Wednesday, March 28, 2018

কবিতা করিডোর : ফারহানা রহমান 
মুখবন্ধ 

মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে সৌন্দর্যানুভূতি যাকে সে অকপটে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ করতে চায়। আর সেকারণেই সে তার সৃজনবৈভব, তার সৌন্দর্যানুভূতি প্রকাশ করার জন্য শিল্পসাহিত্যের কাছে সে আশ্রয় চায়। এ আশ্রয় একজন নানাভাবে পেতে পারে । শিল্প বা সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমে যেমন একজন আশ্রয় খুঁজতে পারেন ঠিক  তেমনই একজন পাঠক বা শিল্পের দর্শকেও কিন্তু শিল্পসাহিত্যের বিস্তৃতজগত নিরাশ্রয় করেনা বরং গভীর মমতায় সে পাঠক ও দর্শককে আপনজন করে নেয়। আর শিল্পসাহিত্যের মহিমা এখানেই ।
বাংলাদেশের এসময়ের উল্লেখযোগ্য লেখকদের কবিতা, ছোটগল্প ও অনুগল্প নিয়ে কবিতা করিডোরের এবারের সংখ্যাটি সাজানো হয়েছে । আশা করছি পাঠকদের ভালো লাগবে ।

দুটি অনুগল্প  
 (-ফারহানা রহমান)
একটি বিব্রত দিন 

পিঠে কেউ যেন খোঁচা দিচ্ছে মনে হলো। ভীষণ অস্বস্তি নিয়ে পেছনে ঘুরে দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু বাসে এতো ভিড় যে বোঝার উপায় নেই কে আমার ব্রার হুক ধরে এভাবে টানছে। এমনিতেই পাবলিক  বাসে  অফিসে যাওয়া আসা  খুবই বিরক্তিকর কাজ । তার উপর এধরনের অনাকাঙ্খিত নির্যাতন। কখনো কেউ কনুই দিয়ে গুঁতো দেয়, তো কখনো কেউ হিপের মধ্যে পাঁচ আঙুল দিয়ে খামচে ধরে চাপ দিতে থাকে । বসেও কোন শান্তি নেই। কেউ কেউ একেবারে কোলের মধ্যে এসে পড়ে । তবে বসতে পারলে  নিজেকে কিছুটা নিরাপদ লাগে । ভিতরের সিটে বসার পর কেউ যদি গায়ের উপর এসে পড়তে চায় আমি তখন খুব শান্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে জানতে চাই, 
‘ আপনার কি বসতে অসুবিধা হচ্ছে ? তাহলে এক কাজ করুন, আসুন আমার কোলে এসে বসুন।’ 
এতে প্যারাসিটামলের মত কাজ হয় । বেশিরভার সময় পাশের লোকটি সরে বসে। কিন্তু আজকের ব্যাপারটা একেবারেই অন্যরকম । বেশ কিছুক্ষণ থেকেই পিছনের কেউ আমার ব্রার হুক ধরে টানছে আর পিঠে চিমটি  কাটছে। জামার উপর নয় ।  একেবারে পিঠের উপর সরাসরি হাতের স্পর্শ পাচ্ছি  । কি করে সম্ভব!  একহাতে বাসের উপরের হ্যান্ডেল ধরে দাঁড়িয়ে আছি, আরেক হাতে পার্সটা বুকের কাছে এনে জড়িয়ে ধরেছি কারণ বাসে পার্স কাঁধের পাশে ঝুলিয়ে রাখা মোটেও নিরাপদ নয়। পকেটমার পার্স কেটে টাকা নিয়ে যায়। কিন্তু এখন বাধ্য হয়ে পার্সটা কাঁধে ঝুলিয়ে বাম হাত ঘুরিয়ে পিঠের কাছে হাত নিতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে একেবারে হতবাক হয়ে যাই। এ কী ? পিঠের কাছে তো ব্রার হুক বরাবর একপাশ থেকে অন্যপাশ পর্যন্ত  একেবারেই ছেঁড়া । কিন্তু এভাবে কিকরে ছিঁড়ল?  নাহ,  এটা তো কিছুতেই ছেঁড়া নয়। কেউ ইচ্ছে করে পিঠের কাছটা কেটে দিয়েছে।  বাসা থেকে বের হওয়ার আগে জামাটা ইস্ত্রি করেই তারপর পরেছিলাম। কারণ আমি আর যাই হোক না কেন কোঁচকানো জামা পরে কখনো বাইরে বের হইনা । এতবড় একটা ছেঁড়া থাকতেই পারে না । আর জামাটাও মাত্র গতমাসেই বেতনের টাকা পেয়েই বানিয়েছি । এটা আমার ভীষণ প্রিয় জামা । হালকা কমলা রঙের ভয়েল কাপড়ের উপর বেগুনি আর সাদা সুতো দিয়ে কি সুন্দর ফুলের কাজ করা । কষ্টে চোখ দিয়ে একনাগাড়ে পানি পড়ে চলেছে । কিছুতেই বুঝতে পারছিনা কি করে এভাবে কেটে গেলো জামাটা ?
আচ্ছা, কেউ কেটে দেয়নি তো ?
আমার ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে আছে ইয়াং একটি ছেলে । তার পাশে দুজন বয়স্ক লোক। সামনে থেকে পিছনে গিয়ে এদের কারো পক্ষেই এ কাজ করা সম্ভব নয়।
ডান পাশে বসে আছে দুজন লোক । বাঁ পাশে একটি মেয়ে । আর ঠিক পিছনেই আমাকে একেবারে ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে একটি ৩৫/৩৬ বছরের জোবড়া পরা, লম্বা দাড়িওয়ালা লোকটি ।
নিজেকে কিছুতেই সান্তনা দিতে পারছিলাম না । টপটপ করে সমানে চোখের জল পড়েই চলেছে দেখে পাশের মেয়েটা অনেকভাবেই আমাকে বুঝিয়ে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করছে। ওড়না দিয়ে ও আমার পিছন দিকটা ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করছে।  কিন্তু জর্জেটের ওড়না দিয়ে কি আর পিঠ পুরো ঢাকে?
পিছন ফিরে যখন হুজুর টাইপের লোকটার চোখের দিকে তাকালাম , দেখলাম লোকটা তাচ্ছিল্য ভরে আমার দিকে   তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে !   


অসুস্থ শব্দ 

ন’টা বাজে। এদিকে সকাল হতেই যেন রাজ্যের ঘুম নেমে আসে দু’চোখে । ঘুমটা একটু আলগা হতেই পাশে জড় হয়ে থাকা কাঁথাটা দু’হাতে টেনে নিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত জড়িয়ে আবার তলিয়ে যাই ঘুমের কুয়াশার ভিতর । ঘুম আর জেগে থাকার মাঝামাঝি যেখানে এক ঘোর লেগে থাকে সেখান থেকে কানে ভেসে আসে কড়াত দিয়ে কাঠ কাটার গোঁ গোঁ শব্দ।
‘ ওহ! এতোসব বিচ্ছিরি শব্দ যে কোত্থেকে আসে !’
ভাবতে ভাবতেই একসময় শব্দটা থেমে যায়। ঘুমের আরামে ডুবে যেতে চাই আবার।
‘নাহ আর পারিনা ! আবার সেই শব্দ।’
এটা তো জানা কথাই যে নিস্তরঙ্গ সুখ আর নিরবিচ্ছিন্ন নিস্তব্ধতা মাত্রই ক্ষণস্থায়ী।
তীব্র শব্দ। যেন একনাগাড়ে টাইলস কেটে চলেছে কেউ। থেমে যায় শব্দটা আবারো। কিন্তু একটু পরেই আবার গোঁ গোঁ শব্দ হতেই ঘুম চটে যায়। বিছানায় উঠে বসি । বুঝতে চেষ্টা করছি কোথা থেকে আসছে শব্ধটা ? ঘাড় ঘোরাতেই দেখতে পাই ওয়্যারড্রবের উপর মোবাইল ফোনটা ঘেররর ঘেররর করে ভাইব্রেট করে চলেছে। মহা বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কোন রকম সৌজন্য ছাড়াই নীলা যে সংবাদটি শোনায় তার জন্য কোন রকম মানসিক প্রস্তুতি ছিলো না আমার...

2 comments:

  1. ভালো লাগলো অনেক। শুভকামনা সবসময়।

    ReplyDelete
  2. ভালো লাগলো অনেক। শুভকামনা সবসময়।

    ReplyDelete