সূর্যাস্তের খাতাঃ আলো-অন্ধকারের এক জটিল সমীকরণ...
শৌভিক বণিক
দুই মলাটে ৩০টি আখ্যান নিয়ে আলোও আধারের খেলার ভেতর হাই তুলছে সূর্যাস্তের খাতা।মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
একজন কবির জীবনের শ্রেষ্ট অর্জন সম্ভবত তার নিজস্ব এক কাব্য ভাষা নির্মান।
সেই চিহ্নিতকরণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে তার কবিতার ছত্রেছত্রে। তার কবিতা স্বতন্ত্র ও নিজস্বতায় স্বকীয়।কবিতা তো সত্যেরই আধার। তার মেধাবী উচ্চারণ,ভাঙা গড়ার ভাষ্য, রূপক ও অলংকারের ভেতর ফুটে ওঠা আবক্ষ যেন পৌছে যায় এক অনন্য জীবনবোধে।
কবি যখন বলেন
শরীরের বিন্দু বিন্দু ঘামে
অন্তিম সঙ্গম চেয়েছো তাই স্নান ঘরে নতুন সুগন্ধি
বিগত হয়েছে রোদের নাম
নীল খাম বদলে নিয়েছে রং
আজও চোখে জল ভরাট হয় প্রতীক্ষার উঠোন জুড়ে
ভাঙার খেলায়...
নস্টালজিক প্রেমের সংজ্ঞা ভাঙতে ভাঙতে কবি দৃশ্যপট বদলে ঢুকে পড়ছেন নির্মম এক সত্যের কাছে। আলোর উল্টো দিকে নির্মোহ অন্ধকারে।
সম্পর্কের তাপ উত্তাপের আলংকারিকদিকটিও পাঠকদের কাছে অনাবৃত হতে থাকে...
আলোআধারির এই চিরায়ত খেলায়
সম্পর্কের নাম হয়ে ওঠে "জটিল সমীকরণ অথবা হেয়ালি"
আবার কবি লিখেন
অন্ধ গোলাপ নগ্নতার মানচিত্রে বিপণী
বিজ্ঞাপন সর্বস্ব এই বাজার সভ্যতা নারীকে আজ পন্যে পরিনত করে তুলেছে। তাই গোলাপ অন্ধ হলেও নগ্নতার প্রশ্নে তার বাজারদর নির্ধারিত হচ্ছে। তার কবিতায় দেখতে পাই পরাবাস্তবতা
ডট পেনের শিষে ভরা রক্ত
ভেজা পৃষ্ঠা থেকে উড়ে আসে ওড়না
পান্ডু লেখ্য হয়ে ফুটে উঠছে এক ম্যাজিক আলো
প্রভৃতি এমন লাইন জেগে উঠছে তার কবিতার ছত্রেছত্রে।
কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে যেতে হয়। মীনাক্ষীর কবিতা আপাতভাবে দুরূহ, জটিল মনে হলেও ঠিক তা বোধহয় নয়। সময়ের জটিল আবর্ত থেকে উঠে আসা বোধ আসলে সময়ের উপহার।
কয়েক দশক আগে আর্থার মিলার বলেছিলেন, ‘ভাষাকে যে আক্রমণ করে সেই ভাষাকে বাঁচায়।’
তার কবিতার আঙ্গিক জুড়ে বিষাদময়তা আর অপ্রাপ্তির ঢেকুর তুলছে কথামালা।
যুগযুগান্ত ধরে সাহিত্যে বিষাদ, যন্ত্রণা, দুঃখ, ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে এতো নতুন কিছু নয়। নতুনত্ব এখানেই ইতিহাসের কোন চরিত্রই হোক বা বিঞ্জানে কোন নিগুঢ় তথ্যই হোক বিষাদকে খন্ড বিখন্ড করে নিয়ে যাচ্ছে এক একটি আখ্যানের সম্পূর্ণতার দিকে। তরুন কবি স্পর্ধাতে কবি শঙ্খ ঘোষও বলেছেন "যথার্থ উত্তরসূরি যিনি, তার তো চাই বৃত্তভাঙার ঝোঁক।"
বাংলা কবিতার গতানুগতিক বৃত্তের বাইরে গিয়ে এই কবিও সর্তকতায় সেই বৃত্ত ভাঙছেন তার কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তিতে।
মীনাক্ষী কবিতা আসলে আলো-অন্ধকারের এক জটিল সমীকরণ। পাঠককে নিয়ে যায় এক অগ্রন্থিত অন্ধকারের দিকে। যেখানে পাশ ফিরলেই পাঠক দেখতে পায় এমন এক সত্যের, যার সামনে-পিছনে দু'দিকেইই রয়েছে অন্ধকার। এই অন্ধকার ক্রমশ আলোর দিকে মুখ তুলছে খুঁজছে উত্তরণের পথ।
কবি বোধহয় সর্তকভাবেই ব্যক্তি থেকে সমষ্টির দিকে এভাবেই এগিয়ে চলছেন।
সূর্যাস্তের খাতা
কবি মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়
প্রচ্ছদ - কৌশিক বিশ্বাস
প্রকাশক- অশোকগাথা
দাম ৬০,
শৌভিক বণিক
দুই মলাটে ৩০টি আখ্যান নিয়ে আলোও আধারের খেলার ভেতর হাই তুলছে সূর্যাস্তের খাতা।মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
একজন কবির জীবনের শ্রেষ্ট অর্জন সম্ভবত তার নিজস্ব এক কাব্য ভাষা নির্মান।
সেই চিহ্নিতকরণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে তার কবিতার ছত্রেছত্রে। তার কবিতা স্বতন্ত্র ও নিজস্বতায় স্বকীয়।কবিতা তো সত্যেরই আধার। তার মেধাবী উচ্চারণ,ভাঙা গড়ার ভাষ্য, রূপক ও অলংকারের ভেতর ফুটে ওঠা আবক্ষ যেন পৌছে যায় এক অনন্য জীবনবোধে।
কবি যখন বলেন
শরীরের বিন্দু বিন্দু ঘামে
অন্তিম সঙ্গম চেয়েছো তাই স্নান ঘরে নতুন সুগন্ধি
বিগত হয়েছে রোদের নাম
নীল খাম বদলে নিয়েছে রং
আজও চোখে জল ভরাট হয় প্রতীক্ষার উঠোন জুড়ে
ভাঙার খেলায়...
নস্টালজিক প্রেমের সংজ্ঞা ভাঙতে ভাঙতে কবি দৃশ্যপট বদলে ঢুকে পড়ছেন নির্মম এক সত্যের কাছে। আলোর উল্টো দিকে নির্মোহ অন্ধকারে।
সম্পর্কের তাপ উত্তাপের আলংকারিকদিকটিও পাঠকদের কাছে অনাবৃত হতে থাকে...
আলোআধারির এই চিরায়ত খেলায়
সম্পর্কের নাম হয়ে ওঠে "জটিল সমীকরণ অথবা হেয়ালি"
আবার কবি লিখেন
অন্ধ গোলাপ নগ্নতার মানচিত্রে বিপণী
বিজ্ঞাপন সর্বস্ব এই বাজার সভ্যতা নারীকে আজ পন্যে পরিনত করে তুলেছে। তাই গোলাপ অন্ধ হলেও নগ্নতার প্রশ্নে তার বাজারদর নির্ধারিত হচ্ছে। তার কবিতায় দেখতে পাই পরাবাস্তবতা
ডট পেনের শিষে ভরা রক্ত
ভেজা পৃষ্ঠা থেকে উড়ে আসে ওড়না
পান্ডু লেখ্য হয়ে ফুটে উঠছে এক ম্যাজিক আলো
প্রভৃতি এমন লাইন জেগে উঠছে তার কবিতার ছত্রেছত্রে।
কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে যেতে হয়। মীনাক্ষীর কবিতা আপাতভাবে দুরূহ, জটিল মনে হলেও ঠিক তা বোধহয় নয়। সময়ের জটিল আবর্ত থেকে উঠে আসা বোধ আসলে সময়ের উপহার।
কয়েক দশক আগে আর্থার মিলার বলেছিলেন, ‘ভাষাকে যে আক্রমণ করে সেই ভাষাকে বাঁচায়।’
তার কবিতার আঙ্গিক জুড়ে বিষাদময়তা আর অপ্রাপ্তির ঢেকুর তুলছে কথামালা।
যুগযুগান্ত ধরে সাহিত্যে বিষাদ, যন্ত্রণা, দুঃখ, ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে এতো নতুন কিছু নয়। নতুনত্ব এখানেই ইতিহাসের কোন চরিত্রই হোক বা বিঞ্জানে কোন নিগুঢ় তথ্যই হোক বিষাদকে খন্ড বিখন্ড করে নিয়ে যাচ্ছে এক একটি আখ্যানের সম্পূর্ণতার দিকে। তরুন কবি স্পর্ধাতে কবি শঙ্খ ঘোষও বলেছেন "যথার্থ উত্তরসূরি যিনি, তার তো চাই বৃত্তভাঙার ঝোঁক।"
বাংলা কবিতার গতানুগতিক বৃত্তের বাইরে গিয়ে এই কবিও সর্তকতায় সেই বৃত্ত ভাঙছেন তার কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তিতে।
মীনাক্ষী কবিতা আসলে আলো-অন্ধকারের এক জটিল সমীকরণ। পাঠককে নিয়ে যায় এক অগ্রন্থিত অন্ধকারের দিকে। যেখানে পাশ ফিরলেই পাঠক দেখতে পায় এমন এক সত্যের, যার সামনে-পিছনে দু'দিকেইই রয়েছে অন্ধকার। এই অন্ধকার ক্রমশ আলোর দিকে মুখ তুলছে খুঁজছে উত্তরণের পথ।
কবি বোধহয় সর্তকভাবেই ব্যক্তি থেকে সমষ্টির দিকে এভাবেই এগিয়ে চলছেন।
সূর্যাস্তের খাতা
কবি মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়
প্রচ্ছদ - কৌশিক বিশ্বাস
প্রকাশক- অশোকগাথা
দাম ৬০,
No comments:
Post a Comment