Tuesday, August 3, 2021

 নদীমূর্তি 

শিবু মণ্ডল 



১। 

ভাঙল!

দেখো এই দূর তল্লাটে এসে আমাদের অভিমান ভাঙল

দেখাগুলো কেমন বদলে গেল নদী ও বনের খামখেয়ালিতে 


বয়সের আগামাথা নেই এমন একটি শাল গাছে

ফুটে আছে লাল ছড়ার মতো অর্কিড


এরপর যাবতীয় সতৃষ্ণ বোঝাপড়া 

নদীমূর্তির পাথরে পাথরে ধাক্কা খেয়ে 

শেষে কাঙ্ক্ষিত স্রোত হয়ে বয়ে যায়


২। 


যা কিছু বলার ছিলো 

সম্ভাব্য আলাপের পরও বলা হল না

গহীন অরণ্য এসে ঘিরে রাখে কথা

সালোকসংশ্লেষের অনিবার্যতা শেষে 

চোরাবালিতে তলিয়ে গেল ফুল ও ফলের পতনশব্দ 


৩।  


মাঝখানে নদী এঁকে দিলে 

বনেও বিরহ রং সাজে  

কুড়ুলের ঘা’য়ে কিছু গাছ শুধু 

কাঠ হয়ে যায় সেতু হবে বলে 


তারপরেই শুরু হয় এক অন্য ভ্রমণকথা... 


৪। 


একই শরীরে অর্কিড ও ফার্ন নিয়ে 

দাঁড়িয়ে আছো বিপন্ন শোকে

জলের তলে লুকিয়েছে রোদ  

অহরহ উঁকি দেয় মরণ পাড়ের ফাটল থেকে  

টুপটাপ ঝরে পড়ে মেঘ

একই সাথে গলা জড়াজড়ি করে

হেঁটে যায় বাঁধের উপর ভাঙনের উত্তরসূরি 


তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছ 

শরীরে অর্কিড ও ফার্ন নিয়ে 


৫।


বনানীর পথপাশে বসে থাকা

এক বিরল পাখি শিস্‌ দিতে ভুলে গেছে

এত নীরবতা!

এত নির্জন!

শূন্য রিসর্ট থেকে ভেসে আসে

কেয়ারটেকারের সাবধানবাণী

ঘরে ফিরে যাও ঘরে ফিরে যাও

এই নীরবতা ক্ষণিকের ভ্রম!

এই নির্জনতা ক্ষণিকের ভ্রম! 


পাখিটি জানে  কেয়ারটেকার জানেনা 

বিরহ জন্মের পর আর ঘরে ফেরা যায়না...   


৬। 


যেতে চাইলে চলে যাও

হেঁটে চলে যাও নদীটির দিকে 

বিজন সেতু ডাকবে না তোমাকে

চিতার পোড়া কাঠ, মৃতের ফেলে যাওয়া বিছানা

পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাও ভেসে থাকা নৌকার দিকে

নৌকার এই প্রগল্‌ভতাকে পুঁতে দাও জলের নিচে

নিষিদ্ধ চাঁদের রাতে তার এই নড়াচড়া মোটেই আইনসঙ্গত নয়


1 comment: