Sunday, July 26, 2020


দুটো কবিতা
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য


হলুদ ছুরি

একটা হলুদ ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। একটা হলুদ ছুরি শার্টের চোরা পকেটে পড়ে আছে দুইশোবছর। আদর্শলিপি ফেরাতে পারেনি আমাকে। স্মৃতিতে কেবল হলুদের শাদাফুল—শিশিরের অশ্রু নিয়ে ঝাপসা কুয়াশা হয়ে গেছে, বাড়ির পাড়ে ছিলো মাঠের শোলক। ওগো রামধনু সাত, তোমার ভয়ে বৃষ্টি আটকে গেছে মেঘের করাতে। আমার হাতেও শাঁখ, পকেটে রং। এই রং ধনেশের চঞ্চু রাঙিয়ে ফিরেছে গোপন ধাতবে। আমার পরিত্রাণ তোমাতেও নেই জেনে ক্লান্তিহীন ফিরে গেছি বারংবার নিজেরই নিশ্বাসের ভিতর। এই ক্ষণজন্ম পতঙ্গের ভার নিয়ে গেলে আকাশের বিদ্যুৎ—আমি ছুরিকারহিত রং দুহাতে মেখে ফিরে যাবো; ফিরে যাবো আদর্শলিপিতে।


লাল সমাধি

এই ঘূর্ণি, এই উপপাদ্য সন্তাপ—লুকোনো আধ্যাস, বনাকীর্ণ আদিকারণ জেগে থাকে, জেগে থাকে চালতার বনে একা। চালতাবন দীর্ণ করে ত্রিমুখি নদ-নদীদল তাতিয়ে, মন্ত্রধ্বনির ঘনতল খুঁড়ে খুঁড়ে বোধিগুল্ম ধীর, তরঙ্গদল ভাঙে অবলীঢ়। সন্ধি খুলে পড়ে আশ্চর্য সুরে। পিরামিড ডুবে যায়, পিরামিড ডুবে যায়। হারানো গোলক, দীর্ঘ নীল, ঝাউঝাউ খড়, কণ্টকের ফুল পড়ে থাকে। চিতাকাঠে জেগে থাকে স্বাহা বিষাদ। চোখের পাপড়ি ছিঁড়ে বুনে দিলে মাটিতে—হরিৎ উদ্ভিদের ভার হনন করে তন্দ্রার বিছন। লাল লাল শ্বাসে উড়ে উড়ে পুড়ে যায় পদ্মকোরক, গজগামিনী কাম। তার নাম উপালি ছিলো, ছিলো যশোধরা, একলা চাঁদ, ঘুলঘুলির ঘুমগীত। আর লুম্বিনির শালবনে হাহাকার। কপিলাবস্তুর পথে পড়ে থাকে আধখাওয়া হাড়। ডাকিনির চোখে লুসিফেরিন জ্বলে জ্বলে জোনাক অসুখ। কেউ সুখ, কেউ সুখের মুখোশ। রাখাল-রাতের রং বেগুনি হলে বাঁশির শরীরে মুছে যায় স্বর বিবর। পা ক্লান্ত বলে পথ উড়ে গিয়ে থামে যে উলম্ব উদ্ভিদের ছায়ায়—ওখানে সমাধির রং গাঢ় লাল।


No comments:

Post a Comment