Tuesday, January 30, 2018

অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা :


কিসি কি বাত পে 
এক।।
আমাদের এইরকমই আলোর জন্য হা করে বসে থাকা। সেই আততায়ী সন্ধ্যা পাখীহীন হয়ে এই পাকুড়তলায়। অনেক রাত পর্যন্ত হিসেবের বহিরাঙ্গ মাপা ছাড়া কোন উপায় ছিল না।শেষতক্‌ আমারই ডাক পড়লো।নজরের হাত পা মাড়িয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই নতুনের মুখোমুখি হবার নোটিশ...আনন্দকে বয়ে আনার ঠিকান ।

হঠাৎ বড় হয়ে গেলাম।একটা ভয়ও কাজ করা শুরু করলো।চলে গেলাম তিস্তার স্পারে।আর তোমাকে দেখতে চাইলাম বারবার খাদানের একজন হয়ে। মন্টুদা সাহস দিয়েছিলো। বন্ধুরা বলেছিল পরম মুহূর্ত...আমাদের শহর গেয়ে  উঠবে নতুন ভাষায়। তাকানোর আশ্রয়ে।

অবশেষে দেখা হল চেনা রাজপথের সাথে।চেনা বাড়িটার সাথে।আরো একজনের সাথে যে কাল থেকে থাকবে আমাদের ভরসা হয়ে। তিনতলায় সকাল থেকেই রোদ এসে ধুয়ে দেবে জামাদের বোতাম।
চারপাশের এই সাজানো অক্ষরে মিশে যাবে দক্ষিণের বাতাস।

সকাল থেকেই তোড়জোড়। চাপ চাপ উন্মাদে রাখা সেইসব কাছাকাছি।লিখিত হয়ে ওঠার তাগিদে শুধু চাঁদ ছিল।ছাদ ছিল।আর ছিল মেঘলা সন্ধ্যায় হাতে হাত রেখে নেমে যাওয়া গৌরীয় স্টেশন মাইয়া মায়াপুর......

সাদা সাদা ডানায় বসানো এই সব স্মৃতির তসবির।কেটে যাওয়া উঠোন।বন্ধ দরজার ওইদিকে রাখা জলের বাহানা

ছেড়ে আসা সময় নিয়ে এটুকুই জানা। এটুকুই মনে পড়া।

দুই।।

তোমার মনে পড়া সম্পাদনায় দিগন্তে  মিশে থাকা দুই নদী ছিল বৃত্তান্তের যাত্রা নিয়ে।সহবাসের প্রথম পর্বে।
একটু দূরে বর্ষ শেষের চিহ্ন কাঁটাতার। আজো লেগে আছে চুল...
আর সরু রাস্তা ধরে মিশে যাওয়া প্রবাসি ছায়াদের এক কৌটো প্রেমালাপ। আপাতত সংখ্যায় বসানো এই এপ্রিল
 প্রথম পাতায় রাখা আদরের লোডশেডিং নিয়ে।
প্রিপেড তুমি তখন কেন যে কালি গোছাচ্ছিলে...কে জানে?আর অজান্তে সেইসব যাদের
ধরে রেখেছ আজো তারা কেবল বিরাম চাইছে...চাইছে তিন চারটে ক্যালেন্ডারে ভরে উঠুক
 আগামী মাসের কোন এক দিন।তখন রং করতে করতে চোখে পড়বে...এক কোনে ওই তো
 নিরিবিলির খোয়াইশ গুলো
সব নামছে

নেমেই যাচ্ছে মাছ ধরতে

জলে আরো জলে আরো আরো সবুজ জলে নীল জলে

তিন।।

ছুটি এসেছিল।হঠাৎ ই এসেছিল।পদ্মার পারে।ভিটে ছেড়ে ,মাটি ছেড়ে...এই জলজ জ্যামিতি ছেড়ে।সাথে দিনান্তের ওই পশ্চিমের পথ।তাকালেই পেরিয়ে আসা রেলগেট...চেনা বাড়ি ।চেনা শুভ।ম কিনে দে ডাক।সব্বাইকে ডাক।আজ সন্ধ্যায় সাইকেলের ম্যাজিক...বিকেলের হলুদ মেশানো। তখনো বেমালুম ভুলেই আছি রেডিও কানে নিলেই বাজে না...ওতে ব্যাটারি ডালতে হবে আয়ুসের কারখানা থেকে।

ছুটি একটা মাঠ চেয়েছিল।যে বেজায় রেগে থাকবে আমাদের দুটো দলের জন্য।সেই প্রবল উৎসাহের জন্য।আর কাদা কাদা পা গুলো মেখে নেবে সাপ্তাহিক মির্জা...এই সব ভেবে বাঁশের পোস্টেরা গান জুড়ে দিল আর চায়ের দোকান থেকে শয্যায় উঁকি মারে বৃষ্টি শেষে নেড়ে রাখা ওহে
তুক বাজালেই তাক থেকে সরে যাবে বইপত্র...মেজাজ বেরিয়ে আসবে হা্তে হাতে।
হঠাৎ নজরে পড়লো ছুটি য়ার মাঠেও নেই ।আশে পাশে কোথাও নেই। শুধু খেজুর গাছের গা বেয়ে চুঁইয়ে পড়ছে  তাকিয়ে থাকা রস...
তুই বললি শেষ। আমাদের একটা মরসুম শেষ।আবার দল বদল...আবার নতুন করে ডালে ডালে ছাড়পত্রের পালানো রাখিস।জানালা দিয়ে মাঠটাকে দেখেশুনে রাখিস

চার।।

অভিমান...সেতো ফিরে গেছে তোমার আড়িতে।আজকাল আর এপ্রিলের কথা মনে থাকে না।আমার শহরে এখনো শীত।শীতের রেওয়াজ গুলো ফিরে এলো বাক্সের বাইরে।‘শুভ নববর্ষ’—এইটুকু কথার মাথায় মার্চের মন খারাপ।তবু ফিরে তাকানোর কপাল আড্ডা আর গ্লাসের ছাউনিতে বেশ মানিয়ে গেল।রেঁধে গেল।বেড়ে গেল।
রবীন্দ্রদা একটা চিঠি লিখেছেন প্রবীরদার বইটা নিয়ে।চারটে দেওয়াল নিয়েও কখনো কখনো ঘর হয়।তুমি মানো না মানো।আর এইতো অনি অনি নিমগ্ন ওভার ড্রাইভ  চেয়ে গত ম্যাচে যে কাট্‌শটে জিতে গেলাম তার দুপুর  বিকেল   সন্ধ্যা   রাত্তিরটা টাঙিয়ে দিলাম স্কোরবোর্ডে।
একজন আম্পায়ার চাই।আর একজন দর্শক।তুমি লিখে দিও কার আদরে আরেকটা হেরে যাওয়া দেখা যেতে পারে।
বারীনদার বাড়িতে এখনো জাম লেগে আছে।গোঁফের তা গুলো কে কেটে দিল দোয়েল?না টুনটুনিটা ভোরবেলার অজুহাতে চড়াই হয়ে উঠলো তোমার দেরির কিনারে?জানি না কেন এই কাটাকুটি।তবু ভাল।তিনি ভাল আছেন,তুমিও সুখে আছ গৃহের সাঁতারে......স্পাইরালে।
তুব এক দুই তিন করে অভিমান আরো আরো নতুনের দিকে।পীড়বাবার শুক্র সন্ধানে।যখন হাওয়ার চুমুকে মেয়ে নেই,নরম নেই,নেমে যাওয়া নেই...কেবল পেতে চাওয়া সেই কাচের টুকরোটা।
কাল জ্বাল দিয়েছি ময়দা আর তুঁতে।আবার আঠার গন্ধ চাই।চাই ফিরে আসা অভিমান ও......

পাঁচ।।

বিবাদী সেই নাগরদোলা য় আমাদের বারণ ছিলো।তবু একদিন তোমার হাত ধরে চেপে বসেছিলাম...তার শিরশির আজো গায়ে কাঁটা দেয়।আর কেটে কেটে বাদ দিয়ে রাখে সেই উচ্চতা যার নামানো নীচের দিকে টেনে আনা এই গ্রাম ঢুকে গেলে বুকের ওইপাশে...
তুমি নামতে নামতে এতোটাই হেসেছিলে যখন
এরকমই শীত আর শ্যাওলা ভেঙে  মন টি কাড়লো রা যতটাই আমাকে বুঝিয়েছে,ঠিক ততটাই ভাবতে ভাবতে কলেজ পালানো নদীটার পরেই প্রথম হাইওয়ে
এখনো লেগে আছে শাড়ীর কুঁচিতে    দেখ আঁচলেও  কিছুটা চাকার পাতানো
বাড়ির ধমক ডোবা  বি  বাদ  বার্ষিকী    ‘আপনি বুজতি হুয়ি আখো সে’ টুপ টুপ বেয়ে যাওয়া লুকোনো স্বপ্নের পরে কি ভীষণ ব্যাথার আনন্দ
কি দারুণ সারা রাত গেয়ে গেয়ে ওঠা............
 ‘হার এক বাত পে ক্যাহেতে হো তুম কে তু কেয়া হ্যায়’
এখন ও কাঁদতে ভাল লাগে মির্জাজী......এখনো ভাবতে ভাল লাগে লেকিন...খাক হো যায়েঙ্গে হাম
এই একটু ভাঙা ভাঙা মন টি কাড়লো র জন্য

ছয়।।

কোথাও উপহার গেয়ে উঠলো।নথের আগালে তার আন্তরিক স্পর্ধা।আমাদের এই দেখাটুকুই ব্রীজ হয়ে যাচ্ছে।পেরিয়ে যাচ্ছে নজরের চৈত্র মাস।নানান ভুলে থাকা ঠিকানা।পাশাপাশি এইযে বসে আছি আর তোমার হাসিতে বেজে যাওয়া ভয়, আমাকে আরো কাছে করে নিলো। এলো সেই স্কুল পালানোর মজা।সিনেমা হয়ে উঠছি আমরা।আর নায়ক নাইকা ও।কানে এইবার তালা ঝোলাবো আর ঠিক সেইখানে নেমে যাবার আগ পর্যন্ত এই কাঁধের নরম শুধু রেখে দিক আরেকটা সূর্যের থৈ থৈ... বুনে রাখা  সহজ গল্প গুলো।

আসছি কাছাকাছি হয়ে ওঠার মহরায়।একটা সিগারেট থেকে জ্বলে গেল কানাকানি। তোমার ব্যাগ খুলে বেরোনো ডাইরির পাতায় অনবরত বৈশাখের বাহানা।কিছু তো এখনো বললে না।শুধু শুনেই গেলে। কি ভাবছ? এরপর কি হবে? নাকি কেউ যদি দেখে ফেলে থাকে.........
আরে এভাবেই তো সব মানুষই বড় হয়।সকলের জীবনেই এই রকম কোন না কোন পালানোর চিঠি থাকে।কিছুটা জানা কিছুটা অজানা।

দাদা আমাদের দুটো চা আর দুটো বিস্কুট দেবেন।ওরা সকলেই আমাদের কথা ঠিক শুনছে। শুনুক। সাহসটাই আসল। বাবা বলেছিল। আর মা বলেছিল ‘ বাবু,ভাল না বাসতে জানলে জীবনে এক পাও এগোনো যায় না’।
এই উফারটুকুই এখনো সম্বল।কি দারুণ বাজে।দেখি পাখিদের সাথে তুমিও নেচে নেচে ওঠো। আমার তলানী পর্যন্ত তুলসী ছুঁয়ে যায়।গাছ থেকে নেমে আসে তাজা মুকুল। ফুল ফোটে আততায়ীর চারপাশে। তোমাকে চুমুক ভাবি।তীব্র চায়ের গন্ধ ছড়িয়ে যায় বিন্দুতে......

আমি আজ গেইল হয়ে উঠছি।জিতে নিচ্ছি সমস্ত নির্মাণ। আশ্চর্য চিরুনি দেখ তোমাকে করে তুলছে ভেজামাটি  স্নানঘর  আর   প্রাথমিক লাল নেড়ে  নেমে আসা শাড়ির সিনেমা......

ডাকি, এইবার শুধু ডাকি
তোমার  নিখুঁত    বিশ্রাম

চিত্র ঋণ : এলিনা মাকারোভা লেভিনা

No comments:

Post a Comment