Sunday, March 25, 2018


মিলটন রহমানের কলমে 

রবীন্দ্রনাথের  স্ট্রে বার্ড‘স এর চায়না অনুবাদ নিয়ে যত কান্ড


ইংরেজি ভাষায় রচিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যগ্রন্থ  ‘Stray Birds’। বাংলায় ‘পথহারা পাখিরা‘ বেওয়ারিশ পাখিরা‘ কিংবা ‘দলছুট পাখিরা‘ যে কোন একটি বলা যেতে পারে। ৩৫৩ টি কবিতা নিয়ে এই গ্রন্থটি ১৯১৬ সালে প্রকাশ করেছিলো নিউইয়র্কের দি ম্যাকমিলান কোম্পানী। সঙ্গীতধর্মী এই কাব্যগ্রন্থটি চায়নাসহ পুরো বিশ্বে গত বছরের মাঝামাঝি আলোচনার-সমালোচনার ছিলো শীর্ষে। তরুণ চাইনিজ লেখক ফ্যাং টাং রবী ঠাকুরের এই গ্রন্থের ৩২৬ টি কবিতা অনুবাদ করেছেন নিজ ভাষায়। তাতেই সমালোচনার তীর  বর্ষিত হয় তার দিকে। অভিযোগ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা অনুবাদ করতে গিয়ে ফ্যাং টাং মূল থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন। নিয়ে এসেছেন অতিমাত্রায় যৌনতা। সমালোচকরা বলছেন অনেক লাইনের ভুল ব্যাখা দিয়েছেন তিনি। উদাহরণ হিসেবে একটি লাইনের উদ্বৃতি দেয়া যেতে পারে। গ্রন্থের তৃতীয় কবিতার দুই লাইনের প্রথম লাইন,

‘THE world puts off its mask of vastness to its lover. ফ্যাং টাং এই লাইনটি অনুবাদ করেছেন-বিশ্ব নিজ প্যান্টের চেইন খুলে দিয়েছে তার প্রেমিকার সম্মুখে। যার ইংরেজি দাঁড়ায় এরকম -‘The world unzipped his pants in front of his lover’। এ নিয়ে রবীন্দ্র ভক্ত এবং গবেষকরা সমালোচনার থুবড়ি ফাটাচ্ছেন। এই সমালোচনা থেকে রেহাই পেতে ফ্যাং টাং এর প্রকাশক জিজিয়াং লিটারেচার এন্ড আর্ট পাবলিশিং হাউস সব বই বাণিজ্যিক লাইব্রেরী থেকে উঠিয়ে নেয়। শুধু উঠিয়ে ক্ষান্ত হয় না প্রকাশক। অনুবাদ গ্রন্থটি আবারো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কাজও শুরু করেছে। চায়না, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো ইউরোপজুড়ে এই সমালোচনায় সামিল হয় প্রভাবশালী পত্রিকাগুলো। ব্রিটেনের ডেইলি গার্ডিয়ান, টাইমস, বিবিসি, ভারতের এনডিটিভ, হিন্দু টাইমস, চায়নার সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা ‘পিপলস ডেইলি‘সহ বিভিন্ন পত্রিকা এ বিষয়টি নিয়ে ফ্যাং টাং এর অনুবাদের কঠোর সমালোচনা করেছে। চায়নার পিপলস ডেইলির সম্পাদক সান জাও সারাসরি বলেছেন, ফ্যাং টাং অনুবাদ করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের মৌলিকত্ব রক্ষা করতে পারেন নি। তিনি রীতিমত অনুবাদের বিষয়ে কঠোর নিয়ম প্রণয়নের জন্য চীনের সরকার এবং প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছেন। এই সম্পাদক আরো বলেছেন, অনুবাদের ক্ষেত্রে যে কোন অনুবাদকের নিজস্ব স্টাইল থাকতেই পারে। কিন্তু তা যদি মনগড়া হয় তাহলে তাকে অনুবাদ বলার কোন সুযোগ নেই। ভারতের অনেক রবীন্দ্র গবেষক চায়না ভাষার এই অনুবাদ নিয়ে নিজেদের মর্মাহত হওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের একজন রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ দিল্লির আম্বেডকার ইউনিভার্সিটির শিক্ষক রাধা চক্রবর্তী। তিনি  বলেছেন, প্রথমে নির্ণয় করতে হবে ফ্যাং টাং রবীন্দ্রনাথের ‘স্ট্রে বার্ড‘স‘ অনুবাদ করার পিছনে তার চিন্তাভাবনা সৎ ছিলো কিনা? একেবারে কড়াভাষায় তিনি বললেন, রবীন্দ্রনাথকে বিতর্কিত অনুবাদ করে বাজার ধরতে চেয়েছেন কি ফ্যাং?অথবা বাজারে বই বিক্রি করে নিজে আর্থিক লাভবান হতে চেয়েছেন তিনি?নাকি রবীন্দ্রনাথকে হাস্যসকর ব্যক্তিতে রূপান্তর করতে চেয়েছেন? এখানে রবীন্দ্রনাথকে অনুবাদ করার ক্ষমতা তার আছে কিনা সে নিয়েও প্রশ্ন করা যেতে পারে। এই শিক্ষক আরো বলেন, শিল্পের বা সৃষ্টিশীলতার যে স্বাধীনতা তার অপব্যবহার করেছেন ফ্যাং টাং।



চলুন জেনে নেয়া যাক কে এই অনুবাদক? চৌচাল্লিশ বছর বয়েসি ফ্যাং টাং চাইনিজ ঔপন্যাসিক, নিজেকে তিনি কবি পরিচয় দিতেও পছন্দ করেন। মেডিসিন বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফ্যাং একজন সফল ব্যবসায়ী। আগে তিনি ম্যানকেনজি নামক একটি কোম্পানীতে পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন। সর্বশেষ তিনি চায়না সরকার মালিকানাধীন একটি কোম্পানীতে চাকুরী থেকে পদত্যাগ করেন। এতো সমালোচনার মধ্যেও ফ্যাং টাং নিজের অনুবাদের পক্ষে সাফাই গাইছেন। বললেন-’প্রকাশক মনে করেছেন আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্ট্রে বার্ড‘স‘ ভালো অনুবাদ করতে পারবো। এমনকি ঊনিশ শতকের প্রথম দিকে চাইনিজ লেখক ঝেং ঝেন্ডো যার অনুবাদকে সবচেয়ে ভালো অনুবাদ হিসেবে গণ্য করা হয়, তার চেয়েও আমি ভালো করতে পারবো। তাই আমি সাবেকি কায়দার আধুনিক অনুবাদ থেকে আরো অগ্রসর হয়ে অনুবাদ করেছি।‘ ফ্যাং টাং মনে করেন চায়নার কথ্যভাষার আদলে অনুবাদে তিনি পারদর্শি। ফ্রাং তাঁর দক্ষতা প্রকাশে সামাজিক মাধ্যমে কিছু অনুবাদ প্রকাশও করেছেন। প্রকাশিত কবিতাগুলোর অনুবাদ ভালো হয়েছে এমন মন্তব্য করেছেন কোন কোন সমালোচক। আবার সেই সমালোচকরাই বলেছেন, ফ্যাং টাং রবীন্দ্রনাথের মোলায়েম সুরের কবিতাগুলোতে অতিমাত্রায় যৌনতা নিয়ে  এসেছেন। কিন্তু না ফ্যাং বলতে চান, ইতিহাস একদিন সাহিত্যের বিচার করবে। বলেন, সময়কে কথা বলতে দিন, আমার কাজই এক সময় কথা বলবে।

আবার অনেক পাঠক আছেন, যারা ফ্যাং টাং এর অনুবাদ লাইব্রেরী সেলফ থেকে উঠিয়ে নেয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, একজন প্রকাশকের দায়িত্ব, প্রকাশিত গ্রন্থের বাজার নিশ্চিত করা। তা না করে প্রকাশক বই উঠিয়ে নিয়েছেন। একজন লেখকের জন্য এ পরিস্থিতি অসম্মানের কারণ। কিন্তু প্রকাশকের কি করার আছে, বিশ্বের প্রভাবশালী দৈনিকগুলো ফ্যাং টাং এর অনুবাদকে নানান শব্দে-বাক্যে বর্ণনা করেছে। কোন পত্রিকা বলছে ‘যৌনতায় ভরপুর‘ কেউ বলছে ‘রসালো বর্ণনার আধিক্য, আর কোন পত্রিকা বলছে ,সুড়সুড়ি দিয়ে রবীন্দ্রনাথ থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন অনুবাদক‘। এতো প্রভাব বিস্তারি সমালোচনার মাঝে প্রকাশক বই না গুটিয়ে কি আর করবেন। কিন্তু এতে দমবার পাত্র নন ফ্যাং টাং। তিনি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথকে দীর্ঘ এক চিঠি লিখে বসলেন । এই চিঠির মাধ্যমেই তিনি সমালোচকদের জবাব দিলেন। আমি এই পত্রটি একই দিন হাতে পাই।  My 'vulgar' Tagore translation has been suppressed – but I should have the freedom to use language as I wish’ শিরোনামের চিঠিটি ফ্যাং টাং শুরু করেছেন এভাবে-

সম্মানিত মি. ঠাকুর

আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা আপনাকে, যদিও আপনার সাথে আমার কখনো দেখা হয় নি। কয়েক দশক আগে আমি যখন স্কুলে পড়তাম, তখন চায়নায় আপনি ছিলেন সেলিব্রেটি। আমার পাঠ্য বইয়ে সংযুক্ত ছিলো আপনার কবিতা। সেই সব কবিতা অনুবাদ করেছিলেন কিছু সাহিত্যিক এবং চায়না সরকারের সংশ্লিষ্ঠ বিভাগ। কিন্তু ধীরে ধীরে আপনার পাঠক কমতে থাকে। আপনার সৃষ্টির প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাও কমতে থাকে। এক সময় দেখা যায় আপনার জনপ্রিয়তায় একেবারেই ভাটা পড়ে গেছে।

তারপরও, আবার অন্তর্জালের কারণে আপনার নাম সবার মুখেমুখে ফিরতে শুরু করে ২০১৫ এর খ্রীস্টমাসের সময়। আমার অনুবাদে আপনার কাব্যগ্রন্থ  স্ট্রে বার্ড‘স‘ প্রকাশিত হওয়ার প্রায় ছয়মাস পর। একটি কলামে একজন সমালোচক আমার অনুবাদের কড়া সমালোচনা করেছেন। আমি অনুবাদে যেসব চাইনিজ শব্দ ব্যবহার করেছি তার সমালোচনা করেছেন তিনি। আমি জানি না তিনি মূল বা মৌলিক বলতে কি বুঝান। তাছাড়া জানি না তিনি কিভাবে চাইনিজ সাহিত্য উপভোগ করেন। আমি কেবল হাসলাম।

তিনদিন পর কেউ একজন আমাকে আরেকটি সমালোচনা পাঠালেন। তাতে বলা হলো আমি আপনাকে  জিংমিং গো‘র পর্যায়ে নামিয়ে আনতে চাচ্ছি। তরুণ জিংমিং যৌনতাপূর্ণ বই রচনা করে বক্স অফিসে পর্যন্ত হিট। তারপরও আমি সমালোচনা শুনে বিরক্ত হই নি। জিংমিং, আমি এবং আপনি সম্পূর্ণ ভিন্ন। যারা সমালোচনা করছেন তারা সম্ভবত আমাদের কাউকেই পড়েন নি। তার কয়েকদিন পরে দুই দিক থেকেই সমালোচনা আসতে শুরু করলো। একটি শ্রেনী বলছে, ফ্যাং টাং হচ্ছে যোগ্য অনুবাদক। তিনি অনুবাদের জন্য সম্মাণনা পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। আবার অন্যদিকে আমাকে যেভাবে আক্রমণ করা হলো তা অনেকটাই সন্ত্রাসী কায়দায়। ভারত চায় আমার কাছ থেকে ঠাকুর  অনুবাদের অধিকার কেড়ে নিতে। ভারতের মিডিয়া থেকে এক বহর সৈন্য পাঠানো হলো। কফির টেবিলে বসে তারা আবিস্কার করার চেষ্টা করলেন কি হচ্ছে আমার অনুবাদ নিয়ে বা কি আছে আমার অনুবাদে।

আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমিই আপনাকে নিয়ে ভালো লিখতে পারবো।

জুলাই ২০১৪ এর আগে। আমি চাকুরী করতাম মেডিকেল কেয়ারে। সেখানে এতো বই ছিলো যে যা আমার পাঠের সাধ্যের অনেক বেশি। ফলে সেখানে আমার তাড়াহড়ো করতেই হয়েছে। তাছাড়া সেখানে এতো বেশি চিন্তা করার বিষয় ছিলো যে যার সাথে আমার পক্ষে পেরে ওঠা সম্ভব নয়। তারপরও সময়ের সাথে খাপ খাওয়াতে হতো আমাকে। কিন্তু এক পর্যায়ে মনে হলো নিজেকে স্থির কোন অবস্থানে দাঁড় করাতে হবে। জুলাই মাসে আমি চাকুরী ছেড়ে চলে যাই ক্যালিফোর্নিয়া; আমার মনে হলো শিখতে হবে কিভাবে ধীরে চলতে হয় এবং কিভাবে কোলাহলমুক্ত থাকা যায়। তখন আমার মনে হলো সেই প্রশান্তি আমি পেতে পারি অনুবাদ কর্মের মধ্যে।

কেনো আমি আপনাকে অনুবাদের সিদ্ধান্ত নিলাম তার কারণ একেবারে সহজ। আমার শিশু-কিশোর বয়সে আপনার কবিতা ছিলো আমার প্রিয়। স্ট্রে বার্ড‘স‘ এর কবিতাগুলো আঁকারে ছোট এর রয়েছে ব্যপক গভীরতা। এছাড়া আপনিই প্রথম এশিয়ান কবি হিসেবে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।

স্ট্রে বার্ড‘স অনুবাদের তিনমাস ছিলো বৈচিত্রময় সময় আমার জীবনে। আমি সাব্বির নাপা ভ্যালির কাছে দীর্ঘ উঠানসহ একটি বাড়ি ভাড়া করি। সে বাড়ির বাগানে ছিলো নানান রকমের ফুল এবং ফল। বাড়ির ছাদের চিমনিটিও যেনো বাতাসের সাথে খেলা করতো। অনুবাদের সময়ে আমি প্রায় একশ বোতল ওয়াইন পান করি,  ৩২৬ টি কবিতা অনুবাদ করি যাতে প্রয়োজন হয় প্রায় আট হাজার চাইনিজ শব্দ। আপনার কবিতা প্রতিটি লাইনের অনুবাদ কি হতে পারে, তা চিন্তা করতে গিয়ে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করি। যখন আমি ঠিকঠাকমত অনুবাদ করে নিতাম, তখন আমি উল্লসিত হয়ে অনেক বেশি পান করতাম। নিজেকে ছুঁড়ে দিতাম। দেখতাম কিভাবে আমার ওয়াইন গ্লাস থেকে ধীরে ধীরে দিন সরে যাচ্ছে। আর আমার হৃদয় ভরে যেতো কবিতায়।

স্ট্রে বার্ড‘স অনুবাদ করার পর আপনার প্রতি আমার দৃষ্ঠিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসে। এর আগেও আপনার এই কাব্য গ্রন্থটি অনুবাদ হয়েছে। তাতে আপনার চিন্তাকে পুরোপুরি উপস্থাপন করা হয় নি। আপনার হৃদয় নিংড়ানো অনেক অবেগের উৎসারণ তাতে ছিলো না। আমি সেটিকে তুলে এনেছি। তাই মনে করি আমি আপনাকে আবিস্কারে সফল হয়েছি। পঞ্চাশ বছর বয়সে আপনি যে গ্রন্থ রচনা করেছেন তা নিশ্চয় শিশুদের জন্য নয়। শিশুরা এই কাব্যের অন্তর্গত বোধ, আনন্দ বেদনা কিছুই বুঝবে না। অনেক কবিতার লাইন আছে যেগুলো আমি পুরোপুরি বুঝতে পারি নি। আপনি ছিলেন প্রেমিক, আমি যা ধারণা করছি তারচেয়েও বেশি রমণীরা আপনাকে প্রেম নিবেদন করেছিলো। বিশ্বকে দেখার আপনার অসাধারণ ক্ষমতা ছিলো। আপনি যেভাবে দেখেন অন্যরা সেভাবে দেখ না। আপনার ভাষা আমাকে সমুদ্রের মত আলোড়িত করে।

স্ট্রে বার্ড‘স অনুবাদ নিয়ে সমালোচকরা আমাকে তিন বিষয়ে দোষারোপ করেছেন।

এক-আমি  আপনার শব্দের ভুল অর্থ দাঁড় করিয়েছি। তারা বলতে চান অনুবাদের ক্ষেত্রে আমার কোন স্বাধীনতা থাকবে না। আমি অনুবাদ করতে গিয়ে প্রথমে প্রাধান্য দিয়েছি আমার স্বাধীনতাকে। আমি আপনার কবিতা ধারণ করেছি এবং নিজের চিন্তা এবং ভাষায় তা প্রকাশ করেছি। যদি আমরা স্ট্রে বার্ড‘স এর বাংলা অনুবাদ দেখি, দেখা যায়  তা ইংরেজির সাথে এর অনেক বেশি তফাৎ। অথচ সেটি অনুবাদ আপনিই করেছিলেন। তাহলে বলেন কোনটি সঠিক অর্থ প্রকাশ করবে?

দুই-সমালোচকরা বলছেন আমি আপনার কবিতার শুদ্ধতা এবং নিষ্পাপ চিন্তাকে কলুষিত করেছি। তারা আমার অনুদিত ৩২৬ টি কবিতার মধ্যে মাত্র তিনটি কবিতার শব্দ প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। আমি চাইনিজ শব্দ ÔtingsaoÔ ব্যবহার করেছি। যার বিভিন্ন প্রায়োগিক অর্থ রয়েছে। এছাড়া ব্যবহার করেছি  ‘da’এই শব্দটি তরুণরা বিভিন্ন অবেগ প্রকাশে ব্যবহার করে থাকে। আমি এই শব্দগুলো ব্যবহারের মধ্যে কোন রসালো বিষয় লক্ষ করি না। আমি কি চাই, আমি চাই অনুবাদের মাধ্যমে  নিজ ভাষায় নিজের সৃষ্টি কৌশলকে তুলে ধরতে। আমি যা করেছি প্রত্যেক লেখক তাই করেন। আমি নিজের শব্দভান্ডার ব্যবহার করেছি। আমি মনে করি সেখানে আপনার কবিতার কোন ক্ষয় হয় নি।

তিন-অনেকে বলছেন আমি আপনাকে ব্যবহার করে নিজেকে উপরে ওঠাতে চাইছি। এই ধরনের ঘৃণা দুষ্টু প্রকৃতির মানুষ ছাড়া কেউ করতে পারে না। জীবন অনেক ছোট। আমি জানি না কে কি ভাবছে। আমি নিজের মত করেই সাবেকি কায়দায় জীবন অতিক্রম করতে চাই।

এসব সমালোচনার পর আমার সব বই বাজার থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। খুব সহাসাই যে আমার অনুদিত কাব্য গ্রন্থটি আবার বাজারে ফেরত আসাবে বলে মনে হয় না।

ইতি

ফ্যাং টাং

এই চিঠিটি উদ্বৃত করলাম, ফ্রাং টাং কে বুঝবার জন্যে। তার চিন্তা এবং স্বভাব সম্পর্কে ধারণা নেয়ার জন্য। তিনি লেখক তাতে কোন সন্দেহ নেই। একজন লেখকের যে আবেগ এবং চিন্তার গভীরতা প্রয়োজন তাও তার মধ্যে দূর্লক্ষ্য নয়। কিন্তু ‘স্ট্রে বার্ড‘স‘এর অনুবাদ নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা একেবারে অমূলক নয়। তিনি তিনটি কবিতার কথা বললেও মূলত; পুরো গ্রন্থের অনুবাদে চায়না শব্দ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকরা। ফ্যাং টাং এর চিঠিটি পাঠ করলে তার কিছু বালখিল্যতাও ধরা পড়ে। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের প্রতি তার যে প্রেম তা নেশাক্রান্তের পর্যায়ে পড়ে। যার ফলে অনেকে কবিতা অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি নিজের চিন্তা এবং রসালো শব্দ চালান করে দিয়েছেন। তাই তার অনুবাদকর্ম নিয়ে যে সমালোচনা শুরু হয়েছে তা এখনো অসমাপ্ত। প্রকাশক বই বাজার থেকে উঠিয়ে নিলেও নিজের অনুবাদ নিয়ে শতভাগ আত্মবিশ্বাসী ফ্যাং টাং। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ট্রে বার্ড‘স এর অনুবাদ টি নিয়ে পশ্চিমাবিশ্বে সমালোচনা চলছে। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় ভারতের দিল্লি থেকে এর প্রতিবাদ করা হলেও, কলকাতা কিংবা বাংলাদেশ থেকে এর কোন প্রতিবাদ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। 

No comments:

Post a Comment