Sunday, March 25, 2018

আড্ডা করিডোর 

আড্ডা । কবি সাহিত্যিক চিত্রকরদের আড্ডা । কখনো তাঁরা  মধ্যরাতে শহরকে শাসন করতে বেড়িয়ে পড়েন । কখনো নদীর পাড় কাঁপিয়ে স্রোতের ওপর স্রোত তুলে দেন । কোথাও আড্ডা হয় গুছিয়ে , সময় তারিখ সব জানিয়ে । কোথাও আবার নির্দিষ্ট চায়ের দোকানে , যখন তখন , দরমার বেড়া আর কাঠের বেঞ্চিতে । কিন্তু সর্বত্রই কবিতা উচ্চারিত হয়ে চলেছে , নতুন লেখা , চিন্তা , প্রসারিত হচ্ছে । অনেক নতুন আড্ডার জন্ম হচ্ছে , অনেক পুরানো আড্ডা ভেঙ্গেও যাচ্ছে । বাংলার মফস্বলি এই আড্ডাগুলো কলকাতার তথাকথিত আড্ডাগুলোর থেকে কোনভাবেই কম ধারালো নয় । বিভিন্ন শহরের সেই আড্ডাই এখন থেকে কবিতা করিডোরে নিয়মিত ।  সব্যসাচী ঘোষ এই আড্ডা বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন ।

  গল্প নিয়ে আড্ডা র দল আড্ডায় এক জায়গায় থিতু হতে চায় না । আড্ডা যেমন ছড়িয়ে যায় প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে , তেমনি ওদেরও ছড়িয়ে আড্ডা দেবার ইচ্ছে । ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে তাদের সাম্প্রতিক আড্ডা ধরা থাকল আমাদের আড্ডা করিডোরে । এই আড্ডার সমস্ত কথাই ধরা থাকলো প্রিয় গদ্যকার   মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের লেখনীতে


'সীমান্তে গল্প নিয়ে আড্ডা'

কোনও কোনও দিন অক্ষর , শব্দ এসব দিয়ে বর্ণনা করা যায় না। অনুভব করতে হয়। এমনই দিন ছিল গত ১১ই ফেব্রুয়ারি, যেদিন 'গল্প নিয়ে আড্ডা' টিম আমন্ত্রিত হয়ে চলে গিয়েছল তিনবিঘা করিডোর। ভারত -বাংলাদেশ সীমান্ত। হ্যাঁ, ওখানেই বসেছিল ফেব্রুয়ারি মাসের গল্পপাঠের আসর।

প্রতিবারের মতো এবারেও বেশ কিছু গল্প শোনা হল, খানিক গল্প বিষয়ক আলোচনাও হল।  মাছ-মাংস-ডাল-সবজি সহযোগে দুর্দান্ত 'লাঞ্চ'-এর ব্যবস্থাও ছিল।  এসবের পেছনে  ছিলেন  কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক শ্রী বিরূপাক্ষ মিত্র। উনি সঙ্গে পেয়েছিলেন ওখানকার বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স'কে। তিনবিঘার বিএসএফ কমিউনিটি হলেই বসেছিল গল্প নিয়ে আড্ডা।

' গল্প নিয়ে আড্ডা'র কথা শুনে সুদূর কলকাতা থেকে চলে এসেছিলেন বিশিষ্ট চারণিক ও লেখক লিপি চক্রবর্তী। ওঁর মুখে অসাধারণ আবৃত্তি শুনে মন ভরে গেল সকলের। ছিলেন কবি গৌতম গুহ রায়। পড়লেন সুন্দর একটি গল্প। এছাড়াও তনুশ্রী পাল, হিমি মিত্র রায় , লক্ষ্মী নন্দী  ও দেবপ্রিয়া সরকার'র গল্প মন কাড়লেন। রণজিৎ মিত্র'র যথারীতি মনোজ্ঞ আলোচনায় আসর মাতিয়ে রেখেছিলেন।

শ্বেতা সরখেল, মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য ও শাঁওলি দে এবার ছিলেন শ্রোতা ও আলোচকের ভূমিকায়।

বিকেল ফুরিয়ে এল একসময়। কাঁটাতারের এপাশে বসে গল্প ও গল্প বিষয়ক আলোচনা সাঙ্গ হল। আপ্লুত হৃদয়ে এবার সকলের নিজ শহরে ফেরার পালা। সেই সঙ্গে দিন গোনা শুরু হল পরের গল্প নিয়ে আড্ডা-র।

ফিনফিনে কাচের কাপে সূর্যাস্তের রং ধার করা দার্জিলিং চা দিয়ে শুরু। সঙ্গে সুবাসিত টা। কাজু বরফি সমেত বেশ কয়েক রকম মিস্টি, হলদিরামের চানাচুর আর ডিমের চপ। গল্প নিয়ে আড্ডা বসাতে জলপাইগুড়ি থেকে চল্লিশ কিমি পাড়ি দিয়ে কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধায় পৌঁছে এমন বরযাত্রীর মতো রাজকীয় ঢঙে আপ্যায়িত হয়ে আমরা তখন রীতিমত আপ্লুত।

আন্তর্জাতিক মানের কনফারেন্স রুমে (ইন্দো বাংলাদেশ মিটিং এই কক্ষেই হয়ে থাকে) শুরু হল আমাদের নভেম্বর মাসের আড্ডা। সুলেখক সৌম্যশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় সস্ত্রীক এসেছিলেন দুর্গাপুর থেকে, বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ তারাশংকর যাঁর পিতামহ। তপতী বাগচি, তনুশ্রী পাল, শাঁওলি দে, হিমি মিত্র রায, লক্ষ্মী নন্দীর মতো প্রতিষ্ঠিত ও নবীন গল্পকারেরা গল্প পড়লেন। মাথাভাঙা থেকে এসেছিলেন অকাদেমি পুরস্কার পাওয়া 'তিতির' পত্রিকার সম্পাদক সঞ্জয় সাহা। প্রতিটি গল্পের তীক্ষ্ণ সমালোচনা করে আসর জমিয়ে দিলেন তিনি। পঠিত গল্প নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা করলেন অধ্যাপিকা কোয়েলা গঙ্গোপাধ্যায়। মেধাবী রসবোধ নিয়ে আড্ডা সঞ্চালনায় ছিলেন রণজিৎ মিত্র। আসরে শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লব সরকারের মতো কয়েকজন স্থানীয় কবি ও গল্পকারেরা। হাজির ছিলেন উ বঙ্গ সংবাদের সাংবাদিক সুশান্ত গুহ।

ব্লক অফিসে গল্প নিয়ে আড্ডা বসেছে শুনতে পেয়ে সাহিত্যবিলাসী মহকুমা শাসক রঞ্জন চক্রবর্তী ছুটে এসেছিলেন এক ঘন্টা দূরের মাথাভাঙা মহকুমা থেকে। যাঁর ডাকে আমাদের যাওয়া চ্যাংরাবান্ধার সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক বিরূপাক্ষ মিত্র পাঠ করলেন রঞ্জনবাবুর লেখা একটি মানবিক গল্প। ঘোড়া দেখে মানুষ খোঁড়া হয়। আমার অনুরোধ ফেলতে না পেরে ব্যারিটোন কন্ঠে আমার একটি গল্প পাঠ করলেন বন্ধুবর সঞ্জয় সাহা। পাঠ শেষে যত হাততালি পড়ল তার জন্য গল্পকার এক শতাংশও দায়ী নন। গল্পটি শ্রোতাদের মন কাড়ল সম্পূর্ণ সঞ্জয়ের সুললিত বাচিকের গুণে।

No comments:

Post a Comment