অমরত্ব
রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়
নিজেকে দেউলিয়া করে তোমার ভাগে বেড়ে দিই অজচ্ছল সুখ ৷ অকারণ উৎকন্ঠায় ঘাসের ডগায় রক্তের ফোঁটা ভেবে জলের প্রাবল্যে ঢেলে দিই নিশ্চিত আশ্বাস ৷ গত জন্মের বেলোয়ারি ইচ্ছেরা সম্পৃক্ত হওয়ার নেশায় কবিতায় মাখামাখি হলে আমি যাপনের ঘ্রাণে মশগুল হই ৷ তোমার গোপন রেখাগুলো ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয় ৷ ষদচ্ছ অভিপ্রায় আঁকা হয় ইজেলের রেখায় ৷অন্ধকার যখন চেতনার পথ আটকে অভিসন্ধিকে প্রবেশ করতে দেয় সম্পর্কের উষ্ণতায় , তোমাকে ঘিরে আবছায়া পাপ , মন্ত্রণা দেয় ৷ তুমি নাটকীয়ভাবে খলনায়ক হয়ে ওঠ ৷
গুপ্ত গহ্বর থেকে নেকড়ের খিদে নিয়ে অসত্যের রঙে ঢেকে সনাতনী ঠিকেদার বেড়িয়ে আসে ৷ মায়াঘোর প্রভাব আমাকে বুঁদ করে রাখে ৷ সপ্নের রূপটান ঘন চুম্বনে জড়িয়ে সূর্যাস্ত মাখতে মাখতে পলাশের পাপড়ির মত আগুন হয়ে উঠি ৷ তুমি যে তরঙ্গ এঁকে দাও শরীরী আঙ্গিয়ায় , অঘোর বশ্যতায় স্হির সমর্পণে , অদেয় থাকে না কিছুই ৷ তবু তোমার প্রচ্ছন্ন কপটতা সম্পর্কের গায়ে কলঙ্ক লেপে দেয় ৷ ভিজে ডাহুকের ডানায় বিমর্ষ অসুখেরা জলজ কীটের মত ভেসে যায় দ্রাঘিমা ছাড়িয়ে ৷ ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের মত সমস্ত নিশ্চহ্ন করে দিয়ে , তুমি কাঁটাতারের সীমানা পেরতে পরিচয় বদলাও ৷
জানি তুমি প্রেম করেছিলে ৷ ভালোবেসেছিলাম আমি ৷ তাই আমার হারাবার কিছু নেই ৷ তোমার নষ্ট-নীড়গুলো একে একে ভেসে যাবে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ৷ তখন তোমার ক্লান্ত অবসন্ন দেহে যে বাতাস খেলা করবে , যেন তাতে আমি আছি , তোমার দুচোখে ক্লান্তি নেমে এলে , আমি ঘুম হয়ে আসব ৷
তবু ধ্বংসের ওপাশে যে অমরত্বকে রেখে এসেছ , হাজার আকুতির দামেও তা আর কোনদিন ফেরত পাবে না ৷
অসংযমী মুদ্রা
রাতের বুকে যে ইমনের ঠাট তাকে অশ্রুবিধুর করে কী লাভ ! ভালোবাসার তীব্রতা কখনও কখনও খরস্রোতা নদী ৷ পাহাড়ী ঝরনার নুড়িগুলো বুকের মধ্যে বেচাল করলে আমি আগুনের কাছে তাপ ধার নিই ৷ দুপাশের ডানা পোড়ে ৷ দ্রবীভূত স্পর্শে বাগিচা হতে থাকে শরীরী ভাস্কর্য ৷ ছুটে চলি বাতাসের কাছে , অরণ্যের কাছে ৷ মিলন সম্ভবা হয়ে বেলোয়ারি ঘাসের ডগায় শিশিরের মত তরল হই ৷ তুমি হংসের চালে আমাকে পান করো ৷ আমার অসংখ্য টুকরো তোমার ঘ্রাণে মাখামাখি হয়ে রাতের গায়ে সম্মোহন ছরায় ৷ সমর্পণের নাব্যতায় ডুবতে ডুবতে কিছু অসংযমী মুদ্রা রেখে গেলাম আমাদের বিভোর সম্পর্কের ভিতর ৷
No comments:
Post a Comment