Monday, August 2, 2021

 

বিবেক রায়ের  কবিতা



 

রায়ডাক


হেঁটে যাওয়ার সময়
ছায়াও আমার সাথে হাঁটে
মৃত্যু অবধি কি এভাবেই হাঁটবে --
এ পথ যে অনেক দূরে নয়
বিপদের আশঙ্কা পেয়ে যে কবেই
প্রেমিকাও আঙ্গুল ছেড়েছে
সত্যি শরীরের ছায়া কি মৃত্যু অবধি যাবে
ভয় পাবে না. . .
কবরের জন্য যে জায়গা দেখা হয়ে গেছে ---- রায়ডাকের চড়ে


     কন্ঠ
-----
একা হয়ে যাচ্ছি , ভীষণ একা সময়ে সাথে সাথে
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সব ছেড়ে ফিরে যাই,
সারাজীবন নীরবতার পায়ে পড়ে থাকি
যেখানে আমি একা, কেউ কখনো বিরক্ত করবে না
আমি আমার মতো থাকতে পারবো
নির্জন জীবন -- যেখানে পাখিরা খোলা গলায় গাইতে পারে

আমি ভীষন সাধারণ মানুষ - আজীবন সাধারণ ভাবে থাকতে চাই
মাটির কাছাকাছি যেখানে শৈশব কালের কণ্ঠ লেপ্টে থাকে
পাগলের সাথে বন্ধুত্ব --- মন খুলে ওপার বাংলা কথা
যেখানে পাগলের মায়ের কবর রয়েছে
ভাঙা বাড়ির পাগলটি আমার জন্য লজেন আনত
আমি তাক খুব কাছ থেকে দেখেছি - ভুলেনি
এতো কষ্ট থাকার পরেও যার মনে ঈশ্বর ভক্তি ছিলো

লোকসঙ্গীত গাইতে পারি না, কিন্তু ভালোবাসি - আমি গান ভালোবাসি
তৃপ্তি পাই, মাটির গানেই বেশি
গ্রামের মানুষরা মুখোশ পড়তে পারে না  - অথচ তারাই বেশি ঠকে

টিকিট কেটে পরিচিত হইনি, বাবার টাকা ছিলো না - কলকাতার চিরীয়াখানার শুধু নাম শুনি
অথচ আমার অনেকের সাথেই বন্ধুত
গ্রামের পাশেই মাহুত হাতি ধরে আসতো কলো গাছ নিতে
দোলাতে শকুন - শৃঙ্খচিল - উড়ত আকাশ জুড়ে
ডুমুর গাছে কোকিল মধুর ডাকে বসন্তে ঘুম ভাঙ্গত
গাছে গাছে বাবুই - ঘুঘু - বাঁজ পাখি -
আরও কত পরিচিত পাখির দল ধান খেতে উড়ে যাচ্ছে
শৈশবে মানেই ফড়িঙ ধরা - বন্ধুদের সাথে আড্ডা
শিমুল ফুল - কদম ফুল নিয়ে থাকা
পুকুরে মাছ ধরা সংকোশ নদীতে স্নান - ডিগ বাজি
বিকেল বেলা গোল্লাছুট - কানা মাছি ভো ভো
কত কিছু হাতের নাগালে ছিলো -
যা এখনকার শৈশব ধারের কাছেও নেই,
এখন কার শৈশব মানেই - যান্ত্রিক - অন্ধকার জীবন সঙ্গী

একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমি একা হয়ে গেছি
আমি আরও বেশি একা হতে চাই, এখন নির্জনে পছন্দ করি
আমি বাঁচতে চাই, সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে
আমার পূর্বপুরুষের সবুজের সাথে বন্ধুত্ব ছিলো



         পৃথিবী
----------------------
মনে হচ্ছে এক মাত্র মানুষ আমি
এ দূর দিনে শুধু অন্ন ধ্বংস করছি পৃথিবীতে 
একটা কৃষকে জানে -- একটা ধানের শিষের জন্য
কত কেজি রক্ত জলে করতে হয় ---
বারবার মনে হচ্ছে, এ পৃথিবী আমার জন্য নয়
আমি কোনো কাজের নই -- শেষ লোকটি আমি

আজকাল ---
দোতারার সংস্পর্শে আসতে ভয় লাগে
অথচ ঘুরে ফিরে স্মৃতি মাথা চারা দেয়
তোমাকে জেগে উঠতেই হবে -- শিশির বিন্দুতে

চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে, কাঁদলে বুঝি
বুকের ভেতর জমে থাকা যন্ত্রণা মুছে যায়
কেঁদে কেঁদে শরীর ভেজে গেলেও আমার কষ্ট দূর হইনি --
যেমন শীতের দিনেও সংকোশে গভীর জল - স্রোত
আমিও কিন্তু একজন প্রেমিক হতে চেয়েছি আজীবন - পারেনি
আমি তো শৈশব থেকেই ফুল ভালোবাসি
বাতাসির মা জানে --- আমি কেমন মানুষ

কথায় থাকবো ---
মাথার উপর ছায়া দেওয়ার জন্য আজ পর্যন্ত কোনো বৃক্ষ পাইনি ,
বেঁচে থাকতে --- ছায়া পেলে
হাসতে হাসতে আমিও মৃত্যু বরণ করতাম

আর তোমার কাছে সেটাই ম্যাজিক হয়ে যেত ----



    দূরত্ব
---------------
একটা মানুষ দরকার
যে আমার মৃত্যুর ঋণ শোধ করবে ---
আমি এখনে মৃত্যু লেখতে পারবো না,
আমার এখনো অনেক কাজ বাকি আছে যে . . .
জন্ম আর মৃত্যুর মাঝে যতটা দূরত্ব শূন্যস্থান থাকে  . . .
আমি আরও কিছু দিন বাঁচাতে চাই --
হাতের ওপর হাত ঘুরিয়ে


No comments:

Post a Comment