শোভন মণ্ডলের কবিতা
গ্যারেজ
একটা পরিত্যক্ত গ্যারেজের ভেতর দাঁড়িয়ে আছে একটা বাতিল গাড়ি
পাশের বাড়ির একটা বৃদ্ধ লোক জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে সেই দিকে
অগোছালো চুল, ঝুরঝুরে প্যালেস্তারা
ঝাপসা হয়ে আসে চশমার কাচ
মাঝে মাঝে কাক এসে বসে কার্নিসে
কারর কোন তাড়া নেই একটুও
সামনের সড়ক দিয়ে বয়ে গেছে ট্রামলাইন
ঘন্টা বাজে। ধুলো ওড়ে
গ্যারেজে উঁকি মারে রাস্তার কুকুর
বাতিল গাড়ির গায়ে বিবর্ণ রঙ
হাওয়ায় নড়ে ওঠে মাকড়সার জাল
পরিত্যক্ত বাড়িটা থেকে এসবই দেখছে একজন বাতিল লোক
উপশম
চোখের তলায় কালির মতো যা কিছু ছুঁয়ে আছে নিদারুণ অযত্নে
সেটা কি কষ্টের ছায়া ? তুমি তার নাম জানো কি ?
ভিন্ন আবেগে ভেসে যায় ভেলা।শরীর টানটান হয়ে আসে
শুকনো ঘাসের গায়ে আঙুলের টিপসইগুলো আমাকে জাগায়
সূর্যাস্তের পরে মাথার ভেতরে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে উনুন
অতলগামী শরীরের ডাকে আমি তো সেই বসে থাকি পুরনো ঘাটে
অজস্র বিষাদ নিয়ে পেরিয়ে যায় মনখারাপের ট্রেন
নীল হয়ে আসে সেই সব সর্বনাশের অমোঘ রঙ
বহুদিন পর চেনা ব্যালকনিতে উড়ে এসে বসে বিজোড় শালিখ
যন্ত্রণায় শিরদাঁড়া কেঁপে ওঠে, জ্বলে ওঠে আগুনশিখা
তারপর সে রাতে কবিতা-বমির পর শান্ত হয়ে আসে সমস্ত শরীর
সেদিন সৈকতে
খোলা আকাশ, চকচকে বালি, ছুটে যাওয়া লাল কাঁকড়ার দল
গোড়ালি ডুবে যায়, তুমি এসে হাত ধরে তুলেছো প্রতিবার
চুল উড়ে আসে চোখে , ভিজে যায় কপালের অঙ্কিত ভাঁজ
পাথরের খাঁজে খাঁজে দেখোদেখি উঁকি মারে জলছবি ছাপ
জমে যায় এইখানে মিহিনুন আদরের প্লাঙ্কটন গোছা
শঙখ জড়িয়ে থাকে বালি, হাওয়া ছুঁয়ে গমগম ধ্বনি
তুমি শুধু গাইছো গান, ঝাউবন সরুপথ ঝোপ-জঙ্গল
অদেখা সেইসব সৈকতে নেমে আসা শেষ আলো-আভা
এভাবেই ছোঁয়াছুয়ি, ভেজা পা, যুগলে উড়ে যাওয়া পাখি
ঢেউয়ে ভেসে যায় আমাদের ছেড়ে যাওয়া চটি-জুতোখানি
No comments:
Post a Comment