Tuesday, August 3, 2021

 মিলটন রহমান-এর কবিতা




বিভ্রম


কাবেরী নদীর তীর থেকে পাখিগুলো

ঠোঁটে রোদ নিয়ে চলে গেলো পশ্চিমে

জলের কার্ণিশে রেখে যাওয়া পালকের 

তুলট ছায়ায় জেগে আছে মরাল স্মৃতি

বহুদিন হলো স্মৃতির মাস্তুলে জেগেছে

আমাদের বহু বর্ণের শোক ও সন্তাপ

আচ্ছা-

একে একে মানুষ বাতাসে মিলায়ে গেলে

কোথাও কি জেগে থাকে দীর্ঘ কোন ছায়া?

করুণ শ্বাসের মতো কোন কিছু কি থাকে

ভেসে কাবেরী জলে?

ওই পাখিগুলো ঠোঁটে করে যে রোদের রঙ

নিয়ে চলে গেলো,

তা এই মানব বসতির কত ভাগ?

কিংবা কখনো কি কিছু নিয়ে যাওয়া যায়?

নাকি নেওয়ার নাম করে বিশেষত আমরা

নিজের সবকিছু ফেলে চলে যাই

দৃশ্যত পাখিরা যে রোদের ছায়া ঠোঁটে

উড়ে চলে গেছে, তারা রোদের তাপে 

গেলে গেছে, কেননা

ওরা কোথাও যায় নি, সবকিছু বিভ্রম!

সবাই বহুদূর যেতে চায়, অথচ

যেতে না পারার আক্ষেপ প্রকাশের আগেই

সবাই নাই হয়ে যায়!


এখানে এখনো গড়িয়ে পড়ছে অন্ধকার

ক্ষীণ আলো চড়ুই পাখির মতো চেয়ে আছে

শূন্য করপুটে জেগে ওঠা বিহঙ্গ কালের দিকে

কোন একদিন এইখানে নদী ফুড়ে উঠে যাবে

আলোর টাওয়ার, ঠিক নিরস্ত্র যোদ্ধার মতো...

সেইদিন হয়তো জেগে উঠবে আলো

যোদ্ধারাতো কখনো মুষ্টিহীন হয় না!


মানুষ কি কখনো হেরে যেতে চায়?

নাকি মহানুভবতার চিমনিতে 

বিশুদ্ধতার তকমায়

কালো বিষন্ন 

ধোঁয়া উগরে 

পায়ুপথ পরিষ্কার করে 

আবার নেমে যায় জলজ অন্ধকারে?


উড়াও অশ্রু


বেহিসাবে কাটানো জীবনইতো আসমানের মতো বিশাল

হিসেব করতে গেলেই খাতাবন্দি জীবনের দোযখ যাত্রা

বলে ক‘য়ে কি আর প্রিয় উদ্যানে ফুলের সুগন্ধি নেয়া যায়

যার জন্য কোন বাক্য বিনিময় ছাড়াই দু‘গন্ড বেয়ে নামে অশ্রু

সে কে

      তার সাথে কি সম্পর্ক

                       কোন কিতাবে লেখা আছে

                                                               তার নাম

কালা পাথরের গা ঘেমে-নেয়ে যে অশ্রু নেমে আসে তার কি হিসেব

কোন হিসেব টিসেব নেই

                       নেই কোন বেদ-বাণিজ্য

                                           আছে তার জন্য এক নাম

আসমানের সিরায় সিরায় লেখা সে নাম কোন হিসেব ছাড়াই কাটা

জগতে এই নাম বেহেস্তি খুশবো ছড়িয়ে উড়ছে পায়রার পালকে

ফোটা ফোটা জল

               অশ্রু সজল

                       ভেঙে অর্গল

                               সরিয়ে পাথর জগদ্দল

                                               বেহিসেবের পাপড়ি  মখমল

তুমি খুলে দাও বেহিসেবের সমুদ্র বিহার

হিসেবের জীবন পিঁপড়ের হয়

বর্ষার সঞ্চয় তোমার নয়

না খেয়ে মরে যাও

না পেয়ে মরে যাও

এই বিহেসেবি মৃত্যুর জন্য

কত যে মৃত্যু জেগে আছে

তা জানতে হলেই হয়ে যাও বেহিসেবি

বন্ধু বেহিসেবি হও, মরে যাও, পান করো প্রিয় আশ্রু! 

                                      




আশ্চর্য বেহালা


গাধার পিঠেও বেজে উঠছে আশ্চর্য বেহালা

গর্ভবান পুরুষেরা খালাসের তাড়ায় ছুটছে

ঘাট-আঘাটায় ফেলে যাওয়া থোক থোক

বীর্য থেকে একে একে উঠে দাঁড়াচ্ছে

আশ্চর্য সুন্দর সব খচ্চর

এমন সৃষ্টির প্রনোদনায় তল্লাটে চলছে

অনির্দিষ্ঠ উৎসব

এই বুদ্ধিদীপ্ত ফলবান সময়ে দুলে উঠছে

দুধেল গাভীর ওলান

খচ্চরেরা সারি সারি উঠে এসে পান করছে

পুরুষ্ঠ কালো দুধের নহর!


এখন এমনি অসঙ্গিতির সময়

গাধার পিঠে বেহালা বাজার সময়। 


নিমন্ত্রণ



ভাঙা ডাক বাক্সে প্রতিদিন অগুনতি চিঠি আসছে

                                       নিমন্ত্রণ

বংশ পরম্পরায় এমন চিঠি আসাই নিয়ম

তবে প্রতিদিন ডাক বাক্স উপচে পড়া এমন

                                      নিমন্ত্রণ

আগে আসেনি কখনো, আমার পিতামহের কালেও


এই প্রত্যন্ত গাঁয়ে ক্ষীণ পুলিন্দা কাধে পিয়ন আনতো

                                       নিমন্ত্রণ

বছরে হাতে গোনা ক‘টি মাত্র চিঠিই ছিলো নিয়মে

অথচ এখন প্রতিদিন চিঠি আনছে অচেনা ডাক হর্করা

                                        নিমন্ত্রণ

কূয়াশার সাদা কাপনে মোড়া লোবানের গন্ধে মৌতাত!


আসমান ফুঁড়ে অসংখ্য মানুষ ছুটে যাচ্ছে হাতে পাওয়া

                                         নিমন্ত্রণে 

ভাঙা ডাক বাক্স থেকে গড়িয়ে পড়ছে মৃত আক্রোটের দানা

বুলেটের মতো একে একে বিঁধে যাচ্ছে অগুনতি পাঁজরে

                                           নিমন্ত্রণ

একে একে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে শেষ এক্সিটে!


অস্পৃশ্য


নদীর নাভীমূলে        ঈশারায় হাত রাখি


কিছু কি আছে তাতে, কিছুই তো বুঝি না


ওই যে দূরে দেখি      ফেনিল দু‘টো গাঁথা


ওগুলো কিছুই নয়, বলবো কি করে?


কি করে পাবো তবে     ঈশকার টেক্কারে


মাঝ রাতে কে রাখে হাত, বিদিশায়


তোমার খোঁজে নড়ে      আমার দিনাসন


থাকে না কোন গান, কোন রাগাসন


বললে কেবল আজ     তোমার জমবে বাজ


মালা গাঁথার দিন আজ হলো তাই


আমি যে কোন কালে        মানুষ হয়ে যাবো


তুমি হবে সমুদ্র সহচর


তফাৎ নেই রাত দিন        বাজে একই বীণ


এর বেশি কোন রীতি নেই


আমার শুধু চেয়ে থাকা     মনের বাঁক বাঁকা


ফেনিল গাঁথা রেখে ঘুমিয়ে থাকা।

 

1 comment: