Tuesday, January 30, 2018

আশরাফ জুয়েলের কবিতা :

কোথায় আমার দেশ?


তুই হাঁটছিস বিষণ্ণ কলেজস্ট্রীটে,
আমি দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার একাকী শাহবাগে,
আত্মা কাঁটাতার টপকে শহর কোলকাতায়।
কফিহাউজে আজ কে কে আড্ডায়?
এখানে মধুর ক্যান্টিন মশুগুল জলশায়।

এই শহরে ট্রাম নেই, মেট্রো নেই,
আছে রিকশা, আছে সি এন্ড জি-
মাঝে মাঝে ময়দান বেড়াতে সোহিরাওয়ার্দী উদ্যানে,
হরহামেশা বেইলী রোড চলে যায় নন্দনে।

ভাষার ঘুড়ি ওড়ে কোলকাতায়,
নাটাই খেলছে ঢাকার ব্যস্ত হাওয়ায়-
ভাষারও পাসপোর্ট লাগে রে!
শান্তিনিকেতনের মাটি জিভে নে,
ঠিক পেয়ে যাবি শিলাইদহের স্বাদ।

সল্টলেক, বেলগাছিয়া, বালিগঞ্জ, বউবাজার-
অনিমেষকেই খুঁজছি, আমরা সবাই একসময়
অনিমেষ হতেই চেয়েছিলুম।
সূনীল’দা চলে গেছেন নীরাকে ফেলে,
কতো প্রেম জমে আছে নীরা’র জন্যে।
বন্ধু, শীত আসি আসি করছে ঢাকায়,
কোলকাতায় নিশ্চয় আশ্বিন গান গায়?
দাদীমা বেনাপোলে প্রাণসখার অপেক্ষায়,
ঠাকুরদা ইমিগ্রেশনহীন ট্রেনের আশায় পুড়িয়ে
দিলো পুরোটা যৌবন।

রাষ্ট্রধারণা কী পারবে তাঁদের আকাঙ্ক্ষার
মিলন ঘটাতে?  



বাংলাদেশ

মরূদ্যানে জন্মিনি, কুয়াশাবক্ষেও নয়,
তুষারপাতে বিপর্যস্ত হননি আমার মা-
তুমি আমার শ্বাসপ্রশ্বাসের অগ্নিরথ, শক্তিবলয়।
পূর্ণিমার রক্তরঞ্জনের স্বর্ণালোক তুমি-
সরষে ক্ষেতে সম্মোহনের আগুন জ্বলে আজও,
বোরো শীষের আত্মত্যাগে ভিজে ওঠে কৃষকের চোখ,
ধান ভর্তি নৌকার পালে ভর করে যাপিত জীবনের সঙ্গীত,
গ্রাম্য রমণীর বাঁকে বাঁকে খলবল করে কলস উপচে পড়া সুখ।

মধুক্ষরা মা-
তুমিই দিয়েছো অমৃতোত্তম সুধা,
নিশ্চিত করেছ প্রতিটি উড়ন্ত ডানার স্বাধীনতা,
রক্তাধিক পবিত্র তোমার শরীর, তোমার সঞ্জীবনী রস
আমার প্রাণ।

পাশবিক উগ্রতা কেন সয়ে যাচ্ছো?
কেন নারীভূমে আঁকতে দিচ্ছো অক্ষমতার দাগ?
নেশাপিয়াসী অর্বাচীনেরা জ্যামিতিক কোণে ছেঁকে ধরেছে তোমায়,
উজানের স্বার্থপর কংক্রিটের ঘেরাটোপে শুষ্ক তোমার বুক- পিপাসার্ত
পদ্মা- মহানন্দা- মেঘনা- সুরমা- যমুনা-
বিচ্যুত নিঃশ্বাসে মেনে নেবে দূর্ভাগ্যের সিঁদুর?

সাগরকন্যা, পাহাড়ভ্রাতা, বরেন্দ্রনারী, বনজপুরুষের
উপর ওরা বসিয়ে দিচ্ছে ভুলের কোদাল-
জন্ম হচ্ছে পাপের জঞ্জাল- আঘাত হানছে নিয়মের লক্ষ্যবিন্দুতে,

যদি ক্ষোভের আগ্নেয়গিরি বমি করে ফেলে?
যদি আত্মার নির্যাস দাবী করে বসে বৃষ্টি?

তুমি কী প্রেমাস্পদার উরু-স্তনের নিরাপত্তা চাও না?
তোমার ফাটল কী প্রত্যাশা করে না নির্ভরতা?
পশ্চিমের রতভক্তি করার জন্য জন্ম হয়নি তোমার,
উত্তরের আকাঙ্ক্ষাদীপ্ত জিহ্বার পুজোর জন্যও নও-
তবে কেন শ্বেতশুভ্র মসৃণ স্তনে ফেলতে দিচ্ছো বিজাতের নোঙর?

উপনিবেশের রেলনকশা উপড়ে ফেলেছিল
সূর্যসেন, ক্ষুধিরাম, বিনোদবিহারী, ইলামিত্র।
রফিক জব্বার সালামের প্রাণপ্রপাতে ভেসে গেছে শত্রুব্যুহ,
সুর্যসন্তানেরা একাত্তরে তাড়িয়েছে হিংস্র হায়েনার দলকে-
‘মুজিব’ নামের এক বৃক্ষসম স্বপ্নদ্রষ্টা সগৌরবে ঘোষণা
দিয়ে ঝেটিয়ে বিদায় করেছিলো ভিনদেহী জঞ্জালকে।

ভয় পেয়ো না-
তোমার ঘাড়ে ফিনকি দেয়া শ্যেনদৃষ্টি পুড়ে যাবে সাহসের উনুনে।

মা, আজও ভালোবাসি তোমার দেহের অম্লতা-
তুমি আমার সম্পূর্ণতার ইঙ্গিতবাহী প্রভাতফেরি।
তুমি কামনা, বিস্ময়মুগ্ধ নয়নবিহারী মাঠ, সুকুমার হাওয়ার বৈঠা,
তুমি শীত রাতের কুয়াশা ভাঙার মন্ত্রকৌশল, ভয়ার্ত নিশীথের জীবনধারা-
বহুবার পূনর্জন্ম নিয়ে সন্ধান করেছি সূর্যোজ্জ্বল চারণভূমির স্নেহাতীত আদর।
তোমার উজ্জীবিতসত্ত্বার সম্মোহে আস্বাদিত হতে চাই-
স্নিগ্ধ নিঃশ্বাসের ধরিত্রী,
তুমি তো জানোই তোমার স্পর্শমায়ায় নিহিত সমস্ত মুক্তি।

সমস্ত অপশক্তির বিরুদ্ধে এক ভীষণ শক্তি

মৃত্তিকা ভেদ করে জেগে উঠছে- ‘বাংলাদেশ’

No comments:

Post a Comment