Wednesday, March 28, 2018

উড়োজাহাজ / রুদ্রশংকর 

বেশ কিছুকাল হল আমাকে অনুসরণ করে উড়োজাহাজের শব্দ;
আর ভাল লাগে না ! ভাল লাগে না আমার !
সেই ছোটবেলায়, আমাদের ছোট ঘরের আরও ছোট ছাদে উঠে
কত যে উড়ন্ত জাহাজের যাযাবর উড়ে যাওয়া দেখেছি,
আর ভাল লাগে না এখন !
#
ছোটবেলায় প্রশ্নের পর প্রশ্ন এসে অনুসরণ করত আমায়।
এমন সব অঙ্গভঙ্গি করে আসত,
যেন আমার মাথার মধ্যে নড়ে উঠত রূপসী কৌতুহল।
ঘুম ভাঙলে দেখতাম পোষা পায়রাদের সংক্ষিপ্ত উড়ে যাওয়া ,
সঙ্গে সঙ্গে আকাশে ওড়ার রুগ্ন ইচ্ছে হত আমার।
 #
কোন সফলতা নয়, প্রশ্নের কঙ্কালগুলোর নিয়ে যে যা বলত;
আমি না ভেবেই পকেটে পুরতাম তাদের।
পাশের বাড়ীর পারভেজ চাচার ছোট মেয়ে তামান্না, 
হাজার হাজার কথা সাজিয়ে আমাকে বোঝাত
কিভাবে তার আসমানী কিতাবে আছে উড়োজাহাজের কল্পনা !
তখন আমার নির্বিকার দেওয়ালের ধূসরতায় 
স্বচ্ছ জলের মতো পরিষ্কার নবী সাহেবের মিরাজ যাত্রা।
#
গ্রামের মঙ্গল পুরোহিত, যিনি প্রতিদিন নিয়ম করে গরু চড়াতেন
সুযোগ মত আমাকে শোনালেন রাবণ রাজার পুষ্পক রথের গল্প।
আমি জানলাম এখান থেকে উড়োজাহাজ এসেছে আমাদের !
উজ্জ্বল সিঁড়ির উপর বসে উড়োজাহাজের জোড়া আবিষ্কারক
কখনো নবী সাহেবে, কখনো রাবণ রাজার কথা ভাবি,
আনন্দে তাক-ধিন ধিন-তাক নেচে ওঠে মস্তিষ্ক।
#
এইভাবে আমার হলুদ দিন, সবুজ দিন কাটত ছোটবেলায়
ভূতের  মত, ঈশ্বরের মত বিশ্বাস করতাম রূপকথার গল্পদের।
যেদিন প্রথম রাইট ভাইদের নাম শুনলাম,
চোখের সামনে ভেঙে পড়ল বিশ্বাসের মসৃণ পরমায়ু ।
নিজেকেও বিশ্বাস করতে পারিনি তখন ;
কচ্ছপের হাঁটার চেয়েও ধীরে গতিতে বুঝেছি
আর পাঁচজনের মত পাখি দেখে ওড়ার কথা ভেবেছে রাইট ভাইয়েরা,
আজো দেখি পাখির অনুকরণে উড়ে চলেছে উড়োজাহাজ ।


No comments:

Post a Comment