গুচ্ছ কবিতা
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
১| শীত
সুখ শর্বরী শীতে-
লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু অনুভূতি
মনের অজান্তে কখন
দানা বেঁধে পাথর হয়ে যায়।
প্রতিটি কুমারী প্রভাতে
নরম সূর্যালোক মেখে নিয়ে-
বুকে পাথর ঠেলি যারপরনাই।
ফিরে ফিরে আসে কালচক্রের মতোই -
অগুনতি অনুভূতি মনের দেয়াল বেয়ে
২| ছবি
ছবি থেকে বেরিয়ে আসা দু'হাত
জড়িয়ে আছে সব স্মৃতি-
পুরো শরীরটাকে মুহূর্তে
দুমড়ে মুচড়ে চলে যায় অনায়াসে।
কতগুলো খন্ড পড়ে থাকে
অবশেষে
শরীর তো মাটির তাল,
মিশে যায় সেই মাটিতেই
৩| সুর
অস্ফুট কথার স্বরলিপিতে
সুর বসানোর চেষ্টায় ব্যস্ত থেকেছি
বহুকাল
ভৈরবী থেকে চারুকেশি
কোনটা কম কিছু বেশি
শেষে পড়ে আছে আজ দেখি
কিছু শ্বাস আর বাকিটা-
দীর্ঘশ্বাসই বেশি
৪| দাগ
সব কটি পথে পায়ের দাগ
পড়ে থাকে কিছু পুরনো ক্ষয়ে যাওয়া
নখ
কিছু রক্ত, ঘামের বিন্দু
কষ্ট-যন্ত্রনার মাখামাখি
তবু নখদন্তহীন হতে দেখি না-
প্রহরায় থাকা দ্বিপদদের
যেন রক্তবীজের বংশধর!
৫| বাউল মন
রাতে একটু আলো চাইলে জ্বলে ওঠে চাঁদ। গ্রহ নক্ষত্রের দল জুলজুল করে চেয়ে থাকে। ভেসে যেতে হয় এক মোহময়ী পেলবতায়। আকুল মন যেন তীরে এসে তরী ভিড়ায়। অদ্ভুত কোলাহলে ধুয়ে মুছে যায় দিনের সব স্মৃতি। জেগে উঠে তুলসীতলার সন্ধ্যাপ্রদীপ। রক্তকরবীর ঘ্রান মাতাল করে মন, বাউল মন। দু'বাহু বিস্তৃত প্রশান্তি যেন নিয়ে যায় দূরে। সুদূরে কোথাও, কোন অজানার টানে!
৬| খুঁটি
সময় আজ দেখি দিগন্ত পেরিয়ে যায়
এক লহমায় ছিনিয়ে নেয় সব বিশ্বাস,
তবু আটপৌরে প্রেম এককোণে জ্বলে ওঠে
হয়তো শেষবারের মতো
হৃদয় নিংড়ে বানানো কুঁড়েঘরে
আশার খুঁটি হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে
আর বাতাসে ধ্বনিত হয়-
তুমি কখনো আমার ছিলে!
৭| দুপুর
তীব্র দুপুরে ক্লান্ত হাঁসের দল
পুকুর ছেড়ে উঠে এসেছে।
সুপুরি গাছের মাথায় -
হাজার ওয়াটের আলো,
ভুলিয়ে দিয়েছে সব আশ্বাস।
একে অপরের নিঃশ্বাস গিলছে নিঃশব্দে-
তবু মুখে শব্দ নেই!
একি ভরসা নাকি আত্মহত্যা!
জানে সুপুরিগাছ না পুকুরের জল?
৮| স্মৃতি
এপিটাফ থেকে উঠে আসা স্মৃতি
ছাই হয়ে মিশে যায় এস্ট্রেতে।
তবু বারবার একই স্বপ্ন আসে
ঘুরে ফিরে চোখের কোণে-
এক আলোময় নিসর্গের ছবি হয়ে।
ফিনিক্স পাখি কি আসবে না-
কোন এক হলুদ ভোরে!
আজো সুর্য ওঠে-
আলো পড়ে গহন অন্ধকারে
কী হল ?
ReplyDelete