখে উড়ছে আবীর, হাজার লাথে ভাঙ্গল দোর
আকাশ কেমন ঘোরের মাঝে, হারিয়ে ফেলে বেবাক সুর।
শ্মশানগুলো রাত্রি জাগে,তোমরা বুঝি আগুন গিলো,
হাজার ছায়া আসছে ধেয়ে,শব্দ করে নড়ছে কড়া,
সবাই কেমন ঘুমিয়ে আছি।
শোকসভা
অর্পিতা আচার্য
তোমার মৃতদেহের পাশে একবার
বসতে দাও আমাকে-
দেখি যে ঠোঁট ভালোবেসেছিলাম
দেখি যে হৃদয় খামচে ধরেছি নখে কোনদিন
দেখি যে হাত দিয়ে চূর্ণ করেছো আমার মেধা
আর যে পা দিয়ে মাড়িয়ে গেছো আমার
টেরাকোটা স্থাপত্যের ধ্বংসস্তূপ
সমস্ত লাশই তো পচনশীল, তাই
তোমাকে হত্যার পর এ শোকসভায়
খানিকক্ষণ আমি আজ একা বসতে চাই
কুণ্ডলী বিচার-২
শিবাশিস চট্টোপাধ্যায়
চোখ নেই মর্কটের, কর্কটে তুঙ্গী বৃহস্পতি
জাতকের গতি নেই আটকে যাবে চাকা
ফাঁকা জ্যোতিষীরা তবু ছলায়-কলায়
তোমাকে ভোলাবে
তুলার জাতক তুমি, বৃহস্পতি হবে হন্তারক
উচ্চস্থ হলে সই, না হলেও সই
ভূমায় বসলেও এর অন্যথা হবে না
কুম্ভ রাশির ছেলে, জন্ম দুষ্ট চাঁদে
কান্নার আওয়াজ নেই, ভিতরে সে কাঁদে
ঘুরে মরবি দোরে দোরে, হাত পেতে খাবি
আলোর সংবেদ এলে, দেখবি হারিয়ে গেছে চাবি
বসন্ত সময়
অপাংশু দেবনাথ
ছায়া রেখে যেতে চাই শরীরের থেকে দূরে,
সে আমার পথ ধরে, ছুটে অন্তরে বাহিরে।
যতটা ভেবেছো দূরে প্রণয়ে জেনেছি সুখ,
শূন্যের উপর স্বপ্ন রেখে দেখেছি অন্তর,
ওখানে যত মায়ার ছল, বুঝিনি প্রশ্রয়ে।
মায়াহীন প্রেম বলো কতোটা ছুঁয়েছে দেহ!
শরীরের ক্লান্তি নিয়ে জেগে উঠেছে মানুষ।
এই হাতে ছুঁয়ে মানুষের দেখেছি উষ্ণ শরীর,
ভেতর থেকে ঠিকরে পড়েছে কালসিটে আলো।
আলোহীন হয়ে বুঝি ছায়ার কতটা দূরে,
ছায়ার ভেতর ঘুরপাক খায় তবু বসন্ত সৃজন।
পুকুর কিংবা পলাশের গল্প
বিজয় ঘোষ
পলাশের লাল রঙ ছড়িয়ে যায় বাতাসে
ঘুম ঘুম দুপুরে ঘুঘুর ডাক
কিংবা নিস্তব্ধ দুপুর
অন্ত্যজ মেলায় হারিয়ে গেছে বালকবেলা
পলাশ কিংবা কৃষ্ণচূড়া কেবলই
দুরন্ত দুপুর আঁকে,
যেখানে বালক বেলা নেই
নেই ছলা ও কলা
বঁড়শিতে মাছ গেঁথেছে
নিস্তব্ধ পুকুরে জাগে কোলাহল
আসন্ন মৃত্যু এঁকে দিয়েছে হলুদ দুপুর
আয় তবে সহচরী
জলকেলিতে নিমগ্ন হোক বিষণ্ণ দুপুর
পুকুর কিংবা পলাশের গল্প
রচনা করে কেবলই ভুলে যাওয়া বিষাদ,
প্রেমে-অপ্রেমে
কমলিকা মজুমদার
৬)
আমাদের ডো রে মি ভালোবাসারা
গিটার স্ট্র্যামিং এ গায় রামপ্রসাদী,
আঙ্গুলের তার ছুঁয়ে নেমে আসে
বৃষ্টিভেজা এক ব্যালকনি কনসার্ট।
আকাশে আকাশে জ্বলে ফ্ল্যাশ লাইট,
সাবধানে ঢেকে রাখা সব মনখারাপ
চিত্রশিল্পীর কাছে বসে ন্যুড আঁকতে।
সব গান প্লে-লিস্টে রাখতে নেই,
কিছু কনসার্ট শুধু নীরবতা চায়।
৭)
আমাদের অটো টিউন ভালোবাসারা
নিজের গলার স্বরে মেলায় সুর যন্ত্র,
লাইক ডিসলাইকের প্রতিযোগিতায়
দাঁত বসাতে চায় গোল্ড মেডেল বুকে।
রূপকথার গল্পে থাকে এক স্বর্ণ গাছ,
থাকে রাজকুমারী ও তার ইউনিকর্ন,
সব কিছুই সুন্দর,কিন্তু সত্য নয় জানি।
হাজার লাইকের ভিড়ে হারায় কণ্ঠস্বর,
হারায় হৃদয়ে একান্তে বলা মাদার-টাঙ্গ।
অনামিকা -১১
(সময়ের কবিতা )
শতদল আচার্য
আমার প্রিয় নাম গুলি ভুলে যাচ্ছি আজ
ভুলে যাচ্ছি প্রিয় চলাচলের জায়গাগুলি।
এখানে পা বাড়ালে মরন ফাঁদ
চলাচলের ভয় , ভয় এখন বাতাসে ও
বিশ্বাসের চাকা মরে গেছে কবে
কোথায় লিখব প্রিয় বন্ধু তোমার নাম
কোথায় দাঁড়াতে দাঁড়াতে কোথায় দঁাড়লাম
ভীষণ সুখের কথা কেঊ বলে না ।
কানে কানে বলে যায় --
এখানের নরক ,কবে ফোটবে পদ্ম
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ভেঞ্চায় মুখ
খেলা খেলা এখন নিত্য দিনের খেলা ।
সিক্ত
বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য
পর পর অক্ষর
গেঁথে, বাড়ি গড়ল
কবি ইক্ষু ক্ষেতে
ছড়িয়ে দিলো দুঃখ
যত উঠোন জুড়ে
সব ভিজবে
সব ভিজবে
চোখের জলে
বৃষ্টিজলে!
রূপাডিহি
দেবলীনা সেনগুপ্ত
মেঘমল্লার শুনে আকাশ আলো জাগায়/
থিরবিজুরির
ময়ূরকণ্ঠী সোহাগ জ্বলে
প্রিয়তরুবল্কলে।
রাত পোহালে
রূপাডিহির সহজ গেরস্থালিতে
নিমন্ত্রণ পায় রূপালি বাতাস
বৃক্ষতলে পড়ে থাকা ফলপাকুড়ে
তৃপ্ত হয় নধর শিশু
উদ্বৃত্তের আদরে ভরায় পালিত প্রাণ।
শাকান্ন তৃপ্ত দ্বিপ্রহর/
ভরে ওঠে অলস গুঞ্জনে
গোধূলির সুরে রাখালিয়া ফেরে
প্রিয় আঙিনায়।
সাঁঝপিদিমে পতঙ্গনাচ
আলো আঁধারির সঙ্গতে
ভালোবাসার নদী আঁকে
মেঘমল্লারের কোমল নিষাদের মায়ায়...
শুধু, গভীররাতে
মেঘমল্লার স্বপ্ন না দেখালে
রূপাডিহির পথ হারিয়ে যায়
কোমল নিষাদের প্রেমে না পড়লে
রূপাডিহির জোনাকিরা আলো নিভিয়ে ফেলে
রূপাডিহি... মেঘমল্লার.. কোমল নিষাদ...
সব রেওয়াজ করতে হয়.
অশ্রুত
সপ্তশ্রী কর্মকার
যে গোল বৃত্তে বরফের আলিঙ্গনে উষ্ণতা পাই,
সেই শীতে পেঙ্গুইনদের পদতলে জল নেই।
অন্তর্বৃত্তের পরবাসে আমার বৈরাগ্য প্রেম,
বিক্ষিপ্ত প্রেমের বাতাসে উড়ন্ত শিমূল তুলা।
কালবৈশাখীর বীভৎসতা যখন উন্মাদ চোখে,
স্পর্শকাতর ধরা দিলো শুস্ক ঠোঁটের কোণে ।
অসময়ের ক্লান্তি থাক, বুদ্ধি ইতিবাচক হয়ে,
যৌনতা সলাজে শুধায়, দেউড়ির ঠান্ডা বাতাসে।
নিশীথিনী আঁধারে বিড়ম্বনা অপসৃত হোক,
ক্ষণজন্মা-যশস্বী হয়ে কীর্তি রাখুক অশ্রুত।
ঝগড়া
অনিমেষ নাথ
আমি দিনে ভালোবাসা দেখি
রাতে ঝগড়া দেখি।
গভীর ঝগড়া।
গল্প এবং ঝগড়া,
ভালোবাসে তারা কিন্তু উত্তর দিতে পারে না,
বেলা শেষে ঝগড়া শুরু হয়
যেন সেজে গুঁজে মেলায় যাচ্ছে
হাতে হাত ধরে বাতাসে হাত নাড়িয়ে ।
সময়ে সব হয়
রাতে গুনগুন শব্দ
ভালোবাসা কিন্তু ঝগড়া ।
মুহূর্ত
সিদ্ধার্থ নাথ
চকলেট মুখে পোরার মুহূর্তে -
ম্লান চোখ ভেসে ওঠে।
আজ বড় দরকার তোমাকে।
আখির চোখ ঝাপসা হয় ।
ঝাপসা হয় বৃষ্টির বুকে জড়ানো রোদ।
রোদ্দুর বড় আপন মনে হয়।
এমনটা হয় মাঝে সাঝে।
তখন মনখারাপের দিন।
তুলির টানে নিজেকে ছিন্ন ভিন্ন -
করার ইচ্ছেরা সজাগ হয়।
একটি সাঁকো ঘাসের শরীরে হাত বাড়ায়।
জলভরা বুক কেমন যেন আপন লাগে।
ভালবাসায় ঝাপটে ধরে -
বন শেষের বিষন্নতায়।
মেঝেতে সেদিনের দাগ।
গাছের শরীরে গভীর ক্ষতের মত -
সময়ের ঋণ বড় হয়।
গভীর হয় মটি।
মটির শরীর-মাটি হয়ে যায়।
এপ্রিল-এপ্রিল ফুল হয়ে আছে।
সময় জানে কতটুকু গভীরে বীজ রেখে গেছে।
দুদিকেই জল গড়ায় মাঝে একা বৃক্ষ ।
একা জল থই থই।
রাত
দেবারতি দে
বিকেল উধাও হতেই
তরতরিয়ে নামে সন্ধ্যা
থেমে যায় সব কেরিক্যাচার
প্রকৃতি পোষ্য অন্ধকার
বাড়ে রূপে রঙে
কালো কালো অক্ষরে
চোঙ ডুবিয়ে উত্তাপ ঢালতেই
জাল ছিড়ে বেরিয়ে আসে
ছোট বড় আলো
রাত ফুলে ওঠে রুটির মতো।
বর্ষা ২০২১
দেবাশীষ দাস
এবছর বর্ষা এলো অনেকগুলো প্রশ্ন নিয়ে
এই যেমন ধরো,
কি করছো? কোথায় আছো? কেমন আছো? এইসব
তার সাথে কিছু না পাওয়া প্রশ্নের উত্তর
এই যে তুমি বলেছিলে, সন্ধ্যে হলে আসবে
মাটির কাপে চা, আর ধরবে গান...
এগুলো কি এখনো মনে আছে?
চুলের গন্ধ, হাতের ছোঁয়া, আর
এদিকে বৃষ্টি হচ্ছে খুব
তুমি কি এখনো দরজায় দাঁড়িয়ে...। এই দেখো
পুরোটা বলার আগেই ভিজে গেল সব!
এখন আমি ঘুরে ফিরি, ভিজে মরি,
চলতে চলতে এই শহরে
আমিও এখন পালক বেচি…
অন্ধকার
রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ
অন্ধকার প্রথায়
মিশে যাচ্ছে বালিকার মূর্তিটি
জ্যোৎস্নায় ভাঙছে
বিছানার প্রলাপ
জীবন যেমন দেখি
সজলরঞ্জন হালদার
১)
লাল পিঁপড়েরা ক্রমে কালো পিঁপড়ে হয়ে গেলো : এখন আর অন্ধকারে আলাদা করা যায় না ; মিছিলে হাঁটা ভাঙচুর মুখ, হামাগুড়ি কাটে পথশ্রান্ত দীর্ঘশ্বাসের মতন !
২)
ওদিকে সারাদিন অরণ্য ঘেঁটেঘুটে কালকেতু একটা গোসাপ কাঁধে ঘরের পথে হেঁটে যায়; কালো শরীর ঘিরে ব্যক্তিগত শিকারহীন আক্রোশ ।
৩)
দলিত-আদিবাসী মানুষের অধিকারের স্বার্থে জেলের অন্তরালে নিঃসঙ্গ একা একা শহিদ হলেন... ৮৪ বছর বয়সি স্ট্যান স্বামী !রাষ্ট্র এখানে নিঝুম রাতের মতো মূক ।স্বপ্ন দেখা গুটিকয়েক মানুষ শহিদের শব কাঁধে হেঁটে চলে অনন্ত মহাশ্মশানের পথে...
৪)
মাছরাঙার ঠোঁটে আঁশটে মাছের গন্ধ ।কাকের ঠোঁটে কবেকার শুকনো রক্তের দাগ ।কাঠঠোকরা ঠুকরে চলেছে প্রবীণ বৃদ্ধ শরীর । শালিকের বাচ্চা মুখে নেমে আসে প্রকাণ্ড হলদেটে দাঁড়াশ ।
৫)
বাস্তুতন্ত্রের কথা ভেবে পৃথিবীর শরীর জুড়ে হিজিবিজি দৌড়াদৌড়ি করে পিঁপড়ের সারি ! সুখী মানুষ চিরকাল পালকের নীচে নরম মাংসের ওম খোঁজে ; নাটকের মতো বদলে যায় চরিত্র ।
জীবন যন্ত্রণার জল রং ও ভালবাসার খোঁজ
শুভঙ্কর পাল
কবি আর কবিতার মাঝখানে কিছু শব্দের সুতোহীন
মায়াজাল বোনার কথা নিয়ে অম্বরীশের
কবিতা যাপন নয় । তার সদ্য
প্রকাশিত নতুন কবিতার বই ‘ যন্ত্রণার
জলরং’ প্রকৃতপক্ষেই যাপানের নিবিড় থেকে উঠে আসা
পংক্তিমালায় সাজিয়ে তোলা তার সংসার
“মায়ের
কথা মনে পড়লেই / একটা
গ্রাম ---"
এই গ্রাম কবির একান্ত ব্যক্তিগত হলেও অনেকের গ্রাম হয়ে ওঠে । যেখানে
সন্ধ্যার শঙ্খ হাতে
মায়ের নরম হাতের স্পর্শ যেমন থাকে তেমনি থেকে যায় জ্যোৎস্নামাখা রাতের পোশাকে
প্যাঁচার ডাকের গল্প। এই ইমেজারি
কবিতা আমাদের মনের ভিতর এমন একটা তরঙ্গ খেলে দেয় যা আন্দোলিত হয়ে এক প্রশস্তির
উচ্চারক হয়ে থাকে-
“কবির কথা - কবিতার দেশ - একটা বাড়ি
আরেকটু টার্ন নিলেই
তো দরজা “
হ্যাঁ কবির এই
কবিতার বইটিতে যে চল্লিশটি কবিতা রয়েছে তার ভিতরে গিয়ে বসত করতে গেলে ওই দরজায়
নক করতেই হয় ।
কবি কিন্তু উল্টো পথে হেঁটে পুরনো প্রেম ছুঁয়ে দেখতে চেয়ে অতীতের তীরে নোঙর ফেলেন । ফেলে আসা দিনগুলির বর্ণময় জীবনের
কথা উপেক্ষা করতে পারেন না । তাই সেই অতীতের দিনগুলি বুকে নিয়ে
বৃষ্টি হয়েছে চান -
“ বালিশ পুড়িয়ে সেই বিকেলটাতেই না হয় বৃষ্টি
হয়ে ঝরবো “
কবির চোখে ভেসে ওঠে সীমান্তের সেই বারুদের
বিস্ফোরণ আর সেইসব বারুদের ঘ্রাণে যে শোক তারপরেও কবি আশাবাদ নিয়ে স্বপ্নদের বাঁচিয়ে রাখতে যুদ্ধশেষের সংকেত ধ্বনি শোনাতে চেয়েছেন । কবির এই
কবিতার সাথে পথচলার ভিতর সূর্যাস্তের প্রচ্ছদ নয় বরং গল্পের বিষন্নতা ছাপিয়ে
শব্দ ধূসর পোকাদের উপসংহার লেখবার একটা প্রয়াস
লক্ষ্য করা যায় ।
কবির এই
কবিতার বইটির চিত্রকল্প কিংবা উপমার ব্যবহার ও বিন্যাস আপনাদের আকৃষ্ট করবে। কী অনায়াসে কবি লেখেন
“ চাঁদ
কি সেই উনুনে উঁকি দিয়েছিল
যে
উন্নয়নে গত তিনদিন আগুন জ্বলেনি “
কবির এই সংশয় বাস্তব । কবি রাস্তার পাশে কিংবা গ্রামীণ জীবনের ভিতর এই দুঃসহ কষ্ট কে নিজের চোখে
দেখেছেন । আর তা তার কবিতায়
বাস্তব রূপ পেয়েছে । এ
যন্ত্রণাকে কবি শব্দের
জলরং এর ভিতর দিয়ে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন । আর সামাজিক অবক্ষয়ের যুগেও কবি আশাবাদকে মরে যেতে দিতে
চাননি । তাই কবি অনায়াসে উচ্চারণ করেছেন-
“পৃথিবীর রংমহলের মরচে সরিয়ে
গোপন ডেরা থেকে আবারও কি উঁকি দেবে ধ্রুবতারা “
কোন কঠিন শব্দের জাল বুনে কবিতাকে দুর্বোধ্য
করে তোলা নয় বরং যাপনের বাস্তবতাকে চেনা শব্দের বেষ্টনীতে আকর্ষণীয় করে তোলেন আর
আমরা অম্বরীশের কবিতা পড়তে পড়তে তন্ময় হয়ে যাই সেইসব পংক্তির ভিতরে
“
জানালার দু’ধারে পরাগ চোরাবালিতে
বেঁচে থাকার যুদ্ধ জুড়ে আমাদের ব্যস্ত বিন্যাস “
না
এখানে হিংসা নয় আছে বরাদ্দ ভালোবাসার খোঁজ এবং জীবন যন্ত্রণার গভীর খনন ।
পালক পাবলিশার্স
প্রচ্ছদ : অর্পণ
উৎসর্গ : সুহানকে ( সুহান আমার ছেলে )
প্রথম প্রকাশ জুলাই , ২০২১
মূল্য ১১০ টাকা
পথ গুলিয়ে ফেললে
সব্যসাচী ঘোষ
আমাদের সেই ছেলেটির নাম হত দিবাকর। আরো অনেকের মত লিখতেই এসেছিল সে। তাঁর বাড়িটি হত রাজ্যটির সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক একমাত্র কেন্দ্রটির থেকে প্রায় ৭০০ কিমি দূরের আধা মফস্বলে। সবার মত একটি নদীও ছিল তার। কি জানি তারই নাম হয়তো কালজানি।
গত শতাব্দীর ৫০এর শেষ দিকে সে জন্মেচ্ছে। ইস্টিশনের কাছেই, হবে কোন এক রেল কোয়ার্টার। বাবা অনেকটা কিনু গোয়ালার গলির বাঁশি কবিতার নায়ক। আলো জ্বালাবার দায় বাঁচাতে গাছ গাছড়ার ব্যবসা খুলতেন।
কিশোরবেলায় বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ শুনে ফেলত দিবাকর। তাই সে তখন আর সবাই এর মতন একটা অন্যরকম যৌবনকালের জন্যে ছিল অপেক্ষারত। অন্যরকম মানে অন্যরকম। যেখানে অন্য গান হবে, অন্য লেখা হবে আর অন্য বই পড়া হবে, লেখকেরাও হবে অন্য। হুড়মুড় করে গর্জন সত্তর উপস্থিত হত এরপরই। সে এক বড় পাগলামোর দশক এবং সে যুবক হত। সময়ের দোষ আজীবনের বদভ্যাসে বদলে যায়। কৈশোরের তারল্যের নেশা যৌবনে পান করত দিবাকর। বইয়ের গন্ধ ভাল লাগত। তাই কি ছাপাখানার অংশীদার হল সে। “যুক্তপ্রয়াস”। বই ছাপা হত, বাঁধাই হত। কম্পোজ কম্পোজ আর কম্পোজ। দিবাকরের আশির দশক চলেছে ছাপাখানার গা বেয়ে। রাত্রিতে ফুটপাথ প্রতি রাতেই বদলও হত।
অমলকান্তির শেষ পরিণতি দিয়ে দিবাকরের শুরু, কার্যত শেষের শুরুও কি বলা যায় না তাঁকে? দুই দিনের বাসি পচা খবর ট্রেনে করে নামত দিবাকরদের আধা মফস্বলগুলোতে। ক্ষুধার্তের দল সেই বাসি পচাই পড়ত। আশির শুরুতে একজন বিকল্প ভাবলেন। নদীর এপার থেকেই নদীর এপারের খবর ছাপার কথা ভাবলেন। বাজার বুঝতে সমীক্ষা ও সুমারি চলল উত্তরের পাহাড়, বন, চা বাগান, চাষ জমি নিয়ে। দিবাকর সেই প্রত্যয়ী সংবাদপত্রে তখন সমীক্ষক যুবক। আত্মবিশ্বাস বাড়ত দিবাকরের। প্রশ্ন করত দিবাকর, “বই এর জন্ম দিতে ৭০০ কিমি দূরের শহরটিতে ছুটতে হবে কেন?” রাস্তাতে মিসক্যারেজের সম্ভাবনার ভয় পেতই নদীর উত্তরের কাগজ ঘসটানো মানুষেরা। দিবাকর এভাবেই একটি নতুন চাষজমির খবর পেত। “মনচাষা”র জন্ম এরপর হত। তাতে নতুন নতুন বই হত। নোয়াম চামস্কি বলেছিলেন চার কিমি গেলে ভাষা বদলে যায়, দিবাকর তো ভাষার শক্তিনিয়ন্ত্রক মহানগরটির থেকে ৭ শত কিমি দূরে, আর চামস্কির মার্কিন দেশ থেকে ১০ হাজার কিমির বেশি। দিবাকরের এই দূরগামী অবস্থানে হয়তো প্রভাবিত হয়েছিলেন ভাষাবিদ। এরপর চামোস্কি থেকে রামকিংকর বাঁধাই হতেন আধা মফস্বলের লেটার প্রেসে। এই প্রতিবেদকের বাবা সমীরণ ঘোষ তখন ঘোষিত ক্ষুধার্ত। উত্তরের প্রধান শহরটিকে তখন ১০ বছর শাসন করার অভিজ্ঞতা তাঁর। একা নন রাজা সরকার, মনোজ রাউত, অলোক গোস্বামী প্রমুখেরাও অগ্রণী হতেন। জুটি বেঁধে মাঝেমাঝে চলে আসছেন আরেক মফস্বলের ওষুধ বিপণির পরিবারের কবিতা পাগল ছেলে অভিজিৎ পরে অন্যমন। জল শহরে “ক্রুসেড” বাহিনী বিজয় দে এবং সমর রায় চৌধুরী “পাগলাঘোড়া”র সওয়ার হতেন। এদের সঙ্গে দেখা হলে অবাক করতেন দিবাকরই। তীব্র যোগাযোগে সে তখন আন্তর্জাতিক। মিথ্যে আর সত্যি যেন দিবাকরের পাশে দুই বিশ্বস্ত কুকুর। মহানগর তখন তাঁর নিয়মিত গন্তব্যে। বই হল উত্তরের কবির। বই হল দক্ষিণের কবির। বাঙালির চিরন্তন গড়ের মাঠে দিবাকরের বিজয়কেতন উড়তে দেখতে পেতেন অনেকেই। উত্তরের সাহিত্যের ইতিহাস লেখা হলে সেদিন দিবাকরের ওতবড় স্টল পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার পদক্ষেপগুলিও লেখা উচিৎ।
৯০ এর দশক। যখন কম্পিউটারটাকে ঠিক কতদূরে বঙ্গোপসাগরে ফেললে সে বাংলার ঠিকানা হারিয়ে ফেলবে বলে আলিমুদ্দিন অঙ্ক কষছে ঠিক তখুনি ডিটিপি শব্দের আক্ষরিক প্রয়োগেও দিবাকর হতেন প্রদর্শক। কিন্তু সব হচ্ছিল ব্যবসাটাই শুধু হচ্ছিল না বুঝি। যেখানে শুধু সংস্থার প্রকাশনীর ব্যবসা দেখার একাগ্রতায় সাহিত্যের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ধরা না দিয়ে ‘পিওন থেকে প্রকাশক’ হয়ে উঠেছেন কৃষ্ণাঙ্গ দীর্ঘদেহী বাদল বাবু সেখানে শুধু সাহিত্যের আবেগে থরথর কম্পমান দিবাকর স্টলের বই বিক্রির টাকা একেক রাতেই ওড়াচ্ছেন। স্রেফ হিসাবের ভুলেই অংশীদারিত্বে ভাঙন তখন অবশ্যাম্ভাবী। শৃঙ্খল ছাড়া শ্রমিকের হারাবার আর কিছুই নেই স্লোগানকে দিবাকর একটু ভুল পড়েছিল। তাই শৃঙ্খলা লোপ পাচ্ছিল ধীরে ধীরে।
ফলত যে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি নার্ট বল্টু নিয়মিত তৈল মর্দনে ঘোরে সেখানে দিবাকর কিঞ্চিৎ শুষ্ক হচ্ছিলেন। ক্রমশ আরও শুষ্ক। ভাল মানুষের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেও বোধহয় তীব্র অস্বস্তি হচ্ছিল ওঁর। বিয়ের পর তিন সন্তান। কিন্তু অপত্য স্নেহ জাগলো কই। এ ব্যর্থতা কার। নিশ্চিত পিতার। টাইটানিকের সঙ্গে হিমশৈলের ধাক্কা তখনই লেগে গিয়েছে।
এদেশ শিল্পীর জন্যে কেন কোন মমার্ত বানানো হয় না? বিডিও অফিস কেনো দ্যায় না প্রকাশকশ্রী, কবিশ্রী, লেখকশ্রীর দুয়ারে ভাতার ফর্ম? এপোড়া দেশ যে সেসব দেবে না সেকথা বহুদিন আগেই বুঝে গিয়েছিলেন এক দিদি। রবীন্দ্রনাথের যেমন ছিল “এক কর্মভারে অবনত অতি ছোট দিদি” এখানেও তেমনি থাকেন এক দিদি। দিবাকরের আঙুল যিনি ছাড়েন নি। জীবনের সবটা সঞ্চয় একসময়ে দিবাকরকে তুলে দিয়েছিলেন। শূন্যের দশক হত সেটা।
(দিবাকর ভট্টাচার্যের তিনটি কবিতার বই, ‘কলম্বাসের মোম’ , ‘খাকি বাতাসের কবিতা’ এবং ‘কথা উপকথা’।
দুটি গদ্যের বই “নির্দিষ্ট নাথ” এবং ‘ভাগাভাগির সময়’।)
(পরের সংখ্যায় শেষ কিস্তি)
Tuesday, August 3, 2021
অনালোচিত ছড়াশিল্পী ধরণিকান্ত বিশ্বাস (জন্ম: ১৫ মার্চ ১৯৫৩) - এঁর মুখোমুখি সাংবাদিক শুভদীপ রায়।
(অকপট স্বীকারোক্তি এবং একান্ত ভালোলাগা ও মন্দলাগা অনুভূতি ব্যক্ত করলেন সরল উচ্চারণে!)
¶¶ প্রথমেই যেটা জানতে চাইছি , সে বিষয়টি হল - আপনার লেখালেখির শুরুকাল সম্পর্কে। কীভাবে যাত্রা শুরু হোলো এই সাহিত্য সৃজনের ?
∆∆ লেখালেখিটা শুরু হলো যখন, তখন ঠিক কোন গুরু ধরে হয়নি, কারো কাছে শিখতেও যাইনি কখনো ! ছোটবেলায় ছেলেপুলেরা মিলে মাঠে গিয়ে যখন খেলাধুলা করতাম, হাসি-ঠাট্টা করতাম, তখন আমি গামছা কোমরে টাইট করে রামায়ণ গান গাইতাম, মানে নিজে ছন্দ মিলিয়ে মিলিয়ে ইচ্ছেমত অনুশীলন করতাম। এটা থেকে আমার একটু ছন্দবোধ আসা আরম্ভ হলো, তারপর দিন এগিয়ে গেল, পরবর্তীতে স্কুলজীবনে যতদূর গেছি, সেই শিক্ষা দিয়েই লেখালেখি শুরু করলাম, প্রথমে সিন্দ্রাণী আঞ্চলিক যুব সংস্থায় লেখা পাঠাই, তখন লেখাটা মনোনীত হয়নি, তারপর আমি প্রায় দশ বছর লেখালেখি করিনি, ভাবলাম, এগুলি আমার দ্বারা সম্ভব নয়, এটা আর হবে না!
¶¶আচ্ছা, কত সাল নাগাদ ঘটেছিল ঘটনাটি ?
∆∆ যতদূর মনে পড়ছে, আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে।
¶¶ প্রথম লেখালিখি শুরু করার পর প্রায় দশ বছর পর্যন্ত আপনি লেখালেখি প্রকাশ্যে আনেননি, তারপরে আবার লেখা প্রকাশের তাগিদ পেলেন কীভাবে ?
∆∆ চারিপাশে লেখালেখি হয় শুনি। একটু আধটু স্কুলে লেখা চাইতো, আরেকটু প্রেরণা পেলাম আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ পূর্বাশা প্রকাশের পর। প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পূর্বে একটি কবিতা লিখেছিলাম, কবিতাটি বন্যা সংক্রান্ত, একটি অনুষ্ঠানে সেই 'বন্যা' শিরোনামের কবিতাটি পাঠ করি এবং বিপুলভাবে সাড়া পাই । মানুষের করতালিতে উৎসাহ আরো বাড়তে থাকে। সেখান থেকে আমার মনে হল যে আমি লিখতে পারবো। তারপর স্থানীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগতে নতুন আলো নিয়ে এলো চরমণ্ডল 'শ্বাদল' সাংস্কৃতিক চক্র। সেখান থেকে শুরু আর এক পথ চলা।
¶¶ আচ্ছা, এই যে শাদ্বল সাংস্কৃতিক চক্র সংস্থাটির নাম ব্যবহার করছেন, সে বিষয়ে কিছু বলুন--
∆∆ কয়েকটি যুবক ছেলে বিশেষ করে, কার্তিক, গোলক, পবিত্র আরো অনেকেই একদিন বিকেলবেলা মাঠে বসে কথাবার্তা বলছিল , বিকেলেই আমার আবার মাঠে হাঁটার অভ্যাস ছিল, সবুজ ক্ষেত বা ক্ষেতের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া পথে হাঁটতে বেশ ভালো লাগে এখনও, এছাড়াও আমার চিরকালের অভ্যাস যেখানেই মানুষেরা ভালো আলোচনা করছে দেখতাম বা বিশেষ গঠনমূলক কিছু করতে দেখতাম সেখানে তারা না বললেও অংশগ্রহণ করতাম। কেন জানি ওদের বিষয়টি বিশেষ ভাল লাগতো । সেদিন বিকেল বেলায় ওদের সঙ্গে বসে পড়েছিলাম মুহূর্ত ভাগ করবো বলে। তখন ওদের মধ্যে থেকেই প্রস্তাব এলো , একটা সাংস্কৃতিক সংস্থা করার । তখন নামকরণ করার কথাটি ওরা প্রস্তাব করতে বললো আমাকে । আমার উপর এই ভার অর্পণ সকলেই আস্থা প্রকাশ করলো । বাড়িতে ফিরে মাথায় এলো -
সেদিনের ঘাসের উপর বসে থাকার কথা। মাথার মধ্যে ভাবনা আর অর্থবহ নামের সন্ধানে ডিকশনারিতে খোঁজ করার চেষ্টা করলাম, তারপর খুঁজতে খুঁজতে দেখি (শাদ্বল) মানে কচি ঘাস, যেহেতু কচি ঘাসের উপর বসেই ওরা প্রস্তাব করেছিল, তাই আমিও নামকরণ ঠিক করলাম 'শাদ্বল'। এবং ওদের কাছে এসে নামটি আমি উপস্থাপন করলাম। ওরাও সেদিন সাদরে গ্রহণ করল নামটি। তারপর থেকেই সংস্থাটির নাম হল 'শাদ্বল'। তখন ১৯৯৬ সাল।
¶¶ সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এবং আপনার সাহিত্য জীবন যে এই সংস্থার দ্বারা প্রাণিত সেটি বোঝা গেলো, তবে আপনার জানা মতে 'শাদ্বল' সংস্থাটির প্রথম উদ্দেশ্য কী ছিল ? কী ধরনের কাজ করবে বলে ঠিক করেছিল তখন ?
∆∆ মানুষের জন্য সামাজিক সেবামূলক কাজ এবং সুস্থ চেতনার বিকাশ , মার্জিত সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল তৈরিতে এগিয়ে চলাই ছিল প্রথম দিকের উদ্যোগ। আমিও সঙ্গী ছিলাম সেইসময় থেকে।
¶¶ তখন কি শ্বাদল থেকে বিশেষ কোনো পত্র-পত্রিকা বের হতো ?
∆∆ না, প্রথমদিকে পত্র-পত্রিকা বা লিটলম্যাগ করার কথা ভাবা হয়ে ওঠেনি । তারপরে পত্র-পত্রিকা করার তাগিদ অনুভব করার ফলে 'শ্বাদল’ শিরোনামেই পত্রিকার সূচনা হয়।
¶¶ আপনার দেওয়া নামকরণে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি এলাকার জন্য কতটা সামাজিক দায়বদ্ধতায় গুরুত্ব বহন করে চলেছে বা সেই সময় থেকে বর্তমানে কীভাবে মানুষের মনে ছাপ ফেলেছিল বলে আপনি মনে করেন?
∆∆ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে গিয়ে বুঝেছি, তখন রাজনৈতিকভাবে বিশেষ বাধার সম্মুখীন হতে হয় সংস্থাটিকে, যার ফলে সেই সময়ে অনুষ্ঠানে ব্যাঘাত ঘটে, এমনভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে যে শাদ্বলের উপর সেই চাপ বেশ প্রতিবন্ধকতার ছিল, তা সত্ত্বেও আমরা উক্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সেই চেষ্টা করেছি । তখনকার বিশেষ কার্যক্রমের মধ্যে ছিল বিশিষ্ট নাট্যকার এবং অভিনেতা মনোজ মিত্র মহাশয়ের আগমন । লোকসংস্কৃতির দিকটাও বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে মানুষের মধ্যে সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছিল । এবং তার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে এলাকার মানুষের কাছে বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায় ‘শাদ্বল’ আয়োজিত লালন বিজয়-সঙ্গীত মেলা । এলাকায় সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল নির্মাণে ‘শ্বাদল’ বিশেষভাবে এগিয়ে আসে, উঠে আসে খুব কঠিন অবস্থা থেকে এবং একটা স্বাবলম্বী অবস্থান পায়। মাঝে বেশ কয়েকবছর সংস্থাটির কার্যক্রম ধীর গতির থাকলেও বর্তমানে নানা ধরনের সমাজ সচেতনতা মূলক কাজ করে চলেছে তারা। যেমন - রক্তদান, বৃক্ষরোপণ, খেলাধুলা, যোগের মাধ্যমে শরীর ভালো রাখার উপায় ইত্যাদি
¶¶ আপনি সাহিত্য চর্চার মধ্যে ছড়া চর্চাই বিশেষভাবে করে থাকেন, আচ্ছা আপনার নিকট জানতে চাইছি, ছড়া শিল্পটি সাহিত্যাঙ্গনে অনেক রকমভাবে অবহেলার শিকার হয়, তাহলে কি ছড়াচর্চা একটি সরল ও সহজলভ্য বিষয়? নাকি ছড়া শিল্পেরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলে আপনি মনে করেন!
∆∆ না! ছড়া শুধুমাত্র শিশুদের জন্যই নয়, যেমন আমি আমার ছড়ার মধ্যে এমন একটি ভাব ফুটিয়ে তুলতে চাই , এমন বার্তা দিতে চাই যে সেটি সামাজিক ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বহন করুক, ছড়া মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে সহযোগিতা করে। ছড়ার বার্তাবহুল দিক, যেমন - প্রাকৃতিক বিবরণ ও সতর্ক - সচেতনতা এবং সামাজিক বার্তা দেওয়া। নানা ক্ষেত্রে সামাজিক বার্তা এবং প্রকৃতিকে নিয়ে লেখার বিষয়টি বেশ গুরুত্বের । অবহেলিত মানুষকে নিয়েও যে ছড়া লেখা যেতে পারে সেটা আমার কিছু লেখা পড়লে বোঝা যাবে। প্রথমে আমি কবিতাই লিখতাম, কিন্তু আমার এক মাস্টারমশাই আছেন অভিজিত সৎপতি বাবু , তিনি এখন চাকরি সূত্রে বাঁকুড়া থাকেন। তিনি জানিয়েছিলেন যে, আমি যেন ছড়াটাই বিশেষ চর্চা করি, কারণ- ছড়ার মধ্যেই নাকি আমার সাহিত্যগুণ বিশেষভাবে সাবলীল । এটাই তিনি পরিলক্ষিত করেছেন বলে জানিয়েছিলেন।
¶¶ এবার আসি একটু অন্য প্রসঙ্গে, আপনার লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ যখন প্রকাশিত হয় তখন মানুষের কেমন প্রতিক্রিয়া ছিল ? এই কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হতে যে ধরনের ভাবনার ভেতর দিয়ে এবং কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এগিয়ে ছিলেন সেই সময়ের অনুভূতি সম্পর্কে যদি কিছু বলেন--
∆∆ আমি 'শাদ্বল' উৎসবে যে লেখাটি পাঠ করেছিলাম, লেখাটি শুনে উপস্থিত জনগণ এটা বাস্তবমুখী লেখা হিসেবে বেশ কদর করেছিলেন, সময়টা যথাসম্ভব ২০০০ সালের বন্যার পরবর্তী সময়ে এবং কবিতাটির শিরোনাম ছিল 'বন্যা'। বন্যা কবিতাটি মানুষকে বেশ খানিকটা অন্যরকম বার্তা দিতে সক্ষম হয়। মানুষের কীরকম দুরাবস্থা হয়েছিল তখন, মানুষ কীভাবে বেঁচেবর্তে ছিল বন্যার সময় সেই প্রেক্ষিতেই লেখা। মানুষের দু্র্দশার কথা লেখার ফলে, যেহেতু প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল তারা, তাই এই কবিতাটিকে বিশেষভাবে গ্রহণ করেছিল সেসময় । তারপর থেকে আমার মনে হলো লেখাটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার, মানুষের একান্ত কথা বলবার দরকার আছে। এবং পরবর্তী সময়ে যতগুলো লেখা লিখেছিলাম সেগুলোর সম্মিলিত প্রয়াসই 'পূর্বাশা' কাব্যগ্রন্থ।
পূর্বাশা কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর মনে হলো যে, লেখালিখিটা সাধারণ মানুষের জীবনের জন্য আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে। এবং এই সাড়া পেয়ে আমি আরো লেখালেখির দিকে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ হই।
যদিও ইদানিং আমার শারীরিক এবং মানসিক কারণে দীর্ঘসময় পড়াশোনা করতে পারিনা। বেশি সময় ভাবতে গেলেই মস্তিষ্কের উপর চাপ সৃষ্টি হয় তা সত্ত্বেও লিখতে ইচ্ছা করে।
¶¶ ছড়াকেই আপনি প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছেন, ঠিক আপনি কোন বিষয় থেকে প্রাণিত হলেন ছড়াকে প্রতিবাদের হাতিয়ার করার বা কোন বিশেষ মানুষ থেকে লেখা লিখির সদিচ্ছা হলো বলে আপনি মনে করেন!
∆∆ আসলে ছড়ার মাধ্যমেই সমাজ চেতনা, দেশকাল, কাঁটাতার সবকিছুকে যে খুব সহজভাবে বলে দেওয়া যায় এবং সেই সহজ কথাটি বলতে গেলে যতটা ভাবতে হয় ভাবনাকে যতটা সরলীকরণ করতে হয় সেটা তো কঠিন আর এই কাজটি বুঝতে গিয়ে আমি অবশ্যই করে স্বীকার করব যে আমাকে অন্নদাশঙ্কর রায় বিশেষভাবে উৎসাহ যুগিয়েছেন তাঁর লেখার মাধ্যমে, অর্থাৎ আমরা সবাই জানি -
( তেলের শিশি ভাঙলো বলে
খুকুর পরে রাগ করো
তোমরা যে সব বুড়ো খোকা
ভারত ভেঙে ভাগ করো !
তার বেলা?
ভাঙছঝ প্রদেশ ভাঙছো জেলা
জমিজমা ঘরবাড়ি
পাটের আড়ৎ ধানের গোলা
কারখানা আর রেলগাড়ী !
তার বেলা ?
-- অন্নদাশঙ্কর রায় )
কখনও সহজ করে বলতে বলতে যেন একটি খুব প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন তুলে দেওয়া, অর্থাৎ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যে আমাদের মজ্জাগত কোথায় ত্রুটি তৈরি হচ্ছে!
প্রসঙ্গক্রমে আমার একটি লেখা বলছি -
( তো তো করে পারবো না
ইংরেজিতে হ্যাংলাতে,/
কথা যদি বলতেই হয়
বলবো আমি বাংলাতে।/
ঐ দেখো না ছোট্ট খোকার
মাথায় কেমন চাপান দেয় /
ইংরেজি আর হিন্দি দিয়ে
পাঠায় তাকে পাঠশালায় /
ভুলিয়ে মা বোল, মাম্মি শেখায় গর্বেতে /
পাইনা ভেবে শেখায় তারা কোন্ খেয়ালে; যুক্তিতে /
মনের ভাষা যায় না কওয়া অন্য ভাষায় মন খুলে
কেউ কি ওঠে অন্যকাঁধে, নিজের মায়ের কোল ভুলে,
পন করেছি মাতৃভাষার মাল্যখানি খুলবো না,/
ঝাপটা ঝড়ে ভাঙুক মাথা তবুও মা-বোল ছাড়বো না! )
¶¶ আচ্ছা আপনাকে জানতে চাইছি - এই সমগ্র লেখালিখি জীবনে এমন কোন না বলা কথা থেকে গেল কি যেটি ভাবতে গেলেই খুব পীড়া দেয়?
এখন প্রায় লেখালেখি বন্ধের মুখে সে ক্ষেত্রে কিছু জিনিস মোচড় দিলেও, আমি আর পেরে উঠি না, শারীরিক কারণে,
জীবনে কি এমন কিছু অধরা থেকে গেলো, যেটা নিয়ে আফসোস হয়? মনে হয় কি এমন কোন জিনিস করে ওঠা হলো না?
∆∆ আফসোস একটাই... ইদানিং আমি দীর্ঘ সময় পড়তে পারিনা নার্ভের অসুবিধার জন্য, আফসোসটা এখানেই আমি যদি প্রচুর বই পড়তে পারতাম তাহলে হয়তো আরো ভালো লাগতো। এই আফসোসটা আমার থেকেই গেল, হয়তো আগামীতেও থেকে যাবে!
¶¶ আপনিতো ছড়াচর্চার পাশাপাশি নাটক এবং গল্পও লিখেছেন। এছাড়াও কবিতা চর্চা করছেন নিয়মিত এবং লেখাগুলি বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে নানা সময়ে। অনেকেই সে বিষয়ে জানেন না, শুধুই জানেন আপনি ছড়া লেখেন, আপনি যে ডাইমেনশনে গল্প লেখেন সেটা গতানুগতিক ধারার একটু বাইরে, এটাকে একটু খোলসা করে বলবেন ! গল্পে সব সময় চমক থাকতেই হবে , এটা কি বাধ্যতামূলক বা গল্প বিষয়টার কিভাবে পরিস্ফুটন হওয়া দরকার বলে আপনার মনে হয়!
∆∆ আমার সব গল্পগুলো পড়লে দেখবে, খুব চমকপ্রদ মেসেজ আছে এমন নয়। তবে কিছু গল্প আছে রসাত্মক, কিছু আছে ব্যঙ্গাত্মক সেগুলো যখন পড়বে কেউ তখন বুঝতে পারবে যে লেখার মধ্যে হয়তো এভাবেও শেষ করা যেতে পারে বা এভাবেও ভাবা যেতে পারে, যেমন আমার একটি গল্পের নাম 'বাদামের খোলা' জানি না কেউ ঐভাবে ভেবেছেন কিনা! বাংলা সাহিত্যে বাদামের খোলা এবং 'প্রত্যাশা' ছোটগল্প জীবনকে যে আলাদা ইঙ্গিত দিতে পারে, সাধারণ সাদামাটা জীবনেও এবং তাতে দেখা যাবে জীবনের সঙ্গে বাস্তবের সহজ সাযুজ্য ও ব্যঙ্গের জায়গা।
¶¶ আচ্ছা, আপনার এই লেখক জীবনে আপনি কি বিশেষ কোনো সাহায্য পেয়েছেন - পারিবারিক পরিমণ্ডল বা সামাজিক পরিসর থেকে ? আলাদাভাবে কোনো মানসিক সাপোর্ট সেভাবে কি আপনাকে সহযোগীতা করেছে?
∆∆ আসলে পরিবার থেকে যে খুব বেশি উৎসাহ পেয়েছি, তা নয়! সেভাবে উদ্দিষ্ট করবার মতো কিছু আমার মনে হয় না। তারা আমাকে যেমন বাধা দেয়নি, অন্যদিকে আমার লেখার ক্ষেত্রে খুব বেশি এগিয়ে দিয়েছে যে সেরকম কিছুও উল্লেখ করার মত নেই! তাদের কাছে এই বিষয়টি অতটা গুরুত্ব হয়তো ছিল না। আমার বড়দা শ্রীমধুসূদন বিশ্বাস, উনি নিয়মিত লেখালেখি করেন সে অর্থে উনি এই বিষয়ে অনেক এগিয়ে, লেখা নিয়ে যে মাঝে মাঝে দু-একবার কথা বলেননি তা নয় তবে লেখালেখি বন্ধ হয়ে যাক এ ব্যাপারেও কখনো আমাকে নিরুৎসাহিত করেননি। বরং লেখালিখিটা এগিয়ে নিয়ে যায় সে বিষয়েও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আর পরিবারের একান্ত দিক দিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় সেই অর্থে আমার স্ত্রী বাধার সৃষ্টি করেনি আর এই বিষয়ে আলাদা ভাবে কোনও তাগিদই তাদের কাছে বিষয়টা খুব সাধারণ বলেই মনে হচ্ছে ইদানিং।
¶¶ বাইরে থেকে যারা আপনার লেখালিখি জীবনে বিশেষ উৎসাহ যুগিয়েছে তাদের কথা মনে পড়ে কি?
∆∆ যারা বাইরে থেকে আমাকে উৎসাহ দিয়েছে তাদের মধ্যে আমি কয়েকজনের নাম নিতে পারি, তারা হলেন কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাস ( তবলা শিল্পী ) গোলক চন্দ্র বিশ্বাস ( শাদ্বল সংস্থাটির সম্পাদক), শুভদীপ রায় ( কবি ও সাংবাদিক ) এবং পরবর্তীতে কৃষ্ণ রায় ( শিক্ষক ) এছাড়াও আমার শেষ বইটি করার জন্য সহযোগীতা করেছিল কবি সৌরজিৎ দাস।
¶¶ এবার চলে আসি অন্য একটি প্রসঙ্গে,
আপনি লিখেছিলেন,
(মানুষের ফোঁটা ফোঁটা রক্তজল /
মণিমুক্তা খচিত প্রেমের সৌধ স্থল /
তোমার কীর্তি সম্রাট মমতাজপতি/
যাদের সম্পদে হলে ভাগ্যবান /
কুড়ালে জগতব্যাপী আত্মসম্মান /
তারা সবে প্রাণ দিয়ে গড়ে ভালোবাসা তুমি করো পর ধনে রঙ্গতামাশা /
ওইযে কুটিরে দেখ আছে দুইজনে, প্রেমের স্বপ্ন চোখে অতিসংগোপনে।/
রাত্রি প্রভাত হলে কাস্তে হাতে নেয় /
দিবস বিকেল হলে দেয় দুটো পাতে /
তাকে ধন্য বলি নয়তো যে ঋণী, /
এ'মাটিতে থাকে যার আত্মজীবনী /
প্রণাম করি তাকে আমি, করি সম্মান, /
সে নমস্য যোগ্য, তুমি নও শাহজাহান। )
আপনার কাছে জানতে চাইছি, ছড়াকার ধরণিকান্ত বিশ্বাস এঁর এই কবিতাটি লেখার পরে বেশ বিতর্ক এসেছিল, এই লেখাটির জন্য আপনার ভাবনা কেন এরকম সক্রিয় হলো?
কেন শাহাজানকে আপনি ঐরূপে দেখিয়েছেন বা সম্রাট শাহজাহানকে আপনি যেভাবে উপস্থাপন করেছেন এই ভাবনাটা আপনার কেন এলো!?
∆∆ আমার মনের মধ্যে চিরকালই সাম্যবাদের ভাবনা কাজ করে, আমি প্রায়ই ছড়া এবং গল্পের মধ্যে লক্ষ্য করবে মানুষের জয়গান গাওয়ার চেষ্টা করেছি, কৃষকের কথা, সাধারণ মানুষের কথা, শ্রমিকের কথা, খেটে খাওয়া মানুষের ঘামের কথা, সাধারণ মানুষের চেতনা জাগ্রত হওয়ার কথা, সমস্ত লেখার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান জুড়ে আছে। এই লেখাটির কারণে সম্রাট শাহজাহানকে এভাবে হয়তো কোন কেউ উদ্দিষ্ট করেননি, শাহজাহানকে এভাবে দেখাতে চেয়েছি কারণ, শাহজাহান তো বিলাসিতায় জীবন কাটিয়েছেন, মানুষের প্রতি অত্যাচার শ্রমিকদের দিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম করিয়ে নেওয়া, নিংড়ে নিংড়ে মানুষের সমস্ত পরিশ্রমের মূল্য কুক্ষিগত করে রাখা, মূলত মানুষের সম্পদ নিয়ে নিজেদের আড়ম্ভরপূর্ণ সৌখিনতায় নিজেদের ব্যস্ত রেখেছিলেন, যা মোগল আমল ধ্বংসের অন্যতম কারণ । অত্যধিক বিলাস-ব্যসনে থাকায় পত্নী মমতাজ এঁর প্রেমগাথা আসলে তাজমহলের স্মৃতিসৌধের নিচেই চাপা পড়ে গিয়েছিল। মমতাজের কান্না এবং হাজার হাজার শ্রমিকের ঘামের তৈরি তাজমহল স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্যের নেপথ্যের এটাই প্রকৃত গল্প।
¶¶ এই যে আপনার সমস্ত লেখালিখি জীবন আপনি অতিবাহিত করলেন সেখানে আপনার অনেক ভালোলাগা লেখক নিশ্চয়ই আছে তাদের মধ্যে কোন লেখকদের লেখা আপনাকে বিশেষভাবে আন্দোলিত করে?
∆∆ ছোটবেলা থেকে তো খুব অভাব এর মধ্যে জীবন কেটেছে দারিদ্র্যের সঙ্গে, লড়াই করতে হয়েছে বিশেষভাবে অনেক বইপত্র কিনে উঠতে পারিনি তার মধ্যে যাদের লেখা পড়বার সুযোগ হয়েছে এবং যাদের লেখা বিশেষভাবে আমাকে টানতো, যেমন-- সুকান্ত ভট্টাচার্য, অন্নদাশঙ্কর রায়, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এছাড়াও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস, বিভূতিভূষণের লেখা আমাকে বিশেষভাবে নাড়া দিত, এখনো দেয়।
¶¶ নতুনদের লেখা পড়েন কি ? তাদের মধ্যে কি সম্ভাবনার আলো দেখতে পান বিশেষভাবে?
∆∆ প্রথমত আমি স্বীকার করছি আমাদের শারীরিক অসুস্থতার রয়েছে তার জন্য আমি দীর্ঘস্থায়ী সেভাবে কোন লেখা পড়তে পারি না ইদানিং। তবে হ্যাঁ তার মধ্যে তরুণদের অনেকেরই লেখা আমি দেখি। তাদের লেখার ওপর নজর রাখা দরকার বলে মনে করি। তাদের মধ্যে সদ্য দেখলাম আমার স্থানীয় লেখকদের মধ্যে যাদের কথা মনে না করলেই নয়
যেমন শুভদীপ অর্থাৎ তোমার কথাই আমি উল্লেখ করছি তোমার লেখা আমাকে বিশ্বাস প্রাণ দেয়, এছাড়াও কয়েকদিন আগেই তরুণ কবি কৃষ্ণ রায় আমায় কয়েকটি লেখা শোনালো সেগুলো যথেষ্ট সম্ভাবনাময় লাগলো, আরও রয়েছে যেমন কবি শুভঙ্কর সাহা, সজল হালদার আরও অনেকেই।
¶¶ জীবনে এমন কোন দুঃখ থেকে গেল কি, যা ভাবতে গেলে ভীষণ কষ্ট দেয়, যন্ত্রণা হয় আপনার ?
∆∆ না। পেছনে ফেলা দুঃখগুলো আমার বরং আনন্দেরই ছিল! কিন্তু বর্তমানে আমার দুঃখের মধ্যে জীবন অতিবাহিত হচ্ছে...! ( কিছুক্ষণ নিরব থাকলেন )
¶¶ আপনার কি মনে হয়, সৃজন ক্ষেত্রে সেভাবে আপনাকে মূল্যায়ন করা হলো না?
∆∆ স্থানীয় লোকের নিকট থেকে অনেক সাড়াও পেয়েছি, তবে সেইভাবে পৌঁছাতে পারিনি সকলের নিকট। ভাবতে গেলে পরেই মনে হয় কত মানুষের কাছে পৌঁছানো বাকি থেকে গেল ! আমিও যেহেতু শারীরিক কারণে কোন জায়গায় সেভাবে যেতে পারি না তাই কাউকে দোষারোপ করার মত আমার কোনো রকম খারাপ ইচ্ছা নেই!
আদান প্রদানের মাধ্যমে বেড়ে ওঠে বড় সৃজন জগত, সেটি আমার হয়তো করে ওঠা হয়নি নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে তাই এটার জন্য আমি কাউকে দোষারোপ করি না। আমার নিজেরই ঘাটতি বলা যেতে পারে।
¶¶ পুরস্কার ও সম্মাননা এগুলো কি আশা করেছেন কখনো ? পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য ভালোলাগাটা বৃদ্ধি হবে, লেখালিখিটা আরও বেশি উৎসাহ পাবে এরকম কিছু কি মনে করেন?
∆∆ আমি সেভাবে বেশি আশা করি না কারণ, আমি একজন খুবই ক্ষুদ্র লেখক ....
¶¶ নতুন যারা ছড়া লিখতে আসবে তাদের প্রতি কি বার্তা দেবেন? লিখতে গেলে তাদের কতখানি সতর্কতা এবং সক্রিয় হতে হবে সেই বিষয়ে দু'চারটি কথা বলুন ?
নতুন যারা লিখছে বা লিখতে আসবে আগামীতে তাদের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, সমাজ প্রকৃতি এগুলোর মধ্যেই লেখালেখির উপাদান লুকিয়ে রয়েছে এগুলোর ভেতর থেকেও কিন্তু অনেক ভালো ভালো লেখা উঠে আসতে পারে তার পাশাপাশি তাকে প্রচুর লেখালেখি সম্বন্ধে জানার এবং পড়ার আগ্রহ থাকা দরকার, কারণ আমি যেভাবে দেখেছি ক্ষেতমজুরদের কথা, চাষির কথা খেটেখাওয়া যে মানুষগুলো রাস্তায় চলে বেড়াচ্ছে তাদের কথা, গ্রামবাংলার কথা, ভাষার কথা এগুলো কোনোটিই বহির্জাগতিক কোন বিষয় নয়, আমাদের চলমান ঘটে যাওয়া বিষয়। কবিতা বা ছড়া সবক্ষেত্রেই একটা সমাজের চালচিত্র যদি ফুটে ওঠে সেটাও দরকার আবার কবিকে যে বার্তা দিতেই হবে এরকম মনে হয় না। কিন্তু সে যদি বিষয়টাকে ঠিকভাবে দাঁড় করায় তাহলে অবশ্যই করে একটি বার্তা দিতে সক্ষম তার লেখা। বার্তা দেওয়ার জন্য লেখা নয় বরং লেখাটা হয়ে ওঠে মূলকথা তারপর কে কিভাবে গ্রহণ করছেন সেটা পাঠক বিচার করবেন। তার উপর ছেড়ে দেওয়াটাই লেখার ধর্ম। তবে তরুণ যারা লিখতে আসছেন অবশ্যই আমি তাদের প্রস্তাব করবো যে আমার যে ছড়াগুলি আছে অর্থাৎ তিনটি বই তিনটি কাব্যগ্রন্থ কবিতা এবং ছড়ার বই দুটির মধ্যে কবিতাও রয়েছে ১) পূর্বাশা ২) আলোরেখা এবং ৩) আহ্বান তার মধ্যে থেকেও তারা আগ্রহী হতে পারেন, বইগুলি যদি তাদের কোনো কার্যকরি ভূমিকা গ্রহণ করে তবে এই লেখাগুলো সার্থক হব।
¶¶ আপনার লেখার মধ্যে ইছামতি এসেছে, এসেছে ইছামতির দুর্দশার কথা, আপনি লিখেছেন আবার আপনি নিরুৎসাহিত হওয়ার থেকেও আলোক সন্ধান করেছেন, আশাহত হননি বরং আশার আলো দেখবার কথা বলেছেন,
∆∆ ইছামতীর পাড়ে আমার বাড়ি, ইছামতি যে বিষয়টা কি আমি ঠিক পরবর্তীতে বুঝতে পারি বিভূতিভূষণের লেখা দেখে। ছোটবেলায় সেভাবে ইছামতীর দিকে চোখ তুলে তাকানো হয়নি, বিশেষ নজর দিয়ে কিন্তু পরবর্তীতে দেখেছি ইছামতি ক্রমেই জমে উঠছে, ভেচাল ভেরির বাধা ক্রমান্বয়ে চারিদিকে গ্রাস করে ফেলছে তারপরেই মনে হয়েছিল ইছামতির যন্ত্রণা নিয়ে কিছু লেখা দরকার।
¶¶ জীবনের সবচাইতে সুন্দর মুহূর্ত বলতে কোন মুহূর্তটা মনে পড়ে আপনার--
∆∆ শৈশব থেকেই প্রকৃতির প্রতি আমার একটা বিশেষ টান তার প্রতি আমার ভাললাগা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে তুলেছে এবং প্রকৃতির সঙ্গে আমার নিবিড় ভালোলাগা বিদ্যমান। সে অর্থে কারো কাছ থেকে আমি যতখানি না ভালোলাগা মুহূর্ত পেয়েছি তার থেকে বেশি দিয়েছে প্রকৃতি । পারিবারিক দিক দিয়ে খুব দৈনতা গিয়েছে, বাবা তিন বৎসর শারীরিক অসুস্থতায় বিছানায় পড়ে থাকায় আমাদের দুর্গতির দিন দেখতে হয় এবং তারপর থেকেই জীবনের জন্য লড়াই করতে শুরু করি আমরা। তবে হ্যাঁ, এর মধ্যে ভালোলাগার বিষয়টিও ছিল, ছোটবেলায় কষ্টের মধ্যে থেকে কাটানো দিনগুলি, সেটি আমার কাছে বিশেষ ভালোলাগার দিনও তার কারণ হচ্ছে একসময় মাঠে ধান পড়ে থাকত আমরা সেই পড়ে থাকা ধান কুড়িয়ে নিয়ে আসতাম মা সেগুলি সিদ্ধ করে ঢেঁকিতে কুটে আমাদেরকে ভাত করে দিতেন আমরা খেতাম, কষ্ট ছিল কিন্তু ওই যে যে ধান কুড়োনো, প্রকৃতির কাছে যাওয়া নিজেদের মতো করে স্বাধীনভাবে হাওয়া গ্রহণ করা মুক্তমনে চলা এটি যেন কষ্ট ভুলিয়ে দিত সেই কষ্টের দিনগুলি আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন। আরেকটি আনন্দের দিন যখন প্রথম থেকে আমার কবিতা এবং ছড়া মানুষ শুনতে আরম্ভ করলো।
¶¶ আপনি ভাষা আন্দোলন নিও একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে অনেক কিছু লিখেছেন
রফিক-সালাম-বরকতকে নিয়ে লিখেছেন যে ভাষা বিষয়টা এই বিষয়টা আপনাকে কিভাবে নাড়া দেয় ?
∆∆ যদিও ভাষা আন্দোলনের সময় আমি জন্মগ্রহণ করিনি যখন ভাষা প্রেমীদের অকাতরে প্রাণ বলিদান এবং তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষার আজকে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে সেটি জানতে পেরে আমার মধ্যে আরো বেশি শ্লাঘা বেড়ে চলেছে। ভাষা শহিদের বেদনার কথা মর্মে মর্মে অনুভব করি। দুই বাংলা ভাগ হয়ে যাওয়ার বেদনা আমাকে বেশি নাড়া দেয়।
¶¶ আপনার কথা কিছু জানান --
∆∆ ছোটবেলায় আমার ৩ বছর বয়সের সময় আমার মা মারা যান! আমার জন্মের পরে ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের গুরুদেব তার সঙ্গে দেখা হয়, তিনি ওই ছোটবেলায় আমাকে দেখে বলেন আমি তো বেশ দুরন্ত অর্থাৎ ধূরণ। এই শব্দ থেকেই পরবর্তীতে আমার নাম রাখা হয় ধরণি অর্থাৎ ধরণিকান্ত বিশ্বাস। মোহিনী বাবু নাম করে এক মাস্টারমশাই আমার এই নামটি দেন ধরণি কান্ত বিশ্বাস।
¶¶ অনেকটা দীর্ঘসময় আপনি দিলেন, আপনার মূল্যবান বক্তব্য, জীবন সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা, আপনার লেখালেখি, কর্মজীবন, ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানালেন , এবার আমরা আলাপচারিতার প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছি , অনুগ্রহ করে জানান -- বর্তমান সময়ে আপনার অবসর কাটছে কিভাবে?
∆∆ বর্তমান সময়ে অবসর কাটে খুবই বেদনার মধ্যে, আমার দুটো পুত্র সন্তান তারা এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই, কর্মসূত্রে অন্যত্র থাকে তারা, আমি আর আমার স্ত্রী এখানে থাকি, এই অতিমারির সময়ে সন্তানদের দূরে থাকা দেখে কোন বাবা-মায়েরই ভালো লাগবে না নিশ্চই! তবুও এটুকুই আশার আলো যে এই যে তোমাদের মত সকলে যখন আশেপাশে থাকে, অন্তত এই মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নিতে আসো, সেকথা ভাবতেও ভালো লাগে। এই আনন্দটুকুই তো বেঁচে থাকার রসদ।
¶¶ কোনো বিশেষ অপূর্ণ কিছু থেকে গেল কি ?
∆∆ আমি যতটুকু পেরেছি, ততটুকু দিয়েছি। আমার বিশেষ কিছু আকাঙ্ক্ষা নেই। আমি জানি যে দিয়ে যাওয়াটাই দরকার, যত ভালো করে দিয়ে যাওয়া যায় ততটুকুই মঙ্গল, বাকিটা সময় বিচার করবে।
¶¶ এতক্ষণ ধরে আপনি আমাদের যে আপনার আন্তরিক সময় দিলেন তার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো। আপনার শারীরিক সুস্থতা এবং মঙ্গল প্রার্থনা করছি।
তোমাদের জন্যও আশীর্বাদ রইলো, শুভকামনা রইল।
বাস্তুতন্ত্র ও অন্যান্য
নীলাদ্রি দেব
এক.
দুপুর ভর্তি কমলা বাগান
চায়ের সরঞ্জামের পাশে স্থির উত্তাপ
নেশামুক্তিকেন্দ্রের বিজ্ঞাপনের বিপরীতে
চামড়াহীন সাপলুডু
নির্দিষ্ট আয়তন ঘেমে জল গড়িয়ে যায়
কেবল কমলা বাগান থেকে হারিয়ে যাচ্ছে
কাঠবেড়ালি
দুই.
একটা ছোট খাট আছে. নিচু. পাশে ওপর-নিচ লম্বাটে জানালা. ঘরে শুয়েই অনেকটা আকাশ দেখা যায়. বর্ষা ভাইরাস ইত্যাদি কারণে সব জানালাই বন্ধ রাখতাম. চোখে অন্ধকার সয়ে গেছে. আজকাল নরম ভেজা আলো দেখতে খুব লোভ হয়. আবার গরম বাড়ছে. জানালা খুলে দিয়েছি. গাছের পাতা নড়ছে না. অদ্ভূত কোণ থেকে খানিকটা দূরের কোনো অ্যান্টেনা দেখি. তীব্র একা. অথচ অপ্রাসঙ্গিক মনে হয় না. কয়েক জোড়া চড়ুই দেখেছি. অনেক দিন পর খুব স্পষ্ট শুনেছি ওদের ডাক. মাকে বললাম ছাদে কিছু দানাপানি রেখে আসতে. এরই মধ্যে ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে থুনবার্গের কথা শুনতে শুনতে মনে হয়েছিল, আমরা বারবার অন্ধকারেই আলকাতরা ছুঁড়ে দিই. দুপুরে চোখ লেগে এল. দেখলাম, একটা আলবিনো শিঙি রঙ হারিয়ে ফেলছে. ক্রমে কালচে হয়ে এল. একে আমরা স্বাভাবিক ভাবছি. কিন্তু... হঠাৎ আঁতকে উঠলাম. এতক্ষণ চারটে তারের মাঝে সুর খেলছিল. যেন বৃষ্টির প্রার্থনা. ক্যাসেট জড়িয়ে গেছে. ঘামছি. পাখা ঘুরছে, তবু.
তিন.
বৃত্ত এঁকেছি. কেন্দ্র বলতে একটা বিন্দু. কখনও বিন্দুর থেকে নিজেকে ছোট করে নিই, বৃত্ত মনে হয়. কখনও বৃত্তকেই কেন্দ্র ভাবতে ইচ্ছে করে, মূলত ভূমিকম্পপ্রবণ শহরের গল্প বলতে সবচে উঁচু কোনো ছাদে উঠে এলে. আকার, দূরত্ব... এসবের ওপর কর্পূর ছিটিয়ে দিত মা. শুনেছি এতে নিজস্ব অধঃক্ষেপ বেড়ে যায়. কিন্তু এতো দ্রুত উবে যায় সব, বিকেল ও সন্ধের সীমান্তে আমার শ্বাসকষ্ট হয়. যদিও গাছের কাছে গাছ দাঁড়াতে পারে না, বিল্ডিং দাঁড়িয়ে যায়. যে/ যা যত দ্রুত দাঁড়ায়, শুয়ে যায় কি? এসবের কোনো সমীকরণ নেই. তাই হয়তো এক্স ধরে নিই. সীমানা প্রাচীরে যৌথ 'হ্যাঁ' লেগে আছে. দীপাবলীতে তেল চুঁইয়ে যাওয়া প্রদীপ. অতএব অঙ্কতে টেনশন ক্রিয়েট হল. সব সমস্যায় সমাধান থাকতে নেই. কিংবা থাকতে আছে. মনোক্রোম দৃশ্যের শেষে মোড়লের হুঁকো থেকে পাকিয়ে ওঠা ধোঁয়ার মতো স্থির কিছু.
এসব আজগুবি আর বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না.
অথচ কিছুতেই পাণ্ডুলিপি বদলাতে পারছি না.
ধারাবাহিক উপন্যাস
জলের চিহ্ন
মি তা লি চ ক্র ব র্তী
প্রথম পর্ব
এদিককার বাড়িগুলো খুব সুন্দর বেশ সাজানো গেটে গেটে অগ্নিশিখা কিংবা ঝুমকো লতা দিয়ে বাহারি করা,আবিষ্ট হয়ে তাকিয়ে ছিল শ্রীরূপা পাশ থেকে দিগন্তবলে উঠল এগুলো সব প্রবাসী বাঙালিদের।ড.বিধানচন্দ্র রায় কল্যানীর রূপকার জানিস তো! সেই সময়কার সুবিধাভোগী লোকজনের সন্তানেরা সবাই চাঁদের মানে আমেরিকার নাগরিক। তাদের দেশের বাড়ি এইসব। চোখকান খোলামেলা রাখ দুই একজন বিদেশীর দেখা পেতে পারিস বেড়াতে এসেছে হয়তো।এরকম মজাকরেই কথা বলে দিগন্ত হাসল শ্রীরূপা একটা হালকা হলুদ রংয়ের শার্ট পড়েছে দিগন্ত খুব মানিয়েছে ওকে ।শ্রীরূপা শাড়িই পড়েছে। দিগন্তের পছন্দ মতো মভকালার আজ সারাদিন একসঙ্গে কাটাবে দু'জন। সারাজীবন কাটানোর কথা ছিল হয়নি, আর হবেও না ।শ্রীরূপার মেয়েটা এবার ফোরে উঠবে দিগন্ত ও ফিরে যাবে তার নিজের শহরে নিজের সংসারে ।হয়তো দেখা হবেনা দুজনের । দিগন্ত ভুলে যেতে চাইবে শ্রীরূপার অপূর্ব দুটি চোখ। জীবনের সন্তর্পণতা হারিয়ে যাবে।এখনো দিগন্তের ছোঁওয়ায় কেমন উদ্দাম হয়ে ওঠে ওই গভীর চোখের শ্যামলা মেয়ে। কিছু প্রত্যাশা করে কি!! জানেনা দিগন্ত আর জানতে চাওয়ার পরিস্থিতি আদৌ থাকবেনা হয়তো।দূর সম্পর্কের আত্মীয়তার কারনে দেখা হবে কখনো হয়তো তাতে কি আর এই দিন গুলো ধরা যাবে!
মাঘ মাসের সোনাগলানো রোদে পাশাপাশি দুজন হেঁটে চলে শব্দ বিহীন।
শ্রীরূপা দিগন্তের মামার শালীর মেয়ে। মামার বিয়েতে পঞ্চদশী শ্রীরূপাকে প্রথম দেখেছিল দিগন্ত। ভালো লেগেছিল কিন্তু ওই পর্যন্তই বিয়ে বাড়িতে যেমন হয় আরকি,,
উনিশ বছরের দিগন্ত তখন কুহেলির প্রেমে বিভোর।তার চোখে তখন কুহেলির নেশা জড়ানো কুহেলি কত্থক ডান্সার, কুহেলি শহরের নামী স্কুলে পড়ে,উঠতি যুবকদের স্বপ্ন কুহেলি ও দিগন্তের প্রেমে একদম বিভোর স্কুল পালিয়ে দেখা করেদুজনে এভাবেই কাটতে থাকে দিন।তারপর নার্সিং পড়তে চলে গেল কুহেলি। দিগন্ত ততদিনে এম,কম , পড়ছে প্রেম চলল চিঠিপত্রে।কুহেলির প্রথম পোষ্টিং হল মালদা সেখানেই প্রতিশ্রুতি মান সার্জন ত্রিদিব নাথ এর সাথে গাঁটছড়া বেঁধে ফেলে বুদ্ধিমতী কুহেলি। দিগন্তের অজ্ঞাত সারে।
এদিকে শ্রীরূপার জন্য পাত্র দেখা শুরু হয়েছেবাংলায় অনার্স নিয়ে কলেজে পড়তে পড়তেই সাধারণ বাঙালি বাড়ির রীতিমতো দেখাশোনা আরম্ভ হয়েছে।ভাই এর পড়াশোনার খরচ আছে আর মেয়েকে তো পরের ঘরে দিতেই হবে।গান গাইত শ্রীরূপা,তেমন লক্ষ্য করার মতো নয় খুবই সাধারণ মেয়ে সে।তবে কারো কারো সাধারণ বৌ হয়।তারাও সাধারণ খুব সাধারণ তাদের বাড়ির বউরা গান জানেন কিন্তু গাইতে ভুলে যেতে হয়। ভাত রাঁধে তারা অফিসের ভাত, সঙ্গে ডাল, মাছের ঝোল, একটা তরকারি মোচা,কুমড়ো কিংবা কচুর শাক নানারকম ভাজা।রুটি করতে জানতে হয় বেশ নরম করে আটা ঠেসে ঠেসে যাতে বয়স্ক শ্বশুর মশাই প্রৌঢ়া শাশুড়ি ছোট্ট বাচ্চা আর উপার্জনশীল স্বামী সবাই সুস্থ থাকে। ভালো হজম হয়,রাতে ঘুমটা ভালো ভাবে হয় ।আর স্বামী যদি খুশি থাকেন তবে বছরে দুই চারটে ভাল শাড়ি ছোটখাটো গয়নাবছরে একবার বেড়াতে যাওয়া মেয়ের জন্মদিন।পূজোর সময় বাপের বাড়ি জামাকাপড় পাঠানো কিংবা অসুস্থ বাবাকে দেখতে যাওয়ার এইসব যাপন চলে পাশাপাশি সুমসৃন।
ভাই এর পড়া চলছে সে তো আছেই বাবা মায়ের অবলম্বন। সুতরাং,,,
দ্বিতীয় পর্ব
বড়মামার মেয়ের বিয়েতে আবার দেখা হয়ে গেল দিগন্ত আর শ্রীরূপার ।দিগন্ত এখনো একাই আছে, বাবা চলে গেছেন পরপারে; মা আর ছেলের ছোট্ট সংসার। ছোটখাটো একটা সরকারি চাকরি জুটিয়ে নিয়েছে সে, কিন্তু মনে মনে হেরে যাওয়ার নিঃস্বতা বয়ে চলে একান্তে; প্রথম প্রেমের কাছথেকে পাওয়া চোট গভীর ক্ষত রেখে গেছে তার মনে।এমন এক আলগা বাঁধনছেড়া সময়ে আবার দেখা হলো শ্রীরূপার সাথে।ভরন্তপূরন্ত সংসারী এক নারী কোলে ফুটফুটে মেয়ে । ভরপুর সংসার,কপালে সিঁদুর
আবার জমে ওঠে আনন্দ পরিবেশ আর সুখস্মৃতির রোমন্থন। আনন্দ আর আলাপ আলোচনায় আত্মীয়তার সম্পর্ক গুলি ঝলমল করে ওঠে।সকলেই বোঝাতে চায় সুখ। কিন্তু দিগন্তের মা ম্লান মুখে থাকেন। চোখ এড়ায়না শ্রীরূপার; দিগন্তের সাথে কথা হয় কতদিন পর,,, দুজনে এই প্রথম। কথায় কথায় জমে ওঠে বন্ধুত্ব। অনুষ্ঠান শেষে আবার যে যার মতো ফিরে আসে।
কয়েক দিন পর হঠাৎ দিগন্ত ফোন করে,কথা হয় দুজনের সাধারণ কুশলবিনিময় তারপর দিগন্ত প্রশ্ন করে, ফোন করলাম বলে "তোর কোন ডিস্টার্ব হলো না তো?" জবাবে শ্রীরূপা রবীন্দ্রনাথের দুই লাইন বলে ফেলে, "রাতের সব তারাই আছে/দিনের আলোর গভীরে,,",
দিগন্ত পরের দিন ফোন করে আবার, আবার, প্রতিদিন ফোনে কথা হয়,,, কি এক হৃদয়াবেগ ভাসিয়ে নিয়ে যায়। দুজনেরই অপেক্ষা থাকে আর থাকে আবেদন ;কোনমতেই যেন খারিজ করা যায়না সেই বিধ্বংসী আবেগ।
প্রথম প্রথম উৎকন্ঠা ছিল শ্রীরূপার কিন্তু দিগন্তের আকুল করা এস এম এসগুলো তার মনকে প্ররোচিত করতে ছাড়তনা। নিজেকে অচেনা লাগছে শুরু করেছিল মেয়ে, মেয়ের বাবা, প্রিয়জনেরা সবাই তার থেকে কেবল নিয়েই গেল সারাটা দিন ধরে সবার সুখসুবিধার খেয়ালে কেটে যায় সময় তার নিজের জন্য কখনো কোন ভাবনা তো আসেনি; তাই দিগন্তের ডাকে সাড়া না দিয়ে পারেনি সে । এতদিন বুঝতেই পারেনি বুকের ভিতর হাজার বছরের তৃষ্ণা কেমন পাষাণ হয়ে ছিল। দিগন্তের পাঠানো এসএমএস এর আর্মিরা তাকে পাগল করে তোলে কিন্তু মনের মধ্যেকার মনটা তাকে সাবধান করে ।সবাই বুঝতে পেরে যায় যদি ! সুতীব্র দ্বিবিধায় বারবার ভেঙে চুরে যায় তার মন।অন্যকারো স্ত্রী সিঁদুর পরে, তার জন্য রান্না করে অথচ পরপুরুষের জন্য মনে মনে মরে যাচ্ছে। তৃষিত মন ফোনের জন্য অপেক্ষা করে।এস এম এস করে দিগন্ত কত ভালো বাসা ভরা সেইসব আকুতি।যদি ওর ওই আর্তি গুলো সত্যি হয়!হতেও তো পারে মনটা ভরে যায় শ্রীরূপার।রিপ্লাই পাঠায়, রিপ্লাই ফিরে আসে ক্লান্তিকর দিনাতিপাত সেরে অবচেতনে সজীব আনন্দবাসের কল্পনায় মেতে ওঠে অবুঝ মন। এমনকি মন বসেনা প্রিয় সিরিয়ালে । শাশুড়ি মা অবাক হয়ে বলেন "তোমার হল কি বৌমা ! কেমন যেন অন্যমনস্ক থাকোৎআজকাল?শরীর পরীর ভালো আছে তো?"
ক্রমশঃ
পাবলো নেরুদার কবিতা
অনুবাদঃ মানিক সাহা
পাবলো নেরুদা (১৯০৪ - ১৯৭৩) প্রকৃত নাম রিকার্ডো এলীসার নেফতালি রিয়েস বাসোয়ালতো। ১৯০৪ সালে দক্ষিণ চিলির এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আর মারা যান ১৯৭৩ সালে, মাত্র ৬৯ বছর বয়সে। তিনি জন্মেছিলেন যে নাম নিয়ে, তা ছিল বেশ দীর্ঘ—রিকার্দো এলিয়েসের নেফতালি রেইয়েস বাসোয়ালতো। নেরুদার বাবা চাইতেন না তাঁর পুত্র কবিতা লেখার মতো অলস ও অফলদায়ী কাজ করুক। তাই নিজেকে আড়াল করতে তিনি পাবলো নেরুদা ছদ্মনাম গ্রহন করেন। চেকোস্লাভাকিয়ার ১৯ শতকের প্রধান ও প্রভাবশালী কবি ও সাংবাদিক ইয়ান নেরুদাকে স্মরণ, সম্মান ও অনুসরণ করে তিনি সেই নামটি বেছে নিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজেতা একজন চিলিয় কবি, নেরুদা মাত্র তেরো বছর বয়েসে কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন যখন তিনি বিভিন্ন ধরণের কবিতা লিখতে শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল পরাবাস্তববাদী কবিতা, ঐতিহাসিক মহাকাব্য, প্রকাশ্য রাজনৈতিক ইশতেহার, গদ্য আত্মজীবনী এবং ভালোবাসার কবিতা।নেরুদার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় যখন তাঁর বয়স মাত্র সতের বছর এবং খুব দ্রুত তাঁর কবিতার উন্নতি ঘটতে থাকে। ১৯২৪ সালে প্রকাশিত Twenty Love Poems ang a Song of Despair শীর্ষক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিলাভ করেন। তাঁর এই কাব্যগ্রন্থটি সবথেকে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে এখনো সমান বিক্রিত ও জনপ্রিয়কাব্যগ্রন্থ।
অনুদিত এই কবিতা 'Twenty Love Poems and a Song of Despair' থেকে নেওয়া হয়েছে।
*মধ্য গ্রীষ্মের সকাল*
মধ্য গ্রীষ্মের সকাল
ঝড় ঝঞ্ঝায় পরিপূর্ণ।
বিদায়ের সাদা রুমালের মতো মেঘ ভাসে,
বাতাস তাদের হাতে নিয়ে নাড়াতে নাড়াতে উড়ে যায়।
আমাদের প্রিয় নৈঃশব্দ্যের উপর
বাতাসের অগণন হৃদয় কম্পিত হয়।
যুদ্ধ এবং গানে পরিপূর্ণ ভাষার মতো
গাছপালার আনাচে-কানাচে উৎসব এবং ঐশ্বরিক স্পন্দন
প্রতিধ্বনিত হয়।
বাতাস মৃত পাতাগুলিকে দ্রুত আক্রমনে ছিন্ন করে
পাখীদের বিমোহিত তীরগুলির দিক বদলে দেয়।
বাতাস তাকে এক ঢেউয়ে ফেলে দেয় যাতে কোন ঝড়না নেই
এমন এক বস্তুতে ফেলে যা ভারহীন, তীর্যক অগ্নিশিখা।
তার অসংখ্য চুম্বনের ভার আছড়ে পড়ে, ডুবে যায়,
অতর্কিতে ঝাপিয়ে পড়ে গ্রীষ্ম-বাতাসের দরজায়।
*তেমন করেই তোমাকে আমি ভাবি*
গত শরতকালে তুমি যেমন ছিলে তেমন করেই তোমাকে আমি ভাবি।
তুমি ছিলে ধূসর আড়াল, আর তোমার হৃদয় ছিল অচঞ্চল।
তোমার দৃষ্টিতে ছিল গোধূলির অস্তরাগ
আর তোমার হৃদয়ের জলে পাতা ঝড়ে পড়েছিল টুপটাপ করে।
লতানো গাছের মতো আমার দু'হাত আকড়ে ধরে
কণ্ঠে ছিল পাতার মর্মর - ধীর, শান্তিময়।
আমার তৃষ্ণা তখন পুড়ছিল বিস্ময় ও সভ্রমের মায়াবী আগুনে
আর আমার আত্মাকে জড়িয়ে নিয়েছিল কোমল নীল কচুরিপানা।
তোমার দৃষ্টির সঞ্চার আমি অনুভব করি, বুঝতে পারি শরতকাল এখনো সুদূরবর্তী:
ধূসর অবগুণ্ঠন, কাকলি, পাখীর নীড়ের মত মন
যার দিকে আমার গভীর বাসনা গন্তব্য খুঁজে নেয়
আর আমার সুখী চুম্বনগুলি ঝড়ে পড়ে তপ্ত অঙ্গারের মত।
জাহাজ থেকে দেখা আকাশ। পাহাড় থেকে দেখা খোলা প্রান্তর:
আলোয়, ধোঁয়ায় গড়া তোমার স্মৃতি যেন এক নিস্তরঙ্গ দিঘি!
তোমার দৃষ্টির সীমা অতিক্রম করে, দূরে আরো দূরে, গোধূলির অস্তরাগ।
আর তোমার হৃদয়ে পাক খেয়ে উড়ে যাচ্ছে শুকনো পাতার দল।
*বিকেলগুলির পিঠে হেলান দিয়ে*
বিকেলগুলির পিঠে হেলান দিয়ে তোমার সাগরনীল চোখের দিকে
প্রতিদিন আমার করুণ জালগুলি ছুড়ে দিই।
শেষ বিকেলের ছটায় আমার একাকীত্ব দীর্ঘতর ও তপ্ত হয়
তার হাতগুলি ডুবন্ত মানুষের হাতের মতো নড়তে থাকে।
তোমার অমনোযোগী চোখের দিকে আমি লাল সংকেত পাঠাই
বাতিঘরের কাছাকাছি ঘুরে বেড়ানো সমুদ্রের মতো দুটি চোখ।
আমার সুদূরবর্তী নারী, তুমি কেবল অন্ধকার বিছিয়ে দাও,
মাঝে মাঝে সেই অন্ধকার থেকে আশঙ্কার দ্বীপ ভেসে ওঠে।
বিকেলগুলির পিঠে হেলান দিয়ে - যে সাগর তোমার সাগরনীল চোখে কেঁপে ওঠে -
তাতে আমার করুণ জাল ছুড়ে দিই।
তোমাকে ভালোবাসার সময় আমার হৃদয়ের মতো জ্বলে ওঠা
আকাশের প্রথম তারাটিকে রাতের পাখীরা এসে ঠুকরে খায়।
রাত তার ছায়াঘোটকীর পিঠে চড়ে
স্থলভূমির উপর দিয়ে নীল জড়ির সুতো ছড়িয়ে দেয়।
-
টংঘরে রাজা প্রথম মনীন্দ্র গুপ্ত রমিত দে ...” জন্ম থেকে এই জগৎকে পাঁচ ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করেছি, আর তাঁর বিচিত্র অর্থ মনের মধ্যে উঁক...
-
চোখ নীলাব্জ চক্রবর্তী ক্যামেরা অর্থে কোনও কাগজের চোখ ঠাণ্ডা দেখি সম্পর্ক একটা গাছ ফেনার ভেতর কে একটা দশকের বারবার নাম বইছে কাঁচের...
-
গানদীঘির কবিতা সুবীর সরকার ১. রাজবাড়ীর আলো সাগরদীঘির জলে পৌষের ঘন হয়ে ওঠা শীত শহরে ছড়িয়ে পড়ে সুরেন বসুনিয়ার ভাওয়াইয়া ঘোড়া ছোটাচ্ছ...