' কবিতা করিডোর ' উত্তরবঙ্গের প্রথম মাসিক ওয়েবজিন । এই ব্লগ নতুন সৃষ্টি নিয়ে ভাবে । কবিতা নয় সাহিত্যের নানা দিক ও চিত্রকলা থেকে চলচ্চিত্র সবেতেই এই ব্লগ নতুন ভাবনার পথিক ।
Saturday, February 24, 2024
সম্পাদকের কলম
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল কবিতা করিডোর । আসলে ব্যক্তিগত জীবনে কিছু সমস্যা মাঝে মাঝে ছেদ টেনে দেয় । আর ছেদ দীর্ঘতর হয়ে ওঠে কোন গভীর অসুখ দেখা দিলে । চোখের সমস্যায় দীর্ঘদিন জেরবার হবার পর এখন কিছুটা আরমে । যদিও চোখের সমস্যা আছে কিন্তু কবিতা বা সাহিত্য চর্চা নিয়ে যে টান সেটা কখনোই মরে যায়নি তাই কবিতা করিডোর প্রকাশ করার চিন্তা পুনরায় দেখা দিয়েছে । আর প্রকাশ করতে গিয়ে যা কিছু লেখা সঞ্চয় ছিল সেগুলোই প্রকাশ করা হলো । নতুন করে কারো লেখা চাওয়া হয়নি । প্রকাশনের কোন ভুল ত্রুটি থাকলে অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন । পরবর্তী সংখ্যাগুলোর জন্য পরবর্তী সময় লেখা চেয়ে নেব। ধন্যবাদ।
কলমে - শুভঙ্কর পাল
সম্পাদক -কবিতা করিডোর
বারবিশা,আলিপুরদুয়ার
৭৩৬২০৭
মোবাইল -৯৯৩৩৭৭০৫৪১
মেইল আইডি - subhabrb@gmail.com
টেকনিক্যাল
--- শশিভূষণ পাত্র
একটা ছাদ দেওয়া হোক
নির্বাচিত অসুখ ধারনায় মেকানিক প্রয়োজন
ছেঁটে ফেলো বিকল যান্ত্রিক সমস্যা,
আঘাত-গর্তে রাখো শহুরে সমাধান
কাঠি বাছায় জটিলতা নিপাত যাক।
সেলামি ও তোপ দিয়ে কি শোক যাত্রা হয়?
স্মৃতি সৌম্য বিলাসিতা, মাত্র
নাগা সন্ন্যাসীর পথ ধরেছি
পরোয়ানাহীন, কোন মৃত্যু যন্ত্রনা
যুদ্ধে জীবিত হব
দীর্ঘায়ু তরবারির কোপ দিয়েছি।
ক্লান্তির পর ফিরে... একটা পৃথিবী, শুধু আমার।
বাছাটা সময়ের মতো হোক
দেওয়া হোক অবশেষে একটা ছাদ।
নীল পাখি মশাল হাতে
-------------------
ভুলে যাওয়া শর্ত হলে
বেঠিক অপশাসনের যুগে অন্তহীন জটিলতা
মোড়ক পাতায় ত্রিভূজের জন্ম হওয়া,
ভিড় করা জ্যোৎস্নার বালিশ খামে
অনুগদ্য জনতার প্রবৃত্তি
লোকালয় সংজ্ঞা হানে
অবাঞ্ছিত দেবতার চিহ্নিত দূত।
বেখেয়ালি সূত্ররা
ইকোনমিক্সের ফাঁদে হড়কে পড়ে।
ঘুরে ফিরে তর্ক যুদ্ধ আসে।
নীল পাখিগুলো
জলপাই আনতে উড়ে গেছে
মশাল হাতে।
নান কিং
শুভ্রনীল চক্রবর্ত্তীর কবিতা
অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
দীপ্তি প্যাভেলিয়ান
তাহলে শেষ পর্যন্ত কালি ও থেকে গেল ধোঁয়ার আসেপাশে।
কিছুদিনের এই এঁকে এঁকে ওঠায় দুপুরের যে হাট ছিল
তাকে আলাপ করেছি লেবুর হুইলে।
#
তাও নতুন রোদের তুমি ঠিকানা দিলে না।
#
গেলে না ভূগোল কেটে ইতিহাস ছিঁড়ে রেখে।
#
ছুটিকে আর গাইতে বোলো না। ওরা শরীরের চরে দ্বীপ বসিয়ে গেছে।
যাদের আজকাল ডিয়ার লিখতেই সেই প্রীতি
বুকের নৌকায় প্রথম লিরিলেই টানতে ভাল লাগে।
আমি ও দু এক লাইন.....
ধিক্কারের আরো কিছু নতুন শব্দ চাই
থুতু যতটা গিলেছি ততটাই উগড়ে দিই সারা শরীরে যখন
কোথাও ঈশ্বরের বাচ্চারা মানুষ লুকোচ্ছে নতুন মুন্সিয়ানায়
#
সকাল হলেই আবার কত কত মানুষ
ভিজে যাচ্ছে যারা চুরির অচেনা গন্ধে
অনিবার্য
আকাশ পুড়ছে
#
মাটির কিছুটা ওপরে তখন সেইসব লিখিত কর্মকাণ্ড
#
তথ্যানুযায়ী ক্লাসরুম খুলে যাচ্ছে প্রসবের বেওয়ারিশ ঠিকানায়
মাতৃত্বকালীন ছুটি চেয়ে নিতে।
#
একটা সাদা কাগজও নতুন করে কোথাও পৌঁছে দিতে।
দীপান্বিতা রায়ের কবিতা
ক্যানভাস
- রঞ্জন চক্রবর্ত্তী
রং সত্ত্বাকে ঢেকে ফেলল, উল্লম্ব ও কৌণিক রেখা
আমাকে প্রকাশ করল, তুলির আঁচড়ে
জ্যামিতিক অবয়ব ফুটে উঠল
ক্যানভাসে। তার পর অস্থির সময়
বয়স বাড়িয়ে দিয়ে গেল, এক রাশ ধুলোর আস্তরণ
জমল ছবির উপর, সুতরাং
শুধু স্মৃতিটুকু সঙ্গে নিয়ে
লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা। যেভাবে
আলো-আঁধারের খেলা চিরকাল চলে
অনেকটা সেভাবেই। হন্যমান এই মানবশরীর
এক দিন প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই
বিলীন হবে জানি, কিন্তু আমার মন
ক্যানভাসের ফ্রেমে বন্দী থেকেও চাইবে
তোমাকে ছুঁয়ে যেতে।
(নেপালি কবিতা)
নিজার কাব্বানির ১০টি কবিতা।।
( ফারহানা রহমান অনূদিত)
১. যখন ভালোবাসি।।
যখন ভালোবাসি
নিজকেই মনে হয় সময়ের রাজা
পৃথিবী এবং এর সবকিছুর মালিক বনে যাই
এবং নিজের ঘোড়াটির পিঠে চড়ে সূর্যের গভীরে ঢুকে যাই
প্রেমে পড়ে গেলে
আলোর তরল রশ্মি হই
অদৃশ্য চোখের কাছে
এবং আমার নোটবুকের কবিতাগুলো
হয়ে যায় মেমোসা ও পপি ফুলের প্রান্তর,
যখনই ভালোবেসে ফেলি
আমার আঙুলগুলো থেকে ঝর্না প্রবাহিত হয়
জন্মায় তখন জিভে গুল্মলতা
প্রেমে পড়ে গেলে
পেড়িয়ে কালের পরিক্রমা
অনন্তকালের পথে চলে যাই
যখন নারীর প্রেমে পড়ি
দুনিয়ার সব গাছপালাগুলো
আদুল পায়েই ছুটে আসে আমার দিকে...
(When I Love by Nizar Qabbani)
২. একটি ছোট্ট প্রেমের চিঠি।।
প্রিয়তমা, আমার অনেক কিছুই বলার আছে
হে আমার মহামূল্যবান, কোথা থেকে শুরু করব বোলো?
তোমার ভেতর যা কিছু আছে তা সবই রাজকীয়
ওগো তুমিই সে যে কী না তাদের তৈরি করা রেশমের মথ
থেকে আমার কথাগুলোকে অর্থবহ করে তোলো
এই হোলো আমার গান আর এটি আমি
এই ছোট বইটি আমাদেরকে ধারণ করে
আগামীকাল যখন এর পৃষ্ঠাগুলোতে ফিরবো
একটি প্রদীপ আর্তনাদ করবে
বিছানাটি গান গাইবে
তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে এর অক্ষরগুলো সবুজ হয়ে উঠবে
এর কমাগুলো প্রান্তসীমায় উড়ে যাবে
তবু এটা বোলো না; কেন ছিল এই যৌবন ?
(A Brief Love Letter by Nizar Qabbani)
৩. আলো লণ্ঠনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।।
লণ্ঠনের চেয়ে আলো গুরুত্বপূর্ণ,
নোটবুকের চেয়েও বেশি জরুরী হচ্ছে কবিতা,
আর ঠোঁটের চেয়ে চুমুর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।
তোমাকে লেখা আমার চিঠিগুলো
আমাদের উভয়ের চেয়ে মহত্ত্বর এবং গুরুত্বপূর্ণ।
তারাই একমাত্র প্রমাণপত্র
যেখানে মানুষ আবিষ্কার করবে
তোমার সৌন্দর্য
আর আমার উন্মাদনা।
( Light is More Important Than The Lantern by Nizar Qabbani)
৪. প্রেম তুলনীয়।।
হে আমার নারী, আমি তোমার অন্যান্য প্রেমিকদের মতো নই
অন্য কারও কি উচিত হবে তোমাকে মেঘ এনে দেওয়া?
যখন আমি তোমাকে বৃষ্টি দেই
তার কি উচিত হবে তোমাকে লণ্ঠন এনে দেওয়া,
যখন আমি তোমাকে চাঁদটিকেই এনে দেই
তার কি উচিত হবে তোমাকে গাছের ডালপালাগুলো দেওয়া
আমি যখন তোমাকে সব গাছগুলোই দেই
আর অন্য কেউ যদি তোমাকে একটি জাহাজ দেয়
আমি দেবো তোমাকে ভ্রমণ।
( Love Compared by Nizar Qabbani )
৫. ভাষা।।
একজন মানুষ যখন প্রেমে পড়ে
সে কিভাবে পুরানো শব্দগুলোই ব্যবহার করবে?
একজন নারী কি এমন প্রেমিককে কামনা করবে
যে ব্যাকরণবিদ এবং ভাষাবিদ হিসেবে মিথ্যে বলে
আমি যে নারীকে ভালবেসেছিলাম
তাঁকে কিছুই বলিনি
কিন্তু তাঁর জন্য প্রেমের বিশ্লেষণগুলোকে জড় করে
একটি সুটকেসের ভেতর রেখে দিয়েছিলাম
এবং সমস্ত ভাষা থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম।
( Language by Nizar Qabbani)
৬. প্রতিবার তোমাকে যখন চুমু দেই।।
যতবার আমি তোমাকে চুমু খাই
দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর
অনুভব করি
আমি তাড়াহুড়ো করে
একটি লাল ডাকবাক্সে প্রেমপত্র দিচ্ছি।
( Every Time I Kiss You)
৭. আমার প্রেমিকা আমাকে জিজ্ঞাসা করে।।
আমার প্রেমিকা আমার কাছে জানতে চায়
আমার আর আকাশের মধ্যে পার্থক্য কী?
হে আমার প্রেম! পার্থক্য আছে
আর সেটি হচ্ছে
যখন তুমি হাসো
আমি আকাশের কথা ভুলে যাই।
( My Lover Asks Me by Nizar Qabbani)
৮. ওহ আমার প্রেম।।
ওহ! আমার প্রেম
তুমি যদি আমার মতো পাগলপ্রায় অবস্থায় থাকতে
তুমি তোমার সব গহনা ফেলে দিতে
হাতের সব কাঁকন বেঁচে দিতে
আর আমার চোখের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকতে।
( Oh, My Love by Nizar Qabbani)
৯. সমুদ্রে প্রবেশের সময়
শেষ পর্যন্ত প্রেম হোলো
আর আমরা ঈশ্বরের স্বর্গে ঢুকে পড়লাম
পিছলে পড়লাম
মাছের মতো
জলের ত্বকের নিচে।
আমরা সমুদ্রের মহামূল্যবান মুক্তারাশি দেখেছি
আর বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছি
অবশেষে ভয়ভীতি ছাড়াই ভালোবাসা হোলো
চাওয়া-পাওয়াগুলোও কী ভীষণ মিলে গেলো
ফলে আমিও উজাড় করে দিলাম আর তুমিও তাই দিলে
আর আমরা দুজনেই ছিলাম দুজনের কাছে উন্মুক্ত।
সবকিছু কী দারুণ সহজে ঘটে গেলো
ঠিক যেন সুগন্ধি জল দিয়ে লেখার মতো
ঠিক যেন মাটি ফুঁড়ে কোনো এক ঝর্না বয়ে যাওয়ার মতো।
( On Entering The Sea by Nizar Qabbani)
১০. সংলাপ।।
কখনো বোলো না যে আমার প্রেম
একটি আংটি অথবা হাতের বালা ছিল
আমার ভালোবাসা হচ্ছে অবরোধ
এটি হচ্ছে তাঁদের মতো বেপরোয়া এবং উদ্ধত
যারা তাদের মৃত্যুর দিকে পাল তোলার অন্বেষণ করে।
এটি বোলো না যে আমার প্রেম
একটি চাঁদ ছিল।
আমার প্রেম ছিল আসলে একটি স্ফুলিঙ্গের বিস্ফোরণ।
( Dialogue by Nizar Qabbani)
কবি পরিচিতি
নিজার তৌফিক কাব্বানি একজন সিরিয়ান, কবি, লেখক, প্রকাশক এবং কূটনীতিক । তিনি আরব বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত সমসাময়িক কবি এবং সিরিয়ার জাতীয় কবি হিসেবে বিবেচিত। ১৯২৩ সালের ২১ মার্চ নিজার কাব্বানি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে একটি মধ্যবিত্ত বণিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আপাত সরল অথচ গভীর ব্যঞ্জনাময় কবিতা লিখে তিনি কবিতাপ্রেমিদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলেন। তাঁর কাব্যশৈলীতে প্রেম, কামোত্তেজকতা, নারীবাদ, ধর্ম এবং আরব জাতীয়তাবাদের চেতনা অন্বেষণ, সরলতা এবং কমনীয়তার সমন্বয় ঘটেছে।
তবে নিজার কাব্বানি নারীমুক্তি ও নারী অধিকারের পক্ষে সবচেয়ে সোচ্চার কবিকণ্ঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এবং একারণেই তাঁকে নারীবাদী কবি হিসেবে অভিহিত করা হয়।
কাব্বানী 'মিঠনাহ আল-শাহম' নামে দামেস্কের একটি পাড়াতে বেড়ে ওঠেন এবং ১৯৩০ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত দামেস্কের ন্যাশনাল সায়েন্টিফিক কলেজ স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৫ সালে আইন বিষয়ে স্নাতক হন। পরবর্তীতে কাব্বানি সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য কাজ করেন। বৈরুত, কায়রো, ইস্তাম্বুল, মাদ্রিদ এবং লন্ডন সহ বেশ কয়েকটি রাজধানী শহরে সাংস্কৃতিক দূত হিসাবে কাজ করেন। ১৯৫৯ সালে, যখন সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়, কাব্বানী চীনের দূতাবাসে ভাইস-সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। তিনি এই বছরগুলিতে প্রচুর লিখেছিলেন এবং এই সময়ের কবিতাগুলি তার সেরা কবিতা ছিল। তিনি ১৯৬৬ সালে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কূটনৈতিক কাজ চালিয়ে যান। তখন তিনি বৈরুতে তার নিজের নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কাব্বারি ৩০ এপ্রিল ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল তিনি লন্ডন শহরে মৃত্যুবরণ করেন।
মুহূর্ত
বাতাসের বিশ্বাসঘাতকতায় ভরসা রাখতে হয়
অনুমান ক্ষমতার ওপর
তুমি বলেছিলে ঘুমের ভিতর কান্না পায় না আর
অথচ প্রতিটি দহনের পর
চোখ হয়ে ওঠে ডালিম ফুলের মত লাল
এর কোন ব্যত্যয় ঘটেনি এ যাবৎ কালে
জলের শরীরে সদ্য ফুটে উঠল একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র
তোমার চিবুক থেকে আলো ছড়িয়ে দিল
আশ্চর্য অনির্বচনীয় তিল
এ এক মাহেন্দ্রক্ষণ
কিছুটা স্থিতি ও সংক্ষিপ্ত পরিধির ভিতর
একে একে অভিনীত হলো পদাবলী পর্যায়
সমস্ত বৈধ শপথ ভেঙে গিয়ে
ধীরে ধীরে খুলে গেল কঠিন আগল ও সংযম
পাঁচ টুকরো কবিতা
আঁশ বটিতে লেগে থাকে রক্ত
শ্রীমান মূর্তিমান
শোভন মণ্ডল
সবাই তাকে শ্রীমান মূর্তিমান বলে ডাকে। তার যে একটা পিতৃপ্রদত্ত নাম আছে সেটা অনেকে জানেই না। বাবা আদর করে নাম দিয়েছিল অনির্বাণ। কিন্তু নিজের কাছের লোকই সেই নাম ভুলতে বসেছে। আসলে এর পিছনে রয়েছে তার ‘কাজ'। সে স্ট্যাচু সেজে পয়সা ইনকাম করে। আগে বিয়েবাড়ি, জন্মদিন বাড়ি বা কোনো অনুষ্ঠানে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। কিন্তু বছর খানেক একটা স্থায়ী কাজ পেয়েছে। একটা পার্কে রঙ মেখে মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ।বিকেল ৩টে থেকে ৬টা পর্যন্ত তিন ঘন্টা স্থির হয়ে দাঁড়াতে হবে । কোন দিন চার্লি, কখনো যীশু কখনো ভেনাস হয়ে একটা নির্দিষ্ট বেদীর ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। নিথর, স্থির। চোখের পলক পড়ে না। সে হয়ে উঠেছিল ওই পার্কের বিশেষ একটা আকর্ষণ। মাইনেটা খারাপ পেত না। মাস শেষ হলে হাতে হাতে ছয় হাজার। মোটামুটি তার সংসার চলে যেত।
সমস্যাটা দেখা দিল দু'বছর পর। অনির্বাণ গায়ে রূপালী রঙ মেখে মূর্তি সাজতো। এই রঙের বেশি ব্যাবহারে সারা শরীরে কী সব যেন বেরোতে লাগলো। ডাক্তার দেখালে জানা গেল এরপর যদি আর এই রঙ মাখা হয় তবে পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে যাবে। অনির্বাণের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। এই কাজ বন্ধ করলে সে খাবে কী? সে জোর করেই মনস্থির করলো যা হয় হবে, এই কাজ সে ছাড়তে পারবে না। কিন্তু স্ত্রীর কথায় এই সিদ্ধান্ত বদলাতে হলো। ভগবানের অসীম করুণা যে এই সময় সে একটা কাজও পেয়ে গেল। পুরীতে একটি হোটেলে ওয়েটারের চাকরী। শ্রীমান মূর্তিমান শীঘ্রই শহর ত্যাগ করলো।
বছরের মাঝে দু'বার এলেও একদিনের বেশি বাড়িতে থাকতে পারেনি সে। স্ত্রীকে টাকা দিয়ে ফিরে গিয়েছিল পুরীতে। এবারে এক সপ্তাহের ছুটি পেয়েছে। দু'দিন আয়েশ করে কাটানোর পর কী মনে হলো সে বাস ধরে পৌঁছে গেল সেই পার্কে, যেখানে সে স্ট্যাচু সেজে দাঁড়িয়ে থাকতো।
পার্কটার নতুন রঙ হয়েছে। গেটের সিকিউরিটিরও পরিবর্তন হয়েছে। নতুন নেপালী একটা লোক। ওকে চেনে না। পাঁচ টাকার টিকিট। অনির্বাণ টিকিট কেটেই ঢুকলো। মিনিট তিনেক হাঁটার পরই সেই জায়গায় এসে দাঁড়ালো। ঝোপঝাড়, আগাছার জঙ্গল। খুব কাছে যেতে পারলো না। কিন্তু যা দেখলো তাতেই গায়ে শিহরন খেলে গেল। যে বেদীতে সে মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো সেখানে একটা পুরুষ মূর্তি। রূপালী রঙ। অনির্বাণ অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। না, কোনো নড়ন চড়ন নেই। ওর মতো কেউ সেজে দাঁড়িয়ে আছে ? মন বলছে, হতেই পারে না।
কাছে আর গেল না। কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করলো না।
ফেরার সময় সারা রাস্তা সে বিড় বিড় করে মনকে বোঝাতে লাগলো, “ওটা কংক্রিটের মূর্তি। জীবন্ত মূর্তি হতেই পারে না। হতেই পারে না.... “
জ্যোৎস্না নগরের মায়াবী রূপ দেখছি।
না কোন নিয়মের গণ্ডী নেই,
ওখানে গাভীর মতো ভেসে বেড়ায় মেঘমালা।
জানি গো জানি, বৃষ্টি নামলেই ভিজিয়ে দেবে মানব জমিন।
বেশ লাগে, স্বপ্নালোকে নীলাম্বরীর ভেজা ডানায় ভেসে থাকতে।
জান, তখন আমার মানব জমিনে চলে শব্দের বীজবপন।
আহা....হা, এমন কতো শব্দমালা জুড়ে জুড়ে
বুনে ফেলি বৃক্ষসম কবিতা।
কেউ কেউ হেসে বলে, ধ্যুৎ, তুই দেখছি আস্ত পাগল?
স্বপ্ন কি সত্যি হয়?
ওসব বোকারা বলে বুঝলি বোকারা।
আমি জোর গলায় বলি,
চাইলেই সত্যি হয়, এ আমার বিশ্বাস।
বেশ কাটছিল , বিশ্বাসকে ভালোবেসে।
তারপর কেটে গেছে অনেকগুলো মাস.....বছর....।
এখানে আর বর্ষা নামে না,
ঘন মেঘের ঘনঘটা এখন আমার মানব জমিনে,
স্বপ্নেরা পিঠের উপর বজ্রচাবুক হানে।
আমার চারপাশে এখন অমাবস্যার ঘোর অমানিশা।
কবিতারা আর ধরা দেয় না মনের গহীনে কলমের ডগায়।
স্তব্ধ হয়েছে বাতাস।
ওগো বন্ধু এসো, তোমার জলভরা কলস উপুড় করে দাও
এ তপ্ত ধরণীর বুকে,
সব কালো মেঘ সরে যাক
এ হৃদয়াকাশ হোক সূচিস্নাত।
জানি, তোমার কোন ঘর নেই,
নেই কোন ঠিকানা।
অপেক্ষার বাতায়নে আঁখিজলে বসে আছি,
জানি, আমার এ খোলা চিঠি
নিশ্চয়ই পৌঁছবে কোন এক দিন।
"উদভ্রান্ত"
গানদীঘির কবিতা
কৌশিক দাসের গদ্য কবিতা
মহাদেব এখন কুপোকাত
সিরিজ কবিতা
-মিন্টু দাস
শোকচিহ্ন
দেবাশিস সাহাসাপ রঙের রাস্তায়
পড়ে আছে এলোমেলো খই
কানা আধুলি আর ভাঙাচোরা পায়ের ছাপ
কে যেন এসে
আমাদের পাড়ায়
এঁকে দিয়েছে শোকচিহ্ন
হ্রদে নেমে
ভালোবাসা তছনছ করে দিয়ে
চলে গেলো একটা গোঁয়ার রাত
অজান্তেই একটা রাস্তা
এসে যায় ঘর পর্যন্ত
লালটুকু নিয়ে চলে যায়
চলে যায় চোখ ছাড়িয়ে
মিথ্যেগুলো পড়ে থাকে
সত্যের কঙ্কাল কাঁধে
হেঁটে যায় শ্মশানবন্ধু
শোক গায়ে ঘুমিয়ে পড়ে পাড়া
বিবাহরাত্রি
শৌভিক দত্ত
সমস্ত বাউল জুড়ে বিবাহরাত্রি হয়
সমস্ত বাউল জুড়ে ভাঙা তাস মাটির গেরুয়া
তুলোচাষে গতিবিধি, মলাটে নামাজ ভেসে যায়
ছয়রাত্রি ছদ্মবেশ ছয়লাপ ছয়লাপ জনগণ
প্রথার গভীরে ঐ বলিরেখা দাহ্য হয়ে নামে
আচমন ধরে রাখে জ্বলানেভা সাঁতার গুমোট
চমক ফেরী করে নরম দোয়াতে রাখা ভাষা
প্রাতরাশে সারসার অস্থির শুনানী পড়ে থাকে
অভিনেতা
ফসিলের আয়না
অনুপ মণ্ডল
ঝিমিয়ে পড়া জীবনে একজন পার্টনারশিপ দরকার
সম্পা পাল
ধরুন আপনি ঝিমিয়ে পড়েছেন
রাস্তা এখনও ঢের বাকি
সূর্যটা মাথার ওপরে গনগনে।
নুন ,জল বাড়িতেই ছেড়ে এসেছেন ...
ড্রইংরুমে ভারত -পাকিস্তান টানটান উত্তেজনায়
ধীরে ধীরে স্কোর বোর্ডে সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
নির্বাক চোখ ধারাভাষ্যের দিকে ।
একটু ভেবে দেখুন তো!
এসময়ে একজন ভালো পার্টারনশিপ হলে কেমন হয় ?
বাকি রাস্তা এবং স্কোর বোর্ড !
তাহলে আর দেরি কিসে ?
বুদবুদ
রূপবিলাস মণ্ডল
কোন এক সন্ধ্যায় তোমার
হৃদয়ের উষ্ণ প্রস্রবণ ,
উষ্ণতা আমায় ঢেলে দিয়ে
শীতলতা করেছ বরণ।
জীবনের ধারাপাত জুড়ে
যোগ বিয়োগের এই খেলা ,
বিষন্ন আকাশ বুকে করে
বিশ্ব পথে হেঁটেছি একেলা।
ক্ষণিকের অতিথির মতো
কিছু পথ ধরেছিলে হাত,
হাত ছেড়ে কোথায় হারালে,
কুসুমিত শুভ্র প্রভাত!
আমার প্রগাঢ় অনুতাপ
তোমায় নামায় মেঘ করে,
বৃষ্টি, সে দূরে সরে রয়
স্বপ্নের ক্রন্দসী পারে।
নিত্য এ আসা যাওয়া খেলা
বুদবুদ ঊর্মিমালায় ,
প্রেম আর অপ্রেম মিলে
জন্মায়, অসীমে মিলায়।
মানবতার ফেরিওয়ালা
শৈশব আর কৈশোর গেছে চুরি
স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে যৌবন,
উদ্ভ্রান্ত এ সময়ের অভিঘাতে
স্বপ্নের এক ফেরিওয়ালা প্রয়োজন।
সে স্বপ্ন হবে মানবতা প্রতিরূপ
জীবনের তরে সঞ্জীবনীর মতো,
দুচোখে আঁকবে স্বপ্নের অঞ্জন
দূরীভূত হবে হতাশা-দুরাশা যতো।
দিকে দিকে আজ বিপন্ন মানবতা
আর্ত কান্না বিষিয়েছে প্রতিদিন,
মানবতা হীন জীবন পশুর মতো
ফেরিওয়ালা করো মানবতা উড্ডীন।
গান্ধী ,নেতাজী যে স্বপ্ন দেখেছিলো
সেই স্বপ্নই বয়ে নিয়ে চল তবে,
সবাইকে যদি স্বপ্ন দেখাতে পারো
দেশ জননীর স্বপ্ন সফল হবে।
যে স্বপ্ন খোঁজে জাতপাত হীন বিশ্ব
মানবতা আনো,যেখানেই খুঁজে পাও ,
ঈর্ষা এবং হিংসা মুক্ত পৃথিবী ,
যুদ্ধ চাইনা, যুদ্ধ থামিয়ে দাও।
সাম্যের তরে এক হোক গোটা দুনিয়া
গভীর স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাক মন,
স্বপ্ন দেখুক শ্রমিক মজুর কৃষক
পৃথিবীটা হোক আনন্দ নিকেতন ।
আসল কথা
আসল কথা বলতে গেলেই
ভরিয়ে দিচ্ছে নকল কথায় ,
সবাই হয়ে মন্ত্র মুগ্ধ
বোকার মতো হাততালি দেয়।
তুলছে না কেউ আসল কথা
ভুলছে সবাই অভিনয়ে,
এরা ভাবছে ওরা বলুক
সত্য ডোবে অবক্ষয়ে।
কার প্রাপ্তি কে হাতড়ায়
কার অধিকার ধুলায় লুটায় !
নকল লড়াই বাধিয়ে দিয়ে
নেপোয় শেষে দই মেরে দেয়।
তোমায় যারা শোষণ করে
তাদের নিয়ে মাথায় তোল,
নিজের কথা, দেশের স্বার্থ
তোমায় ভোলায়, তুমি ও ভোলো।
এসব প্রশ্ন কে করবে?
বলবে যারা নেশার ঘোরে ,
প্রতিবাদের ঝাণ্ডা ঢেকে
সহজ পথে সওদা করে।
সত্যি কথা, আসল কথা
সবাই মিলে বলতে হবে,
না হলে ওই শোষক শ্রেণীর
মর্জি মতো বাঁচতে হবে।
মেকি কথা মিটিয়ে দিয়ে
তোল সবাই আওয়াজ তোলো
আসল প্রশ্ন উপেক্ষিত,
আসল কথা সবাই বলো।
বেসকালার
১। মৃত্যুর পরদিন
পুরনো বাড়ির আত্মকথা
মৃত্যুর পর
সমর দেব
একান্ন বছর পাঁচ মাস তিনদিনের শেষে
এক আবছায়া বিকেলে আমি মারা গেলাম
মৃত্যুর ঠিক আগে আমার কিচ্ছু মনে আসেনি
শুধু মনে পড়েছিল জন্মের আদি মুহূর্তটি
সেটা ছিল অঘ্রাণের মৃদু শীতের এক শেষরাত
আকাশে ব্যস্ততা ছিল তারাদের অনেকেই ততক্ষণে
ডুবে গেছে হিরণ্ময় আলোর গর্ভে
তার অনেক আগে চলে গেছে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ
প্রসূতিকক্ষে বিজলি আলোর বন্যায় ভেসে যাচ্ছিল
সমস্ত দৃশ্য কথা বলছিল ডাক্তার নার্সেরা, তাদের
কণ্ঠের আওয়াজ আমার কানে বাজছিল
সুরেলা সংগীতের মতো তাতে আবাহন ছিল
এটুকুই জন্মমুহূর্তের স্মৃতি ভেসে উঠেছিল
শেষের বেলায়। আশ্চর্য, আমার ক্ষুধা ছিল না!
-
টংঘরে রাজা প্রথম মনীন্দ্র গুপ্ত রমিত দে ...” জন্ম থেকে এই জগৎকে পাঁচ ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করেছি, আর তাঁর বিচিত্র অর্থ মনের মধ্যে উঁক...
-
চোখ নীলাব্জ চক্রবর্তী ক্যামেরা অর্থে কোনও কাগজের চোখ ঠাণ্ডা দেখি সম্পর্ক একটা গাছ ফেনার ভেতর কে একটা দশকের বারবার নাম বইছে কাঁচের...
-
গানদীঘির কবিতা সুবীর সরকার ১. রাজবাড়ীর আলো সাগরদীঘির জলে পৌষের ঘন হয়ে ওঠা শীত শহরে ছড়িয়ে পড়ে সুরেন বসুনিয়ার ভাওয়াইয়া ঘোড়া ছোটাচ্ছ...