কবিতা করিডোর
উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিভাগ :
মুখবন্ধ
বোতল সংস্কারে জলীয় ভাষা...
জলীয় ভাষা ভেঙ্গে তরতরে এগিয়ে চলছে জ্যোৎস্নামাখা পরমায়ু। পূর্বোত্তরের টংঘর থেকে মেঘের বারান্দায় শব্দের ঝংকারে ভেসে উঠে জীবন্ত স্নায়ু। বোতল সংস্কারে লিপিবদ্ধ কণাধর্ম ছেড়ে এগিয়ে চলছে সাংবিধানিক সংকেত। সাহিত্য পাড়ায় আনাচেকানাচে মেঘের শিরায় উপশিরায় উদয় হচ্ছে রঙিন ভাবনা। ভুরি ভুরি কাব্য দাহনে প্রতিদিন ঢেউতোলা চেতনায় করিডোর ভিত পাকাপোক্তে সরগরম...
----রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ
আগরতলা, ত্রিপুরা
কবিতা বিভাগ :
জ্যামিতিক
দেবলীনা সেনগুপ্ত
চিলেকোঠা ছুঁয়ে থাকে
একফালি রৌদ্রবিলাস
আপেল খেতের বৈভবী বাতাস
তাকে শেখায় জ্যামিতিক নকশাসব
জীবন মানে বৃত্ত , উপবৃত্ত
প্রেম ত্রিকোণ , পরিবার চতুর্ভুজ
কে কাকে লালন করে
কার ভেতরে রাখে কাকে
তা নিয়েই গড়ে ওঠে যাপন কথা, জীবনের।
সময় তা শোনেনা
রোদের ফালিটুকু গুটিয়ে নিয়ে
রাখে দরজার ধারে
প্রতি ঋতুর ক্ষরণে
রোদের গালিচায় সে আনে
অসময়ের গ্রীষ্ম , অকারণ বসন্ত
ত্রিভুজ ও বৃত্তের পাশে খেলে
অকাজের কাটাকুটি খেলা
লেখা হয়,মৌলিক বর্ণমালা
রাত্রি
বিজয় ঘোষ
রাত্রি দ্রুত রং বদল করছে। ধূসর।কালো।আবছায়া ।এক আধভাঙা চাঁদের মিহি রুপোলি রঙ।রাত্রির কথকতা কোনও এক রাতচড়া পাখির মতো।বরাকের জলে।নৌকার পাটাতনে যামিনী একা জেগে আছে।মাছেদের প্রেমে রাত্রির কারুকাজ ঝিলিমিলি করে।রাত্রি রঙ পালটায় ব্রহ্মপুত্রে।কুশিয়ারা হাত বাড়িয়ে দেয়। অথচ বাংলা-রঙে মিশে যায় লাল।'আয় তবে ভানুমতীর খেল দেখাই'।ক্ষপা ,রাত্রিকে বলে। রাত্রি হেসে কুটিপাটি।যামিনীর গালটিপে বলে,'আর কুয়ারা করতে লাগবো না।'
এতক্ষণ মিসকল মিসকল খেলছিল।যতসব পাড়াগেয়ে সেক্সি মেয়েরা।
গুলাল
সুমিতা ধর বসুঠাকুর
তোর গলি দিয়ে হেঁটে গেলে যে ঝিঁঝিট সুরের রেশ
কবিতাকে ঘুমাতে বলেছি একটু শীত মেখে তার গায়ে
খোসা ছাড়ানো বসন্তের রঙ মাটির সিঁদুর
টইটুম্বুর মুকুলে এখন মা মা গন্ধ,
অপেক্ষার সুতো বাঁধা রয়েছে-
কবিতা,চোখ খুলিস না এই করবী বসন্তে
তার ফলে ভরা আছে ঘুম নির্যাস।
দর্পণে হাজার মুখ।।
আবু আশফাক্ব চৌধুরী।।
একটা মুখ
না চাইলেও বারবার ফিরে আসে
প্রেমকামুক উচ্ছল কোন সুনয়না যুবতী নয়
নয় কিশোর কালের পার্কে বসা ছেঁড়াছিঁড়ি
এক বটবৃক্ষ তার সুশীতল প্রশাখা অমৃত ছায়া
সে আমার জন্মদাতা পিতা-তথাগত
যার আঙ্গুলে ধরে হাঁটা শেখা
পথ চেনে নেওয়া...
স্মৃতি ভুল হতে পারে দর্পণে
হাজার মুখ
ভাসে-ডুবে হারায়- কিন্তু
আমার বাবা ধ্রুবতারার মতো অস্খলিত
যখন যেমন চাই দেখি সে
সটান দাঁড়িয়ে আছে বাহুপাশে
অফুরন্ত স্নেহ ভালবাসা
জিও
রাজীব ভট্টাচার্য
অক্ষত রাখছি খেলা
লাল নীল স্বপের বল
কমলস্বরের ক্যাকটাস
কি নিপুণ বিধে আছে
হিলহিলে নগ্নতার নৃত্যে।
বিভঙ্গে কাঁটাচামচ
খাদ্য আর খাদকের
ছুরি দিয়ে কাটছে গণতান্ত্রিক পিজা ।
লাল নীল বল গড়াচ্ছে
চকমকে বিক্ষত রাজপথ
রেম্প আজ রাতে
মিতালি
নীলদীপ চক্রবর্তী
যে লোকটা গুইজান ঘাট থেকে রোজ আসে
যে লোকটার মাথায় মাছেদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে
তাঁর জলে ছুড়ে ফেলা
চাঁদনী রাতে জোছনায় সঁপে দেওয়া –
যে লোকটা মাছেদের ঝাকা নিয়ে বসে বাজারে
মাছেদের কেটে কুটে যার হাত রক্ত হয়
জলে ছুঁড়ে ফেলা তাঁর মেয়েটির
আগামী – মাছেরা প্রতিপালন করে !
জুলে ছুঁড়ে ফেলা মেয়েটিকে গোপনে
মাছেরাই সই পেতে নেয় !
প্রকৃত-ক্যামেরা
অপাংশু দেবনাথ
ব্রহ্মতালু বরাবর ক্রমাগত নীলাভ কুন্ডলী,
ওই নীল ছুঁয়ে জেগে ওঠা চাঁদের যৌবন।
ক্ষুধার্ত রাত্রির সাথে ছবি তোলা বারণ এমন।
এই দৃশ্যে ছায়া মজে যায় শরীরে শরীরে,
ছায়াহীন চিত্র কোনো জীবন্ত মানুষের তো নয়।
পৃথিবীর শিশুরা জন্মের আগে মরে যায়,
পরেও আমাদেরই হাত মৃত্যুর দিকে যায় নিয়ে ।
এতো পাপ নিয়ে আয়নায় তাকাতে নেই কখনো,
কাচও ভাঙে চন্দ্রাহত রাত্রির ছায়ায়।
প্রকৃত-ক্যামেরা মানুষের মুখের দিকেই থাক।
চুয়াক
হারাধন বৈরাগী
ফিরে যাচ্ছি- নিঝুমপরী-
বেঘোরে--ফিরে যাচ্ছি
জঙ্গল আকাশ করেছি-আকাশ জঙ্গল
চুয়াকের ঘোরে তোমাকে বিলি কেটেছি
মাটি জড়িয়ে তোমাকেই শুঁকেছি
বনপারূকদম্পতি-উড়িয়েছো তুমি
ভালবাসা-ভালবাসা-রাত্রিগুলি ফাটিয়েছি
শরীরে গ্রহন ও বর্জনের কোন দাগ দেখিনি
কামনার আগুনে চুয়াকের ঘোর দিয়ে
হাসমতি-পরকিয়ায় মেতেছিলে তুমি
*বনপারূক-কপোত সদৃশ জঙ্গলের মায়াপাখি
*চুয়াক-জঙ্গলের নেশাপানীয় বিশেষ
বসন্তসৈনিক
চিরশ্রী দেবনাথ
চারদিকে শুধু ক্ষয় দেখি
দেখি ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে মানুষ
গাছেরা দেখছে, ঘাসেরা দেখছে
ডালপালা মেলে গাছ হাত পেতে নিচ্ছে মানুষের শরীর
ফুল হয়ে ফুটছে তারা, রুগ্ন বসন্তসৈনিক
কথা নেই, সুর নেই, আলোহীন অঙ্কুরিত ফিসফিস
সমাগত দিনে কি সব পথ দ্রবীভূত
একাকী কোন মানুষের মতো একখানা ছায়া
ফিরে দেখে না
সামনে অনুচ্চারিত, মৃদু পৃথিবী
ভালোলাগা জমা দিতে দিতে চলে যাচ্ছে
সে বুঝি, পৃথিবীর শেষ মানুষ
জীবন এক কবিতানদী
অভীক কুমার দে
শব্দরঙ বিভাজিত হলে জীবন এক কবিতানদী...
জল মাটি আলো বাতাস আর শূন্যে যখন প্রেম
কেউ কবি শব্দ শোনে কবিতার,
মনের ভাষা একা হাঁটে সৃজনের পথে।
হাতেগোনা দিনরাত পথ দেখাতে এলে
একেকটা পঙক্তি বার্ধক্যের চিত্র আঁকে,
বদলে যাওয়া অবয়বে নদীর বর্ণহীন সারাংশ।
সারাংশ থেকে উঠে আসে জীবনের পরিভাষা,
যেখানে দলবদ্ধ বর্ণনার নীলে বাস করে শূন্যতা।
হয়তো শূন্যতাও কোন গোপনীয়তা জানে,
তাই বুঝি আকাশের সব শব্দ নীল...
বৃষ্টি
প্রীতম ভট্টাচার্য
বৃষ্টির মধ্যে যখন সমুদ্র কে দেখেছি ,
ঢেউ ছাড়া সব কিছু গোপন ছিল তার ।
দ্বিধাহীন এক সত্যের সামনে ছিল
বহু সম্পর্ক এর অসমাপ্ত গল্প।
কক্ষ পথ হারিয়ে -
অচেনা গন্তব্য এর দিকে
স্থির হয়ে বসে থাকে আকাশগঙ্গা ।
পেন্সিল এ আঁকা নদী পাহাড়ের
স্কেচ থাকতেই পারে-
তবে বেঁচে থাকার জন্য
একবার হলেও নাটুকে বিদায় দরকার।
মেঘের কাছে প্রার্থনা করি
অমলকান্তি চন্দ
টুকরো টুকরো কথা গুলো সাজিয়ে রাখ তোমার স্বর যন্ত্রে
খেয়ালি সময়ে আবর্তনে গূঢ় পিপাসা বুকে
মেঘের কাছে প্রার্থনা করি
নতজানু হয় আরক্ত গোধূলি
উপাসনা গৃহে অভীষ্ট জড়তা কাটিয়ে উঠার ভান করি।
আল জিহ্বার নিপুণ সঞ্চালনে কথা গুলো কখনোবা পাখি হয়
ডানা মেলে দিতে চায় -তোমার ভোর আকাশে
সরল দুপুরে কিংবা একান্ত আপন ক্ষণে
আমি দু-হাত বাড়িয়ে দেই, আমাকে জড়িয়ে ধরো বুকে।
সময়ের ষড়যন্ত্র
সৌরভ গোস্বামী
বিশ্বাসের মোহভঙ্গ হয়েছে
বালিশের কোন বেয়ে জমাট হচ্ছে নোনাজল।
পিচ ঢালা রাস্তা দিয়ে কংক্রিট এর উঁকি,
প্রতিদিন।।
গতকালের লেখা খাতার শেষ পাতায়
সুরা পড়েছে,কিছুটা ঝাপসা তাই।
কিছু গোছানো স্বপ্ন আজ মমি,
তাই আলমারি তে রেখেছি যত্নে।।
দেওয়াল ঘড়ির সময়ানুপাতিক ষড়যন্ত্রে
অতীত একে একে ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট পেজে রুপান্তরিত।
কান পেতে মাঝে মাঝে শুনি নি:শব্দের কোলাহল,
নেশার অভ্যাসে মস্তিষ্কজাত চেতনা আজ প্রত্নতাত্ত্বিক সৌধ।।
শব্দছায়া
নীলাদ্রি ভট্টাচার্য
এখনও স্টেশনে হলুদ গন্ধের পলাতক উষ্ণতা
মাথার কাছে দড়িপাকানো সন্ধ্যার শান্ত ত্বক।
দুবেলা হাতভরা নরম বাতাস পকেটে তুলে
আমার ছায়া মাটির ঘরে ফিরে।
চিরবধির মানুষ্যজন্মের টানাপোড়ন
সন্তর্পণে বোধের রক্ত চতুষ্কোণ
নিয়মিত নষ্ট কাগজে মহাকাশ খোঁজে
আমার ছায়া একান্তে ঘরে ফিরে।
কোকিল বেলা
অনুরাগ ভৌমিক
ঐ নাভিমূলে আমার সমাধি হোক...
মুহূর্তে প্রেমিক হতে পারি,হতে পারি কবি।
বসন্ত ছুটে কোকিলের পিছে,
সম্রাট হওয়ার ইচ্ছে নেই,
তবু ভালোবাসার মুকুট পরতে চাই ।
এইভাবে একটু আশ্রয় সময়ের বৃহত বুকে,
সূর্যের সাথে পশ্চিমে চলে কোকিল বেলা...
স্মৃতি
ধ্রুবজ্যোতি মজুমদার
বেশ থেমে আছে সময়টা
অথচ বদলায় ক্যালেন্ডার
ইতিউতি ঘোরাফেরা করে প্রেম
কবিতার জামা গায়ে ।
এক একটি মিনিটের হৃদয়ে
শুধু ষাটটি সেকেন্ড নয়,
কল্পযুগ
সৃষ্টি স্থিতি,
তবে লয় বিহীন ।
সব মিলিয়ে আমার জাগতিক দশটি মিনিট
অপরিমেয় অনন্ত ,
হাজারো লাখো জীবনমৃত্যু চক্র শেষেও
অসমাপ্য সেই ক্ষণ।
যে ক্ষণের চারপাশে
ধ্বনিত হচ্ছে ঐশী বৈদিক তান
সদগুরু বন্দনার ঊজ্জীবনী তরঙ্গ
লোকে লোকারণ্য উৎসব মুখর
একটি গ্রামীণ পাহাড়ি জনপদ।
মনে পড়ে কুরুক্ষেত্র
সেই মাঠেও একবার থেমেছিলো কাল
অর্জুন দেখেছিল পরম সত্য ,
আমার সত্যের গায়ে অন্য জামা
এক শুভ্রবসনা মূর্তি
চোখেমুখে অফুরান অনুসন্ধানী আলো
নেহাত সাদামাটা চিত্রপট।
অথচ যেনো -
জন্মান্তরের প্রতীক্ষার অবসান
অনাবিল তৃপ্ততা নিয়ে আসা
কয়েক সেকেন্ডর দৃষ্টি বিনিময়,
লৌকিক শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের শেষে
মুহূর্তেই বিদায়ের পালা।
ক্ষণিকের সেই স্বর্গীয় অনুভুতির--
অপ্রকাশ্য ইন্দ্রজালে মোহাবিষ্ট ঘন্টা মিনিটেরা,
স্থুল সময় গড়িয়েছে বহুদূরে।
ধ্যানস্থ জীবন আবর্তিত হচ্ছে; হোক্
মূহুর্তকে কেন্দ্র করে।।
গল্প বিভাগ :
রিডাকশন
বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য
কিছু অসংলগ্ন দৃশ্য
মেঘমালা দে মহন্ত
দৃশ্যঃ ১
উৎসবে মেতেছে গোটা কাশীপুর গ্রাম । অনেক পূজা-পার্বণ-ব্রত-হুজুগের একঘেয়ে জীবনে নতুন কিছুর আয়োজন । গ্রামের শিক্ষিত ছেলেরা মিলে গড়েছে গো-রক্ষা সেবা সঙ্ঘ । জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে স্বদেশ ।সেই ছেলেরাই এবার করবে গো-সেবা উৎসব কাশীপুর গ্রামে ।একঘর মুসলমানের হিন্দু-গ্রাম কাশীপুরে সাজো সাজো রব । বাদ যায়নি সেই ‘একঘর’ও।গফুরের মহেশকে বাছা হয়েছে গো-সেবা সম্প্রিতীর প্রতীক করে ।
দৃশ্যঃ ২
তিনদিন বিছানায় পড়ে আছে গফুর ।খিদে পেটে জ্বরের ঘোরে কখনও প্রলাপ বকছে জোর – কখনও শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেছে প্রায় ভেঙ্গে পড়া ঘরের বাঁশের বেড়াগুলোর দিকে –আবার কখনও মড়ার মতো পড়ে রয়েছে বেহুশ।ভাগ্যিস বৃষ্টি হয়নি এই ক’দিন । তাই বেহুঁশ হয়ে অন্তত পা ছড়িয়ে পড়ে থাকা নসীব হয়েছে নয়তো বাপ-বেটিকে ঘরের কোনে গুটিসুটি বসেই সহ্য করতে হত বৃষ্টির দাপট । আমিনা গত দু’দিন ঠায় বসে আছে গফুরের কাছে ।প্রথম দিন মেয়েটা এদিক ওদিক সারা গ্রাম ঘুরেছে বাপের জন্য সামান্য ঔষধ-পথ্যি জোগাড়ের চেষ্টায় ।সুবিধে করতে পারেনি কোথাও ।গোটা গ্রাম ব্যস্ত জীব-প্রেম উৎসব আয়োজনে । শুদ্ধতা রক্ষার রক্তচক্ষুতে দিশেহারা হতাশ আমিনা ঘরে ফিরে এসেছে লোলুপ কিছু দৃষ্টি গায়ে মেখে ।মেয়েটার দিকে তাকাতে পারেনা গফুর – বুকের যন্ত্রনা বেড়ে যায় ।কী হবে তার এই মা-মরা মেয়েটার !চালে খড়ের অভাবে ফুটে ওঠা টুকরো টুকরো অনেক আকাশ যে কোন সময় মিশে যাবে এক আকাশে –নড়বড়ে বেড়াগুলো যে কোন সময় ঘরটাকে মিশিয়ে দেবে খোলা দিগন্তে – যে কোন সময় গফুরও মিশে যাবে – কোথায়, গফুর জানে না ।শুধু জানে , একা এই ঘরে ঝড়-জল-বৃষ্টি-জ্যোৎস্না-অন্ধকার-রোদে-ক্ষুধায় খাদ্য হয়ে পড়ে থাকবে একা আমিনা ।হাড় সর্বস্ব বুকের খাঁচাটার ওঠানামা অস্বাভাবিক রকমের বাড়তে বাড়তে থেমে যায় এক সময় । পাশে বসে থাকে নিশ্চুপ হতবাক গফুরের ‘একা আমিনা’।
দৃশ্যঃ ৩
তিনদিন বিছানায় পড়ে আছে গফুরের ‘একা আমিনা’ ।তবে বাপ মারা যাওয়ার পর এই তিনদিন রোদ-জল-আলো-অন্ধকারে একা থাকেনি আমিনা ।গফুরের মৃত্যুর পরদিনই সশব্দে তাকে তুলে এনে গ্রামের শেষ প্রান্তে পাহাড় ঘেরা জঙ্গলের শুরু যেখানে সেখানে এই ঘরটাতে রেখেছে ছেলেগুলো ।তারা কারা আমিনা জানে না । শুধু জানে বাপ হারানোর একাকীত্ব ধারেকাছেও আসতে দেয়নি ছেলেগুলো ।অত্যচার-যন্ত্রনায় নীল আমিনা চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকে ।তাকে ঘিরে চারপাশে চলে পাশবিক উল্লাস।
এভাবেই তিনদিন শেষে ভোরবেলা গ্রামের পরিত্যক্ত ভাগাড়ের ধার ঘেষে নদীর বাঁকে ভেসে চলে গফুরের ‘একা আমিনা’।
দৃশ্যঃ ৪
তিনদিন ধরে মহেশ সহ্য করে চলে স্বদেশ তথা জীব-সেবার ধকল । প্রহরে প্রহরে মাখানো তেল সিঁদুর চন্দনে একাকার গোটা শরীর । চাল-কলা-ফলের জমানো স্তুপের গন্ধে গা গুলিয়ে আসে –কাঁসর ঘন্টা আর মাইকের বিকট আওয়াজে হতবাক মহেশের ভয়ার্ত চোখ তিন দিন গোটা গ্রামের ভিড়ে খোঁজে শুধু গফুর আমিনাকে ।ইচ্ছে করে ছুটে পালিয়ে যায় কিন্তু মাথায় লালফেট্টি বাঁধা লাঠি হাতে ছেলেগুলোকে দেখে ভরসা পায় না। নিস্তেজ পড়ে থাকে ।
তিনদিন তিনরাত উৎসব শেষে খুলে দেয়া হয়েছে জরি জড়ানো মহেশের বেঁধে রাখা দড়ি ।গলায় ফুলের মালা, সিঁদুরের টিপ কপালে দিগন্তে মিশে যাওয়া বাড়িটা খুঁজে চলে গফুর-আমিনার ‘একা মহেশ’।
৩ টি অনুগল্প
বই
রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ
দুপুরের ভাত খেয়ে বিছানায় শরীরটা একটু এলিয়ে দিলেন অমরেশ বাবু।
সাত পাঁচ ভেবে টেবিল থেকে গল্পের বইটা আবারো হাতে নিলেন। বইটি কি করে তার বইয়ের তাকে আসলো সেটাই দুদিন ধরে মনে করতে পারছেন না। অথচ গল্পগুলির জন্য লেখককে কুর্নিশ জানানোর প্রবল ইচ্ছে...
ফোনের রিংটোন বাজতেই থতমত হয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন অমরেশ বাবু। বুকের ওপর থেকে গল্পের বইটি টেবিলে রেখে জলপান করতে করতে রাস্তায় চেঁচামিচি শুনতে পেলেন।
চশমাটা চোখে দিয়ে চেঁচামিচি উৎস খুঁজতে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এলেন। কিছু মানুষ জটলা হয়ে রয়েছে।তাদের ঠেলে সামনে যেতেই চমকে উঠলেন। রাস্তায় পড়ে রয়েছে তার থেথলানো দেহ।হাতে সেই গল্পের বই...
অভিমান
রতন টাকাটা চুরি করলো । তুমি কিছু বলবে না ।
-কি বলবো ? নিয়েছে তো তর ভাই । ভাইয়ের টাকা ভাই নিয়েছে । এতে বলার কী আছে ।
-বা । জিজ্ঞেস না করে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে গেল । মদ গাঁজা খেয়ে অতগুলো টাকা উড়িয়ে দেবে । টাকাগুলো যে রান্নাঘরটা মেরামত করবার জন্য বেশি সুদে এনেছি । সে দিকে খেয়াল আছে ।
-আ বেশি বকবক করিস না । এখান থেকে সরে পর ।
সুশীল আর কথা বাড়াল না । বুঝল এ সব কথা মাকে বলে লাভ নেই । সে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো ।
ঘড়ির কাটায় তখন ১০ টা । সুশীলের ছোট বোন রত্না বললো , মা তুমি বীনা দোষে দাদাকে বকলে । রতনের দোষ । অতগুলো টাকা চুরি করলো ।তুমি কিছু বললে না ।
-কি বলবো বল । সুশীল শান্ত ছেলে ।মা বকলে কিছু বলবে না । চুপ করে থাকবে । আর রতন জানোয়ারটা কে কিছু বললে তো বাড়িতে আগুন লাগিয়ে ছাড়বে ।
-তাই বলে সবসময় ...
ভোরের আলো চারধারে ছড়িয়ে পড়েছে ।সুশীল রাতে বাড়ি ফিরেনি । সুশীলের অপেক্ষায় মা সারারাত উঠোনে পায়চারি করে কাটিয়ে দেয় ।সারা মুখে চিন্তার ছাপ । ছেলেটা না খেয়ে সারারাত কোথায় ছিল এসব চিন্তা তাকে জর্জরিত করছিল । এমন সময় সুশীলের বন্ধু শৈলেন দ্রুত দৌড়ে বাড়িতে ডুকলো । হাফাতে হাফাতে বললো । মাসিমা দ্রুত আমবাগানে চলুন ।
কেন,হঠাৎ আমবাগানে । কি হল ।
সুশীল আমবাগানে ফাঁসি দিয়েছে
কবি
রৌদ্রদগ্ধ আয়নায় ক্যালেন্ডারের শনির চিত্র ফুটে উঠতেই কবি তৃপ্ত কন্ঠে ঢেকুর তুললো।কবির জংশন নাকি ইদানীং খুব সরগরম চলছে। পুরোনো স্নেহগুলি মাড়িয়ে সদ্য প্রেম করতে শিখেছে।
বিকেলের হাওয়ায় কলার উঁচিয়ে বাইকের তুমুল গতি তুলে দীপ্ত কন্ঠে কবি বলতে লাগলো 'এবারের সংখ্যাটা প্রকাশের আগে ফেইসবুকে ঝাক্কাস একটা বিতর্ক বাধাতে হবে।যেন তরতর করে ছড়িয়ে পড়ে ম্যাগাজিনের নাম।'
নির্মল পেছনে বসে নিশ্চুপ হয়ে কথাগুলি শুনছিল। বন্ধুর লেখালেখি নিয়ে তার ততটা মোহ নেই। কবিতা কবিতা করে ভবঘুরে হয়ে বন্ধুর জীবনটা নষ্ট হচ্ছে এমন একটা বদ্ধ ধারনা তার। নির্মল আলতো করে বললো 'কবিতা না বাল।এই সব নিয়ে কতদিন জীবন চালাবি। নিষ্কর্মা দের কাজ হল কবিতা নিয়ে পড়ে থাকা। কতদিন বললাম মিছিল মিটিংয়ে আয়। এতদিনে ঠিক কিছু একটা হয়ে যেত'
কবি এক মিলিয়ন হাসি উড়িয়ে বললো 'তা যা বলেছিস।আরতো ছয় মাস।এরপর তোর কি হবে। মিছিল মিটিং করে তোর কি হল।'
নির্মল আর কথা বাড়াবার সাহস পেল না। এক কথায় সে যেন জব্দ হয়ে গেল।
২)
বাইক থেকে নেমে প্রেসে ঢুকতেই কানে আসলো '১৮ তে বামফ্রন্ট সরকার আইতাছে ফিরিয়া' গানটা।ভোটের বাজারে এইসব গান এখন মুড়িমুড়কি মত অলিতেগলিতে ভেসে বেড়ায়।গানটা গুনগুন করেই কবি ভেতরে ঢুকলো। প্রেসে ডুকতেই দেখতে পেলেন গৌতম বাবুকে। গৌতম বাবু একটি অনলাইন ম্যাগাজিনের সম্পাদক।
গৌতম বাবু কবিকে দেখেই বলে উঠলেন 'এই যে ইয়ং বয়েজ। লেখাজোঁকা কেমন চলছে। '
কবি গৌতম বাবুকে দেখে বললেন ' আপনি এখানে। আমিতো এলাম এই দশক ম্যাগাজিনের নতুন সংখ্যা কপি গুলি নেবার জন্য।কাল প্রকাশ হবে।'
গৌতম বাবু বললো 'বাহ!দারুণ খবর। শুনে ভালো লাগলো।চালিয়ে যা। কোন দরকার লাগলে অবশ্যই বলবি।'
কবি হেসে উঠে। গৌতম বাবুকে পুরোনো একটা কথা মনে করিয়ে বেশ লজ্জায় ফেলে দিল। সে বললো ' গত সংখ্যায় লেখা চেয়েছিলাম। অনেক ঘুরিয়ে দেবেন দেবেন বলেতো দিলেন না।এরপরে কি আশা করা যায় বলুন'
কবির কথা শুনে বেশ ইতস্তত হয়ে গৌতম বাবু বললো ' সেবার এত ঝামেলায় ছিলাম সত্যি সময় করে উঠতে পারিনি। '
'তা যা বলেছেন। কলকাতা পত্রিকা গুলিতে তখন আপনার ডজন ডজন লেখা প্রকাশ পেল।আর আমরা চাইলেই বাহানা করছেন।'
কবির মুখে এমন কর্কশ কথা শুনবে বলে আশা করেনি গৌতম বাবু।তিনি আর কথা বাড়ালেন না।দু এক কথা বলে সেখান থেকে সটকে পড়েন।
৩)
ম্যাগাজিনের কপি গুলি ঠিকঠাক বুঝে নিয়ে কবি বাইরে এসে দেখতে পেলেন নির্মল দিব্যি ফোনে কথা বলতে বলতে সিগেরেট টানছে।
' এই তাড়াতাড়ি চল।মিছিল আসছে এপথে।দ্রুত বেরিয়ে যেতে হবে।মিছিলে আটকা পড়লে কত সময় লাগবে কে জানে' কবি কথা গুলি আওড়াতে আওড়াতে দ্রুত বাইক স্টার্ট করলো। মুহুত্তে পেছন থেকে ভেসে এল একটি কর্কশ শব্দ।
৪)
চোখ খুলে কবি দেখতে পেলেন গৌতম ট্রাকের চাকার নিচ থেকে তার দুটুকরো দেহটা টেনে বের করছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিভাগ :
মুখবন্ধ
বোতল সংস্কারে জলীয় ভাষা...
জলীয় ভাষা ভেঙ্গে তরতরে এগিয়ে চলছে জ্যোৎস্নামাখা পরমায়ু। পূর্বোত্তরের টংঘর থেকে মেঘের বারান্দায় শব্দের ঝংকারে ভেসে উঠে জীবন্ত স্নায়ু। বোতল সংস্কারে লিপিবদ্ধ কণাধর্ম ছেড়ে এগিয়ে চলছে সাংবিধানিক সংকেত। সাহিত্য পাড়ায় আনাচেকানাচে মেঘের শিরায় উপশিরায় উদয় হচ্ছে রঙিন ভাবনা। ভুরি ভুরি কাব্য দাহনে প্রতিদিন ঢেউতোলা চেতনায় করিডোর ভিত পাকাপোক্তে সরগরম...
----রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ
আগরতলা, ত্রিপুরা
কবিতা বিভাগ :
জ্যামিতিক
দেবলীনা সেনগুপ্ত
চিলেকোঠা ছুঁয়ে থাকে
একফালি রৌদ্রবিলাস
আপেল খেতের বৈভবী বাতাস
তাকে শেখায় জ্যামিতিক নকশাসব
জীবন মানে বৃত্ত , উপবৃত্ত
প্রেম ত্রিকোণ , পরিবার চতুর্ভুজ
কে কাকে লালন করে
কার ভেতরে রাখে কাকে
তা নিয়েই গড়ে ওঠে যাপন কথা, জীবনের।
সময় তা শোনেনা
রোদের ফালিটুকু গুটিয়ে নিয়ে
রাখে দরজার ধারে
প্রতি ঋতুর ক্ষরণে
রোদের গালিচায় সে আনে
অসময়ের গ্রীষ্ম , অকারণ বসন্ত
ত্রিভুজ ও বৃত্তের পাশে খেলে
অকাজের কাটাকুটি খেলা
লেখা হয়,মৌলিক বর্ণমালা
রাত্রি
বিজয় ঘোষ
রাত্রি দ্রুত রং বদল করছে। ধূসর।কালো।আবছায়া ।এক আধভাঙা চাঁদের মিহি রুপোলি রঙ।রাত্রির কথকতা কোনও এক রাতচড়া পাখির মতো।বরাকের জলে।নৌকার পাটাতনে যামিনী একা জেগে আছে।মাছেদের প্রেমে রাত্রির কারুকাজ ঝিলিমিলি করে।রাত্রি রঙ পালটায় ব্রহ্মপুত্রে।কুশিয়ারা হাত বাড়িয়ে দেয়। অথচ বাংলা-রঙে মিশে যায় লাল।'আয় তবে ভানুমতীর খেল দেখাই'।ক্ষপা ,রাত্রিকে বলে। রাত্রি হেসে কুটিপাটি।যামিনীর গালটিপে বলে,'আর কুয়ারা করতে লাগবো না।'
এতক্ষণ মিসকল মিসকল খেলছিল।যতসব পাড়াগেয়ে সেক্সি মেয়েরা।
গুলাল
সুমিতা ধর বসুঠাকুর
তোর গলি দিয়ে হেঁটে গেলে যে ঝিঁঝিট সুরের রেশ
কবিতাকে ঘুমাতে বলেছি একটু শীত মেখে তার গায়ে
খোসা ছাড়ানো বসন্তের রঙ মাটির সিঁদুর
টইটুম্বুর মুকুলে এখন মা মা গন্ধ,
অপেক্ষার সুতো বাঁধা রয়েছে-
কবিতা,চোখ খুলিস না এই করবী বসন্তে
তার ফলে ভরা আছে ঘুম নির্যাস।
দর্পণে হাজার মুখ।।
আবু আশফাক্ব চৌধুরী।।
একটা মুখ
না চাইলেও বারবার ফিরে আসে
প্রেমকামুক উচ্ছল কোন সুনয়না যুবতী নয়
নয় কিশোর কালের পার্কে বসা ছেঁড়াছিঁড়ি
এক বটবৃক্ষ তার সুশীতল প্রশাখা অমৃত ছায়া
সে আমার জন্মদাতা পিতা-তথাগত
যার আঙ্গুলে ধরে হাঁটা শেখা
পথ চেনে নেওয়া...
স্মৃতি ভুল হতে পারে দর্পণে
হাজার মুখ
ভাসে-ডুবে হারায়- কিন্তু
আমার বাবা ধ্রুবতারার মতো অস্খলিত
যখন যেমন চাই দেখি সে
সটান দাঁড়িয়ে আছে বাহুপাশে
অফুরন্ত স্নেহ ভালবাসা
জিও
রাজীব ভট্টাচার্য
অক্ষত রাখছি খেলা
লাল নীল স্বপের বল
কমলস্বরের ক্যাকটাস
কি নিপুণ বিধে আছে
হিলহিলে নগ্নতার নৃত্যে।
বিভঙ্গে কাঁটাচামচ
খাদ্য আর খাদকের
ছুরি দিয়ে কাটছে গণতান্ত্রিক পিজা ।
লাল নীল বল গড়াচ্ছে
চকমকে বিক্ষত রাজপথ
রেম্প আজ রাতে
মিতালি
নীলদীপ চক্রবর্তী
যে লোকটা গুইজান ঘাট থেকে রোজ আসে
যে লোকটার মাথায় মাছেদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে
তাঁর জলে ছুড়ে ফেলা
চাঁদনী রাতে জোছনায় সঁপে দেওয়া –
যে লোকটা মাছেদের ঝাকা নিয়ে বসে বাজারে
মাছেদের কেটে কুটে যার হাত রক্ত হয়
জলে ছুঁড়ে ফেলা তাঁর মেয়েটির
আগামী – মাছেরা প্রতিপালন করে !
জুলে ছুঁড়ে ফেলা মেয়েটিকে গোপনে
মাছেরাই সই পেতে নেয় !
প্রকৃত-ক্যামেরা
অপাংশু দেবনাথ
ব্রহ্মতালু বরাবর ক্রমাগত নীলাভ কুন্ডলী,
ওই নীল ছুঁয়ে জেগে ওঠা চাঁদের যৌবন।
ক্ষুধার্ত রাত্রির সাথে ছবি তোলা বারণ এমন।
এই দৃশ্যে ছায়া মজে যায় শরীরে শরীরে,
ছায়াহীন চিত্র কোনো জীবন্ত মানুষের তো নয়।
পৃথিবীর শিশুরা জন্মের আগে মরে যায়,
পরেও আমাদেরই হাত মৃত্যুর দিকে যায় নিয়ে ।
এতো পাপ নিয়ে আয়নায় তাকাতে নেই কখনো,
কাচও ভাঙে চন্দ্রাহত রাত্রির ছায়ায়।
প্রকৃত-ক্যামেরা মানুষের মুখের দিকেই থাক।
চুয়াক
হারাধন বৈরাগী
ফিরে যাচ্ছি- নিঝুমপরী-
বেঘোরে--ফিরে যাচ্ছি
জঙ্গল আকাশ করেছি-আকাশ জঙ্গল
চুয়াকের ঘোরে তোমাকে বিলি কেটেছি
মাটি জড়িয়ে তোমাকেই শুঁকেছি
বনপারূকদম্পতি-উড়িয়েছো তুমি
ভালবাসা-ভালবাসা-রাত্রিগুলি ফাটিয়েছি
শরীরে গ্রহন ও বর্জনের কোন দাগ দেখিনি
কামনার আগুনে চুয়াকের ঘোর দিয়ে
হাসমতি-পরকিয়ায় মেতেছিলে তুমি
*বনপারূক-কপোত সদৃশ জঙ্গলের মায়াপাখি
*চুয়াক-জঙ্গলের নেশাপানীয় বিশেষ
বসন্তসৈনিক
চিরশ্রী দেবনাথ
চারদিকে শুধু ক্ষয় দেখি
দেখি ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে মানুষ
গাছেরা দেখছে, ঘাসেরা দেখছে
ডালপালা মেলে গাছ হাত পেতে নিচ্ছে মানুষের শরীর
ফুল হয়ে ফুটছে তারা, রুগ্ন বসন্তসৈনিক
কথা নেই, সুর নেই, আলোহীন অঙ্কুরিত ফিসফিস
সমাগত দিনে কি সব পথ দ্রবীভূত
একাকী কোন মানুষের মতো একখানা ছায়া
ফিরে দেখে না
সামনে অনুচ্চারিত, মৃদু পৃথিবী
ভালোলাগা জমা দিতে দিতে চলে যাচ্ছে
সে বুঝি, পৃথিবীর শেষ মানুষ
জীবন এক কবিতানদী
অভীক কুমার দে
শব্দরঙ বিভাজিত হলে জীবন এক কবিতানদী...
জল মাটি আলো বাতাস আর শূন্যে যখন প্রেম
কেউ কবি শব্দ শোনে কবিতার,
মনের ভাষা একা হাঁটে সৃজনের পথে।
হাতেগোনা দিনরাত পথ দেখাতে এলে
একেকটা পঙক্তি বার্ধক্যের চিত্র আঁকে,
বদলে যাওয়া অবয়বে নদীর বর্ণহীন সারাংশ।
সারাংশ থেকে উঠে আসে জীবনের পরিভাষা,
যেখানে দলবদ্ধ বর্ণনার নীলে বাস করে শূন্যতা।
হয়তো শূন্যতাও কোন গোপনীয়তা জানে,
তাই বুঝি আকাশের সব শব্দ নীল...
বৃষ্টি
প্রীতম ভট্টাচার্য
বৃষ্টির মধ্যে যখন সমুদ্র কে দেখেছি ,
ঢেউ ছাড়া সব কিছু গোপন ছিল তার ।
দ্বিধাহীন এক সত্যের সামনে ছিল
বহু সম্পর্ক এর অসমাপ্ত গল্প।
কক্ষ পথ হারিয়ে -
অচেনা গন্তব্য এর দিকে
স্থির হয়ে বসে থাকে আকাশগঙ্গা ।
পেন্সিল এ আঁকা নদী পাহাড়ের
স্কেচ থাকতেই পারে-
তবে বেঁচে থাকার জন্য
একবার হলেও নাটুকে বিদায় দরকার।
মেঘের কাছে প্রার্থনা করি
অমলকান্তি চন্দ
টুকরো টুকরো কথা গুলো সাজিয়ে রাখ তোমার স্বর যন্ত্রে
খেয়ালি সময়ে আবর্তনে গূঢ় পিপাসা বুকে
মেঘের কাছে প্রার্থনা করি
নতজানু হয় আরক্ত গোধূলি
উপাসনা গৃহে অভীষ্ট জড়তা কাটিয়ে উঠার ভান করি।
আল জিহ্বার নিপুণ সঞ্চালনে কথা গুলো কখনোবা পাখি হয়
ডানা মেলে দিতে চায় -তোমার ভোর আকাশে
সরল দুপুরে কিংবা একান্ত আপন ক্ষণে
আমি দু-হাত বাড়িয়ে দেই, আমাকে জড়িয়ে ধরো বুকে।
সময়ের ষড়যন্ত্র
সৌরভ গোস্বামী
বিশ্বাসের মোহভঙ্গ হয়েছে
বালিশের কোন বেয়ে জমাট হচ্ছে নোনাজল।
পিচ ঢালা রাস্তা দিয়ে কংক্রিট এর উঁকি,
প্রতিদিন।।
গতকালের লেখা খাতার শেষ পাতায়
সুরা পড়েছে,কিছুটা ঝাপসা তাই।
কিছু গোছানো স্বপ্ন আজ মমি,
তাই আলমারি তে রেখেছি যত্নে।।
দেওয়াল ঘড়ির সময়ানুপাতিক ষড়যন্ত্রে
অতীত একে একে ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট পেজে রুপান্তরিত।
কান পেতে মাঝে মাঝে শুনি নি:শব্দের কোলাহল,
নেশার অভ্যাসে মস্তিষ্কজাত চেতনা আজ প্রত্নতাত্ত্বিক সৌধ।।
শব্দছায়া
নীলাদ্রি ভট্টাচার্য
এখনও স্টেশনে হলুদ গন্ধের পলাতক উষ্ণতা
মাথার কাছে দড়িপাকানো সন্ধ্যার শান্ত ত্বক।
দুবেলা হাতভরা নরম বাতাস পকেটে তুলে
আমার ছায়া মাটির ঘরে ফিরে।
চিরবধির মানুষ্যজন্মের টানাপোড়ন
সন্তর্পণে বোধের রক্ত চতুষ্কোণ
নিয়মিত নষ্ট কাগজে মহাকাশ খোঁজে
আমার ছায়া একান্তে ঘরে ফিরে।
কোকিল বেলা
অনুরাগ ভৌমিক
ঐ নাভিমূলে আমার সমাধি হোক...
মুহূর্তে প্রেমিক হতে পারি,হতে পারি কবি।
বসন্ত ছুটে কোকিলের পিছে,
সম্রাট হওয়ার ইচ্ছে নেই,
তবু ভালোবাসার মুকুট পরতে চাই ।
এইভাবে একটু আশ্রয় সময়ের বৃহত বুকে,
সূর্যের সাথে পশ্চিমে চলে কোকিল বেলা...
স্মৃতি
ধ্রুবজ্যোতি মজুমদার
বেশ থেমে আছে সময়টা
অথচ বদলায় ক্যালেন্ডার
ইতিউতি ঘোরাফেরা করে প্রেম
কবিতার জামা গায়ে ।
এক একটি মিনিটের হৃদয়ে
শুধু ষাটটি সেকেন্ড নয়,
কল্পযুগ
সৃষ্টি স্থিতি,
তবে লয় বিহীন ।
সব মিলিয়ে আমার জাগতিক দশটি মিনিট
অপরিমেয় অনন্ত ,
হাজারো লাখো জীবনমৃত্যু চক্র শেষেও
অসমাপ্য সেই ক্ষণ।
যে ক্ষণের চারপাশে
ধ্বনিত হচ্ছে ঐশী বৈদিক তান
সদগুরু বন্দনার ঊজ্জীবনী তরঙ্গ
লোকে লোকারণ্য উৎসব মুখর
একটি গ্রামীণ পাহাড়ি জনপদ।
মনে পড়ে কুরুক্ষেত্র
সেই মাঠেও একবার থেমেছিলো কাল
অর্জুন দেখেছিল পরম সত্য ,
আমার সত্যের গায়ে অন্য জামা
এক শুভ্রবসনা মূর্তি
চোখেমুখে অফুরান অনুসন্ধানী আলো
নেহাত সাদামাটা চিত্রপট।
অথচ যেনো -
জন্মান্তরের প্রতীক্ষার অবসান
অনাবিল তৃপ্ততা নিয়ে আসা
কয়েক সেকেন্ডর দৃষ্টি বিনিময়,
লৌকিক শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের শেষে
মুহূর্তেই বিদায়ের পালা।
ক্ষণিকের সেই স্বর্গীয় অনুভুতির--
অপ্রকাশ্য ইন্দ্রজালে মোহাবিষ্ট ঘন্টা মিনিটেরা,
স্থুল সময় গড়িয়েছে বহুদূরে।
ধ্যানস্থ জীবন আবর্তিত হচ্ছে; হোক্
মূহুর্তকে কেন্দ্র করে।।
গল্প বিভাগ :
রিডাকশন
বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য
কিছু অসংলগ্ন দৃশ্য
মেঘমালা দে মহন্ত
দৃশ্যঃ ১
উৎসবে মেতেছে গোটা কাশীপুর গ্রাম । অনেক পূজা-পার্বণ-ব্রত-হুজুগের একঘেয়ে জীবনে নতুন কিছুর আয়োজন । গ্রামের শিক্ষিত ছেলেরা মিলে গড়েছে গো-রক্ষা সেবা সঙ্ঘ । জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে স্বদেশ ।সেই ছেলেরাই এবার করবে গো-সেবা উৎসব কাশীপুর গ্রামে ।একঘর মুসলমানের হিন্দু-গ্রাম কাশীপুরে সাজো সাজো রব । বাদ যায়নি সেই ‘একঘর’ও।গফুরের মহেশকে বাছা হয়েছে গো-সেবা সম্প্রিতীর প্রতীক করে ।
দৃশ্যঃ ২
তিনদিন বিছানায় পড়ে আছে গফুর ।খিদে পেটে জ্বরের ঘোরে কখনও প্রলাপ বকছে জোর – কখনও শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেছে প্রায় ভেঙ্গে পড়া ঘরের বাঁশের বেড়াগুলোর দিকে –আবার কখনও মড়ার মতো পড়ে রয়েছে বেহুশ।ভাগ্যিস বৃষ্টি হয়নি এই ক’দিন । তাই বেহুঁশ হয়ে অন্তত পা ছড়িয়ে পড়ে থাকা নসীব হয়েছে নয়তো বাপ-বেটিকে ঘরের কোনে গুটিসুটি বসেই সহ্য করতে হত বৃষ্টির দাপট । আমিনা গত দু’দিন ঠায় বসে আছে গফুরের কাছে ।প্রথম দিন মেয়েটা এদিক ওদিক সারা গ্রাম ঘুরেছে বাপের জন্য সামান্য ঔষধ-পথ্যি জোগাড়ের চেষ্টায় ।সুবিধে করতে পারেনি কোথাও ।গোটা গ্রাম ব্যস্ত জীব-প্রেম উৎসব আয়োজনে । শুদ্ধতা রক্ষার রক্তচক্ষুতে দিশেহারা হতাশ আমিনা ঘরে ফিরে এসেছে লোলুপ কিছু দৃষ্টি গায়ে মেখে ।মেয়েটার দিকে তাকাতে পারেনা গফুর – বুকের যন্ত্রনা বেড়ে যায় ।কী হবে তার এই মা-মরা মেয়েটার !চালে খড়ের অভাবে ফুটে ওঠা টুকরো টুকরো অনেক আকাশ যে কোন সময় মিশে যাবে এক আকাশে –নড়বড়ে বেড়াগুলো যে কোন সময় ঘরটাকে মিশিয়ে দেবে খোলা দিগন্তে – যে কোন সময় গফুরও মিশে যাবে – কোথায়, গফুর জানে না ।শুধু জানে , একা এই ঘরে ঝড়-জল-বৃষ্টি-জ্যোৎস্না-অন্ধকার-রোদে-ক্ষুধায় খাদ্য হয়ে পড়ে থাকবে একা আমিনা ।হাড় সর্বস্ব বুকের খাঁচাটার ওঠানামা অস্বাভাবিক রকমের বাড়তে বাড়তে থেমে যায় এক সময় । পাশে বসে থাকে নিশ্চুপ হতবাক গফুরের ‘একা আমিনা’।
দৃশ্যঃ ৩
তিনদিন বিছানায় পড়ে আছে গফুরের ‘একা আমিনা’ ।তবে বাপ মারা যাওয়ার পর এই তিনদিন রোদ-জল-আলো-অন্ধকারে একা থাকেনি আমিনা ।গফুরের মৃত্যুর পরদিনই সশব্দে তাকে তুলে এনে গ্রামের শেষ প্রান্তে পাহাড় ঘেরা জঙ্গলের শুরু যেখানে সেখানে এই ঘরটাতে রেখেছে ছেলেগুলো ।তারা কারা আমিনা জানে না । শুধু জানে বাপ হারানোর একাকীত্ব ধারেকাছেও আসতে দেয়নি ছেলেগুলো ।অত্যচার-যন্ত্রনায় নীল আমিনা চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকে ।তাকে ঘিরে চারপাশে চলে পাশবিক উল্লাস।
এভাবেই তিনদিন শেষে ভোরবেলা গ্রামের পরিত্যক্ত ভাগাড়ের ধার ঘেষে নদীর বাঁকে ভেসে চলে গফুরের ‘একা আমিনা’।
দৃশ্যঃ ৪
তিনদিন ধরে মহেশ সহ্য করে চলে স্বদেশ তথা জীব-সেবার ধকল । প্রহরে প্রহরে মাখানো তেল সিঁদুর চন্দনে একাকার গোটা শরীর । চাল-কলা-ফলের জমানো স্তুপের গন্ধে গা গুলিয়ে আসে –কাঁসর ঘন্টা আর মাইকের বিকট আওয়াজে হতবাক মহেশের ভয়ার্ত চোখ তিন দিন গোটা গ্রামের ভিড়ে খোঁজে শুধু গফুর আমিনাকে ।ইচ্ছে করে ছুটে পালিয়ে যায় কিন্তু মাথায় লালফেট্টি বাঁধা লাঠি হাতে ছেলেগুলোকে দেখে ভরসা পায় না। নিস্তেজ পড়ে থাকে ।
তিনদিন তিনরাত উৎসব শেষে খুলে দেয়া হয়েছে জরি জড়ানো মহেশের বেঁধে রাখা দড়ি ।গলায় ফুলের মালা, সিঁদুরের টিপ কপালে দিগন্তে মিশে যাওয়া বাড়িটা খুঁজে চলে গফুর-আমিনার ‘একা মহেশ’।
৩ টি অনুগল্প
বই
রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ
দুপুরের ভাত খেয়ে বিছানায় শরীরটা একটু এলিয়ে দিলেন অমরেশ বাবু।
সাত পাঁচ ভেবে টেবিল থেকে গল্পের বইটা আবারো হাতে নিলেন। বইটি কি করে তার বইয়ের তাকে আসলো সেটাই দুদিন ধরে মনে করতে পারছেন না। অথচ গল্পগুলির জন্য লেখককে কুর্নিশ জানানোর প্রবল ইচ্ছে...
ফোনের রিংটোন বাজতেই থতমত হয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন অমরেশ বাবু। বুকের ওপর থেকে গল্পের বইটি টেবিলে রেখে জলপান করতে করতে রাস্তায় চেঁচামিচি শুনতে পেলেন।
চশমাটা চোখে দিয়ে চেঁচামিচি উৎস খুঁজতে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এলেন। কিছু মানুষ জটলা হয়ে রয়েছে।তাদের ঠেলে সামনে যেতেই চমকে উঠলেন। রাস্তায় পড়ে রয়েছে তার থেথলানো দেহ।হাতে সেই গল্পের বই...
অভিমান
রতন টাকাটা চুরি করলো । তুমি কিছু বলবে না ।
-কি বলবো ? নিয়েছে তো তর ভাই । ভাইয়ের টাকা ভাই নিয়েছে । এতে বলার কী আছে ।
-বা । জিজ্ঞেস না করে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে গেল । মদ গাঁজা খেয়ে অতগুলো টাকা উড়িয়ে দেবে । টাকাগুলো যে রান্নাঘরটা মেরামত করবার জন্য বেশি সুদে এনেছি । সে দিকে খেয়াল আছে ।
-আ বেশি বকবক করিস না । এখান থেকে সরে পর ।
সুশীল আর কথা বাড়াল না । বুঝল এ সব কথা মাকে বলে লাভ নেই । সে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো ।
ঘড়ির কাটায় তখন ১০ টা । সুশীলের ছোট বোন রত্না বললো , মা তুমি বীনা দোষে দাদাকে বকলে । রতনের দোষ । অতগুলো টাকা চুরি করলো ।তুমি কিছু বললে না ।
-কি বলবো বল । সুশীল শান্ত ছেলে ।মা বকলে কিছু বলবে না । চুপ করে থাকবে । আর রতন জানোয়ারটা কে কিছু বললে তো বাড়িতে আগুন লাগিয়ে ছাড়বে ।
-তাই বলে সবসময় ...
ভোরের আলো চারধারে ছড়িয়ে পড়েছে ।সুশীল রাতে বাড়ি ফিরেনি । সুশীলের অপেক্ষায় মা সারারাত উঠোনে পায়চারি করে কাটিয়ে দেয় ।সারা মুখে চিন্তার ছাপ । ছেলেটা না খেয়ে সারারাত কোথায় ছিল এসব চিন্তা তাকে জর্জরিত করছিল । এমন সময় সুশীলের বন্ধু শৈলেন দ্রুত দৌড়ে বাড়িতে ডুকলো । হাফাতে হাফাতে বললো । মাসিমা দ্রুত আমবাগানে চলুন ।
কেন,হঠাৎ আমবাগানে । কি হল ।
সুশীল আমবাগানে ফাঁসি দিয়েছে
কবি
রৌদ্রদগ্ধ আয়নায় ক্যালেন্ডারের শনির চিত্র ফুটে উঠতেই কবি তৃপ্ত কন্ঠে ঢেকুর তুললো।কবির জংশন নাকি ইদানীং খুব সরগরম চলছে। পুরোনো স্নেহগুলি মাড়িয়ে সদ্য প্রেম করতে শিখেছে।
বিকেলের হাওয়ায় কলার উঁচিয়ে বাইকের তুমুল গতি তুলে দীপ্ত কন্ঠে কবি বলতে লাগলো 'এবারের সংখ্যাটা প্রকাশের আগে ফেইসবুকে ঝাক্কাস একটা বিতর্ক বাধাতে হবে।যেন তরতর করে ছড়িয়ে পড়ে ম্যাগাজিনের নাম।'
নির্মল পেছনে বসে নিশ্চুপ হয়ে কথাগুলি শুনছিল। বন্ধুর লেখালেখি নিয়ে তার ততটা মোহ নেই। কবিতা কবিতা করে ভবঘুরে হয়ে বন্ধুর জীবনটা নষ্ট হচ্ছে এমন একটা বদ্ধ ধারনা তার। নির্মল আলতো করে বললো 'কবিতা না বাল।এই সব নিয়ে কতদিন জীবন চালাবি। নিষ্কর্মা দের কাজ হল কবিতা নিয়ে পড়ে থাকা। কতদিন বললাম মিছিল মিটিংয়ে আয়। এতদিনে ঠিক কিছু একটা হয়ে যেত'
কবি এক মিলিয়ন হাসি উড়িয়ে বললো 'তা যা বলেছিস।আরতো ছয় মাস।এরপর তোর কি হবে। মিছিল মিটিং করে তোর কি হল।'
নির্মল আর কথা বাড়াবার সাহস পেল না। এক কথায় সে যেন জব্দ হয়ে গেল।
২)
বাইক থেকে নেমে প্রেসে ঢুকতেই কানে আসলো '১৮ তে বামফ্রন্ট সরকার আইতাছে ফিরিয়া' গানটা।ভোটের বাজারে এইসব গান এখন মুড়িমুড়কি মত অলিতেগলিতে ভেসে বেড়ায়।গানটা গুনগুন করেই কবি ভেতরে ঢুকলো। প্রেসে ডুকতেই দেখতে পেলেন গৌতম বাবুকে। গৌতম বাবু একটি অনলাইন ম্যাগাজিনের সম্পাদক।
গৌতম বাবু কবিকে দেখেই বলে উঠলেন 'এই যে ইয়ং বয়েজ। লেখাজোঁকা কেমন চলছে। '
কবি গৌতম বাবুকে দেখে বললেন ' আপনি এখানে। আমিতো এলাম এই দশক ম্যাগাজিনের নতুন সংখ্যা কপি গুলি নেবার জন্য।কাল প্রকাশ হবে।'
গৌতম বাবু বললো 'বাহ!দারুণ খবর। শুনে ভালো লাগলো।চালিয়ে যা। কোন দরকার লাগলে অবশ্যই বলবি।'
কবি হেসে উঠে। গৌতম বাবুকে পুরোনো একটা কথা মনে করিয়ে বেশ লজ্জায় ফেলে দিল। সে বললো ' গত সংখ্যায় লেখা চেয়েছিলাম। অনেক ঘুরিয়ে দেবেন দেবেন বলেতো দিলেন না।এরপরে কি আশা করা যায় বলুন'
কবির কথা শুনে বেশ ইতস্তত হয়ে গৌতম বাবু বললো ' সেবার এত ঝামেলায় ছিলাম সত্যি সময় করে উঠতে পারিনি। '
'তা যা বলেছেন। কলকাতা পত্রিকা গুলিতে তখন আপনার ডজন ডজন লেখা প্রকাশ পেল।আর আমরা চাইলেই বাহানা করছেন।'
কবির মুখে এমন কর্কশ কথা শুনবে বলে আশা করেনি গৌতম বাবু।তিনি আর কথা বাড়ালেন না।দু এক কথা বলে সেখান থেকে সটকে পড়েন।
৩)
ম্যাগাজিনের কপি গুলি ঠিকঠাক বুঝে নিয়ে কবি বাইরে এসে দেখতে পেলেন নির্মল দিব্যি ফোনে কথা বলতে বলতে সিগেরেট টানছে।
' এই তাড়াতাড়ি চল।মিছিল আসছে এপথে।দ্রুত বেরিয়ে যেতে হবে।মিছিলে আটকা পড়লে কত সময় লাগবে কে জানে' কবি কথা গুলি আওড়াতে আওড়াতে দ্রুত বাইক স্টার্ট করলো। মুহুত্তে পেছন থেকে ভেসে এল একটি কর্কশ শব্দ।
৪)
চোখ খুলে কবি দেখতে পেলেন গৌতম ট্রাকের চাকার নিচ থেকে তার দুটুকরো দেহটা টেনে বের করছে।
No comments:
Post a Comment