নিজেস্ব অনুভূতির ধারা
সোমা সাহা পোদ্দার
কিছু পরিচয়ের মুহূর্ত অজান্তেই বয়ে চলে ভাবনায়, কোন সঠিক দিক হয়তো নেই তবু এক নেশার অন্তরালে ডুবে যাচ্ছে দিনক্ষণ সারাক্ষণ। শ্রাবণ মেঘে আসে যায় মননে বাজে কিসের ঝলক তবু ছুটে চলে দিগন্তে, কখনো হালকা হাওয়া ভিজিয়ে দেয় সময়ের ছাপ রেখে।
এই প্রথম ডঃ প্রদীপ কুমার এর কাছে যাচ্ছি ,উনার সম্পর্কে আগেই শুনেছি অনেকের কাছে। অ্যাস্টার সিএমআই হসপিটালে ১০:৩০ তে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল বাবার জন্যে। প্রচুর লোক বসে আছে আমরা অপেক্ষা সরিয়ে ভেতরে যেতেই সাধারণমাখা হাসি দীপ্ত চোখ স্বাগত জানাল। একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ যিনি নারায়ন হৃদয়ালয় থেকে শুরু করে বিখ্যাত হসপিটালের সাথে কর্মসুত্রে যুক্ত ছিলেন। এই করোনাকালীন সময়েও বাবাকে নির্দ্বিধায় চেকাপ করলেন জানতে চাইলেন বাড়ি কোথায়, আলিপুরদুয়ারে এখনও সাধারণ মানুষের চিকিৎসার যে তেমন কোন ব্যবস্থা নেই শুনে অবাক হলেন। ভাষার সমস্যায় বাবার কিছু কথা ডাক্তারকে আর ডাক্তারের কথা বাবাকে বলার চেষ্টা করছি। রিপোর্ট দেখার জন্যে যে ফাইলটা এগিয়ে দিচ্ছি সব টেস্টই দেবী শেঠির ওখানেই করানো ইকো,ইসিজি, ট্রেডমিল সবই নর্মাল পরে সিটিস্কেনে একটি ব্লকেজ ধরাপরলে অ্যাঞ্জিওগ্রাম করতে বলে।ফেরার পথ প্রায় তিন ঘণ্টা আজ প্রথম লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়েছে প্রচুর ভির সকাল থেকে সন্ধ্যা গরাচ্ছে হাত মুখ মাথা ঢাকা জলও খাওয়া হয়নি এভাবেই দিনক্ষণ চলে যায়।
নিজেস্ব ভাবনা ছাড়িয়ে ইচ্ছেগুলো তবু রঙবর্ষায় ভিজতে থাকে, ছুঁতে চায় নীল আকাশের গভীরতা।দুহাতে যারা ফিরিয়ে দেয় আবার নতুন শ্বাস সেই স্পর্শের ঈশ্বর ও টি পি তে যাচ্ছেন । শুধু দেখি নীরবতা বিছিয়ে কথার ওপারে হঠাৎই নাড়া দেয় ভেতর পানের এই পাওয়ার কোন ফিরিয়ে দেওয়া হয়না সময় ডোরে অনুভূতির উপহার হিসেবে বাঁধা থাকবে। জলের গভীরতা বেশি হলে বালির সচ্ছতা কেঁপে উঠে নাদেখায় তবু জলে তিরতির অপেক্ষা বয়। আঁকিবুঁকি গতিপথ সরিয়ে ব্যাস্ততার ফাঁকে গাঁ এলিয়ে দেওয়া আজও একই সবুজতায়। শান্ত পৃথিবীর বুকে একফালি রোদ মাখা প্রিয় শব্দ কুঁড়োই শ্বাসে শ্বাসে কমে আসুক বিরতি। তোমার ঘুমের ভেতর কেউ জেগে আছে লেখায়।
আবার সকাল ঠেলে অ্যাস্টার হসপিটালে বাবা আর আমি দুটো কোভিদ নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে ৮ টার আগেই পৌঁছে গেলাম। নার্সদের যা করনীয় তা শেষ হতেই ডাক্তার এসে অ্যাঞ্জিওগ্রাম করার পর আমায় ডেকে স্কিনে দেখাতে দেখাতে জানতে চাইলেন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি কবে করাছি ওষুধে এই ব্লকেজ ভালো হবে না। কিছুদিন পর কি করানো যেতে পারে বাবার ইনসিওরেন্স নেই বলাতেই, ডাক্তার আমায় বুঝিয়ে বলছিলেন বেশি দেরি করাটা ঠিক হবে না তবে আমি বলে দেবো কমেই হয়ে যাবে অসুবিধে নেই। তুমি ঠিক করো কবে করাতে চাও। মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব তেমনি ঈশ্বরের ন্যায় ডাক্তার।
সাতদিন পর আবারও কোভিড টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে হসপিটালে ৮০% টাকা জমা দিয়ে বাবাকে আইসিইউ তে রেখে বাইরে রয়েছি ভাই ভেতরে, ডাক্তার এসে আমাকেও ডাকলেন সার্জারি পর স্কিনে দেখিয়ে বললেন অনেককিছু ব্যস্ততার মাঝেও। চারদিন পর চেকাপে সবকিছু এতটা মানবিকতার সাথে সুন্দর করে বলছিলেন কেউ যখন ব্যস্ত থাকে কারও তখন চুপ করে দেখতে হয়, একটু চুপ ভেঙে জানতে ইচ্ছে করলো স্যার ,আপনার ছোটবেলা কোথায় কেটেছে? ব্যাঙ্গালোর,উনি যখন ফ্রী থাকেন স্পোর্টস দেখতে ভালবাসেন। প্রথমবার একা হসপিটালের সাথে আমার অভিজ্ঞতা লেখার চেষ্টা করছি যদি আমার দেখা এই পাঁচ ছয় দিনের জার্নিতে আপনাকে নিয়ে লিখি আপত্তি নেই তো- আপনি লিখুন কোন অসুবিধে নেই। আসার সময় উনার ফোন নাম্বার নিজেই লিখে দিলেন শুধু অবাক হচ্ছিলাম এসব হসপিটালের ডাক্তারদের নিজেস্ব ফোন নাম্বার সাধারণত্ব দিয়ে থাকেনা। পাশে দাঁড়িয়ে ছবিতোলার সময় নিজের মাক্সটা খুলতে খুলতে মুখ ঢাকা থাকলে কি করে চেনা যাবে সেটা দেখে আমিও মুখোশ খুলে লম্বা শ্বাস নিয়ে বাইরে এলাম।
ভিরের মাঝেও কিছু গুড়ো হাওয়া উড়ে আসা শব্দক্থায় দিনরাতের হিসেব খুলে ধীরে ধীরে যখন দৃশ্যায়িত হয় আমরা যাকে বলি প্রকৃত অর্থে ডাক্তারের রুপে ঈশ্বর। আমরা কাহানী গড়ি ভাঙ্গি কিছু জীবন্ত ছায়ারেখা হেঁটে যায় তাকে কি নামে ডাকব? এই দেখা অভিজ্ঞতায় অজানা না বলারাও মিশে থাক তবু ফিরে আসে গানে গানে অচেনা পথে পাখিও প্থিকের সংকেত গায়। আবছা ভোর লেপে সহজতায় ছুঁয়ে যায় বৃষ্টির বৃষ্টিরূপ। বয়ে চলুক ঋতুর ওঠানামায় রূপান্তরিত জলের বৃষ্টি গল্প প্রিয় ছবিতে জলছাপ রেখে।
No comments:
Post a Comment