দীর্ঘ কবিতা
আনন্দলহরী
সুমন মল্লিক
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°° °°°°°
ঢেউ তুলে তুলে এগিয়ে আসছে কেউ৷
আলোয় সতর্কতা ভেঙে ভেঙে দেখছি
প্রার্থিত আগমনের পথে বকুলবৃষ্টি আর
চাঁদের বৃত্ত থেকে নেমে আসছে চাঁদ৷
কী তীব্র ও ব্যতিক্রমী তার আগমন–
এলোমেলো করে দেয়, আবার সাজায়৷
বুকে বসে আমার আমি বাঁশি বাজায়
আর বিষণ্ণতা ও প্রসন্নতার মাঝে
গুঁড়ো গুঁড়ো স্বপ্নের অভ্র ছড়িয়ে দিয়ে
এই দু’টি হাত স্পর্শ করে আনন্দলহরী৷
ভোরের আলোয় শিশিরভেজা ফুল যেন
এই রোমাঞ্চ, এই দোলা দেওয়া উদয়ন৷
দীর্ঘ অসুখের ওপর শুশ্রূষা এঁকে যায়
দিগঙ্গনার জাদুমাখা আঙুল – সব ভুল
উবে যায়, উধাও হয় বুকের অলাতচক্র৷
বনবাতাসে ঘোর লাগে, ঘোরের ঘরে
মিছিলের মতো হেঁটে আসে পরিতৃপ্তি৷
রূপান্তর ঘটে পূর্ববর্তী রূপান্তরে
আর শ্রীঅঙ্গের বিভা থেকে দু’চোখে
অলকানন্দার মতো আসে আনন্দলহরী৷
উড়ালপুল থেকে শহর দেখতে দেখতে
দেখে ফেলি তার সোনালি ঝলক৷
স্মৃতির ওষুধ গুলে দেয় গোধূলির আলো,
দেহের পাতাল থেকে উঠে দাঁড়ায়
এক দেবী – তার বোধনে মত্ত হতে হতে
সমস্ত উন্মত্ততা জেগে ওঠে, জেগে ওঠে
ছায়াপথ, মায়াপথ – ছুঁয়ে ফেলি অসম্ভব,
ছুঁয়ে ফেলি মৌন বিকেলের কথামাধুরী৷
এরপর আর কিছু নয়, শুধু বুকের মাঝে
কুমারী নদীর মতো ছোটে আনন্দলহরী৷
লেখার ভেতর ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটি–
রাতে সূর্য ওঠে, দিনে পূর্ণিমার চাঁদ৷
তিস্তার পাখি উড়ে এসে বসে টেবিলে,
দেখি, শুধু দেখি, তারপর উড়ে গেলে
কাগজফুলে ভরে ওঠে একাকী ঘর৷
এ-সবই তার দিব্য পুনর্ভবের কৃপাসিন্ধু–
হৃদয়প্রদীপ জ্বলে ওঠে আবার, আবার
আলোর সিঁড়িতে পা রাখে প্রাণবল্লভী৷
প্রাণের ভেতর প্রাণ ফিরে আসে,
দেহদরিয়ায় ফিরে আসে আনন্দলহরী৷
গীতবিতানের মলাট ছুঁয়ে আছে ওই তো
আঙুলগুলি, আমি কি ছোঁবো তাদের?
ভাবতে ভাবতে ঠোঁটের পদ্মপুকুরে বসে
প্রত্নদোয়েল – আমার দীর্ঘ দিদৃক্ষায়
রংধনু হয়ে ওঠে বেগুনি রঙের ওড়না৷
বহুদিন পর কথারা ছবি হয়ে ওঠে,
ছবিরা হয়ে ওঠে নক্ষত্রের মতো কথা৷
আমি কি ছোঁবো না তাকে একটিবার?
এই প্রশ্ন আসলে এক সানন্দ তৃষ্ণা
যা আত্মার সরোবরে আনে আনন্দলহরী৷
খুব সুন্দর
ReplyDeleteঋদ্ধ হলাম। যদিও দীর্ঘ কবিতা আমায় টানে না, তবু এ কবিতা ভালো লাগলো।
ReplyDelete