মেঘ অদিতি
১
জে ব উ ন্নি সা
যাও চিঠি উড়ে যাও , বিদ্যুতের আগে। বলো তাকে- এত প্রত্যাখান যদি, পথমাঝে কেন তবে ডেকে নিলে দিলরুস কন্যা তুমি! সব ছিল রঙিন খেয়াল! রেশমী রহস্য জালে কত আর পুড়ে যাবে কাতর প্রণয়!
শায়েরির সুর থেকে সুরা জন্ম দিলে সেই নাম মুখ আনা পাপ? নাকি মনের সন্তাপ!
এভাবেই পুড়ে যায় সহস্র সতেজ গাছ। অভিমান জ্বেলে দেয় তামাদি কিস্সায় প্রখর আগুন। বিদ্দ্যুচ্চমকের ভয়ে প্রেমিক পালায়!
তুলনা ফুলের সাথে! তাচ্ছিল্যের শ্যেনচোখ হাসে। মুহূর্তের মোহ সব, আহা! জেবউন্নিসা…
কোনোদিন দগ্ধ প্রেমিকের দিকে চেয়ে দেখ- করুণ সে মৃত্যু তোমার কবিতা জুড়ে কীরকম ছায়া ফেলে গেছে..
২
ন হন্যতে
“কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন
মা কর্মফলহেতুর্ভূমা তে সঙ্গোহস্ত্বকর্মণি “
একটা ‘না’-হয়ে ওঠা প্রাণে আর নির্যাস লাগছে না
একটা ‘হ্যাঁ’-এর ভেতর
ঘুমিয়ে পড়ে সম্পর্কে বাজছে না কোনো শঙখ
থেকেথেকে কেবল মার্বেল হয়ে উঠছে ব্রহ্মা-
অর্থ পালটে গেলে—
ব্যক্তিগত রঙিন দৃশ্যে লাগে রঙহীন আলবিদা
মুহূর্তে মুহূর্ত জাগে, জেগে ওঠে সময়ের দর্পণ
জলের তলে দুলতে থাকা অবিনাশী এক পেন্ডুলাম
দেখতে দেখতে সামান্য দূরে
চকখড়িতে লিখে রাখি, কর্মই প্রকৃত শান্ত দিন..
৩
ব্রহ্মপুত্র গাঙ
নির্বিষ জীবন থিকা ফিরাই যে চোখ- সে চোখে ভর করে বেশুমার ক্রোধ।
ক্রোধ নাকি ভালোবাসা? ছোট্ট গাছেরে জিগাই। গাছ থাকে স্থির, গাঙ বয় নিরুত্তর, ধীর। শেষকালে এই প্রশ্নে আসমান-জমিন এক হইয়া কান্দে মন উথালি-পাতালি। সাথে কান্দে আমাগোর রোগাভোগা ব্রহ্মপুত্র গাঙ।
আমি পরি। জন্ম নির্বিকার। জীবনের পাকে পাকে জমে জানি পাপ। জানি আরো, পাঁকেই জন্মে আবার পদ্ম লহড়ি, জোড়া পদ্ম হার.. গয়না নৌকা ওগো, বলি যে তোমারে- তোমার কি পড়ে মনে, মাঝিদের হাঁক ওই বদর বদর? ব্রহ্মপুত্র, শৈশব বিধৌত আমার গাঙ.. নৌকার ছইয়ের মইধ্যে বসা এক যুবতী কৈতর য্যান আমাগোর মা হরিতকি মুখে দিয়া ডাকে কাছে হাত তুইলা ইশারায় কয়, ওই যে যায় দেখা, শুশুক..
ভুস কইরা উইঠা ফের জলেতে লুকায় , দ্যাখ পরি দ্যাখ.. দ্যাখ..
আমি পরি অবলা বেঘোর, আচানক দেখি- আসমানের চান্দ ক্যাম্নে নাইমা আসে নৌকার গলুইয়ের ভিতর। চান্দের লাহান রূপ নিয়া কে যে ওই সমুখে দাঁড়ায়। মায়েরে জিগাই, মা গো অত রূপ, অত রং একি সেই চান্দ সওদাগর?
আচানক খালুইয়ের মাছ এই প্রশ্নে করে খলবল। আসমানে তারাগুলা নিভে জ্বলে। আর দুই চাইরটা চামচিকা গোল হইয়া ওড়ে মান্দারের মাথার উপর..
৪
অন্ধকার
সীমাহীন ক্ষোভ-তাপ, বিষাদের লীন অন্ধকারে
হৃদয়ে ক্ষরণ যত তারো বেশি ফুটেছিল ক্ষত
প্রেমের ওপারে রাখা ঘৃণাগুলো নীল কষাঘাতে
হাওয়া বেড়ে প্রতিরাতে, হয়েছিল প্রবল জোয়ার
রোষানল? অনিবার। ছিল আরো প্রগাঢ় সন্দেহ
পেরেক বল্লমে তাই নিজেদের শান দেয়া জোর
হাড় মজ্জা ফালাফালা হৃৎপিণ্ড ফ্যালে ছিঁড়েফুঁড়ে
আগুনেরে ডাকে তবু দু’দিকেই নীল হিমবাহ
বিষম বিষাদে মিশে সময়ের আয়ুক্ষয় হলে
দুটো পথ চলে যায় বিচ্ছেদের সীমানা ছাড়িয়ে
অন্ধকারে তবু আজো বাঘিনীর চোখ উঠে জ্বলে
ব্যাঘ্রটিও তাকে খোঁজে দুর্নিবার মশাল জ্বালিয়ে
শূন্যের ভেতর ভাসে স্বপ্নহীন ছায়াহীন স্মৃতি
মুছে যায় এইবেলা জীবনের সব রণনীতি
৫
রন্ধ্র জুড়ে তীব্র হাহাকার
তখন —
আলোতে গানের ধুম
অতটা ধূসর নয় দিন
ভিক্ষাপাত্র হাতে সেই কিছুদিন থাকা
ভিজে রাত উঠানে আমার
কলার মান্দাস ভেসে চলে
ঝরাফুল, হরিৎ পাতার ঘুমে
বিশাখা সখীরা পৌরাণিক বিদ্যুৎ হানে
সারারাত শিশিরের সাথে সেটুকুই
মাধুকীর নেশা
তারপর গজারোহী
তারপর রন্ধ্র জুড়ে তীব্র হাহাকার
নীলাভ শোণিতে বিঁধে তুরপুন
বনপ্রান্ত দিয়ে এক অচেনা শ্রমণা হেঁটে যায়
৬
একটি আত্মঘাতী ফুল তোমাকে
৪
কীভাবে মাঝরাত রাস্তা পারাপারে সেতুবন্ধ হয়
চেয়ে দেখো-
জেব্রাক্রসিং পেরিয়ে এগিয়ে আসছে
শ্বেতাভ এক ষাঁড়
সামান্য এগোলে জেগে উঠবে তোমার চাবুক শরীর
এমন দৃশ্যের অপেক্ষায় বহুদিন জেগে ছিল চোখ
এবার কাচের ভেতর লাফিয়ে নামলো বেড়াল
বেপরোয়া ধ্বংসযজ্ঞে
ডানা খসে গেলো তোমার-আমার
এভাবেই হিংস্রতার দিনে লেখা হয়ে যায়
ছবি ও ছায়াদের আখ্যান
৫
সারারাত পাথরের গায়ে পাথর ক্ষয়ে যায়
ফুঁসে ওঠা পৌরুষে লাগে প্রজননক্ষোভ
শরীরে ফুঁসছে আজ ড্রাগন
ধরো দু’-চার ফোটা পারদের
ওঠা-নামা
নামা-ওঠা
সার্কাস ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে ক্লাউন
বুড়ো নেউলের লালায়
পটাপট ছিঁড়ে যাচ্ছে নাইন ও ক্লক
কড়িকাঠ ছাপিয়ে জমে উঠছে সার্কাস
৬
পথে পথে জেগে আছে আশ্চর্য চোখ
একটা পুরনো বাইসাইকেলের চাকায়
ফিরে আসছে পরিচ্ছন্ন দুপুর
যেসব দিনে শঙ্কাহীন ঘুমিয়ে পড়তাম
তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে সাদা চন্দ্রমল্লিকা
শুধু সমতল রাতগুলো এবার স্বভাব সাবলীলতায়
সেতুবন্ধ ছিঁড়ে তুলে আনবে গোলাপের হাতছানি
কোথাও কি অক্ষর পুড়ে যাচ্ছে খুব?
৭
ব্ল্যাকহোল
কোন এঙ্গেলে ধরলে
সব রং শুষে নেয়া রংটিকেও ভাল লাগে
তা বুঝতে বুঝতেই আঁকা হলো ব্ল্যাকহোল
সমসাময়িক প্রবাহে চোখ না রেখে
খবরের কাগজ পেতে
দিব্যি নিপুণ রুটি গড়ালো রমাপিসি
কেবল আমি দেখতে পেলাম—
খবরের কাগজ থেকে বেরিয়ে আসছে
ছোট্ট একটা শরীর ..
বুঝতে না বুঝতেই তার শিশুশিশ্নটি
বুলেটের মত আমার মাথা ভেদ করে
উড়ে গেল মহাকাশের দিকে
৮
মৈত্রীগুণ
তোমার হাতের পাতায় পরছিদ্রান্বেষী রেখা
খুলে যাচ্ছে প্রাচীন দরজা
আমি কি সুপর্ণ জাতক?
অমন পালিয়ে গেলে
মনে হয় অক্ষরেখায় ফুটেছে কামুকঘাতক
বরং ঘুমাও—
চাঁদ হেসে গলে যাক মেঘের আড়ালে
পর্ণকুটিরে জাগুক নদীমুখ
স্নান সমাপন শেষে
বোধিসত্ত্ব শিখিয়ে দিলে মৈত্রীগুণ
ফুটবে সারারাত অজস্র তারার সাথে..
No comments:
Post a Comment