Tuesday, August 3, 2021

 উমাপদ করের গদ্য কবিতা



শিরোনাম থাকতে হবে এমন কোনও কথা নেই

 

উমাপদ কর

 

কতগুলো পা ফেলে জাহাজটা এল বন্দরের কাছাকাছি, জাহাজ জানে না। কতটা গভীর ছুঁয়ে গেছে তার পায়ের আঙুল, মাপেনি কখনো। ফুরফুরে, হুহু-হাহা-হৈহৈ বাতাস কেমন দুলিয়েছে অ্যান্টেনা খেয়াল করেনি। সে শুধু পা ফেলেছে গুটগুট-থুপথাপ, কদম-কদম। দৌড়, হ্যাঁ তাও ছিল, লম্বা ভোঁ-এর সঙ্গে। এখন আর সকাল-হাঁটার মতো ঘেমে-যাওয়া পা ফেলা নয়, লাগামে টান, ধীর লয়, বন্দর আসছে যে!

 

কে চালালো এতটা জলপথ, জাহাজ জানে না। ক্যাপ্টেন? সারেংরা? বাতাস-আগুন-জৈবতেল? হাল-পাল-দাঁড়? যন্ত্রসকল? জাহাজ জানে না। সে শুধু নোঙর তুলে ঠেলে দিয়েছিল যারা, তাদের ঝাপসা  দেখেছিল একপলক। তখনো কুয়াশা মেটেনি, শীতের ভোর কিনা!

 

চলতে চলতে ঘেমে নাওয়া, পিপাসা, দমে ঘাটতি, যেন আর চলে না চরণ। চলতে চলতে হাসির চিলিক-ঝিলিক-ঝলঝলাক্কা; শিহরণে রোঁয়া খাড়া, শীৎকার, ঝনঝন; কাটা-ছেঁড়া-ছিলে যাওয়া; আঘাত-ব্যথা-যন্ত্রণা; বিশল্যকরণী-বরফ-মলম; চলতে চলতেই সব। আহা! আনন্দ। ইস্‌! হতাশা। ওহো! কী দেখলাম! নাহ! সত্যি ভাবা যায় না!

 

বন্দর কেন যে আসে!

 

০৫/১২/২০২০

 

 

১২

তাকাতেও ইচ্ছে করে না টেবিলটার দিকে। এত গুঁড়ো ছাই আর মরাপোকার লাশ! এত ছেঁড়াখোড়া কাহিনির উঁইমাটি, পাঁপড়ের হাত-পা-মুখ এদিক-ওদিক! এত বিড়ির সুতো আর সিগারেটের তুলো! বেসুরো গানের কণ্ঠা, ভুলভাল হাফ-পঞ্জিকার দোলায়-আগমন, কীসে যে গমন! সাঁড়াশির মরচেপড়া মধ্যস্ততা, বেগনি কমলার শুকনো খোসার অনুরাগ, জিরে-কালোজিরে-ধনিয়ার রোড-শো, সব টেবিলে জড়ো হয়ে দাঁত কেলাচ্ছে, বা করছে না কিছুই, ক্যালানোটা আমারই তাকাতে যাওয়ার ফেরত। লালুমলুলুম দানাশস্যের ফেলে যাওয়া প্রতিসৃত রশ্মি।

টেবিলের ঢাকনাটা, যাকে টেবিলক্লথ বললে খুশি হয়, কতদিন যে ‘বাসাংসি জীর্ণানি’ শ্লোকটা ভুলেছে, জানে না কেউ। আমার কি জানার কথা ছিল? তাহলে অ্যালার্ম বাজল না কেন ঘড়িতে, মোবাইলে! ওখানে জমিয়েছি যা নেবেন ছ-টাকা বা তিরিশ টাকা। কখন বেরিয়েছিলাম ফেরিতে, ফেরিঘাটে এসেও মনে পড়ল না? তাহলে মনটা থেকে লাভটা কী? বিমনা, আনমনা, মনউচাটনা ইত্যাদির চাটনি জিভের স্বাদে মিশে এতদিনে আমাকে উন্মনা করল! ছলনা, সব ছলনা!

বদলাতে হবে। কতটুকু? শুধুই ঝাড়সাফ গুঁড়োগাড়া! নাকি ঢাকনাসহ যাবতীয়! নাকি টেবিলটাই? ধরা যাক, শুরু করা হলো ঝাড়সাফ, উড়লো বাতাসে, নাকেও এল, রয়ে গেল কিছু। ধরা যাক, ঢাকনাসুদ্ধ বিদায়ের ঘণ্টা, কাঁদছে কাঁদুক, বদ্ধপরিকর। বেরিয়ে এল খসখসে রংচটা কাঠ আর ফোঁকর, দ্যাখা গেল নড়বড়ে পায়া ক্ষয়াটে, জোড়গুলোর খিল বেরিয়ে এসে গজাল হয়েছে। কাজেকাজেই ধড়াচূড়াসহ টেবিলটাই...

মনে-প্রাণে-হৃদয়ে ফেলে দিতে চাই, ফেলে দিতে হবে, পারব তো! বাতাসে গুঞ্জন, ঘরে চাপা উত্তেজনা, বাইরে স্লোগান। হাতুড়ির বড়ো প্রয়োজন একটা, নয়তো দরজা দিয়ে বেরোবে না গোটাগুটি।

২২-১২-২০২০

 


No comments:

Post a Comment