Tuesday, August 3, 2021

 

সব্যসাচী হাজরার গুচ্ছ কবিতা



মোমেনশাহী 

১।

একটা মোমলাইন ঢালা হোলো

মোমকাশের ফিরে দ্যাখা মোমেনশাহী আমাদের ঘরবাড়ি

এই আকুলআলোর কোলসকল ও ব্যস্তলোকাল ভালো

গানবাঁধানোর সেই গানে

যদুমধুর যতদূর ভালো

ভালোআপদের আমরা মোম ঢেলেছি যখন তখন

বাচ্চা বেরোয়

বাচ্চা তবুও বেরোয়

কান্না বেরোয়    বেপরোয়া। 

২।

দেশ ভাঙতে লাগে খেলা ভাঙতে লাগে

বেণুদি'র এপাশওপাশ লাগে   আমরা একপাশে

ভারতীয় সাবান দিয়ে টনক দিয়ে টংটং শব্দ শিখেছি দ্যাখো

পেছনে ভাসছে প্রথম প্লেনের হাওয়া

ইথারে চলো      এক অথর শব্দের কাছে আমাদের জন্তুযান

দাঁতের পিঠে দিলো আলোর ইশারা

লুকিয়ে দেখেছি

  আলোর ব্যক্তিগত পাখি

                        মুক্তিগত ওড়া শিখে নিয়েছিলো…

৩।

পৃথিবীর সমস্ত খণ্ডিত ও পূর্ণ জানোয়ারের প্রতি প্রণাম জানাই

বর্গমূলের মানুষ মিক্ষিত খিঁও

আমাকে শেখায় ক্ষমার গাছ হতে

ওই যে 'শ' তার বাঁট ধ'রে চুষতে গেলে

অতল হারামি হতে হয়

গাছের ক্ষমা হতে পৃথিবীর এক কোণে যাও

মহাকাশ থেকে পেড়ে আনা ছেদ ও যতি

আমাদের ধন্য ধন্য ফাঁকটুকু দিও

আমরা জানোয়ার হবো....

৪।

একটা দুর্ধর্ষ মাইলে যাবো মালখানেক যাবোইগো 

এলোদাদা মেলোদিদির এই বসন্তে

মোমলাইন ঢালা হোলো

গানের জন্য দিও গণপাখির তন্দ্রাহত তারা

সেতারা দুইতে দুইতে একবালতি হ'লে

পৌঁছে যাও নাবালিকার বালকঘন তারায়

লিঙ্গত্বকে যত হাসি আজ মহাজন

তাদের তারাপথ

পিছলে গ্যালো মহা গ্যালোপিং

পাখিও গ্যালো

লিখে রাখো আমাদের একটাই গ্যালারি

মোমেনশাহী মোমেনশাহী। 




পৃথিবীস্কোপ 


বৃক্ষঢঙে পৃথিবীস্কোপে হাহা হিললহিলে হেমন্তশব্দের কোণে

ম্রিয়জল মৃৎমুখে কাঁচা পরমায়ু। 

এসো জিন্দাবাদ ছিঁড়ে হেমন্ত শব্দের কোণে বাড়ি বানাই

যেখানে কোমর পর্যন্ত শিতল ও উষ্ণ খোলামেলা, 

যেখানে তিনপুরে চারপুরে হনন্ত অনন্ত শুদ্ধ মনের বোলতা কে?

রেটিনায় যুদ্ধ মানুষের উচ্চ আলোর খাঁ খাঁ

এই পর্যন্ত দোলন থামলে বোলো

ভালোবাসার পকেটে বানানো বাড়ি ,আদরের টেবিল,

শোনো ম্যাপের গোড়ায় জল দিলে আরেকটা দেশ পাবে

পৃথিবীস্কোপ ছাড়িয়ে যাও যদি

দেখতে পাবে পাকা পরমায়ু ও আনন্দগাছ

আরেকটু গোড়ায় গেলে একটাই মানুষ পাবে

যার ব্রহ্মনামে লেগে আছে আদিম ব্রণ ও লিকলিকে হেমন্ত-শব্দের ভোর…

18 comments:

  1. মোমেনশাহী বা ময়মনসিংহ গীতিকা নিয়ে সেখানকার গরীবগুরবো সাধারণ জনগণ সম্পর্কে কবির অনুভূতি সেই লোকের বিষাদের। এখানকার দেশবিভাগের ক্ষত কোনো দিন ফুরাবে না। জানোয়ার নামে বিশেষিত মানুষদের প্রতি কবির দরদ বোঝা যায়। আর মনে পড়িয়ে দেন 'ধন্য ধন্য বলি তারে' গানটির কথা ও সুর। হয়তো সাহিত্যের ইতিহাসে উপেক্ষিত জীবন ও লোকগীতি কবির কলমের আদর চাইছে। কবি জানিয়ে দিচ্ছেন 'লিকলিকে হেমন্ত শব্দের সন্ধান'। পৃথিবীস্কোপ ছাড়িয়ে যাবার আকুলতাজাগে একমাত্র মুক্তমনাদের মনে -- আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে... অনন্তের মাঝে..
    রয়েছে খুব সুন্দর শব্দের কারসাজি ১. সেতারা দুইতে দুইতে এক বালতি হলে ২. ম্যাপের গোড়ায় জল দিলে আরেকটা দেশ পাবে

    ReplyDelete
  2. দুটোই খুব ভাল।
    তোমার একটু নরম ও বেশি মরম সুরের
    কবিতা।রিদম আগের মতই প্রাণ খোলা।
    চমৎকার

    ReplyDelete
  3. আমি ময়মনসিংগা, মোমেনশাহী নামটা স্বভাবতই খুব ক্যাচি আমার কাছে। দ্বিতীয় কবিতাটি সাংঘাতিক লাগলো। ব্লগ এর রিডিং এক্সপিরিয়েন্স নিয়ে দুটো কথা বলি দাদা, ব্যাকগ্রাউন্ড আর টেক্সট ফরম্যাটের জন্য মোবাইলে খুব স্মুদলি পড়া যাচ্ছে না। বিষয়টা একটু বিবেচনা করবেন। ভালো থাকবেন সব্য দা❤️।

    ReplyDelete
  4. শব্দ নিয়ে এই খেলা এই খেয়াল রাগ যেনো মোহময়,"শোনো ম্যাপের গোড়ায় জল দিলে আরেকটা দেশ পাবে " কি গভীর সুররিয়াল উচ্চারণ 🌸

    ReplyDelete
  5. পড়লাম। রেখে দিলাম। আবার পড়ব।

    ReplyDelete
  6. আরেকটু গোড়ায় গেলে একটাই মানুষ পাবে- দারুণ লাগল

    ReplyDelete
  7. পৃথিবীস্কোপ আমার এই বছরে দেখা সবচেয়ে সেরা কবিতা
    ভৌগোলিক প্রাচুর্য থেকে হিউমার পর্যন্ত এখানে ঠাই পেয়েছে আমার মতে।আমি খুব কম মানুষকে হেমন্তের আসল রূপ পরিবেশন করতে দেখেছি।
    সব্যদা আজকে আরেকজন হলেন।

    ReplyDelete
  8. এক-একটি কবিতা এক-একরকমের, বিষয়ে ও আঙ্গিকে। প্রতিটি কবিতার বিষয় নির্বাচন থেকে উপস্থাপন পর্যন্ত মুন্সিয়ানার ছাপ স্পষ্ট।
    অভিনন্দন, প্রিয় কবি।

    ReplyDelete
  9. প্রতিটি লাইন নিয়ে এক ঘন্টার আলোচনা করা যায় | প্রতিটি কবিতায় তোমার নতুন বাঁক বদল , অভিনবত্ব , ভৌগোলিক উৎসার , নৈসর্গিক মানুষের অতলসম্পর্কের বৈশ্বিক অভিনিবেশ , লালনশাহী ও ময়মংসিংহগীতিকার সমূহ বিষাদ এতো নানাবিধ রিকিকতায় এসেছে যে ডিটেইল জানাবো কোনোদিন মুখোমুখি হয়ে | অনবদ্য লেখা | আমার ভালোবাসা যেন

    ReplyDelete
  10. ১.গাছের ক্ষমা হতে পৃথিবীর এক কোণে যাও
    ২.লিখে রাখো আমাদের একটাই গ্যালারি মোমেনশাহী মোমেনশাহী।
    ৩.শোনো ম্যাপের গোড়ায় জল দিলে আরেকটা দেশ পাবে।
    ৪.আরেকটু গোড়ায় গেলে একটাই মানুষ পাবে

    দুটো কবিতার এই চুম্বক পঙক্তিগুলো এখানে তুলে ধরে বলতে চাই... এ তোমার পক্ষেই কেবল লেখা সম্ভব! কুর্নিশ। ভালোবাসা জানালাম সব্য'দা।

    ReplyDelete
  11. বেশ লাগল।একটি জায়গার ফলিত গ্র‍্যাফিক্স যেন,সময় আর অভিজ্ঞতার সম্মেলনে।চলতে থাকুক। স্বপন রায়

    ReplyDelete
  12. মন দিয়ে কবিতার ভিতরে প্রবেশ করতে গেলে অনেক দরজায় চুপ হতে হয় পরবর্তী দরজার প্যাঁচের স্বাদ নিতে... এই গ্রন্থিত চুপ কবিতা হয়ে টিপটপ মোশনে চালিত করে নিরন্তর স্মার্ট আকাশের দিকে ...দারুণ লেখনী হে!

    ReplyDelete
  13. মোমেনশাহী থেকে পৃথিবীস্কোপ
    খুব ভালো লাগলো এই নান্দনিক কাব্যিক ভ্রমণ
    বহুমাত্রিক স্বাদ ও নির্জাসে,❤️

    ReplyDelete
  14. কী যে হচ্ছে!
    পোস্টও করলাম। কেন যে এমন হচ্ছে!

    এই কবিতাগুচ্ছে তুমি আরও সম্প্রসারিত। তোমার লেখার জগৎ ও নির্মাণসৌকর্যের ভেতরে এখানে দেশপৃথিবীইহজগতের ব্রণ ও বিষমকে
    কণার ঝাঁপানে উদব্যাস্ত করেছ। পল্লিসঙ্গীতের আর্তি ও মর্মর এসে লেগেছে নতুন আবহে। হয়ে উঠেছে আরও অনাস্বাদিত। প্রলম্বিত। মূর্ছনাবিভোর। মথিত হলাম। - সমীরণ ঘোষ

    ReplyDelete
  15. অনেক অন্যরকম বিশেষ করে শব্দ ও বাক্য বানানোর ঝোঁক যেদিকে বাঁক নিয়েছে সেখানে কবির নিজস্ব ঘরাণার ঘরবাড়ি। আরো লেখা হোক এই উপলব্ধি অনেকেই ভিতরে ভিতরে ভাববে, যেমন আমিও

    ReplyDelete
  16. পড়লাম; আধুনিক কবিতার ঋজুতা এবং দুর্বোধ্যতা প্রতিটি কবিতায় রয়েছে। বহুমাত্রিক ব্যাঞ্জনাময় শ্বদের গাথুনিতে বিভন্ন বিষয়বস্তু জড়িয়ে নিয়েছে কবিতার চরণগুলি। আল্টা মর্ডান এর চলন। গভীর এর ব্যাপ্তিতা।

    ভালো লেগেছে কবি। সময় এই লেখার মূল্যাযন করবে নিশ্চয়।

    ReplyDelete
  17. তোমার কবিতার যাত্রাপথে এত কিছু ছড়িয়ে থাকে যা আবিষ্কার করা ইটসেল্ফ এনজয়মেন্ট। যেমন প্রথম কবিতার অ্যালিটারেশনের যে ভাব বা বিপুলতার যে রিনরিন শব্দ তা মহা সমাহার।

    ReplyDelete
  18. কী বলব বা কী বলা উচিত জানি না সব্য। কবিতাপাঠ তো নয়, যেন এক অভিজ্ঞতা। শব্দবয়নের জাদু দেখে যাওয়া। ভাবনা আঁকার মুগ্ধতা নিয়ে চুপ করে বসে থাকা। দারুণ।

    ReplyDelete