অণুগল্প
মূল্যবোধ
অম্বরিশ ঘোষ
অনন্তর স্ত্রী কিন্তু বিষয়টা বুঝে ফেলেছিল আগেই । চোখ পাকিয়ে অনন্তকে বলতো , "এর নাম বুড়ো বয়সের ছুকছুকানি" । বিষয়টা কম বয়সে অনন্তর মধ্যে নামমাত্র ছিল । কিন্তু বয়সটা সাতচল্লিশ-আটচল্লিশ হওয়ার পর বিষয়টা একদম জাঁকিয়ে বসেছে । কমবয়সী সুন্দর গড়নের মেয়ে দেখলেই চোখ আটকে যায় আজকাল । তবে স্বস্তি এইটুকুই যে বউ এই নতুন বেড়ে ওঠা আবেগের মাত্র পনেরো-কুড়ি শতাংশের খবর জানে । আর এতে অপরাধটা কোথায় ? চোখ দিয়ে একটু মেপে-ঝেপে যদি মস্তিষ্কে একটু হ্যাপি হরমোন ক্ষরণ হয় , হোক না ! আজকাল হাট-বাজার- উৎসব-আয়োজনে বেশ সময় কাটে অনন্তর । আজ সোমবার । সকালের চা হাতে নিয়ে পেপারের চোখ বোলাচ্ছে অনন্ত । স্টাডি রুম । দরজা প্রায় ভেজানো । নীল রঙের পর্দা এক-আধটু নড়ছে । গরম চা গলা বেয়ে নামছে । পর্দার ওপারে কাজের মেয়েটা উল্টো দিকে ঘুরে ঘর মুছছে । কিন্তু ভীষণ অস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে । এ'টুকুই সমস্যা । তবে কল্পনাশক্তিরও তো একটা ক্ষমতা আছে । দৃষ্টি আর কল্পনা মিলে কয়েক মুহূর্ত ব্যাপারটা জমে ক্ষীর । সেই কয়েক মুহূর্ত বাদেই সরে গেল পর্দা । স্ত্রী স্যান্ডউইচ নিয়ে ঘরে ঢুকলো । পর্দা সরতেই চোখে একটা ঝটকা লাগল । নিমেষে সে ঝটকা হার্ট-ব্রেন ছুঁয়ে পৌঁছে গেল সারা শরীরে । যাকে অনন্ত দেখছিল সেটা ওরি মেয়ে রিচা । বডি ফিট রাখতে মোছা ঘরই একটু মোছামুছি । স্ত্রী চলে গেল স্যান্ডউইচ নিয়ে । কেমন যেন অসাড় হয়ে আসছিল শরীরটা । ঘণ্টাখানেক বাদে রিচা এসে হাত খরচের টাকা চাইলো । টাকাটা হাতে নিয়ে বলল ," আজ একটু তাড়াতাড়ি যাচ্ছি , বাবা ! স্যার সামাজিক মূল্যবোধের উপর একটা বিশেষ ক্লাস নেবেন " । চলে গেল রিচা । শুধু একটা কথা জানতেও পারলো না । নিজের অজান্তে মূল্যবোধের কি সাংঘাতিক একটা ক্লাস আজ ও বাবাকে করিয়েছে !
No comments:
Post a Comment