Wednesday, August 4, 2021

 উত্তর- পূর্বাঞ্চলের কবিতা

জুলাই সংখ্যা ২০২১ , কবিতা করিডোর 




আত্মকথন

সন্তোষ রায় 

এসব কি আর আত্মকথন! 

চন্দ্রাহত হ'য়ে আছি 

তা-ও দোষণীয় নয়

তুমিও কি আহত তবে! 

নাকি কলঙ্ক দেখে ঘুমোলে বসন্ত সমীপে! 


এখন আমার চোখে আর কোনো রঙ নেই জোছনা ছাড়া 

জোছনা গড়িয়ে যাচ্ছে কুয়োর দিকে 

আমি পিপাসার্ত 

জল চাই জল 

কুয়ো ভর্তি জোছনা কেবল ---


অনিকেত               

চন্দ্রিমা দত্ত

বনের গন্ধ নিয়ে যে পথটি চলে গেছে ঐ 

একটি বাড়ির দিকে

তুমি সেখানে ঠিকানা বললেও আমি জানি 

তোমার বাড়ি এ নয় 

তোমার নিভৃত আশ্রয়, ঠিকানা বহু দূরে . . . 

যদি অনিকেত নামে 

তোমাকে ডাকি-ই, আমার  কী ভুল হতে পারে?

            

অন্য কথা থাক আজ 

মুঠোয় প্রহরগুলি বড় উজ্জ্বল এখন 

নদীর উপল খণ্ডে 

বসো তুমি, তোমার  চোখে, বুকে, হাতে, সর্বাঙ্গে 

অনিকেত ছবি আঁকি . . . 

ঐ যে উজ্জ্বলতা, তার থেকে ছায়া রঙ টেনে 

তোমাতে ছুঁয়েছি যেই 

তুমি ফিনিক্সের নীল ডানায় স্বর্গ খুঁজলে 

ঠিকানায় সন্ধ্যা নামে

স্পর্শ  

নীলাদ্রি ভট্টাচার্য

আমাদের শব্দের দিকে সূর্যকিরণ এগিয়ে চলে

গভীরে ভাষা স্পর্শের খোলা আকাশ

অক্ষর আলিঙ্গনে নিকটে আসে। 


অনেকটা স্পন্দন পেরিয়ে

পরিপূর্ণ আমাদের বিজয়ী কণ্ঠ

রক্তের দাগ 

চোখের উষ্ণ জল

মিলেমিশে একাকার...শিকড় শিহরণে। 


ত্যাগের পৃষ্ঠাগুলো তাই সদা জাগ্রত 

অদ্ভূত তীব্র সার্থক দৃঢ় 

অন্তর্নিহিত কৃষ্ণচূড়ায় প্রাণের বৃষ্টি

সাবলীল শহিদ চিরন্তন আশ্রয় ধ্বনি ।


অসুখ

দেবাশ্রিতা চৌধুরী

ধূপের ধোঁয়া ছাপিয়ে সন্ধ্যা ভাসে

পোড়া পোড়া গন্ধে

কার বাড়ি দুধ পোড়ে

ভাত পোড়ে ডাল পোড়ে

নিদ্রাহীনতা আর বিস্মরণের অসুখে।

কিছুটা সময়ের পরে পোড়া বাস

এগিয়ে আসে কাছে,

আমাদের দগ্ধ যাপনক্ষতের

প্রলেপে আমরা ব‍্যস্ত ছিলাম।

আচানক নির্বুদ্ধিতায় ক্ষত বেড়ে গেলে

পৃথিবীর যাবতীয় অ-সুখ মেখে

দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে

সংরক্ষিত গোপন অসুখ ...


স্নান

তমা বর্মণ 

ভালোবাসার আমি কি জানি?

তুমি জানো তুমি বলো

সারাদিন উর্বর হয়ে থাকে রোদ

কে দেয় আলপনা গাছে গাছে 


তুমি জানো তুমি বলো

বারোমাস কি করে খুশি?


অবগাহন রক্তে হৃদয় সাঁতরে 

এত জল!

খুঁজে খুঁজে যত ডুবি জলের কাছেই ঠাঁই


পিপাসা তোমার তুমি ভালোবাসা খাও...


তালাচাবি দরজা ভিতর থেকে কি দেখে মানুষ? 

আমি কেবল দেখি শূন্যের পথে প্রজাপতি ওড়ে এক


তুমি জানো?

শরীরে সঞ্চারিত নিদ্রামগ্ন মধ্যরাত জাগায় কত?


আগুন...আগুন... 

ফোটেও তাতে নির্মোহ ধুলোবালি স্নান...


ঝর্ণা-তলায় দাঁড়িয়ে স্নানের অতল তুমি কি দেখেছ?

কোনোদিন


সবাই কেমন ঘুমিয়ে আছি

অমলকান্তি চন্দ

দোয়ার খোলার শব্দ হলো

বুকের ভেতর মনের কাঁটা,রক্ত ঝরে,দাগ ছোপ ছোপ

তুলসি তলায় উড়ছে ধূপ।

আমার হাতে চিটার দলা,ব্রম্ম তালুর বেবাক ঘোর

মানষে বলে আকাশখানা

গর্জে ওঠে বিকট সুর।

সুর চড়লে,হল্লা বাড়ে, হুলুস্থুলর সংকেতন

দুঃখগুলো মাটির মতো,চকটে চলো অনেকক্ষণ।

এবার জোরে নড়ল কড়া

ঝিলিক আলো পূব গগনে,বইছে হাওয়া গাছের মাথায়

ছনের চালে পাখির বাসা,উড়ছে তারা ডানায় ডানায়

রাঙা চোখে উড়ছে আবীর, হাজার লাথে ভাঙ্গল দোর

আকাশ কেমন ঘোরের মাঝে, হারিয়ে ফেলে বেবাক সুর।


শ্মশানগুলো রাত্রি জাগে,তোমরা বুঝি আগুন গিলো,

হাজার ছায়া আসছে ধেয়ে,শব্দ করে নড়ছে কড়া,

সবাই কেমন ঘুমিয়ে আছি।



শোকসভা

অর্পিতা আচার্য

তোমার মৃতদেহের পাশে একবার 

বসতে দাও আমাকে-

দেখি যে ঠোঁট ভালোবেসেছিলাম 

দেখি যে হৃদয় খামচে ধরেছি নখে কোনদিন 

দেখি যে হাত দিয়ে চূর্ণ করেছো আমার মেধা 

আর যে পা দিয়ে মাড়িয়ে গেছো আমার

টেরাকোটা স্থাপত্যের ধ্বংসস্তূপ 


সমস্ত লাশই তো পচনশীল, তাই


তোমাকে হত্যার পর এ শোকসভায় 

খানিকক্ষণ আমি আজ একা বসতে চাই


কুণ্ডলী বিচার-২

শিবাশিস চট্টোপাধ্যায়

চোখ নেই মর্কটের, কর্কটে তুঙ্গী বৃহস্পতি

জাতকের গতি নেই আটকে যাবে চাকা

ফাঁকা জ্যোতিষীরা তবু ছলায়-কলায়

তোমাকে ভোলাবে

তুলার জাতক তুমি, বৃহস্পতি হবে হন্তারক

উচ্চস্থ হলে সই, না হলেও সই

ভূমায় বসলেও এর অন্যথা হবে না

কুম্ভ রাশির ছেলে, জন্ম দুষ্ট চাঁদে

কান্নার আওয়াজ নেই, ভিতরে সে কাঁদে

ঘুরে মরবি দোরে দোরে, হাত পেতে খাবি

আলোর সংবেদ এলে, দেখবি হারিয়ে গেছে চাবি


বসন্ত সময় 

অপাংশু দেবনাথ 

ছায়া রেখে যেতে চাই  শরীরের থেকে দূরে,

সে আমার পথ ধরে, ছুটে অন্তরে বাহিরে।

যতটা ভেবেছো দূরে প্রণয়ে জেনেছি সুখ,

শূন্যের উপর স্বপ্ন রেখে দেখেছি অন্তর,

ওখানে যত মায়ার ছল, বুঝিনি প্রশ্রয়ে।


মায়াহীন প্রেম বলো কতোটা ছুঁয়েছে দেহ!

শরীরের ক্লান্তি নিয়ে জেগে উঠেছে মানুষ।

এই হাতে ছুঁয়ে মানুষের দেখেছি উষ্ণ শরীর,

ভেতর থেকে ঠিকরে পড়েছে কালসিটে আলো।

আলোহীন হয়ে বুঝি ছায়ার কতটা দূরে,

ছায়ার ভেতর ঘুরপাক খায় তবু বসন্ত সৃজন।




পুকুর কিংবা পলাশের গল্প 

বিজয় ঘোষ

পলাশের লাল রঙ ছড়িয়ে যায় বাতাসে

ঘুম ঘুম দুপুরে ঘুঘুর ডাক 

কিংবা নিস্তব্ধ দুপুর 


অন্ত্যজ মেলায় হারিয়ে গেছে বালকবেলা

পলাশ কিংবা কৃষ্ণচূড়া কেবলই 

দুরন্ত দুপুর আঁকে,


যেখানে বালক বেলা নেই

নেই ছলা ও কলা


বঁড়শিতে মাছ গেঁথেছে

নিস্তব্ধ পুকুরে জাগে কোলাহল 

আসন্ন মৃত্যু এঁকে দিয়েছে হলুদ দুপুর 


আয় তবে সহচরী

জলকেলিতে নিমগ্ন হোক বিষণ্ণ দুপুর 


পুকুর কিংবা পলাশের গল্প 

রচনা করে কেবলই ভুলে যাওয়া বিষাদ,


প্রেমে-অপ্রেমে

কমলিকা মজুমদার 

৬)

আমাদের ডো রে মি ভালোবাসারা

গিটার স্ট্র্যামিং এ গায় রামপ্রসাদী,

আঙ্গুলের তার ছুঁয়ে নেমে আসে 

বৃষ্টিভেজা এক ব্যালকনি কনসার্ট। 


আকাশে আকাশে জ্বলে ফ্ল্যাশ লাইট,

সাবধানে ঢেকে রাখা সব মনখারাপ

চিত্রশিল্পীর কাছে বসে ন্যুড আঁকতে। 


সব গান প্লে-লিস্টে রাখতে নেই,

কিছু কনসার্ট শুধু নীরবতা চায়।

৭)

আমাদের অটো টিউন ভালোবাসারা

নিজের গলার স্বরে মেলায় সুর যন্ত্র,

লাইক ডিসলাইকের প্রতিযোগিতায়

দাঁত বসাতে চায় গোল্ড মেডেল বুকে। 


রূপকথার গল্পে থাকে এক স্বর্ণ গাছ,

থাকে রাজকুমারী ও তার ইউনিকর্ন,

সব কিছুই সুন্দর,কিন্তু সত্য নয় জানি। 


হাজার লাইকের ভিড়ে হারায় কণ্ঠস্বর,

হারায় হৃদয়ে একান্তে বলা মাদার-টাঙ্গ।



অনামিকা -১১

(সময়ের কবিতা )

শতদল আচার্য

আমার প্রিয় নাম গুলি ভুলে যাচ্ছি আজ 

ভুলে যাচ্ছি প্রিয় চলাচলের জায়গাগুলি।


এখানে পা বাড়ালে মরন ফাঁদ 

চলাচলের ভয় , ভয় এখন বাতাসে ও 


বিশ্বাসের চাকা মরে গেছে কবে

কোথায় লিখব প্রিয় বন্ধু তোমার নাম

 

কোথায় দাঁড়াতে দাঁড়াতে কোথায় দঁাড়লাম

ভীষণ সুখের কথা কেঊ বলে না ।


কানে কানে বলে যায় -- 

এখানের নরক ,কবে ফোটবে  পদ্ম  

 

পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ভেঞ্চায় মুখ 

খেলা খেলা এখন নিত্য দিনের খেলা ।


সিক্ত

বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য

পর পর অক্ষর

গেঁথে, বাড়ি গড়ল

কবি ইক্ষু ক্ষেতে

ছড়িয়ে দিলো দুঃখ 

যত  উঠোন জুড়ে

সব ভিজবে 

সব ভিজবে 

চোখের জলে

বৃষ্টিজলে!


রূপাডিহি

দেবলীনা সেনগুপ্ত

মেঘমল্লার শুনে আকাশ আলো জাগায়/

থিরবিজুরির

ময়ূরকণ্ঠী সোহাগ জ্বলে

প্রিয়তরুবল্কলে। 

রাত পোহালে

রূপাডিহির সহজ গেরস্থালিতে

নিমন্ত্রণ পায় রূপালি বাতাস

বৃক্ষতলে পড়ে থাকা ফলপাকুড়ে

তৃপ্ত হয় নধর শিশু

উদ্বৃত্তের আদরে  ভরায় পালিত প্রাণ। 

শাকান্ন তৃপ্ত দ্বিপ্রহর/

ভরে ওঠে অলস গুঞ্জনে

গোধূলির সুরে রাখালিয়া ফেরে

প্রিয় আঙিনায়। 

সাঁঝপিদিমে পতঙ্গনাচ

আলো আঁধারির সঙ্গতে

ভালোবাসার নদী আঁকে

মেঘমল্লারের কোমল নিষাদের মায়ায়‌... 


শুধু, গভীররাতে

মেঘমল্লার স্বপ্ন না দেখালে

রূপাডিহির পথ হারিয়ে যায়

কোমল নিষাদের প্রেমে না পড়লে

রূপাডিহির জোনাকিরা আলো নিভিয়ে ফেলে

রূপাডিহি... মেঘমল্লার.. কোমল নিষাদ... 

সব রেওয়াজ করতে হয়.


অশ্রুত

সপ্তশ্রী কর্মকার

যে গোল বৃত্তে বরফের আলিঙ্গনে উষ্ণতা পাই,

সেই শীতে পেঙ্গুইনদের পদতলে জল নেই।

অন্তর্বৃত্তের পরবাসে আমার বৈরাগ্য প্রেম,

বিক্ষিপ্ত প্রেমের বাতাসে উড়ন্ত শিমূল তুলা।

কালবৈশাখীর বীভৎসতা যখন উন্মাদ চোখে,

স্পর্শকাতর ধরা দিলো শুস্ক ঠোঁটের কোণে ।

অসময়ের ক্লান্তি থাক, বুদ্ধি ইতিবাচক হয়ে,

যৌনতা সলাজে শুধায়, দেউড়ির ঠান্ডা বাতাসে।

নিশীথিনী আঁধারে বিড়ম্বনা অপসৃত হোক,

ক্ষণজন্মা-যশস্বী হয়ে কীর্তি রাখুক অশ্রুত।



ঝগড়া

অনিমেষ নাথ

আমি দিনে ভালোবাসা দেখি

রাতে ঝগড়া দেখি।

গভীর ঝগড়া।

গল্প এবং ঝগড়া,

ভালোবাসে তারা কিন্তু উত্তর দিতে পারে না,

বেলা শেষে ঝগড়া শুরু হয়

যেন সেজে গুঁজে মেলায় যাচ্ছে 

হাতে হাত ধরে বাতাসে হাত নাড়িয়ে ।

সময়ে সব হয় 

রাতে গুনগুন শব্দ 

ভালোবাসা কিন্তু ঝগড়া ।


মুহূর্ত

সিদ্ধার্থ নাথ

চকলেট মুখে পোরার মুহূর্তে -

 ম্লান চোখ ভেসে ওঠে। 

 আজ বড় দরকার তোমাকে। 

আখির চোখ ঝাপসা হয় । 

ঝাপসা হয় বৃষ্টির বুকে জড়ানো রোদ। 

রোদ্দুর বড় আপন মনে হয়। 

এমনটা হয় মাঝে সাঝে। 

তখন মনখারাপের দিন। 

তুলির টানে নিজেকে ছিন্ন ভিন্ন -

করার ইচ্ছেরা সজাগ হয়। 

একটি সাঁকো ঘাসের শরীরে হাত বাড়ায়।

 জলভরা বুক কেমন যেন আপন লাগে। 

ভালবাসায় ঝাপটে ধরে -

বন শেষের বিষন্নতায়।  

মেঝেতে সেদিনের দাগ। 

গাছের শরীরে গভীর ক্ষতের মত -

সময়ের ঋণ বড় হয়। 

গভীর হয় মটি। 

মটির শরীর-মাটি হয়ে যায়। 

এপ্রিল-এপ্রিল ফুল হয়ে আছে। 

সময় জানে কতটুকু গভীরে বীজ রেখে গেছে। 

দুদিকেই জল গড়ায় মাঝে একা বৃক্ষ ।

 একা জল থই থই।


রাত

দেবারতি দে

বিকেল উধাও হতেই 

তরতরিয়ে নামে সন্ধ্যা 

থেমে যায় সব কেরিক্যাচার 

প্রকৃতি পোষ্য অন্ধকার 

বাড়ে রূপে রঙে 

কালো কালো অক্ষরে

চোঙ ডুবিয়ে উত্তাপ ঢালতেই

জাল ছিড়ে বেরিয়ে আসে 

ছোট বড় আলো 

রাত ফুলে ওঠে রুটির মতো।


বর্ষা ২০২১

দেবাশীষ দাস

এবছর বর্ষা এলো অনেকগুলো প্রশ্ন নিয়ে

এই যেমন ধরো,

কি করছো? কোথায় আছো? কেমন আছো? এইসব

তার সাথে কিছু না পাওয়া প্রশ্নের উত্তর

এই যে তুমি বলেছিলে, সন্ধ্যে হলে আসবে

মাটির কাপে চা, আর ধরবে গান...

এগুলো কি এখনো মনে আছে?

চুলের গন্ধ, হাতের ছোঁয়া, আর

এদিকে বৃষ্টি হচ্ছে খুব

তুমি কি এখনো দরজায় দাঁড়িয়ে...। এই দেখো

পুরোটা বলার আগেই ভিজে গেল সব!

এখন আমি ঘুরে ফিরি, ভিজে মরি, 

চলতে চলতে এই শহরে

আমিও এখন পালক বেচি…


অন্ধকার 

রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ 

অন্ধকার প্রথায়

মিশে যাচ্ছে বালিকার মূর্তিটি 

জ্যোৎস্নায় ভাঙছে

বিছানার প্রলাপ

No comments:

Post a Comment