কবিতা
মঈনুস সুলতান
১. হৃদয়ে বাঞ্চা ব্যাকুল
যোজন যোজন পথ পাড়ি দিয়ে আমি ভ্রমণের রিদমে ভারাক্রান্ত হতেই
মনে হয়েছে বাড়ি ফেরাটা আজ অক্তে-জরুরি
অনাহারের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়েছে মনন
গমের স্থাপত্যকলায় দেখেছি রঙধনু ট্রাউটের গনগনে তন্দুরি।
গৃহহীনদের সাথে সহবতে মেতে ঘুরেছি স্কাই স্ক্যাপার্সের বাগানবিলাসে
সরণীর দুপাশে ইমারতের কনসার্টে জমেছে আবাসিক স্বপ্নের সমারোহ
আমিও খুঁজেছি ঘর, সরাইখানায় একটি খাটিয়াও খুঁজে পাইনি
পাঁজরে লালন করেছি না পাওয়ার দ্রোহ।
মানমন্দিরের কাঁচে দেখেছি একটি নক্ষত্র
দিনের ভাটিতে ভেসে গেছে তা
ফেরেনি সে জ্যোতিষ্ক সায়াহ্ণের শিয়রে কখনো
আমি উদ্যোগ নেইনি বলে উজাড় হয়েছে বৃষ্টিবন
চড়া পড়ে শ্লথ হয়েছে বহতা অ্যামাজনও।
হেঁটে গেছি আইসল্যান্ডিক পাহাড়ের পাদদেশে
রেনডিয়ারের খুরধ্বনিতে ম্লান হয়েছে অরোরার দ্যুতি
তোমাকেও কাছে চেয়েছি হে নিসর্গ অন্তরঙ্গ আবহে
কিন্তু রাখতে পারিনি প্রতিশ্রুতি।
আকিয়াব থেকে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে ডাঙ্গায় উঠেছে রোহিঙ্গা মানুষ
বেতের ঝাঁপিতে বৃদ্ধা জননী আহাজারে উপদ্রুত হয়েছে আমার উপকূল
খেয়াঘাটের নিরালায় বসে আমি তোমার কথা ভেবেছি হে বালুচর
হৃদয়ে হয়েছি বাঞ্চা ব্যাকুল।
২. কদমতলির হাট
আমাকে পাড়ে নামিয়ে দিয়ে ফিরে চলে নদী। বিমান বন্দরে ভিআইপি পুরুষের পদচারণার পর যে রকম রোল করে ফেলা হয় লোহিত ফরাশ, ঠিক এমনি ধারায় বহতা জলের রূপালি চিত্রপট গুটিয়ে সুরমা নদীটি ফিরে যায় তার পাহাড় বনানীতে নিবিড় ভিটেমাটিতে। ডাঙ্গার ভিজে বালুকায় পড়ে থাকে আমাকে নিয়ে আসা নৌকাটি। আমি ধানখেতের ভেতর দিয়ে পায়ে চলার সংকীর্ণ পথ ধরে হাঁটি। ধুমকেতুর সর্পিল অবয়বে উড়ছে কুয়াশা। তার জলময় ধূসর জাফরিতে ময়নাশাইলের ফসলি মাঠ হয়ে পড়ে ঘঁষাকাচের ভেতর দিয়ে দৃশ্যমান জলরঙের রূপবন্ধ।
গঞ্জ থেকে বেশ দূরে কদমতলির হাটটি জমে ওঠেছে বেশ। দাঁড়িয়ে পড়ে আমি বেতের চাঙ্গারিতে রাখা মুড়ি-মুকড়ি দেখি। মোয়া,গুড় মাখানো নাড়– ও ভেটে চিনির শিরা মেশানো খই এর দিকে নজর যেতেই ফ্রাইপ্যানে বালুকা মিশিয়ে ভাঁজা মুচমুচে শস্যদানা বিবর্তিত হয়ে দোলায় শিশির মাখা ধানের সোনালি শীস।
হাট থেকে বেরিয়ে আসার মুখে দেখি কদমগাছের তলায় লাঙ্গল, জোয়াল, পিঁড়ি ও কুটি-চৌকি সাজিয়ে বসেছেন গাঁয়ের বুড়ো ছুতার। কানে গোঁজা পেন্সিলে থুতনি চুলকিয়ে তিনি ফোঁকলা দাঁতে হাসেন। আর রান্দা দিয়ে ঘষামাজা করা কাঠের জিনিস কখানি বদলে গিয়ে ছড়িয়ে দেয় নওল তরুবরের সবুজ পত্রালি।
মঈনুস সুলতান
১. হৃদয়ে বাঞ্চা ব্যাকুল
যোজন যোজন পথ পাড়ি দিয়ে আমি ভ্রমণের রিদমে ভারাক্রান্ত হতেই
মনে হয়েছে বাড়ি ফেরাটা আজ অক্তে-জরুরি
অনাহারের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়েছে মনন
গমের স্থাপত্যকলায় দেখেছি রঙধনু ট্রাউটের গনগনে তন্দুরি।
গৃহহীনদের সাথে সহবতে মেতে ঘুরেছি স্কাই স্ক্যাপার্সের বাগানবিলাসে
সরণীর দুপাশে ইমারতের কনসার্টে জমেছে আবাসিক স্বপ্নের সমারোহ
আমিও খুঁজেছি ঘর, সরাইখানায় একটি খাটিয়াও খুঁজে পাইনি
পাঁজরে লালন করেছি না পাওয়ার দ্রোহ।
মানমন্দিরের কাঁচে দেখেছি একটি নক্ষত্র
দিনের ভাটিতে ভেসে গেছে তা
ফেরেনি সে জ্যোতিষ্ক সায়াহ্ণের শিয়রে কখনো
আমি উদ্যোগ নেইনি বলে উজাড় হয়েছে বৃষ্টিবন
চড়া পড়ে শ্লথ হয়েছে বহতা অ্যামাজনও।
হেঁটে গেছি আইসল্যান্ডিক পাহাড়ের পাদদেশে
রেনডিয়ারের খুরধ্বনিতে ম্লান হয়েছে অরোরার দ্যুতি
তোমাকেও কাছে চেয়েছি হে নিসর্গ অন্তরঙ্গ আবহে
কিন্তু রাখতে পারিনি প্রতিশ্রুতি।
আকিয়াব থেকে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে ডাঙ্গায় উঠেছে রোহিঙ্গা মানুষ
বেতের ঝাঁপিতে বৃদ্ধা জননী আহাজারে উপদ্রুত হয়েছে আমার উপকূল
খেয়াঘাটের নিরালায় বসে আমি তোমার কথা ভেবেছি হে বালুচর
হৃদয়ে হয়েছি বাঞ্চা ব্যাকুল।
২. কদমতলির হাট
আমাকে পাড়ে নামিয়ে দিয়ে ফিরে চলে নদী। বিমান বন্দরে ভিআইপি পুরুষের পদচারণার পর যে রকম রোল করে ফেলা হয় লোহিত ফরাশ, ঠিক এমনি ধারায় বহতা জলের রূপালি চিত্রপট গুটিয়ে সুরমা নদীটি ফিরে যায় তার পাহাড় বনানীতে নিবিড় ভিটেমাটিতে। ডাঙ্গার ভিজে বালুকায় পড়ে থাকে আমাকে নিয়ে আসা নৌকাটি। আমি ধানখেতের ভেতর দিয়ে পায়ে চলার সংকীর্ণ পথ ধরে হাঁটি। ধুমকেতুর সর্পিল অবয়বে উড়ছে কুয়াশা। তার জলময় ধূসর জাফরিতে ময়নাশাইলের ফসলি মাঠ হয়ে পড়ে ঘঁষাকাচের ভেতর দিয়ে দৃশ্যমান জলরঙের রূপবন্ধ।
গঞ্জ থেকে বেশ দূরে কদমতলির হাটটি জমে ওঠেছে বেশ। দাঁড়িয়ে পড়ে আমি বেতের চাঙ্গারিতে রাখা মুড়ি-মুকড়ি দেখি। মোয়া,গুড় মাখানো নাড়– ও ভেটে চিনির শিরা মেশানো খই এর দিকে নজর যেতেই ফ্রাইপ্যানে বালুকা মিশিয়ে ভাঁজা মুচমুচে শস্যদানা বিবর্তিত হয়ে দোলায় শিশির মাখা ধানের সোনালি শীস।
হাট থেকে বেরিয়ে আসার মুখে দেখি কদমগাছের তলায় লাঙ্গল, জোয়াল, পিঁড়ি ও কুটি-চৌকি সাজিয়ে বসেছেন গাঁয়ের বুড়ো ছুতার। কানে গোঁজা পেন্সিলে থুতনি চুলকিয়ে তিনি ফোঁকলা দাঁতে হাসেন। আর রান্দা দিয়ে ঘষামাজা করা কাঠের জিনিস কখানি বদলে গিয়ে ছড়িয়ে দেয় নওল তরুবরের সবুজ পত্রালি।
No comments:
Post a Comment