গুচ্ছ কবিতা
গৌতম গুহ রায়
মেঘ
১
শেষ বিন্দু থেকে ঝুলে থাকে বিবশ চুম্বন,
ডোরাকাটা, অনন্তের পালক উড়ে আসে,
আঙুলে আঙুলে
জমাট পাথরের শস্যহীন বুকের ধ্বনি ভেসে আসে,
কোন শঙ্খহাত ডুবে থাকে জলে
শ্বাস নেয় মেঘ,
অন্তহীন অনন্তের বাঁশি
২
পাহাড়ের মাথায় যে মেঘ ভেসে বেরায়,
তার প্রতিটি জলকণায় আলো চিকচিক
কুমারী রোদ্দুরের হাসি লেগে থাকে ।
কুয়াশার জলছুঁয়ে,
আলোদেহ অনুবাদে
ভিজে যাই অন্যমনস্ক ভোরে
৩
টিলার উপর সে,
তার করোটি শূন্য দেহ থেকে
টানতে থাকে এক অদ্ভূত পালক,
নীলাভ লাল
বা হাতের যাদুমুদ্রায় লালা লাল ঘুর্ণি ওঠে জলে ।
একটা একটা করে আমাদের দেহগত কাঁটাগুলো খসে পড়ে ।
আমরা সংগ্রহ করি সেই সব ঘনঘোর দেহ ভষ্ম,
হাল্কা, ফুরফুরে ।
৪
এখানে তিস্তার বাতাসে শুয়ে থাকে একাকী মাঝির চাঁদ
এখানে ছায়াহীন কাশবন,
লুপ্ত বাঘের গন্ধ,
মাছেদের আঁশ চিহ্নিত জরা
এখানে উজান নাই, ভেসে যায় ভেজা গন্ধরাজের নোনা স্তন
ভাটির দিকে গড়িয়ে যায় মেঘলা সাম্পান,
হাহাকার জল,
অখন্ড পোড়ামাটি জুড়ে জলের হস্তাক্ষর থেকে যায়
৫
একা মেয়েটি তার বিস্মৃত তারাদের কাছে রেখে দিলো
ভেঙ্গে পড়া ঢেউয়ের জলহীন ফেনা, যেহেতু
নোনা জলের সঙ্গে তৃষ্ণার চিরকালীন আড়ি,
তাই সন্ধ্যার এলে
সিল মাছের চর্বিতে জ্বলে ওঠা
একাকী প্রদীপ ভেসে যায়
মোহনার দিকে
৬
অন্তর্ভেদী ধ্বনিতে গেঁথে নিলে প্রমত্ত অন্ধকার
প্রভু,
হোমাগ্নিতে আঙুল ছুঁয়ে তপ্তভস্ম মাখি
শোকস্তব্ধ ফুলেদের সাথে খেলি হোলী
দুহাতে তুলে নিলে পদব্রজের সমিধ,
পরি ও মহাব্যোম
মৃত্তিকা ও নদীর গায়ে রামধনু উল্লাস,
উল্কিলাগা রোদ ।
৭
শরীরটা ছিলো কিছুটা ছায়া আর কিছুটা মায়া,
আশ্চর্য অশ্ব এই !
গতিতে হেরেছিলো যুদ্ধবাজ পাখি, আজ
সন্দেহ চোখ দেখে নেয় চতুর্দিক,
জুয়ারির খাতায় লেখা হয়
হুল্লোড়বাজ জকির হিংস্র আচড়,
রূপালি মুদ্রায় তুক্তাক
শূন্যতার রঙ মেখে গাও তুমি বিষন্ন ভাঙ্গনের গান ।
৮
তাঁকে বৃষস্কন্ধ বলে জানি,
যতটা ভাবছো সে তার থেকে দীন ।
চাপিয়ে দিয়েছো বোঝা, যাত্রা সঙ্গী হলে,
আসলে সে তো পতনের মুঠো মুঠো মাটি
যতটা ভার বইতে পারে
তার চেয়ে বেশী দীর্ঘ তার ছায়া দেখি
৯
সেই দুধসাদা বাতাসে বিঁধেছিলো চড়ুইয়ের ক্লান্তিহীন ডাক
ঠোটের নীচে রোদ্দুরের হ্যাংলা আঁচর,
কাঁধে মিথ্যার পতঙ্গ,
তাদের অলীক খোলস
সন্ধ্যা এলে পাখির ডানায় নামে প্রলাপের ছায়া
চিরচেনা সন্ধ্যা-শাঁখ বেজে ওঠে নিরন্ন করতলে
১০
‘করতলে বজ্র ছিলো একদিন’,
এই মিথ্যের গানে সন্ধ্যা নামে
ভিক্ষান্ন মুঠো থেকে আগুনে ঢেলে দিলে,
হাঁড়ি ভর্তি পোড়া মুখ উড়ে যায়
স্বেচ্ছাচারী অপরাহ্নের তাপে ।
পৃথীবির শ্রেষ্ঠ পিদিম সেদিন বজ্রের ভঙ্গিতে
মেঘবর্ণ করতল থেকে ভেসে গেছে তিস্তার ক্ষুব্ধ জলস্রোতে
১১
নীল তিমির পাশে তোমারই ধূসর ছায়া
তবুও জীবনের জন্য এতো মেঘ খোঁজো কেনো?
তোমার যাত্রা পথে দেখো
একদিকে কালো দাগের ভারী চিহ্ন,
অন্যদিকে সমুদ্রের ফেণীল কাঁধ
নখের ডগায় শিকারির ভাঙ্গা তীরের ফলায় মৃত পশুর লোম
১২
সে বিশ্বাস করতো,
অন্ধকেরের পর আলো আসে,
তিমির দাতের কাছে রেখে দিলে আজন্ম অর্জিত ঘাম
ফাগুন এলে সেই বৃদ্ধ পোস্টম্যান আবার আসবে,
যে জানে বাদামী খাম খুলে কোন রাতে গাছেরা নদীর কাছে আসে
কোন রাতে নেকড়ে খুবলে নেয় স্বর্ণ নৌকার ধান
No comments:
Post a Comment