Tuesday, August 3, 2021

 অনালোচিত ছড়াশিল্পী ধরণিকান্ত বিশ্বাস (জন্ম: ১৫ মার্চ ১৯৫৩) - এঁর  মুখোমুখি সাংবাদিক শুভদীপ রায়। 


(অকপট স্বীকারোক্তি এবং একান্ত ভালোলাগা ও মন্দলাগা অনুভূতি ব্যক্ত করলেন সরল উচ্চারণে!)




¶¶ প্রথমেই যেটা জানতে চাইছি , সে বিষয়টি হল -  আপনার লেখালেখির শুরুকাল সম্পর্কে। কীভাবে যাত্রা শুরু হোলো এই সাহিত্য সৃজনের ?


∆∆ লেখালেখিটা শুরু হলো যখন, তখন ঠিক কোন গুরু ধরে হয়নি, কারো কাছে শিখতেও যাইনি কখনো ! ছোটবেলায় ছেলেপুলেরা মিলে মাঠে গিয়ে যখন খেলাধুলা করতাম, হাসি-ঠাট্টা করতাম, তখন আমি গামছা কোমরে টাইট করে রামায়ণ গান গাইতাম, মানে নিজে ছন্দ মিলিয়ে মিলিয়ে ইচ্ছেমত অনুশীলন করতাম। এটা থেকে আমার একটু ছন্দবোধ আসা আরম্ভ হলো, তারপর দিন এগিয়ে গেল, পরবর্তীতে স্কুলজীবনে যতদূর গেছি, সেই শিক্ষা দিয়েই লেখালেখি শুরু করলাম, প্রথমে সিন্দ্রাণী আঞ্চলিক যুব সংস্থায় লেখা পাঠাই, তখন লেখাটা মনোনীত হয়নি, তারপর আমি প্রায় দশ বছর লেখালেখি করিনি, ভাবলাম, এগুলি আমার দ্বারা সম্ভব নয়, এটা আর হবে না!


¶¶আচ্ছা, কত সাল নাগাদ ঘটেছিল ঘটনাটি ?


∆∆ যতদূর মনে পড়ছে, আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে।


¶¶ প্রথম লেখালিখি শুরু করার পর প্রায় দশ বছর পর্যন্ত আপনি লেখালেখি প্রকাশ্যে আনেননি, তারপরে আবার লেখা প্রকাশের তাগিদ পেলেন কীভাবে ?


∆∆ চারিপাশে লেখালেখি হয় শুনি। একটু আধটু স্কুলে লেখা চাইতো, আরেকটু প্রেরণা পেলাম আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ পূর্বাশা প্রকাশের পর। প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পূর্বে একটি কবিতা লিখেছিলাম, কবিতাটি বন্যা সংক্রান্ত, একটি অনুষ্ঠানে সেই 'বন্যা' শিরোনামের কবিতাটি পাঠ করি এবং বিপুলভাবে সাড়া পাই । মানুষের করতালিতে উৎসাহ আরো বাড়তে থাকে। সেখান থেকে আমার মনে হল যে আমি লিখতে পারবো। তারপর স্থানীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগতে নতুন আলো নিয়ে এলো চরমণ্ডল 'শ্বাদল' সাংস্কৃতিক চক্র। সেখান থেকে শুরু আর এক  পথ চলা।


¶¶ আচ্ছা, এই যে শাদ্বল সাংস্কৃতিক চক্র সংস্থাটির নাম ব্যবহার করছেন, সে বিষয়ে কিছু বলুন--


∆∆ কয়েকটি যুবক ছেলে বিশেষ করে, কার্তিক, গোলক, পবিত্র আরো অনেকেই একদিন বিকেলবেলা মাঠে বসে কথাবার্তা বলছিল , বিকেলেই আমার আবার মাঠে হাঁটার অভ্যাস ছিল, সবুজ ক্ষেত বা ক্ষেতের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া পথে হাঁটতে বেশ ভালো লাগে এখনও, এছাড়াও আমার চিরকালের অভ্যাস যেখানেই মানুষেরা ভালো আলোচনা করছে দেখতাম বা বিশেষ গঠনমূলক কিছু করতে দেখতাম সেখানে তারা না বললেও অংশগ্রহণ করতাম। কেন জানি ওদের বিষয়টি বিশেষ ভাল লাগতো । সেদিন বিকেল বেলায় ওদের সঙ্গে বসে পড়েছিলাম মুহূর্ত ভাগ করবো বলে। তখন ওদের মধ্যে থেকেই প্রস্তাব এলো , একটা সাংস্কৃতিক সংস্থা করার । তখন নামকরণ করার কথাটি ওরা প্রস্তাব করতে বললো আমাকে । আমার উপর এই ভার অর্পণ  সকলেই আস্থা প্রকাশ করলো । বাড়িতে ফিরে মাথায় এলো -

সেদিনের ঘাসের উপর বসে থাকার কথা। মাথার মধ্যে ভাবনা আর অর্থবহ নামের সন্ধানে ডিকশনারিতে খোঁজ করার চেষ্টা করলাম, তারপর খুঁজতে খুঁজতে দেখি (শাদ্বল) মানে কচি ঘাস, যেহেতু কচি ঘাসের উপর বসেই ওরা প্রস্তাব করেছিল, তাই আমিও নামকরণ ঠিক করলাম 'শাদ্বল'। এবং ওদের কাছে এসে নামটি আমি উপস্থাপন করলাম। ওরাও সেদিন  সাদরে গ্রহণ করল নামটি। তারপর থেকেই সংস্থাটির নাম হল 'শাদ্বল'। তখন ১৯৯৬ সাল।



¶¶ সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এবং আপনার সাহিত্য জীবন যে এই সংস্থার দ্বারা প্রাণিত সেটি বোঝা গেলো, তবে আপনার জানা মতে 'শাদ্বল' সংস্থাটির প্রথম উদ্দেশ্য কী ছিল ? কী ধরনের কাজ করবে বলে ঠিক করেছিল তখন ?


∆∆ মানুষের জন্য সামাজিক সেবামূলক কাজ এবং সুস্থ চেতনার বিকাশ , মার্জিত সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল তৈরিতে এগিয়ে চলাই ছিল প্রথম দিকের উদ্যোগ। আমিও সঙ্গী ছিলাম সেইসময় থেকে।


¶¶  তখন কি শ্বাদল থেকে বিশেষ কোনো পত্র-পত্রিকা বের হতো ?


∆∆ না, প্রথমদিকে পত্র-পত্রিকা বা লিটলম্যাগ করার কথা ভাবা হয়ে ওঠেনি । তারপরে পত্র-পত্রিকা করার তাগিদ অনুভব করার ফলে 'শ্বাদল’ শিরোনামেই পত্রিকার সূচনা হয়।


¶¶ আপনার দেওয়া নামকরণে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি এলাকার জন্য কতটা সামাজিক দায়বদ্ধতায় গুরুত্ব বহন করে চলেছে বা সেই সময় থেকে বর্তমানে কীভাবে মানুষের মনে ছাপ ফেলেছিল বলে আপনি মনে করেন?


∆∆ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে গিয়ে বুঝেছি, তখন রাজনৈতিকভাবে বিশেষ বাধার সম্মুখীন হতে হয় সংস্থাটিকে, যার ফলে সেই সময়ে অনুষ্ঠানে ব্যাঘাত ঘটে, এমনভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে যে শাদ্বলের উপর সেই চাপ বেশ প্রতিবন্ধকতার ছিল, তা সত্ত্বেও আমরা উক্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সেই চেষ্টা করেছি । তখনকার বিশেষ কার্যক্রমের মধ্যে ছিল বিশিষ্ট নাট্যকার এবং অভিনেতা মনোজ মিত্র মহাশয়ের আগমন । লোকসংস্কৃতির দিকটাও  বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে মানুষের মধ্যে সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা  করা হচ্ছিল । এবং তার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে এলাকার মানুষের কাছে বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায় ‘শাদ্বল’ আয়োজিত লালন বিজয়-সঙ্গীত মেলা । এলাকায় সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল নির্মাণে ‘শ্বাদল’ বিশেষভাবে এগিয়ে আসে, উঠে আসে খুব কঠিন অবস্থা থেকে এবং একটা স্বাবলম্বী অবস্থান পায়। মাঝে বেশ কয়েকবছর সংস্থাটির কার্যক্রম ধীর গতির থাকলেও বর্তমানে নানা ধরনের সমাজ সচেতনতা মূলক কাজ করে চলেছে তারা। যেমন - রক্তদান, বৃক্ষরোপণ, খেলাধুলা, যোগের মাধ্যমে শরীর ভালো রাখার উপায় ইত্যাদি



¶¶ আপনি সাহিত্য চর্চার মধ্যে ছড়া চর্চাই বিশেষভাবে করে থাকেন, আচ্ছা আপনার নিকট জানতে চাইছি,  ছড়া শিল্পটি সাহিত্যাঙ্গনে অনেক রকমভাবে অবহেলার শিকার হয়, তাহলে কি ছড়াচর্চা একটি সরল ও সহজলভ্য বিষয়? নাকি ছড়া শিল্পেরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলে আপনি মনে করেন!


∆∆ না! ছড়া শুধুমাত্র শিশুদের জন্যই নয়, যেমন আমি আমার ছড়ার মধ্যে এমন একটি  ভাব ফুটিয়ে তুলতে চাই  , এমন বার্তা দিতে চাই যে সেটি সামাজিক ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বহন করুক, ছড়া মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে সহযোগিতা করে। ছড়ার বার্তাবহুল দিক, যেমন - প্রাকৃতিক বিবরণ ও সতর্ক - সচেতনতা এবং সামাজিক বার্তা দেওয়া। নানা ক্ষেত্রে সামাজিক বার্তা এবং প্রকৃতিকে নিয়ে লেখার বিষয়টি বেশ গুরুত্বের । অবহেলিত মানুষকে নিয়েও যে ছড়া লেখা যেতে পারে সেটা আমার কিছু লেখা পড়লে বোঝা যাবে। প্রথমে আমি কবিতাই লিখতাম, কিন্তু আমার এক মাস্টারমশাই আছেন অভিজিত সৎপতি বাবু , তিনি এখন চাকরি সূত্রে বাঁকুড়া থাকেন। তিনি জানিয়েছিলেন যে, আমি যেন ছড়াটাই বিশেষ চর্চা করি, কারণ- ছড়ার মধ্যেই নাকি আমার সাহিত্যগুণ বিশেষভাবে সাবলীল । এটাই তিনি পরিলক্ষিত করেছেন বলে জানিয়েছিলেন।


¶¶ এবার আসি একটু অন্য প্রসঙ্গে, আপনার লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ যখন প্রকাশিত হয় তখন মানুষের কেমন প্রতিক্রিয়া ছিল ? এই কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হতে যে ধরনের ভাবনার ভেতর দিয়ে এবং কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এগিয়ে ছিলেন সেই সময়ের অনুভূতি সম্পর্কে যদি কিছু বলেন--


∆∆ আমি 'শাদ্বল' উৎসবে যে লেখাটি পাঠ করেছিলাম, লেখাটি শুনে উপস্থিত জনগণ এটা বাস্তবমুখী লেখা হিসেবে বেশ কদর করেছিলেন, সময়টা যথাসম্ভব ২০০০ সালের বন্যার পরবর্তী সময়ে এবং কবিতাটির শিরোনাম ছিল 'বন্যা'। বন্যা কবিতাটি মানুষকে বেশ খানিকটা অন্যরকম বার্তা দিতে সক্ষম হয়। মানুষের কীরকম দুরাবস্থা  হয়েছিল তখন, মানুষ কীভাবে বেঁচেবর্তে ছিল বন্যার সময় সেই প্রেক্ষিতেই লেখা। মানুষের দু্র্দশার কথা লেখার ফলে, যেহেতু প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল তারা, তাই এই কবিতাটিকে বিশেষভাবে গ্রহণ করেছিল সেসময় । তারপর থেকে আমার মনে হলো  লেখাটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার, মানুষের একান্ত কথা বলবার দরকার আছে। এবং পরবর্তী সময়ে যতগুলো লেখা লিখেছিলাম সেগুলোর সম্মিলিত প্রয়াসই 'পূর্বাশা' কাব্যগ্রন্থ।


 পূর্বাশা কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর মনে হলো যে, লেখালিখিটা সাধারণ  মানুষের জীবনের জন্য আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে। এবং এই সাড়া পেয়ে আমি আরো লেখালেখির দিকে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ হই।


যদিও ইদানিং আমার শারীরিক এবং মানসিক কারণে দীর্ঘসময় পড়াশোনা করতে পারিনা। বেশি সময় ভাবতে গেলেই মস্তিষ্কের উপর চাপ সৃষ্টি হয় তা সত্ত্বেও লিখতে ইচ্ছা করে।


¶¶ ছড়াকেই আপনি প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছেন, ঠিক আপনি কোন বিষয় থেকে প্রাণিত হলেন ছড়াকে প্রতিবাদের হাতিয়ার করার বা কোন বিশেষ মানুষ থেকে লেখা লিখির সদিচ্ছা হলো বলে আপনি মনে করেন!


∆∆ আসলে ছড়ার মাধ্যমেই সমাজ চেতনা, দেশকাল, কাঁটাতার সবকিছুকে যে খুব সহজভাবে বলে দেওয়া যায় এবং সেই সহজ কথাটি বলতে গেলে যতটা ভাবতে হয় ভাবনাকে যতটা সরলীকরণ করতে হয় সেটা তো কঠিন আর এই কাজটি বুঝতে গিয়ে আমি অবশ্যই করে স্বীকার করব যে আমাকে অন্নদাশঙ্কর রায় বিশেষভাবে উৎসাহ যুগিয়েছেন তাঁর লেখার মাধ্যমে, অর্থাৎ আমরা সবাই জানি - 

( তেলের শিশি ভাঙলো বলে

খুকুর পরে রাগ করো

তোমরা যে সব বুড়ো খোকা

ভারত ভেঙে ভাগ করো !

তার বেলা?


ভাঙছঝ প্রদেশ ভাঙছো জেলা

জমিজমা ঘরবাড়ি

পাটের আড়ৎ ধানের গোলা

কারখানা আর রেলগাড়ী ! 

তার বেলা ? 

-- অন্নদাশঙ্কর রায় )


 কখনও সহজ করে বলতে বলতে যেন একটি খুব প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন তুলে দেওয়া, অর্থাৎ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যে আমাদের মজ্জাগত কোথায় ত্রুটি তৈরি হচ্ছে!


প্রসঙ্গক্রমে আমার একটি লেখা বলছি -


( তো তো করে পারবো না 

ইংরেজিতে হ্যাংলাতে,/

কথা যদি বলতেই হয় 

বলবো আমি বাংলাতে।/


ঐ দেখো না ছোট্ট  খোকার 

মাথায় কেমন চাপান দেয় /


ইংরেজি আর হিন্দি দিয়ে 

পাঠায় তাকে পাঠশালায় / 


ভুলিয়ে মা বোল, মাম্মি শেখায় গর্বেতে /


পাইনা ভেবে শেখায় তারা কোন্ খেয়ালে; যুক্তিতে /


মনের ভাষা যায় না কওয়া অন্য ভাষায় মন খুলে 

 কেউ কি ওঠে অন্যকাঁধে, নিজের মায়ের কোল ভুলে,


পন করেছি মাতৃভাষার মাল্যখানি খুলবো না,/

ঝাপটা ঝড়ে ভাঙুক মাথা তবুও মা-বোল ছাড়বো না! )


¶¶ আচ্ছা আপনাকে জানতে চাইছি - এই সমগ্র লেখালিখি জীবনে এমন কোন না বলা কথা থেকে গেল কি যেটি ভাবতে গেলেই খুব পীড়া দেয়?


এখন প্রায় লেখালেখি বন্ধের মুখে সে ক্ষেত্রে কিছু জিনিস মোচড় দিলেও, আমি আর পেরে উঠি না, শারীরিক কারণে, 


জীবনে কি এমন কিছু অধরা থেকে গেলো, যেটা নিয়ে আফসোস হয়? মনে হয় কি  এমন কোন জিনিস করে ওঠা হলো না?


∆∆ আফসোস একটাই... ইদানিং আমি দীর্ঘ সময় পড়তে পারিনা নার্ভের অসুবিধার জন্য, আফসোসটা এখানেই আমি যদি প্রচুর বই পড়তে পারতাম তাহলে হয়তো আরো ভালো লাগতো। এই আফসোসটা আমার থেকেই গেল, হয়তো আগামীতেও থেকে যাবে!


¶¶ আপনিতো ছড়াচর্চার পাশাপাশি নাটক এবং গল্পও লিখেছেন। এছাড়াও কবিতা চর্চা করছেন নিয়মিত এবং লেখাগুলি বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে নানা সময়ে। অনেকেই সে বিষয়ে জানেন না, শুধুই জানেন আপনি ছড়া লেখেন, আপনি যে ডাইমেনশনে গল্প লেখেন সেটা গতানুগতিক ধারার একটু বাইরে, এটাকে একটু খোলসা করে বলবেন ! গল্পে সব সময় চমক থাকতেই হবে , এটা কি বাধ্যতামূলক বা গল্প বিষয়টার কিভাবে পরিস্ফুটন হওয়া দরকার বলে আপনার মনে হয়!


∆∆ আমার সব গল্পগুলো পড়লে দেখবে, খুব চমকপ্রদ মেসেজ আছে এমন নয়। তবে কিছু গল্প আছে রসাত্মক, কিছু আছে ব্যঙ্গাত্মক সেগুলো যখন পড়বে কেউ তখন বুঝতে পারবে যে লেখার মধ্যে হয়তো এভাবেও শেষ করা যেতে পারে বা এভাবেও ভাবা যেতে পারে, যেমন আমার একটি গল্পের নাম 'বাদামের খোলা' জানি না কেউ ঐভাবে ভেবেছেন কিনা! বাংলা সাহিত্যে বাদামের খোলা  এবং 'প্রত্যাশা' ছোটগল্প  জীবনকে যে আলাদা ইঙ্গিত দিতে পারে, সাধারণ সাদামাটা জীবনেও এবং তাতে দেখা যাবে জীবনের সঙ্গে বাস্তবের সহজ সাযুজ্য ও ব্যঙ্গের জায়গা।


¶¶ আচ্ছা, আপনার এই লেখক জীবনে আপনি কি  বিশেষ কোনো সাহায্য পেয়েছেন - পারিবারিক পরিমণ্ডল বা সামাজিক পরিসর থেকে ? আলাদাভাবে কোনো মানসিক সাপোর্ট সেভাবে কি আপনাকে সহযোগীতা করেছে?


∆∆ আসলে পরিবার থেকে যে খুব বেশি উৎসাহ পেয়েছি, তা নয়! সেভাবে উদ্দিষ্ট করবার মতো কিছু আমার মনে হয় না। তারা আমাকে যেমন বাধা দেয়নি, অন্যদিকে আমার লেখার ক্ষেত্রে খুব বেশি এগিয়ে দিয়েছে যে সেরকম কিছুও উল্লেখ করার মত নেই! তাদের কাছে এই বিষয়টি অতটা গুরুত্ব হয়তো ছিল না। আমার বড়দা শ্রীমধুসূদন বিশ্বাস, উনি নিয়মিত লেখালেখি করেন সে অর্থে উনি এই বিষয়ে অনেক এগিয়ে, লেখা নিয়ে যে মাঝে মাঝে দু-একবার কথা বলেননি তা নয় তবে লেখালেখি বন্ধ হয়ে যাক এ ব্যাপারেও কখনো আমাকে নিরুৎসাহিত করেননি। বরং লেখালিখিটা এগিয়ে নিয়ে যায় সে বিষয়েও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আর পরিবারের একান্ত দিক দিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় সেই অর্থে আমার স্ত্রী বাধার সৃষ্টি করেনি আর এই বিষয়ে আলাদা ভাবে কোনও তাগিদই তাদের কাছে বিষয়টা খুব সাধারণ বলেই মনে হচ্ছে ইদানিং।


¶¶ বাইরে থেকে যারা আপনার লেখালিখি জীবনে বিশেষ উৎসাহ যুগিয়েছে তাদের কথা মনে পড়ে কি?


∆∆ যারা বাইরে থেকে আমাকে উৎসাহ দিয়েছে তাদের মধ্যে আমি কয়েকজনের নাম নিতে পারি, তারা হলেন কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাস ( তবলা শিল্পী ) গোলক চন্দ্র বিশ্বাস ( শাদ্বল সংস্থাটির সম্পাদক),  শুভদীপ রায় ( কবি ও সাংবাদিক ) এবং পরবর্তীতে কৃষ্ণ রায় ( শিক্ষক ) এছাড়াও আমার শেষ বইটি করার জন্য সহযোগীতা করেছিল কবি সৌরজিৎ দাস।


¶¶ এবার চলে আসি অন্য একটি প্রসঙ্গে,


আপনি লিখেছিলেন,


(মানুষের ফোঁটা ফোঁটা রক্তজল /

মণিমুক্তা খচিত প্রেমের সৌধ স্থল /

তোমার কীর্তি সম্রাট মমতাজপতি/

যাদের সম্পদে হলে ভাগ্যবান /

কুড়ালে জগতব্যাপী আত্মসম্মান /

তারা সবে প্রাণ দিয়ে গড়ে ভালোবাসা তুমি করো পর ধনে রঙ্গতামাশা /

ওইযে কুটিরে দেখ আছে দুইজনে, প্রেমের স্বপ্ন চোখে অতিসংগোপনে।/

রাত্রি প্রভাত হলে কাস্তে হাতে নেয় /

 দিবস বিকেল হলে দেয় দুটো পাতে /

 তাকে ধন্য বলি নয়তো যে ঋণী, /

 এ'মাটিতে থাকে যার আত্মজীবনী /

প্রণাম করি তাকে আমি, করি সম্মান, /

সে নমস্য যোগ্য, তুমি নও শাহজাহান। )


 আপনার কাছে জানতে চাইছি, ছড়াকার ধরণিকান্ত বিশ্বাস এঁর এই কবিতাটি লেখার পরে বেশ বিতর্ক এসেছিল, এই লেখাটির জন্য আপনার ভাবনা কেন এরকম সক্রিয় হলো?


কেন শাহাজানকে আপনি ঐরূপে দেখিয়েছেন বা সম্রাট শাহজাহানকে আপনি যেভাবে উপস্থাপন করেছেন এই ভাবনাটা আপনার কেন এলো!?


∆∆ আমার মনের মধ্যে চিরকালই সাম্যবাদের ভাবনা কাজ করে, আমি প্রায়ই ছড়া এবং গল্পের মধ্যে লক্ষ্য করবে মানুষের জয়গান গাওয়ার চেষ্টা করেছি, কৃষকের কথা, সাধারণ মানুষের কথা, শ্রমিকের কথা, খেটে খাওয়া মানুষের ঘামের কথা, সাধারণ মানুষের চেতনা জাগ্রত হওয়ার কথা, সমস্ত লেখার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান জুড়ে আছে। এই লেখাটির কারণে সম্রাট শাহজাহানকে এভাবে হয়তো কোন কেউ উদ্দিষ্ট করেননি, শাহজাহানকে এভাবে দেখাতে চেয়েছি কারণ, শাহজাহান তো বিলাসিতায় জীবন কাটিয়েছেন, মানুষের প্রতি অত্যাচার শ্রমিকদের দিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম করিয়ে নেওয়া, নিংড়ে নিংড়ে মানুষের সমস্ত পরিশ্রমের মূল্য কুক্ষিগত করে রাখা, মূলত মানুষের সম্পদ নিয়ে নিজেদের আড়ম্ভরপূর্ণ  সৌখিনতায় নিজেদের ব্যস্ত রেখেছিলেন, যা মোগল আমল ধ্বংসের অন্যতম কারণ ।  অত্যধিক বিলাস-ব্যসনে থাকায়  পত্নী মমতাজ এঁর প্রেমগাথা আসলে তাজমহলের স্মৃতিসৌধের নিচেই চাপা পড়ে গিয়েছিল। মমতাজের কান্না এবং হাজার হাজার শ্রমিকের ঘামের তৈরি তাজমহল স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্যের নেপথ্যের এটাই প্রকৃত গল্প।


¶¶ এই যে আপনার সমস্ত লেখালিখি জীবন আপনি অতিবাহিত করলেন সেখানে আপনার অনেক ভালোলাগা লেখক নিশ্চয়ই আছে তাদের মধ্যে কোন লেখকদের লেখা আপনাকে বিশেষভাবে আন্দোলিত করে?


∆∆ ছোটবেলা থেকে তো খুব অভাব এর মধ্যে জীবন কেটেছে দারিদ্র্যের সঙ্গে, লড়াই করতে হয়েছে বিশেষভাবে অনেক বইপত্র কিনে উঠতে পারিনি তার মধ্যে যাদের লেখা পড়বার সুযোগ হয়েছে এবং যাদের লেখা বিশেষভাবে আমাকে টানতো, যেমন-- সুকান্ত ভট্টাচার্য, অন্নদাশঙ্কর রায়, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এছাড়াও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস, বিভূতিভূষণের লেখা আমাকে বিশেষভাবে নাড়া দিত, এখনো দেয়।


¶¶ নতুনদের লেখা পড়েন কি ? তাদের মধ্যে কি সম্ভাবনার আলো দেখতে পান বিশেষভাবে?


∆∆ প্রথমত আমি স্বীকার করছি  আমাদের শারীরিক অসুস্থতার রয়েছে তার জন্য আমি দীর্ঘস্থায়ী সেভাবে কোন লেখা পড়তে পারি না ইদানিং। তবে হ্যাঁ তার মধ্যে তরুণদের অনেকেরই লেখা আমি দেখি।  তাদের লেখার ওপর নজর রাখা দরকার বলে মনে করি। তাদের মধ্যে সদ্য দেখলাম আমার স্থানীয় লেখকদের মধ্যে যাদের কথা মনে না করলেই নয়


যেমন শুভদীপ অর্থাৎ তোমার কথাই আমি উল্লেখ করছি তোমার লেখা আমাকে বিশ্বাস প্রাণ দেয়, এছাড়াও কয়েকদিন আগেই তরুণ কবি কৃষ্ণ রায় আমায় কয়েকটি লেখা শোনালো সেগুলো যথেষ্ট সম্ভাবনাময় লাগলো, আরও রয়েছে যেমন কবি শুভঙ্কর সাহা, সজল হালদার আরও অনেকেই।


¶¶ জীবনে এমন কোন দুঃখ থেকে গেল কি, যা ভাবতে গেলে ভীষণ কষ্ট দেয়, যন্ত্রণা হয় আপনার ?


∆∆ না। পেছনে ফেলা দুঃখগুলো আমার বরং আনন্দেরই ছিল! কিন্তু বর্তমানে আমার দুঃখের মধ্যে জীবন অতিবাহিত হচ্ছে...! ( কিছুক্ষণ নিরব থাকলেন )


¶¶ আপনার কি মনে হয়, সৃজন ক্ষেত্রে সেভাবে আপনাকে মূল্যায়ন করা হলো না?


∆∆ স্থানীয় লোকের নিকট থেকে অনেক সাড়াও পেয়েছি, তবে সেইভাবে পৌঁছাতে পারিনি সকলের নিকট।  ভাবতে গেলে পরেই মনে হয় কত মানুষের কাছে পৌঁছানো বাকি থেকে গেল ! আমিও যেহেতু শারীরিক কারণে কোন জায়গায় সেভাবে যেতে পারি না তাই কাউকে দোষারোপ করার মত আমার কোনো রকম খারাপ ইচ্ছা নেই!

আদান প্রদানের মাধ্যমে বেড়ে ওঠে বড় সৃজন জগত, সেটি আমার হয়তো করে ওঠা হয়নি নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে তাই এটার জন্য আমি কাউকে দোষারোপ করি না। আমার নিজেরই ঘাটতি বলা যেতে পারে।


¶¶ পুরস্কার ও সম্মাননা এগুলো কি আশা করেছেন কখনো ?  পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য ভালোলাগাটা বৃদ্ধি হবে, লেখালিখিটা আরও বেশি উৎসাহ পাবে এরকম কিছু কি মনে করেন?


∆∆ আমি সেভাবে বেশি আশা করি না কারণ, আমি একজন খুবই ক্ষুদ্র লেখক ....


¶¶ নতুন যারা ছড়া লিখতে আসবে তাদের প্রতি কি বার্তা দেবেন? লিখতে গেলে তাদের কতখানি সতর্কতা এবং সক্রিয় হতে হবে সেই বিষয়ে দু'চারটি কথা বলুন ?


নতুন যারা লিখছে বা লিখতে আসবে আগামীতে তাদের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, সমাজ প্রকৃতি এগুলোর মধ্যেই লেখালেখির উপাদান লুকিয়ে রয়েছে এগুলোর ভেতর থেকেও কিন্তু অনেক ভালো ভালো লেখা উঠে আসতে পারে তার পাশাপাশি তাকে প্রচুর লেখালেখি সম্বন্ধে জানার এবং পড়ার আগ্রহ থাকা দরকার, কারণ আমি যেভাবে দেখেছি ক্ষেতমজুরদের কথা, চাষির কথা খেটেখাওয়া যে মানুষগুলো রাস্তায় চলে বেড়াচ্ছে তাদের কথা, গ্রামবাংলার কথা, ভাষার কথা এগুলো কোনোটিই বহির্জাগতিক কোন বিষয় নয়, আমাদের চলমান ঘটে যাওয়া বিষয়। কবিতা বা ছড়া সবক্ষেত্রেই একটা সমাজের চালচিত্র যদি ফুটে ওঠে সেটাও দরকার আবার  কবিকে যে বার্তা দিতেই হবে এরকম মনে হয় না। কিন্তু সে যদি বিষয়টাকে ঠিকভাবে দাঁড় করায় তাহলে অবশ্যই করে একটি বার্তা দিতে সক্ষম তার লেখা। বার্তা দেওয়ার জন্য লেখা নয় বরং লেখাটা হয়ে ওঠে মূলকথা তারপর কে কিভাবে গ্রহণ করছেন সেটা পাঠক বিচার করবেন। তার উপর ছেড়ে দেওয়াটাই লেখার ধর্ম। তবে তরুণ যারা লিখতে আসছেন অবশ্যই আমি তাদের প্রস্তাব করবো যে আমার যে ছড়াগুলি আছে অর্থাৎ তিনটি বই তিনটি কাব্যগ্রন্থ কবিতা এবং ছড়ার বই দুটির মধ্যে কবিতাও রয়েছে ১) পূর্বাশা ২) আলোরেখা এবং ৩) আহ্বান তার মধ্যে থেকেও তারা আগ্রহী হতে পারেন, বইগুলি যদি তাদের কোনো কার্যকরি ভূমিকা গ্রহণ করে তবে এই লেখাগুলো সার্থক হব।


¶¶ আপনার লেখার মধ্যে ইছামতি এসেছে, এসেছে ইছামতির দুর্দশার কথা, আপনি লিখেছেন আবার আপনি নিরুৎসাহিত হওয়ার থেকেও আলোক সন্ধান করেছেন, আশাহত হননি বরং আশার আলো দেখবার কথা বলেছেন,


∆∆ ইছামতীর পাড়ে আমার বাড়ি, ইছামতি যে বিষয়টা কি আমি ঠিক পরবর্তীতে বুঝতে পারি বিভূতিভূষণের লেখা দেখে। ছোটবেলায় সেভাবে ইছামতীর দিকে চোখ তুলে তাকানো হয়নি, বিশেষ নজর দিয়ে কিন্তু পরবর্তীতে দেখেছি ইছামতি ক্রমেই জমে উঠছে, ভেচাল ভেরির বাধা ক্রমান্বয়ে চারিদিকে গ্রাস করে ফেলছে তারপরেই মনে হয়েছিল ইছামতির যন্ত্রণা নিয়ে কিছু লেখা দরকার।


¶¶ জীবনের সবচাইতে সুন্দর মুহূর্ত বলতে কোন মুহূর্তটা মনে পড়ে আপনার--


∆∆ শৈশব থেকেই প্রকৃতির প্রতি আমার একটা বিশেষ টান তার প্রতি আমার ভাললাগা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে তুলেছে এবং প্রকৃতির সঙ্গে আমার নিবিড় ভালোলাগা বিদ্যমান। সে অর্থে কারো কাছ থেকে আমি যতখানি না ভালোলাগা মুহূর্ত পেয়েছি তার থেকে বেশি দিয়েছে প্রকৃতি । পারিবারিক দিক দিয়ে খুব দৈনতা গিয়েছে, বাবা তিন বৎসর শারীরিক অসুস্থতায় বিছানায় পড়ে থাকায় আমাদের দুর্গতির দিন দেখতে হয় এবং তারপর থেকেই জীবনের জন্য লড়াই করতে শুরু করি আমরা। তবে হ্যাঁ, এর মধ্যে ভালোলাগার বিষয়টিও ছিল, ছোটবেলায় কষ্টের মধ্যে থেকে কাটানো দিনগুলি, সেটি আমার কাছে বিশেষ ভালোলাগার দিনও তার কারণ হচ্ছে একসময় মাঠে ধান পড়ে থাকত আমরা সেই পড়ে থাকা ধান কুড়িয়ে নিয়ে আসতাম মা সেগুলি সিদ্ধ করে ঢেঁকিতে কুটে আমাদেরকে ভাত করে দিতেন আমরা খেতাম, কষ্ট ছিল কিন্তু ওই যে যে ধান কুড়োনো, প্রকৃতির কাছে যাওয়া নিজেদের মতো করে স্বাধীনভাবে হাওয়া গ্রহণ করা মুক্তমনে চলা এটি যেন কষ্ট ভুলিয়ে দিত সেই কষ্টের দিনগুলি আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন। আরেকটি আনন্দের দিন যখন প্রথম থেকে আমার কবিতা এবং ছড়া মানুষ শুনতে আরম্ভ করলো। 


¶¶ আপনি ভাষা আন্দোলন নিও একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে অনেক কিছু লিখেছেন 


রফিক-সালাম-বরকতকে নিয়ে লিখেছেন যে ভাষা বিষয়টা এই বিষয়টা আপনাকে কিভাবে নাড়া দেয় ?


 ∆∆ যদিও ভাষা আন্দোলনের সময় আমি জন্মগ্রহণ করিনি   যখন ভাষা প্রেমীদের অকাতরে প্রাণ বলিদান এবং তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষার আজকে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে সেটি জানতে পেরে আমার মধ্যে আরো বেশি শ্লাঘা বেড়ে চলেছে। ভাষা শহিদের বেদনার কথা মর্মে মর্মে অনুভব করি। দুই বাংলা ভাগ হয়ে যাওয়ার বেদনা আমাকে বেশি নাড়া দেয়। 


¶¶ আপনার কথা কিছু জানান --


∆∆ ছোটবেলায় আমার ৩ বছর বয়সের সময় আমার মা মারা যান! আমার জন্মের পরে ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের গুরুদেব তার সঙ্গে দেখা হয়, তিনি ওই ছোটবেলায় আমাকে দেখে বলেন আমি তো বেশ দুরন্ত অর্থাৎ ধূরণ। এই শব্দ থেকেই পরবর্তীতে আমার নাম রাখা হয় ধরণি অর্থাৎ ধরণিকান্ত বিশ্বাস। মোহিনী বাবু নাম করে এক মাস্টারমশাই আমার এই নামটি দেন ধরণি কান্ত বিশ্বাস।


¶¶ অনেকটা দীর্ঘসময় আপনি দিলেন, আপনার মূল্যবান বক্তব্য, জীবন সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা, আপনার লেখালেখি, কর্মজীবন, ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানালেন , এবার আমরা আলাপচারিতার প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছি , অনুগ্রহ করে জানান -- বর্তমান সময়ে আপনার অবসর কাটছে কিভাবে?


∆∆ বর্তমান সময়ে অবসর কাটে খুবই বেদনার মধ্যে, আমার দুটো পুত্র সন্তান তারা এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই, কর্মসূত্রে অন্যত্র থাকে তারা, আমি আর আমার স্ত্রী এখানে থাকি, এই অতিমারির সময়ে সন্তানদের দূরে থাকা দেখে কোন বাবা-মায়েরই ভালো লাগবে না নিশ্চই! তবুও এটুকুই আশার আলো যে এই যে তোমাদের মত সকলে যখন আশেপাশে থাকে, অন্তত এই মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নিতে আসো, সেকথা ভাবতেও ভালো লাগে। এই আনন্দটুকুই তো বেঁচে থাকার রসদ।


¶¶ কোনো বিশেষ অপূর্ণ কিছু থেকে গেল কি ?


 ∆∆  আমি যতটুকু পেরেছি, ততটুকু দিয়েছি। আমার বিশেষ কিছু আকাঙ্ক্ষা নেই। আমি জানি যে দিয়ে যাওয়াটাই দরকার, যত ভালো করে দিয়ে যাওয়া যায় ততটুকুই মঙ্গল, বাকিটা সময় বিচার করবে।


¶¶ এতক্ষণ ধরে আপনি আমাদের যে আপনার আন্তরিক সময় দিলেন তার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো। আপনার শারীরিক সুস্থতা এবং মঙ্গল প্রার্থনা করছি।

তোমাদের জন্যও আশীর্বাদ রইলো, শুভকামনা রইল।

No comments:

Post a Comment